কানাডা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ১৩ লাখের বেশি ইমিগ্রেন্ট নেবার পরিকল্পনা করছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার আগামী তিন বছরে নতুন পারমানেন্ট রেসিডেন্টের রেকর্ড সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য বিপুল সংখ্যক আবেদনের স্তুপ জমে যাওয়ায় সরকার এখন সেগুলি নিয়ে কাজ করছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ইমিগ্রেশন বিষয়ক মন্ত্রী সিন ফ্রেসার তার নতুন পরিকল্পনায় বলেন, কানাডা ২০২২ সালে চার লাখ ৩১ হাজার ৬৪৫ জনকে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি দেবে, পরের বছর দেবে চার লাখ ৪৭ হাজার ৫৫ জনকে এবং ২০২৪ সালে চার লাখ ৫১ হাজার জনকে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন লরা ওসমান।

ফ্রেসার বলেন, মহামারি প্রশমনের পর কানাডা ঘুরে দাঁড়ালেও সব খাতেই হাজার হাজার পদ এখনও শূন্য রয়েছে।

এছাড়াও, কানাডার জনসংখ্যায় বয়োবৃদ্ধের হার বেড়ে যাচ্ছে এবং সরকারের ধারণা, চলতি দশকের শেষে শ্রমিক ও অবসরভোগীর অনুপাত কমে দাঁড়াবে মাত্র তিন অনুপাত এক জনে।

এক সাক্ষাৎকারে ফ্রেসার বলেন, “আমরা যদি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দেয়া আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক পরিষেবা ও সুবিধাগুলি ধরে রাখতে চাই তাহলে আমাদের আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক ও কম বয়সী পরিবারকে এদেশে আসার সুযোগ দিতে হবে।”

তিনি বলেন, মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধারের মূল চাবিকাঠি হবে বাড়তি ইমিগ্রেশন।

কেন্দ্রীয় সরকার পারমানেন্ট রেসিডেন্টের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ছবি: ড্যারেন ক্যালাব্রেস/ UNHCR

কানাডার বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট গোল্ডি হাইডার এ বিষয়ে একমত পোষণ করে সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, সব সময়ই শ্রমিক ঘাটতি বিদ্যমান এমন একটি অর্থনীতি তার সব সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে না।

গত পহেলা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি পারমানেন্ট ও টেম্পোরারি রেসিডেন্সির আবেদন জমা পড়ে আছে। সরকার বলছে, মহামারির সময় সৃষ্ট মন্থরতার কারণেই মূলত আবেদনের এই স্তূপ জমেছে।

ফ্রেসার আশা করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই আবেদন প্রক্রিয়াকরণের কাজে আগের গতি ফিরে আসবে। সরকার এই কাজ ত্বরান্বিত করতে সাড়ে আট কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং নতুন আধুনিক পদ্ধতি সংযোজন করেছে।

দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ে কিছু আবেদনকারী হয়তো ভিন্ন পরিকল্পনা করে থাকতে পারেন, তবে ফ্রেসার বলেন, বেশিরভাগ আবেদনকারী এখনও কানাডায় আসতে চায় বলেই তার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, “অংশীজনদের বিভিন্ন সংগঠন, কানাডায় আসার জন্য আবেদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে কানাডা পছন্দের গন্তব্য হয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”

“আমাদেরকে ইমিগ্রেশনের পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সমাজ তাদের আত্তীকরণের সামর্থ রাখে এবং অর্থনীতিতে তাদের চাহিদা থাকে।”

২০২১  সালে সরকারের লক্ষ্য ছিলো চার লাখ এক হাজার আবেদনকারীকে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি দেবার। তবে শেষ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ আবেদন অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে সরকার তার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এটি ছিলো কানাডার ইতিহাসে কোনও এক বছরে সর্বোচ্চ পরিমাণ ইমিগ্রেন্ট গ্রহণের ঘটনা।

এতে মি. ফ্রেসার আরও আস্থাবান হয়েছেন যে, সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তা তারা পূরণ করতে সক্ষম হবেন।

ফ্রেসার বলেন, “আমরা এটা করেছিলাম বৈশ্বিক মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে যা বছরের একটা বড়ো অংশ ধরে আমাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ইমিগ্রেশন নিয়ে আমাদেরকে সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্যোগ নিতে হয়।” তিনি আরও বলেন, মহামারির সময় সরকার এরই মধ্যে কানাডায় অবস্থানরত লোকেদের ব্যাপারে মনোযোগ দেয়।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট দেখা দিলে কানাডা সরকার সেটিকে সামলে নিতে সক্ষম হয়েছে এবং ৪০ হাজার আফগান উদ্বাস্তুকে কানাডায় আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ পর্যন্ত সাত হাজার ৫৫০ জন আফগান উদ্বাস্তু এসেছে। সরকার আশা করছে, আগামী তিন বছরে নতুন পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই আসবেন অর্থনৈতিক ধারায়। তবে নতুন উদ্বাস্তুদের সংখ্যাও আগের হিসাবের চেয়ে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০২২ সালে কানাডায় ৬০,৫০০ উব্দাস্তু ও সুরক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তি পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হবেন বলে সরকার আভাস দিলেও এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ৭৬,৫৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা সোমবার এটিকে “বিশ্বে বলপূর্বক স্থানচ্যুত হওয়ার রেকর্ডের এই সময়ে” স্বাগত জানিয়েছে। 

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, “এতে করে আরও বেশি সংখ্যক দুঃস্থ উদ্বাস্তু নিরাপত্তা ও নতুন আবাস পাবে।”

ফ্রেসার বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিভাগ (IRCC) মহামারির সময় স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করতে ইচ্ছুক কর্মীদের আবেদন ত্বরান্বিত করবে। তবে এসব কর্মী বাছাইয়ের বিধি-ব্যবস্থা ঠিক করা হবে প্রাদেশিক সরকারগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে যাতে করে সঠিকভাবে পেশাজীবীদের বেছে নেওয়া যায়।

আইআরসিসি মহামারি সম্পর্কিত কিছু বিশেষ কর্মসূচিতে আবেদন প্রক্রিয়াকরণের কাজ অব্যাহত রাখবে। এসব কর্মসূচির আওতায় কানাডায় অত্যাবশ্যকীয় পদে দায়িত্ব পালনরত টেম্পোরারি রেসিডেন্টদেরকে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি মর্যাদা দেওয়া হবে।