জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের কারণে তরুণ অভিবাসীরা আগামী দুই বছরের মধ্যে কানাডা ছেড়ে যেতে পারে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক॥ ২৫ মার্চ ২০২২ : নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, নতুন অভিবাসীদের ৩০ শতাংশই আগামী দুই বছরে কানাডা ছেড়ে যেতে পারে। ইন্সটিটিউট ফর কানাডিয়ান সিটিজেনশিপ (আইসিসি) এর জন্য লেগার-এর পরিচালিত এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ১৮-৩৪ বছর বয়সী নতুন অভিবাসীদের ৩০ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রাপ্ত নব্য কানাডীয়দের ২৩ শতাংশ বলেছেন, তারা আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্য কোনও দেশে চলে যেতে পারেন। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন ম্যাগি পারখিল।

আইসিসির সিইও ডেনিয়েল বার্নহার্ড বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “কানাডা হল অভিবাসীদের দেশÑ আর আমরা নিজেদেরকে যেসব কাহিনী শোনাই তার একটি হল, নতুন অভিবাসীরা যেখান থেকেই আসুক না কেন আমরা তাদের স্বাগত জানাই।” “কিন্তু কথাটা সাধারণভাবে সত্য হলেও নতুন সমীক্ষার তথ্য দেখাচ্ছে যে, নব্য কানাডীয়দের অনেকের মধ্যেই কানাডার প্রতি আস্থা নিয়ে সমস্যা আছেÑ আর এটিকে পুরো অটোয়াজুড়ে সতর্কীকরণ ঘণ্টাধ্বনি হিসাবে নেয়া উচিৎ।”

অভিবাসীদেরকে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় কানাডীয়রা সেগুলো বোঝে না বলে মনে করেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে ৭২ শতাংশ নব্য কানাডীয় একমত পোষণ করেন, যেখানে কানাডীয়দের ৫৪ শতাংশ এই প্রশ্নে সম্মতি দেন।

জবফেয়ারে একদল তরুণ অভিবাসী। ছবি: রেডিও কানাডা

অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জগুলোর একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়েছে। সেটি হল, কানাডায় জীবনযাত্রার ব্যয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী নব্য কানাডীয়দের ৭৫ শতাংশই বলেছেন, তারা মনে করেন, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের অর্থ হল অভিবাসীদের কানাডায় অবস্থানের সম্ভাবনা কমে যাওয়া। একই বয়সসীমার ৪৬ শতাংশ কানাডীয়ও এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত।

সম্প্রতি কানাডায় জীবনযাত্রার ব্যয়ে এমনই উল্লম্ফন ঘটেছে যা গত ৩০ বছরের মধ্যে দেখা যায়নি। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। বন্ধকীর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন রেকর্ড হওয়ার কারণে গত দুই বছরে বাড়ির দাম ৫২ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং সাধ্যের মধ্যে ভাড়া বাড়ি পাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ায় আবাসন ব্যবস্থাও ক্রমবর্ধমান হারে দুর্লভ হয়ে পড়ছে।

জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে থাকার পাশাপাশি নব্য কানাডীয়দের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল ন্যায্য ও জীবনযাপনের উপযোগী বেতন-ভাতায় কর্মসংস্থান। অন্যসব নব্য কানাডীয়র তুলনায় যথাযোগ্য চাকরি ও বেতন-ভাতার সুযোগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অভিবাসীদের খুব কম সংখ্যকই ইতিবাচক মতামত দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অভিবাসীদের মাত্র ২৯ শতাংশ একমত যে তারা কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ন্যায্য মজুরি পান।

নতুন অভিবাসীদের মধ্যে যারা সম্ভাব্য অভিবাসীদেরকে বসবাসের জায়গা হিসাবে কানাডাকে বেছে নেবার সুপারিশ করবেন না তাদের কাছে এর প্রধান দুটি কারণ হল বর্তমান নেতৃত্ব এবং জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়।

স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম খাতে শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার আগামী তিন বছরে কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্টের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তবে গবেষকরা বলছেন, এটা করতে হলে নব্য কানাডীয়দেরকে আরও বেশি মদদ দিতে হবে।

লেগার’এর নির্বাহী ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডেভ শোলজ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, তরুণ, বিশেষ করে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসীরা এই জটিলতার শিকারে পরিণত হতে শুরু করেছে। সফল হবার জন্য নবাগতদের যতটা সম্পদ দরকার তাই দিয়ে তাদেরকে স্বাগত জানানো নিশ্চিত করতে এবং অবারিত সুযোগের দেশ হিসাবে অবস্থান ধরে রাখতে আমাদের কঠোর প্রয়াস অব্যাহত রাখার দরকার আছে।”