মহামারীর আঘাত থেকে অন্টারিও’র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে রক্ষা করতে হবে
অন্টরিওতে কোভিড-১৯ এখনও স্বল্প আয়ের এলাকায় কঠিন আঘাত হানছে। আর চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন এই কারণে যে রোগটি দরিদ্র ও দৃশ্যমান সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের এলাকাগুলিতে ঘনীভূত হতেই থাকবে। গত মার্চ মাসে প্রকাশিত এক নতুন নথিতে অন্টারিওর কোভিড-১৯ বিজ্ঞান উপদেষ্টা পরিষদ বলছে, এমনকি অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সৃষ্ট পঞ্চম তরঙ্গের ক্ষেত্রেও এই অনুসন্ধান স্পষ্টই দৃশ্যমান ছিল। পঞ্চম তরঙ্গে নিম্ন আয়ের এলাকাগুলোতে মৃত্যুর হার ছিল সর্বোচ্চ আয়ের এলাকাগুলির চেয়ে দ্ইু থেকে আড়াই গুণ বেশি, যা আগের তরঙ্গগুলির মৃত্যুহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অন্টারিওর কোভিড-১৯ মডেলিং কনসেনশাস পরিষদের সদস্য লরেন সিপ্রিয়ানো সিবিসিকে বলেন, দুই বছরেরও বেশি আগে মহামারী যখন প্রথম অন্টারিওতে আঘাত হানে তখন থেকেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সিপ্রিয়ানো ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শালিচ স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্ট্রিস্টি এবং আইভে বিজনেস স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বলেন, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একটি বড় মহামারীর আঘাত থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে কীভাবে রক্ষা করতে হয় অন্টারিও তা এখনও শিখতে পারেনি। তাঁর মতে, অসাম্য দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এই প্রবণতাগুলো অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হয়।
অধ্যাপক সিপ্রিয়ানোর এই বক্তব্য মোটেও অবজ্ঞা করার মতো নয়। বরং যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। কারণ গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, স্বল্প আয় ও অল্পশিক্ষিতদের এলাকা এবং সেইসঙ্গে অশ্বেতাঙ্গ, সম্প্রতি আসা অভিবাসী, বেশি জনঘনত্বের আবাসন ও আবশ্যকীয় শ্রমিকদের মধ্যে অনেক বেশি মাত্রায় কোভিড-১৯ অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ছড়িয়েছে।
এখন অন্টারিওতে ষষ্ঠ ঢেউ চলছে কোভিড-১৯ এর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মূলত অমিক্রন এবং তার সাবভেরিয়েন্ট BA.2 এর কারণে এমনটা হচ্ছে।
এদিকে অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অশ্বেতাঙ্গদের ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা থাকার সম্ভাবনা বেশি। আর এগুলো একজন ব্যক্তিকে গুরুতর অসুস্থতা এবং কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর উচ্চতর ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয় বলে ধারণা করা হয়।
অন্যদিকে কোভিড-১৯ মহামারিতে অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আসা কিছু অভিবাসী দ্রুত কানাডা ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে গেছে বলে জানা যায়।
ক্যালগেরি ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক পলিসির গবেষক রবার্ট ফ্যালকনার বলেন, “মন্দা পরিস্থিতির সময়ে অভিবাসীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়া তেমন অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়।”
তিনি বলেন, অর্থনীতি যদি দ্রুত পুনরুদ্ধার করা না যায় তাহলে গত এক বছরে যারা ফিরে গেছে তাদের অনেকেই হয়তো আর না-ও ফিরতে পারে।
পাশাপাশি কভিড-১৯ এর কারণে কানাডায় বসবাসকারী পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বা হেট ক্রাইমের মাত্রা বৃদ্ধি আগের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। গত ১৭ মার্চ,২০২২ সালে প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস কানাডা’র নতুন এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। স্ট্যাটিসটিকস কানাডা জানায়, কভিড-১৯ মহামারীর প্রথম বছরে (২০২০) পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় কানাডিয়ানাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের মাত্রা তার আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০১%। স্যাটিসটিসক কানাডা এই হিসাব রাখতে শুরু করে ২০০৯ সাল থেকে। তখন থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে ২০২০ সালে বিদ্বেষমূলক অপরাধের মাত্রা সবচেয়ে বেশী ছিল পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়দের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
উপরের সকল হিসাব ও পরিস্থিতি থেকে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, কভিড-১৯ এর কারণে ইমিগ্রেন্টরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা না করেন তবে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। দেশের সার্বিক স্বার্থে এই পরিস্থিতির দ্রুত অবসান দরকার বলে আমরা মনে করি।