মানুষের কথা
সাইদুল হোসেন
সন্তান চাই না
Maclean’s Magazine (August 3, 2009)-এ একটা প্রবন্ধ পড়লাম যার শিরোনাম -NO KIDS, NO GRIEF, লেখিকা -Anne Kingston. নারী পুরুষের মাঝে, বিবাহিত এবং অবিবাহিত দুই দলেই, যারা সন্তানের মা-বাবা হতে চায়না তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে যেসব যুক্তি সেই সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা স্থান পেয়েছে এই প্রবন্ধে। সন্তান না চাওয়ার যৌক্তিকতা দেখিয়ে ক্যানাডা-আমেরিকা ও ইউরোপের নানা দেশে প্রচুর বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে যেগুলোর মাঝে দুই সন্তানের মা, ৪৫ বছর বয়স্ক Corinne Maier লিখিত ফ্রান্সে প্রকাশিত (২০০৮) -No Kids : 40 Good Reasons Not to HAVE CHILDREN বইটি খুবই সাড়া জাগিয়েছে। ২০০৯ সনে বইটির ক্যানাডিয়ান এডিশন প্রকাশিত হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত, ভাল বেতনের চাকরিরত এবং successful professionals- সবাই আছে এই দলে।
প্রবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ক্যানাডার Vancouver শহরে ১৯৮৪ সনে NO KIDDING নাম দিয়ে non-parents-দের উদ্যোগে একটি social club প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লাবটির মতাদর্শ সমাজে এতই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে গত ২৫ বছরে পাঁচটি দেশে এর ৪০টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনের ফলে নূতন একটি phrase-ও সৃষ্টি করা হয়েছে, আর তা হলো Childfree family (Childless family নয়)। বিভিন্ন বই এবং বহু লোকের মতামত সংগ্রহ করার পর সন্তানের মা-বাবা না হওয়ার পেছনে/সমর্থনে যেসব যুক্তির সম্মুখীন হওয়া গেছে সেগুলোর মাঝে প্রধানগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করছি। যারা সন্তান চায় না তাদের পরিচয় হচ্ছে যে তারা baby refuseniks.
১. বিয়ে করলেই সন্তানের মা-বাবা হতে হবে এটা একটা প্রাচীন ও গতানুগতিক ধারণা যা বর্তমান যুগের বাস্তবতার সংগে খাপ খায় না কারণ “পরিবার” কথাটার সংজ্ঞা এবং অর্থই আমূল বদলে গেছে। তাছাড়া এমন নারী পুরুষের সংখ্যাও নগণ্য নয় যারা আদপেই সন্তান পছন্দ করে না।
২. মা অথবা বাবা হওয়া career-এর জন্যে ক্ষতিকর, কারণ সন্তান তাদের উন্নতি/অগ্রগতির পথে বাধার সৃষ্টি করে। সোশ্যাল লাইফের জন্যেও সন্তান ক্ষতিকর।
৩. সন্তান মা-বাবার বিবাহিত জীবনের জন্যেও ক্ষতিকর কারণ তাদের উপস্থিতি স্বামীস্ত্রীর মাঝে ফাটল ধরায় কারণ সন্তানের প্রতি একে অন্যের ভিন্নমুখী মনোভাব।
৪. সন্তান পালন করা খুবই ব্যয়সাধ্য ব্যাপার এই যুগে। সন্তান পালনের খরচ চালাতে গিয়ে ব্যাংকে টাকা জমানো যায় না। আজকাল লালনপালন করে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ১৮ বছর বয়সে পৌঁছাতে সন্তান প্রতি ২৫০,০০০ ডলার খরচ পড়ে। অপর কারণ হলো these days children are very demanding, ওদের চাহিদা বড় বেশী।
৫. সন্তানের কারণে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের Love life-এর পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়, যখনি মন যা চায় তা করা যায় না, জীবন অতৃপ্ত থাকে। কারো কারো মতে Modern family is a prison focused on the child.
