প্রধানমন্ত্রীকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সমর্থ ন দিয়ে যাবেন জাগমিত : বিনিময়ে নিম্ম ও মধ্য আয়ের কানাডিয়ানদের জন্য চালু হবে বহুল প্রতিক্ষিত ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম

প্রবাসী কণ্ঠ : কানাডার প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদে দেশ শাসন করছেন। কিন্তু ক্ষমতায় তাঁর অবস্থান তেমন শক্তিশালী নয় যেমনটা ছিল প্রথম মেয়াদের সময়। প্রথম মেয়াদে তিনি নিরস্কুশ বিজয় নিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন। ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল তখন তাঁর। যে কোন সিদ্ধান্ত তিনি ও তাঁর দল নিতে পারতেন এবং তা পার্লামেন্টে পাশ করিয়ে নিতে পারতেন। বিরোধী দলের সমর্থনের কোন প্রয়োজন পড়তো না। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ট্রুডো তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা হারান। নির্বাচনে তিনি জয়ী হন বটে কিন্তু একক সংখ্যাগড়িষ্ঠতা পাননি। ফলে পার্লামেন্টে দলের অবস্থান হয়ে উঠে নড়বড়ে। কোন বিল পাশ করানো কঠিন হয়ে উঠে দলের জন্য। কোন কারণে প্রধান বিরোধী দল অনাস্থা প্রস্তাব আনলে সরকার পতনের সম্ভাবনা দেখা দিত যদি তৃতীয় বা চতুর্থ অবস্থানে থাকা পর্যাপ্ত আসনের কোন দল তাঁকে সমর্থন না দিত।

তৃতীয় মেয়াদে এসেও জাস্টিন ট্রুডোর একই অবস্থা। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগড়িষ্ঠতা পাননি। ফলে কোন বিল পাশ করাতে হলে তৃতীয় বা চতুর্থ অবস্থানে থাকা কোন বিরোধী দলের সমর্থনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এনডিপি’র জাগমিত সিং অবশ্য তাকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। তবে এখন থেকে আর বিনা শর্তে সমর্থন দিবেন না বলে স্থির করেছেন তিনি ও তাঁর দল। জাগমিত সিং শর্ত দিয়েছেন, পার্লামেন্টে এনডিপি’র সমর্থন চাইলে জাস্টিন ট্রুডোকে নিম্ম ও মধ্য আয়ের কানাডিয়ানদের জন্য ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। এছাড়াও আরো কয়েকটি শর্ত জুরে দিয়েছেন তিনি। এই শর্তগুলো বাস্তবায়ন করলে ট্রুডোকে তিনি পার্লামেন্টে সমর্থন দিয়ে যাবেন। শর্ত বাস্তবায়ন না করলে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিবেন। সেই ক্ষেত্রে ট্রুডো যে কোন সময় ক্ষমতা হারাতে পারেন।

ফেডারেল এনডিপি’র প্রধান জাগমিত সিং শর্ত দিয়েছেন, পার্লামেন্টে তাঁর দলের সমর্থন চাইলে জাস্টিন ট্রুডোকে নিম্ম ও মধ্য আয়ের কানাডিয়ানদের জন্য ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। ছবি: সেন ক্যালপ্যাট্রিক/দি কানাডিয়ান প্রেস

জাস্টিন ট্রুডো জাগমিত সিং এর শর্তসমূহ মেনে নিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এনডিপি ও লিবারেল এক সাথে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর অফিস সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিসি জানায়, প্রস্তাবিত ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম চলতি বছরই চালু হবে শুধুমাত্র যাদের বয়স ১২ বা তার নিচে। আগামী বছর চালু হবে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং যারা সিনিয়র ও যারা চলাফেরায় অক্ষম। আর ডেন্টাল কেয়ার সবার জন্য বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৫ সালে। এতে লাভবান হতে যাচ্ছেন নিম্ম ও মধ্য আয়ের কানাডিয়ানরা। তাঁদের সুদীর্ঘ কালের দাবী ছিল ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম চালু করা।

ফেডারেল এনডিপি’র প্রধান জাগমিত সিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা আমাদের ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছি জনগণের স্বার্থে। আমরা জনগণের ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম চালু করার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রাজী করিয়েছি। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ এবং অর্থাভাবে ওষুধ ক্রয় করতে পারেন না তারা যাতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে পারেন সেই ব্যাপারেও সরকারকে রাজী করিয়েছি।

উল্লেখ্য যে, গত দুই নির্বাচনেই এনডিপি’র অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল নিম্ম ও মধ্য আয়ের কানাডিয়ানদের জন্য ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম চালু করা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম সীমাবদ্ধ থাকবে সেই সকল পরিবারের মধ্যে যাদের বাসৎসরিক আয় ৯০,০০০ ডলারের নিচে এবং কর্মস্থলে ডেন্টাল কেয়ার ইন্সুরেন্স নেই। আর যে সকল পরিবার বা ব্যক্তির বাৎসরিক আয় ৭০,০০০ ডলারের নিচে তাঁদের ডেন্টাল কেয়ার সম্পূর্ণভাবে কভার করবে সরকার।

ডেন্টাল কেয়ার প্রোগ্রাম ছাড়াও এনডিপি’র শর্ত অনুযায়ী স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ‘কানাডা ফার্মাকেয়ার এ্যাক্ট’ পাস করা হবে ২০২৩ সালের মধ্যে। তাছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ‘এফোর্ডএ্যাবল হাউজিং’ এর বিষয়েও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে লিবারেল ও এনডিপি’র মধ্যেকার এই ‘মিতালি’কে প্রধান বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টি ভাল চোখে দেখছে না। কনজার্ভেটিভ পার্টির অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান ক্যান্ডিস বার্গেন বলেন, ‘জাস্টিন ট্রুডো’র এই চুক্তি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন। গত ৬ বছর ধরে আমরা যা দেখছি তা হলো, তিনি তার নিজের জন্য যেটি ভাল সেটিই করছেন মন দিয়ে। জনগণের জন্য যেটি ভাল সেটি নয়।’