আগামী কয়েক বছরে আনুমানিক ১২ লাখ নবাগত কানাডায় আসতে পারে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: ২০২১ সালের শেষ তিন মাসের চেয়ে অভিবাসীর সংখ্যা সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ১৯৪৬ সালে এ বিষয়ক তথ্য নথিভুক্ত করা শুরুর পর এমনটা আর কখনও দেখা যায়নি। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা ২০২১ সালে অভিবাসীর সংখ্যা মোট ৪০৫,৭৫০ জন বলে জানিয়েছিল, যার মধ্যে শেষ তিন মাসে এসেছে ১৩৮,১৮২ জন। খবর ইয়াহু নিউজের। রিপোর্ট করেছেন এলিয়ানা লেভ।
মহামারির সময় কানাডায় অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিস্ময়কর মনে হতে পারে, তবে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা করেন যে, লক্ষ্য পূরণের জন্য যা যা করার কানাডা তাই করছে। প্রকাশিত সংখ্যায় এমনও অনেকে আছেন যারা এরই মধ্যে এখানে উপস্থিত।
অভিবাসন ও বসতি বিষয়ক রায়ারসন (সাবেক নাম) সেন্টারের পরিচালক ঊষা জর্জ বলেন, অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রীকে প্রতি বছর পার্লামেন্টে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিতে হয়। ২০২০ সালে তিনি তিন বছরের পরিকল্পনা পেশ করেন যাতে আরও বেশি উদার নীতি গ্রহণের কথা বলা হয়।
মিজ. জর্জ ব্যাখ্যা করেন যে, মহামারির প্রথম বছরে মাত্র এক লাখ ৮০ হাজার অভিবাসী এদেশে এসেছে যা ছিল প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। এজন্যে তারা ২০২১ সালে অভিবাসীদের জন্য পারমানেন্ট রেসিডেন্সির দরজা অবারিত করেন যারা এখানেই বসবাস করছেন।
ইয়াহু কানাডা নিউজকে তিনি বলেন, “কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদনকারী লোকদের জন্য তারা খুবই আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছেন।”
“কানাডীয় অভিজ্ঞতা শ্রেণী” বলে পরিচিত এই গোষ্ঠীর অভিবাসীরা হলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যারা লেখাপড়া করতে কানাডায় এসেছেন, চাকরি পেয়েছেন এবং স্থায়ী আবাসিকের মর্যাদা পাবার অপেক্ষা করছেন।
মহামারির আগে ইকোনোমিক ক্লাশে অভিবাসনের আবেদনকারীদের ৩০ শতাংশ ছিলো কানাডায় অবস্থানরতদের মধ্য থেকে আর বাকি ৭০ শতাংশ আসেন কানাডার বাইরে থেকে।
২০২১ সালে সেই সংখ্যাটা উল্টে যায়। তাতে বেশিরভাগই হয়ে যান কানাডীয় অভিজ্ঞতা শ্রেণীর।
জর্জ আরও যোগ করেন, পরিসংখ্যানে কিছু সংখ্যক অভিবাসী আছেন যারা অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এদেশে অবস্থান করছেন। সেই সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় শ্রমিকদেরও আবেদন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, যদিও তারা সংখ্যায় সামান্য। জর্জ বলেন, “২০২১ সালে স্বীকার করা হয় যে, (লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য) তাদেরকে কানাডীয় অভিজ্ঞতা শ্রেণীর ওপর নির্ভর করতে হবে, তাই সংশ্লিষ্ট দফতর এই শ্রেণীতে আবেদনকারীদের প্রায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানায়।
পারমানেন্ট রেসিডেন্সি সম্পর্কিত কর্মসূচিতে আবেদনের যোগ্য হতে অভিবাসীদেরকে সমন্বিত শ্রেণীকরণ ব্যবস্থার (ranking system) যে পয়েন্ট সিস্টেম অনুসরণ করতে হয়, তাতে প্রার্থীর বয়স, শিক্ষা ও ভাষা সমক্ষমতার মত বিষয়গুলি দেখা হয়। ২০২১ সালে সরকার ওইসব বিষয়ে পয়েন্ট কমিয়ে নির্ধারণ করে এবং যারাই পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পেতে ইচ্ছুক তাদের প্রত্যেককে আমন্ত্রণ জানায়। জর্জ বলেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সাফল্যের পেছনে এটিই বড় কারণ।
তিনি বলেন, পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা বিবেচনায় যদি কানাডীয় ইকোনোমিক ক্লাস বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকারের দক্ষ শ্রমিক কর্মসূচির দিকে তাকান তাহলে দেখবেন এই কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২১ সালে মাত্র ৮,৩০০ অভিবাসী কানাডায় এসেছেন। এই সংখ্যাটি মহামারির আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের সংখ্যার সম্পূর্ণ বিপরীত। ওই বছর এই কর্মসূচির আওতায় এসেছিল ৫৮,৭০০ জন।
নতুন অভিবাসীদের এই বিপুল সংখ্যা এ সম্পর্কিত নথিপত্র সংরক্ষণের কাজে বড় ধরণের ঘাটতি থেকে যাওয়ার মধ্যেও প্রতিফলিত। গত ১৫ মার্চ মোট ৫১৮,৬৬৭ জন পারমানেন্ট রেসিডেন্সি প্রার্থী এবং ৮০১,০৬৯ জন অস্থায়ী রেসিডেন্সির জন্য আবেদনকারী তাদের আবেদনের সবশেষ অবস্থা জানার জন্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শুরু করেন। কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিষয়ক দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ ৪৫৩,২৬৫ টি অনুসন্ধানের জবাব দেওয়া হয়, যার মধ্যে সম্ভাবনাময় আবেদন, ডাক গ্রহণকারীদের প্রাক্কলন এবং খোলা হয়নি এমন ইলেক্ট্রোনিক আবেদনপত্র ছিল।
ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে জর্জ বলেন, পরের কয়েক বছরে আনুমানিক ১২ লাখ নবাগত কানাডায় আসতে পারে যা গত বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যার রেকর্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।