৬. কোনই guarantee বা নিশ্চয়তা নেই যে সন্তান সংসারে সুখ-শান্তি বয়ে আনবে অথবা এমন কোন গ্যারান্টিও নেই যে সন্তানেরা মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে অথবা সু-সম্পর্ক বজায় রাখবে। সন্তান তাদের দরিদ্র, অসুস্থ ও বৃদ্ধ মা-বাবার ভার নেবে এরও কোন নিশ্চয়তা নেই।
৭. মায়েদের জন্যে গর্ভধারণ ও সন্তানের জন্মদান একটা অত্যাচার এবং বুকের দুধ খাওয়ানাটা এক ধরনের দাসত্বের শামিল। সন্তানের মা হলে চাকরিতে উন্নতি রুদ্ধ হয়ে যায়, আয় কমে যায়।
৮. সন্তান একটিা নিরবচ্ছিন্ন (constant) দুর্ভাবনার উৎস, ওদের জন্য দিনরাত উৎকন্ঠিত থাকতে হয়, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায় না। সন্তান একটা বোঝা, আনন্দের উৎস নয়। সন্তান না থাকলে মা বাবা অধিকতর সুস্থ থাকবে।
৯. আত্মবিশ্বাসের অভাব। একজন উত্তম পিতা অথবা উত্তম মাতা হতে পারবো কি না সেই দুর্ভাবনাও সন্তানের জন্মদান করতে নিজেদের উদ্বিগ্ন/ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে ফেলে। সন্তোষজনক ভাবে সন্তান প্রতিপালন করে গড়ে তোলা যাবে তেমন কোন গ্যারান্টিও তো নেই।
১০. এমন কোন দাবীও করা যায় না যে সন্তান থাকলেই জীবন সুখের হবে অথবা না থাকলেই দুঃখের হবে। সাম্প্রতিক রিসার্চের মতামত হচ্ছে যে নিঃসন্তান মা-বাবা অধিকতর সুখী।
১১. পৃথিবীতে জনসংখ্যা এমনিতেই বেশী যার ফলে নানা ধরনের economic, political, environmental and ecological problems -এ ভুগছে মানুষ দেশে দেশে। আরো সন্তান না জন্মালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে না, ফলে এসব সমস্যার তীব্রতাও কমবে। একজন লেখিকা তার বইতে লিখেছেন “Every baby born in a developed country is an ecological disaster for the whole planet.”
১২. জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে না, তাই আনএমপ্লয়মেন্টের সমস্যাও কমবে।
১৩. সন্তান গ্রহণ না করার পেছনে একটি বড় কারণ নারীদের জন্যে বার্থ কন্ট্রোল পিলের সহজপ্রাপ্যতা। তাছাড়া জন্মনিরোধের অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পন্থাও রয়েছে। পুরুষদের জন্যেও ব্যবস্থা রয়েছে। তাই উভয় পক্ষেরই নিজ নিজ ইচ্ছা ও পরিকল্পনা মত চলার পন্থা (choice) রয়েছে।
১৪. ক্রমশঃ পুরুষদের মত নারীরাও উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করে কর্মজীবনে ঢুকে পড়ছে এবং সন্তান ধারণের অসুবিধা থেকে মুক্ত থাকার জন্যে অনেক বিলম্বে বিয়ে করছে। রিসার্চ একথা প্রমাণ করেছে যে পৃথিবীর সর্বত্র নারীরা শিক্ষা-দীক্ষায় যত এগিয়ে যাচ্ছে ততই তারা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কারণে দেরীতে বিয়ে করছে এবং ততোধিক দেরীতে সন্তান গ্রহণ করছে। কেউ কেউবা একেবারেই সন্তান গ্রহণ করা বর্জন করছে। যার ফলে এই “সন্তান চাই না” মনোভাব ও আন্দোলনের সৃষ্টি। They remain childless by choice.
১৫. Life style. এটাও একটা জোরালো যুক্তি। নারী অথবা পুরুষ চাকরি জীবনে ঢুকে নিজেদের আয় ও রুচি – পছন্দমাফিক একটা Life style-এ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। বিয়ে করে সন্তানের মা-বাবা হলে সেই Life style-এ পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। এই পরিবর্তনটা অনেকের কাছে খুব অপছন্দ। তাই তারা সন্তান গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। সন্তানের চেয়ে Life style-টা বজায় রাখাটাই অধিকতর গুরুত্ব পায়। তারা হচ্ছে সেই দলে যারা remain childless by choice.
