টরন্টোর এক-তৃতীয়াংশ মানুষের জন্য দাঁতের চিকিৎসা পাওয়া বড় সমস্যা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বীমা সুবিধাবঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন, বলছে টরন্টো ফাউন্ডেশন। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছন পলা দুহাৎশেক।

আর বীমার আওতায় না থাকার কারণে কানাডার বৃহত্তম শহর টরন্টোর এক-তৃতীয়াংশ বাসিন্দা দাঁতের চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। নতুন এক রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে।

টরন্টো ফাউন্ডেশনের রিপোর্টে বলা হয়, নগরীর প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষের দাঁতের বীমা না থাকায় ব্যয়বাহুল্যের কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন।

রিপোর্টে বলা হয়, “একটি বিষয় স্পষ্ট: আমাদের সমাজের দুঃস্থ মানুষদের বেশিরভাগই বর্তমান ব্যবস্থায় পেছনে পড়ে আছেন এবং তারা কোনও সহায়তা পান না।”

রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে কানাডার কমিউনিটি হেল্থ সার্ভিসের ২০১৭ ও ২০১৮ সালের সমীক্ষার উপাত্ত ব্যবহার করে। যদিও ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে, ওই সময়ের পর থেকে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে এবং “সময়মত ব্যবস্থা” নেয়া না হলে বয়স্ক মানুষের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতেই থাকবে।”

বীমার আওতায় না থাকার কারণে কানাডার বৃহত্তম শহর টরন্টোর এক-তৃতীয়াংশ বাসিন্দা দাঁতের চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। ছবি: প্রবাসী কণ্ঠ

ফাউন্ডেশনের চিফ প্রোগ্রাম অফিসার জুলিয়া হাওয়েল চাকরির বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে এমন পূর্ণকালীন চাকরির পরিবর্তে স্বকর্মসংস্থান অথবা অনিশ্চিত কাজ অর্থাৎ খণ্ডকালীন, অস্থায়ী অথবা চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করেন।

হাওয়েল বলেন, “শ্রমবাজারের ওটাই হলো জায়গা যেখানে বৃহত্তম প্রবৃদ্ধি হয়েছে।”

“আমরা দেখছি, ক্রমবর্ধমান হারে আরও বেশি বেশি মানুষের সামনে দাঁতের চিকিৎসা সুবিধার দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর এই কোভিড মহামারির সময় বিষয়টি অনেক বেশি খারাপ দিকে যাচ্ছে।”

স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের দন্তচিকিৎসা পাবার হার উন্নয়নে রিপোর্টে নিচের সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়েছে:

*  দন্তচিকিৎসায় নিয়োজিত পেশাজীবী যারা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা অথবা অন্য কোনও গ্রুপের সঙ্গে মিলে স্বল্পমূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দিতে স্বেচ্ছায় সম্মত থাকবেন তাদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।

*  এ ধরণের সেবা দানকারী বিদ্যমান সংগঠনগুলোকে আরও বেশি তহবিলের যোগান দেয়া।

*  টরন্টোর সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় ডেন্টাল ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা এবং এসব ক্লিনিকের সেবার আওতা সম্প্রসারণ।

মুদিখানা ও ডেন্টাল চিকিৎসাসেবার মধ্যে একটি বেছে নেয়া

একজন স্বেচ্ছাসেবী ডেন্টিস্ট হিসাবে কাজ করার সময় ডা. আমান্দা মোরেল প্রায়শ দেকতে পান কিছু লোক সারাদিন ধরে কাজ করছে, কিন্তু তাদের কোনও সুবিধা (বেনিফিট) নেই।

