এক সময় নিষ্ক্রিয় এক অভিবাসন কর্মকর্তা অবশেষে সুপ্ত ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন
ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের ঐ কর্মকর্তা যিনি ‘কুঁড়ের বাদশা’ হিসাবে আবেদনকারীদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন তারা এখন পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাচ্ছেন
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক॥ ০৪ এপ্রিল ২০২২ : পারমানেন্ট রেসিডেন্সির আবেদনকারী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ যাদের ফাইল বিশেষ একজন কানাডীয় অভিবাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে ন্যস্ত করা হয়েছিল, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার কারণে বছরের পর বছর আটকে থাকার পর শেষ পর্যন্ত তারা এখন তাদের নথিপত্রের উল্লেখযোগ্য সচলতা দেখতে পাচ্ছেন। ওই অভিবাসন কর্মকর্তা আবেদনকারীদের কাছে “কুম্ভকর্ণ,” “অপদার্থ” অথবা কুঁড়ের বাদশা হিসাবে কুখ্যাত ছিলেন। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন প্রিসলা কাই সুন ওয়াং।
অন্যরা যখন নতুন ইস্যু করা পাসপোর্ট হাতে নিয়ে একমুখি টিকিট বুক করে রাখেন এমনকি সেই সময়েও অভিবাসনের ব্যাপারে আশাবাদী কিছু মানুষ গত কয়েক সপ্তাহে কানাডায় আসেন। অভিবাসনের জন্য অবেদনকারীদের কাছে ‘ডিএম১০০৩২’ সাঙ্কেতিক নামে পরিচিত একজন কর্মকর্তার কারণে তাদের পীড়াদায়ক অপেক্ষার বিষয় নিয়ে সিবিসি নিউজ প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।
কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিভাগ (আইআরসিসি) গত জানুয়ারি মাসে সিবিসিকে নিশ্চিত করে যে, ‘ডিএম১০০৩২’ একজন সক্রিয় কর্মী। কিন্তু পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হবার জন্য ২০১৯ সালে আবেদনকারী যে শত শত মানুষের নথি ওই কর্মকর্তার দায়িত্বে অর্পিত ছিল সেগুলো কী কারণে অন্ধকারে ফেলে রাখা হয়েছিল তার কোনও ব্যাখ্যা সংস্থাটি দেয়নি। আইআরসিসি বলেছিল, তারা কারও “ব্যক্তিগত বিষয়ে সবিস্তারে মন্তব্য করে না।”
আপাতদৃষ্টে এই মুহূর্তে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সংস্থাটি ‘ডিএম১০০৩২’এর ওপর ন্যস্ত দুই বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষমান পারমানেন্ট রেসিডেন্সির (পিআর) আবেদনকারীর নথির অচলাবস্থা অনেকটাই নিরসন করেছে।
ওলুওয়াসিউন আদেওলু বলেন, “ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই আমরা আবিষ্কার করি যে, ওই কর্মকর্তা সেসব নথি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।” প্রায় তিন বছরের অপেক্ষার পর গত কয়েক মাসের মধ্যে আদেওলুর রেসিডেন্সির আবদন চূড়ান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, রিপোর্ট প্রকাশের পর “দুমাসের মধ্যে… আক্ষরিক অর্থেই আমার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের প্রত্যেকে পিপিআর (পাসপোর্টের অনুরোধ) পেয়েছেন। এই গ্রুপে আমরা অনেক মানুষ আছি যারা চলতি সপ্তাহান্তে কানাডায় পৌঁছতে যাচ্ছি।”
কানাডার অভিবাসনে বিলম্ব এবং ‘ডিএম১০০৩২’ সম্পর্কে গড়া সামাজিক গণমাধ্যমের বেশ কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত আদেওলু বলেন, “তিনি ওই কর্মকর্তার দায়িত্বে ন্যস্ত ৩০ জনেরও বেশি আবেদনকারীকে চেনেন যাদের নথি গত দুই মাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে সচল হয়েছে।”
চলতি মার্চ মাসে হাউজ অব কমন্সের কাছে পেশ করা আইআরসিসির লিখিত জবাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডিএম১০০৩২ হিসাবে চিহ্নিত কর্মকর্তার কাছে ৭৭ জন আবেদনকারীর নথি দেখার দায়িত্ব ছিল। এর মধ্যে ৫৯ জন এক বছরের বেশি এবং মাত্র পাঁচজন দ্ইু বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছিলেন।
দীর্ঘতম সময় অপেক্ষায় থাকা আবেদনকারীদের নথি অন্য কোনও কর্মকর্তার দায়িত্বে অর্পণ করা হয়েছিল নাকি জানুয়ারির শেষদিকে রিপোর্ট প্রকাশের পর কর্মকর্তা ডিএম১০০৩২ নিজেই আবেদনকারীদের নথি দ্রুত খুঁজে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়।
আদেওলু বলেন, আবেদনকারীদের মধ্যে এখন বেশ “আনন্দময়” পরিবেশ বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, “এ যেন নতুন বাচ্চার জন্ম দেয়ার মত, কর্মক্ষেত্রে প্রমোশন পাবার মত।”