Statistics Canada ১৯৯০ সন থেকে প্রতিটি Census-এ এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে : Are you planning to have children?
২০০৬ সনের সেন্সাস রিপোর্টে দেখা যায় যে ক্যানাডার ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সের নারীদের ১৭.১% বলেছে “NO”। একই বয়সসীমার পুরুষদের ১৮.৩% বলেছে “NO”।
শেষ খবর : No Kidding! club-এর পাশাপাশি অন্য একটি সংস্থারও নাম করা যায় যারা মাতাপিতা না হওয়ার মতাদর্শে বিশ্বাসী। ক্যালিফোর্নিয়ার Palo Alto-তে ১৯৭২ সনে প্রতিষ্ঠিত সেই প্রতিষ্ঠানটির নাম National Organization for Non-Parents.
মা-বাবা ও সন্তান
মা-বাবা তাদের সন্তানকে ভালবাসেন, আদর-স্নেহ করেন, ওদের সব প্রয়োজন, সাধ-আহলাদ মিটাবার সাধ্যমত চেষ্টা করেন। প্রয়োজনে কঠিন আত্মত্যাগ (sacrifice) করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। এটা জাতিধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সর্বত্র সর্বসমাজেই প্রযোজ্য। বিনিময়ে মা-বাবা সন্তানদের কাছে কি প্রত্যাশা করেন? প্রচুর টাকাপয়সা, ধন-দৌলত, বাড়িগাড়ি? না, এসব তারা চান না। মা-বাবা সন্তানদের জন্য শুভ কামনাই করেন। তাঁরা চান তাঁদের সন্তান সৎ মানুষ হোক, তাদের মাঝে মনুষ্যত্বের মহৎ গুণগুলো জেগে উঠুক, তারা মা-বাবাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখুক,তাঁদের সম্মান করুক,তাদের অনুগত থাকুক,তাদের অসময়ে (অসুস্থতায়, বৃদ্ধ বয়সে, আর্থিক অনটনকালে) সন্তানরা তাদের পাশে থাকুক, অবহেলা অশ্রদ্ধা না করুক। সন্তানের উপর মা-বাবার দাবী বা প্রত্যাশা অতি সীমিত, তাঁরা শুধু চান সন্তানদের জন্যে তাদের স্যাক্রিফাইসের স্বীকৃতিটুকু, এর বেশী কিছু নয়। পৃথিবীর সব ধর্মেই মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্যে সন্তানদের নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম এ বিষয়ে আরো অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং এমনও বলেছে যে সন্তানের জান্নাত (Paradise in life after death) তাদের মায়ের পদতলে।
এখানে এসে মা-বাবার প্রতি সন্তানদের অনুভূতির প্রকাশ বর্ণনা করে কিছু লেখার উদ্বৃতি দিচ্ছি। প্রথম লেখাটি টরন্টোস্থ TARIC Masjid-এর মাসিক Community News (April 29, 2008) থেকে নেয়া হয়েছে।
(এক)
MY PARENTS
By: Mymona Hendricks
Of all the people that I know,
Respect and honour I must show,
To Mother and to Father too,
For the wonderful things they do.
My Mother works so hard for me,
She is as patient as can be,
My every need she tries to meet,
For isn’t Jannah beneath her feet?
Father who is strong and wise,
Does his utmost while he tries,
To be maintainer and protector too,
Like Almighty Allah told him to.
So next to Allah we then obey,
The Prophet, lest we go astray,
And never should we undermine
Our parents who are next in line.
Our parents we can never repay,
For their welfare we must pray,
And try to make them happy too,
They are precious, that is true.
And Allah’s words I always hear
‘In their old age keep them near,
Mercy and kindness you must show’,
It’s what everyone should know.