ফিলিং দ্য গ্যাপ নামের ডেন্টাল সেবাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোরেল বলেন, “তারা এমন এক দুর্ভাগ্যজনক অবস্থায় রয়েছেন যখন তাদেরকে প্রতি সপ্তাহেই দাঁতের ব্যথা সারানোর পরিবর্তে মুদির দোকানের সামগ্রী কেনা বা বাড়িভাড়া পরিশোধের বিষয়টি বেছে নিতে হয়।” ডা. মোরেলের সেবাকেন্দ্রে স্বল্প আয়ের বীমাহীন প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, “অনেক সময় বাধ্য হয়েই তাদেরকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হয়, কিন্তু সেখানে একটি প্রেসক্রিপশন ছাড়া তারা আর কিছুই পান না।”

রিপোর্টে বলা হয়, অন্য যেসব

জনগোষ্ঠীর মানুষের ডেন্টাল ইন্স্যুরেন্স থাকে না তাদের মধ্যে রয়েছে অশ্বেতাঙ্গ এবং নবাগত অভিবাসীরা।

এতে বলা হয়, বয়োবৃদ্ধ লোকেরাও ডেন্টাল বীমার আওতায় সেবা পাবার ব্যাপারে গলদঘর্ম হচ্ছেন কারণ অবসরের পর তাদের অনেকের চাকরিকালীন সুবিধা কর্তিত হয়ে যায়।

ব্যক্তিবিশেষের ওপর প্রভাবের বিষয়টি ছাড়াও, রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় প্রতিরোধমূলক দাঁতের প্রযত্নের অভাবের কারণে চিকিৎসার অন্যান্য ক্ষেত্রেও চাপ পড়তে পারে। এতে অ্যালায়েন্স ফর হেলদিয়ার কমিউনিটির উপাত্ত উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে দেখা যায়, ২০১৫ সালে দাঁতের সমস্যা নিয়ে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের পেছনে এই প্রদেশের ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি ১০ লাখ ডলার।

রিপোর্টে বলা হয়, দন্ত চিকিৎসার দুরবস্থা অন্যান্য সমস্যার সঙ্গেও সম্পর্কিত, যেমন, হৃদরোগ এবং শ্বাসজনিত সমস্যা।

হাওয়েল বলেন, “আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে, মুখের স্বাস্থ্যও আসলে স্বাস্থ্যগত বিষয়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ থেকে মুখ আলাদাভাবে অস্তিত্বশীল থাকে না।”

 ‘দাঁতের চিকিৎসা কোনও বিলাসের বিষয় হওয়া উচিৎ নয়”

রিপোর্টে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তার সবই নেতিবাচক নয়। এতে বলা হয়, টরন্টোতে এরই মধ্যে বেশ কিছু সংগঠন আছে যারা স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে দাঁতের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। এসব সংগঠন যদি আরও তহবিল পায় তাহলে তাদের সেবা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।

এসব সংগঠনের একটি হলো ইয়ংগি স্ট্রিট মিশনের এভারগ্রিন সেন্টার। টিন এজের শেষ পর্যায়ে উপণীত সিলভেরাইন আলবার্টিনা যখন গৃহহীন অবস্থায় ছিলেন তখন এই সেন্টারের একজন ডেন্টিস্টের সংশ্রবে এসেছিলেন।

আলবার্টিনা (২৬) ওই কেন্দ্রে তাঁর দাঁতের জটিল চিকিৎসা পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এটি পরিস্থিতির সত্যিই দারুণ উন্নতি ঘটিয়েছে।” তার ভাষায়, “আমার মনে হয়, সুন্দর দাঁত একজন মানুষের মনে আস্থা সৃষ্টিতে মনস্তাত্ত্বিকভাবেই অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”

আলবার্টিনা মনে করেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় দাঁতের চিকিৎসাও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিৎ এবং তিনি যে ধরণের চিকিৎসা পেয়েছিলেন সেরকম সেবা আরও ব্যাপকভাবে সুলভ হওয়া দরকার।

তিনি বলেন, “দাঁতের প্রযত্ন কোনও বিলাসের বিষয় হওয়া উচিৎ নয়। এটিকে প্রত্যেকের জন্য আবশ্যকীয় বিষয় হিসাবে গণ্য করতে হবে।”