আদেওলুর পরিবার গত মার্চে নাইজেরিয়া ছেড়ে উইনিপেগ-এ আসে। তিনি সন্তানদের স্কুলে নিবন্ধন করিয়েছেন এবং চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন।
তার ভাষায়, আমরা এসেছি “তিন মাস হল, কিন্তু আমি বহুলাংশেই এখানকার চাকচিক্য দেখেছি, কানাডার বাস্তবতা দেখেছি, আমি দেখেছি দেশটি নবাগতদের স্বাগত জানাতে কতটা ইচ্ছুক।”
ভারতের জিবি ম্যাথিউস সিবিসিকে বলেন, তিনি ডিএম১০০৩২-এর কাছ থেকে সর্বশেষ জবাব পেয়েছিলেন ২০২০ সালের মার্চে। সিবিসির কাছে হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি তার পাসপোর্ট রিকোয়েস্ট (যা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হবার আগে চূড়ান্ত পদক্ষেপ) পান।
তিনি লিখেন, “(আমি) আইআরসিসি এবং কর্মকর্তা ডিএম১০০৩২কে ধন্যবাদ জানাতে চাই দুই বছর পর আমার পিআর আবেদন বিবেচনায় নেবার জন্য।
“অপেক্ষাকাল আমাদের খুন করে ফেলছে,”
তবে কিছু মানুষ এখনও অপেক্ষা করে আছেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরে পিআর আবেদন পেশকারী কিরণজোত রনধাওয়া বলেন, তিনি হলেন ডিএম১০০৩২-এর এখতিয়ারে থাকা মুষ্ঠিমেয় আবেদনকারীর একজন যারা দ্ইু বছরের বেশি সময় পরও অপেক্ষায় আছেন।
ভারত থেকে তিনি বলেন, “(আমরা) আমাদের আবেদনের বিষয়ে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছি যে, একদিন আমরা সেই সোনালী ই-মেল পাবো। সেই আশাবাদ আমাদের
বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু অপেক্ষাকাল আমাদের খুন করে ফেলছে।”
অন্য যাদের নথির অগ্রগতি হয়েছে তাদের ব্যাপারে আনন্দিত হলেও তিনি বলেন, অপেক্ষার কালটা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার পরিবারের কাছে অধিকতর “পীড়াদায়ক” হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, “তারা ফিরে যাবার টিকিট বুক করছেন, কেনাকাটা এবং অন্য সব কাজ করে রাখছেন আর আমি এখনও প্রতিদিন আমার স্ট্যাটাস পরীক্ষা করছি, অপেক্ষা করছি।”
ডিএম১০০৩২-এর কাছে যাদের নথি ছিল তারা হল সংস্থার কাছে অপেক্ষমান পর্বতপ্রমাণ নথির এক ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। আইআরসিসির উপাত্ত অনুযায়ী, ১লা ফেব্রুয়ারিতে কানাডায় ১৮ লাখেরও বেশি অভিবাসনের আবেদন অনিষ্পন্ন ছিল।
জানুয়ারি থেকে সিবিসি বিভিন্ন অভিবাসন কর্মকর্তার কাছে ন্যস্ত মরিয়া আবেদনকারীদের কাহিনী তুলে ধরতে সহায়তার অনুরোধসহ শতাধিক ইমেল পেয়েছে। এদের কেউ কেউ একটি সিদ্ধান্তের জন্য পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন।
নাইজেরিয়ার একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইকেচুকউ উকেতুই বলেন, “এটি খুবই হতাশাজনক যে, আমি প্রতিরাতে ভারাক্রান্ত মনে ঘুমাতে যাই। আমার মনে হয়, আমি নিজেকে কিছুটা হারিয়ে ফেলেছি।” তিনি ২০১৯ সালের নভেম্বরে আবেদন করেন এবং তার ফাইলের দায়িত্ব পান কর্মকর্তা “এবি১৪৭১২।”
“এটি সত্যিই আমার মন ভেঙ্গে দিচ্ছে, অনেক সময় আমি কাঁদি… আমি এটার শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে পারি না।”
আইআরসিসির আশা সাড়ে আট কোটি ডলার অপেক্ষার সময় কমাতে সহায়ক হবে
সিবিসি নিউজের প্রতি সাড়া দিয়ে এক ইমেল বার্তায় আইআরসিসি তাদের কার্যক্রম উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে জানায়, তারা মহামারির সময় বেড়ে ওঠা আবেদনের সংখ্যা হ্রাসের “পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
এতে উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার চলতি বছর এই বিভাগের জন্য সাড়ে আট কোটি ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে, যা দিয়ে অনিষ্পন্ন কাজ সম্পন্ন এবং অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনতে সহায়তার জন্য আরও বেশি কর্মচারী নিয়োগ করা সম্ভব হবে।
আইআরসিসি মুখপাত্র জেফারি ম্যাকডোনাল্ড লিখেন, “দয়া করে মনে রাখবেন যে, একটি আবেদন প্রক্রিয়াকরণে একজনের বেশি কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন এবং প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব সবচেয়ে দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে আবেদনপত্রগুলি একটি কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হতে পারে।”