(দুই)
এবার দেখুন বাবার জন্যে ছেলের অনুভূতি, অপর একটি বই থেকে নেয়া।
বাবার জন্যে উপহার
বাবাকে কি উপহার দেয়া যায়? এ-ব্যাপারে স্কুলের গ্রেড ফোর-এর ছাত্র আনাস খানের চিন্তা-ভাবনাটা বড় আবেগময় হয়েছে ওরই লেখা ছোট্ট এই কবিতাটিতে।
Gifts
If I were an artist,
I would give my father my most expensive painting.
If I were a magician,
I would give my father whatever he wanted most.
If I were a doctor, I would fix his leg.
If I were a travel agent,
I would give my father a free ride
anywhere he wanted to go.
But, I am a kid, so I guess I’ll keep on loving him.
(তিন)
এবারের দৃষ্টান্তটা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে
(From a Nigerian Yoruba Nuptial Chant)
My father, thank you for petting me;
My mother, thank you for making me comfortable;
Thank you for robing me with wisdom,
which is more important than
robing me with clothes.
(From 365 Meditations by Marcus Braybrooke, Page 126)
(চার)
বিশ্ববিখ্যাত লেবানীজ কবি খলিল জিবরান (১৮৮৩-১৯৩১) তাঁর কাব্যগ্রন্থ The Prophet-এর জন্যে ১৯২৩ সনে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। সেই কাব্যগ্রন্থের এক অধ্যায়ে দেখা যায় যে তার শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা সেই প্রোফেটকে অনুরোধ জানাচ্ছে : Speak to us of Children. উত্তরে প্রোফেট বললেন :
Your children are not your children
They are the sons and daughters of Life’s longing for itself.
They come through you but not from you,
And though they are with you yet they belong not to you.
You may give them your love but not your thoughts.
For they have their own thoughts.
You may house their bodies but not their souls,
For their souls dwell in the house of tomorrow, which you cannot visit, not even in your dreams.
You may strive to be like them, but seek not to make them like you.
For life goes not backward nor tarries with yesterday.
You are the bows from which your children as living arrows are sent forth.
উঁচু দরের দার্শনিক তত্ত্বে ভরা কথাবার্তা বটে তবে যে সত্যটি কবি তুলে ধরতে চাইছেন তা হলো এই যে সন্তানের দেহ যেমন পিতামাতার চেয়ে আলাদা, যদিও তারা তাদের মাধ্যমেই এই জগতে এসেছে, তাদের চিন্তাভাবনাও সম্পূর্ণরূপে আলাদা কারণ তারা আগামী এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। তাই সন্তানকে স্বাধীন চিন্তা ও আচরণের অবকাশ দিতে হবে, তাদের ঠিক মা-বাবার ছাঁচে গড়ার চেষ্টা না করাই উত্তম।
সন্তানের প্রতি মা-বাবা অবিচার করবেন না, ছেলে এবং মেয়েকে সমান গুরুত্ব দেবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু অতীতের অন্ধকার যুগের আরবদের মত এই একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার আলোকে আলোকিত জগতেও বিবেকহীন হয়ে তাদের কন্যা সন্তানদের
