অন্টারিও গাড়ির গতিসীমা বাড়াতে যাচ্ছে, এটি কি নিরাপদ?

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক:  গত ২৯ মার্চ, ২০২২ অন্টারিও প্রদেশ কিছু বিভক্ত হাইওয়েতে (যে বিপরীতমুখী সড়কের মধ্যখানে কনক্রিট বা অন্যকিছুর প্রতিবন্ধকতা থাকে) যানবাহনের গতিসীমা ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটারে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যান্য প্রদেশ এটা আগেই করেছে। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন টম ইউন।

গতিসীমা বাড়ানোর পক্ষের লোকেরা বলছেন, এটি সঠিক পদক্ষেপ। তাদের যুক্তি, হাইওয়েতে গতিসীমা খুব কম থাকলেই বরং সেটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

বেশিরভাগ প্রদেশেই বিভক্ত মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও কুইবেকে অবশ্য গতিসীমা ১০০কিমি/ঘণ্টাই থাকছে। তবে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কিছু মহাসড়কে গতিসীমা ১২০কিমি/ঘণ্টাও আছে।  টেরিটোরিগুলি এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপে কোনও বিভক্ত হাইওয়ে নেই। অন্টারিওতে যানবাহনের গতিসীমা বাড়ানোর পক্ষে ওকালতি করা সংগঠন স্টপ১০০.সিএ-র প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস ক্লিমেক বলেন, “গত আট বছর ধরে আমরা যেটা বলে এসেছি সেটা হলো, মহাসড়কে মৃত্যুর হারের সঙ্গে গতির কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর ওপর এর কোনও সত্যিকারের প্রভাব নেই।”

তিনি বলেন, “গতিসীমা যদি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার নির্দিষ্ট করা থাকে তাহলে লোকেরা ঘণ্টায় ১১০, ১২০ বা ১৩০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালায়। আর এটাই আমরা প্রতিদিন, সবসময় দেখে আসছি।”

টরন্টোর ৪০১ এক্সপ্রেসওয়েতে কোভিড-১৯ বিষয়ক একটি সাইনবোর্ডের নিচ দিয়ে যাচ্ছে যানবাহনগুলো। ছবি: ফ্রাঙ্ক গুন /দ্য কানাডিয়ান প্রেস

২০০৩ সালে সাসকাচুন প্রদেশ যখন গ্রামীণ এলাকার চার লেনের বিভক্ত মহাসড়কে গতিসীমা ঘণ্টায় ১০০ কিমি থেকে বাড়িয়ে ১১০ কিমি/ঘণ্টা করলো তখন মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে দেখা যায়, গড়ে চালকদের গতিসীমায় “ন্যূনতম বৃদ্ধি” ঘটেছে।

ক্লিমেক যুক্তি দেখান যে, গতিসীমা খুব কম থাকলে চালকদের গাড়ির গতিতে অনেক বেশি ভিন্নতা সৃষ্টি হয়, কারণ তখন সর্বোচ্চ ১০০ কিমি/ঘণ্টার সীমা মেনে চলতে আগ্রহী চালকদের এড়াতে বেশিরভাগ চালককে প্রায়শ লেন পরিবর্তন করতে হয়।

তিনি বলেন, “বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ চালকই ব্রেক চেপে বাঁয়ে বা ডানে সরে যান। এটি অনেক বেশি বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।”

গাড়ির অনেক বেশি বিচিত্র গতিসীমার বিষয়টি ম্যাসাচুসেটস হাইওয়ের ক্ষেত্রে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছিল। এই রাজ্যের হাইওয়ে এজেন্সির নিয়োজিত একটি কমিশনের পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এই মহাসড়কে  যানবাহনের সংঘর্ষের হার খুব বেশি। দুর্ঘটনা কমানোর জন্য জরিপে গাড়ির গতিসীমা ঘণ্টায় ৫৫ মাইল (৮৮কিমি/ঘণ্টা) থেকে ৬৫ মাইলে (১০৪কিমি/ঘণ্টা) বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

বিশ্বজুড়ে হাইওয়েতে গাড়ির গতিসীমা কানাডার চেয়ে অনেকটাই বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্যে হাইওয়েতে গাড়ির গতিসীমা নির্ধারিত আছে ৭০ থেতে ৭৫ মাইল বা ১১২ থেকে ১২০ কিমি/ঘণ্টা। কিন্তু টেক্সাসের একটি মহাসড়কে এই সীমা ঘণ্টায় ৮৫ মাইল (১৩৭কিমি/ঘণ্টা)। ইউরোপের বেশিরভাগ এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা ১২০ থেকে ১৩০ কিমি/ঘণ্টা- যদিও জার্মানির অনেক সড়কেই গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট কোনও গতিসীমা নেই।

তবে অন্যান্য সমীক্ষা থেকে জানা যায়, উচ্চতর গতির কারণে বেশি সংঘর্ষ ও বেশি আহত হবার আশঙ্কা থাকে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ২০১৪ সালে কিছু সংখ্যক হাইওয়েতে গতিসীমা ১২০কিমি/ঘণ্টায় উন্নীত করার পর ২০১৮ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেন।  তাতে দেখা যায়, গতিসীমা বাড়ানোর ফলে হাইওয়েতে গাড়ির প্রাণঘাতী সংঘাতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। যেসব মহাসড়কে গতিসীমা বাড়ানো হয় সেগুলোতে  গাড়ির বীমা দাবি ৪৩ শতাংশ এবং গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হবার কারণে বীমার দাবির পরিমাণ ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশের পর বিসি’র সরকার দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া কয়েকটি সড়কে গাড়ির গতিসীমা কমিয়ে দেয়।

কিন্তু তা সত্বেও অন্যান্য প্রদেশও তাদের মহাসড়কে গতিসীমা শিগগিরই বাড়াবে। গত বছর আলবার্টার একজন এমএলএ (রাজ্য সংসদের সদস্য) প্রদেশের মহাসড়কগুলোতে (ফ্রি ওয়ে) গতিসীমা ১২০ কিমি/ঘন্টায় উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি বেসরকারি সদস্য বিল উত্থাপন করেন। ২০১৮ সালে কুইবেকের বিরোধী দল পার্টি কুইবেকো প্রদেশের কয়েকটি হাইওয়েতে গতিসীমা ১২০ কিমি/ঘণ্টায় বৃদ্ধির পক্ষে প্রচারণা চালায়।