অকাতরে জেনেবুঝে প্রতিদিন হত্যা করে যাচ্ছেন ইন্ডিয়ার মা-বাবারা। পার্থক্য শুধু এইটুকু যে বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে সন্তানের জন্মের আগেই তার লিংগ নির্ধারণ করে মেয়ে ভ্রুণ (fetus)-টাকে হত্যা (abort) করা হচ্ছে ইন্ডিয়াতে সরকারী আইনের বিধিকে উপেক্ষা করে। জাতিসংঘ এই নিয়ে উদ্বিগ্ন কারণ তাদের সংগৃহীত তথ্য থেকে দেখা গেছে যে সেখানে প্রতিদিন অন্ততঃ ৭০০০ female fetus-কে ডাক্তারের সাহায্য নিয়ে abort (হত্যা) করা হচ্ছে পরিবারের ইচ্ছা পূরণ করার মানসে। ফলে male-female ratio-তে সেদেশে দারুণ imbalance (ভারসাম্যহীনতা) ঘটে চলেছে কারণ প্রতিবছর ৫ লক্ষেরও অধিক নারী শিশুর জন্ম রোধ করা হচ্ছে (১৯৯৭ সনের হিসাব)। এর পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেশটির জন্যে ভয়াবহ হতে চলেছে। এসব তো Internet-এ প্রকাশিত খবর (২০০৬ সন)।
হিন্দি ভাষায় “বেটা” অর্থ ছেলে, আর “বেটি” অর্থ মেয়ে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে হিন্দি মুভি এবং সিরিয়াল নাটকে সর্বদাই মা-বাবা তাদের মেয়েটিকেও ‘বেটা’ বলে সম্বোধন করে থাকেন, বেটি নয়। পুত্র সন্তানের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব ও আকর্ষণ (preference)-এর এটা একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ, পরিবারে বেটির উপস্থিতি তারা স্বীকার করতে চান না।
ধর্ম শাস্ত্রে যত নীতিকথা অথবা সদোপদেশই থাকুক না কেন, বাস্তব জীবনে প্রায়শঃই সন্তানেরা বৃদ্ধ-অসুস্থ-অসহায় মা- বাবার প্রতি অবহেলা দেখাতে কুন্ঠা বোধ করে না। এক মা- বাবা তাদের দশটা সন্তানকে লালন-পালন করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হতেও দ্বিধাবোধ করেন না কিন্তু সেই দশটা সন্তানই তাদের বৃদ্ধ-অসহায় মা-বাবাকে তাদের ঘরে রাখতে নারাজ; জায়গার অভাব অথবা অন্য কোন ধরনের অজুহাত খাড়া করে তারা। ওল্ড এইজ হোম অথবা সিনিয়র্স রেসিডেন্সের তালাশ করে সন্তানেরা কারণ বাসায় রাখলে তাদের সন্তানদের অসুবিধা হয়, নিজেদের আধুনিক জীবনযাত্রা (life style) বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাছাড়া বুড়োবুড়ির সেবাযত্ন করতে হয়, তাদের নানা প্রয়োজন মিটাতে হয়। অত ঝামেলায় কে যায়? পাঠিয়ে দাও তাদের কোন একটা বৃদ্ধাশ্রমে। খরচপত্র? সেটা মিটাতেও গড়িমসি, সব ভাইবোন মিলে কোন সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ। মা- বাবার তো সরকারী পেনশন আসে প্রতিমাসে, তাদের জন্য আলাদা খরচ করার কি দরকার? বুড়ো বয়সে পেনশনের টাকাইতো যথেষ্ট! ছ’মাসে ন’মাসে একবার মা-বাবাকে ওখানে গিয়ে সামান্য কিছু গিফট হাতে নিয়ে দেখা করে আসলেই তো হয়; অথবা মাঝেমধ্যে টেলিফোনেও খোঁজখবর নেয়া যেতে পারে। তাছাড়া এই ক্যানাডায় বছরে দুটি বড়বড় উৎসব দিবসও তো রয়েছে- Mother’s Day, Father’s Day। সেই দিবসগুলোতে গিয়ে দু’জনকেই কিছু গিফটসহ দেখা করে এলেও তো কর্তব্য করা হয়ে যায়। এই সর্বনাশা রোগ বাংলাদেশেও দ্রুত ছড়াচ্ছে।
সন্তানরা কখনো ভাবতে চায়না যে ওরাও একদিন বৃদ্ধ হবে, শারীরিক সামর্থ্য, আর্থিক সামর্থ্য কমে যাবে, তখন ওদেরও সন্তানদের সাহায্য নিত্য প্রয়োজন হবে। তারাও চাইবে তাদের সন্তানরা তাদের সঙ্গ দিক, সাহায্য-সহায়তা করুক, না হলে তারা বড় অসহায় হয়ে পড়বে, অকাল মৃত্যুও ঘটতে পারে। কিন্তু তাদের সন্তানরা তখন এগিয়ে আসবেনা, কারণ তাদের সেই শিক্ষা দেয়া হয়নি; তারা দেখেছে তাদের দাদাদাদী-নানানানীর প্রতি তাদের সন্তানরা কি চরম দুর্ব্যবহার করেছে। তারা কোন সহানুভূতি বোধ করবে না, সাহায্যের হাত বাড়াবে না। What goes around, comes around.
সাইদুল হোসেন
মিসিসাগা