অন্টারিওতে পুরুষ ডাক্তারের কাছে সার্জারি করলে নারী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি!

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওভিত্তিক এক জরিপে দেখা গেছে, একজন পুরুষ চিকিৎসকের হাতে সার্জারি করলে নারী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছন ক্যাথারাইন ডিক্লার্ক ও হান্নাহ আলবের্গা।

চিকিৎসা সাময়িকী জেএএমএ সার্জারিতে (JAMA Surgery) গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে প্রকাশ করা হয় এই সমীক্ষা। এতে ২০০৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অন্টারিওতে সচরাচর যে ২১ ধরণের সার্জারি করা হয় তার মধ্যে একটি বিশেষ সার্জারি করিয়েছেন এমন ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর ওপর আলোকপাত করা হয়। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের চিকিৎসকরা অপারেশন করেছেন এমন রোগী, বিশেষ করে নারী রোগীদের ক্ষেত্রে “সার্জারি পরবর্তী বিরূপ ফল ঘটার সম্ভাবনা কম হলেও সংখ্যার দিক থেকে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।” 

সমীক্ষা অনুযায়ী, বিপরীত লিঙ্গের চিকিৎসকের হাতে অপারেশন করিয়েছেন এমন রোগীদের প্রায় ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রেই সার্জারির পর এক বা একাধিক বিরূপ ফলাফল ঘটেছে। তবে সমীক্ষার একজন লেখক সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, বিরূপ ফলাফল ঘটেছে এমন রোগীদের বেশিরভাগই নারী। মাউন্ট সিনাই অ্যান্ড হেলথ নেটওয়ার্ক ইউনিভার্সিটির ইউরোলজির ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিস্টোফার ওয়ালিস টরন্টোর সিটিভি নিউজকে বলেন, “মজার ব্যাপার হলো, আমরা দেখতে পেয়েছি, নারী বা পুরুষ যে সার্জনের কাছেই অপারেশন করিয়ে থাকেন না কেন পুরুষ রোগীদের ওপর তার কোন প্রভাব পড়ে না।”

“কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যেসব নারী রোগী পুরুষ সার্জনের কাছে অপারেশন করিয়েছেন তারা নারী সার্জনের কাছে অপারেশন করানো নারীদের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি বিরূপ ফলাফলের মুখে পড়েছেন। আর তাদের অপারেশনের পর মৃত্যুর ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি।”

ডা. ওয়ালিস বলেন যে, চার বছর আগে তিনি এ সংশ্লিষ্ট একটি সমীক্ষায় অংশ নেন যাতে দেখা যায়, নারী সার্জনদের হাতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা পুরুষ সার্জনের হাতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের চেয়ে “কিছুটা হলেও ভালো” ফল পেয়েছেন; অবশ্য পার্থক্যটা ছিলো অপেক্ষাকৃত সামান্যই। তিনি বলেন, হার্ট অ্যাটাকের মত ঘটনায় রোগী ও চিকিৎসকের লৈঙ্গিক অবস্থানের একটি ভূমিকা থাকে বলে ফ্লোরিডার এক সমীক্ষা থেকে জানার পর তিনি এ বিষয়টি আরও পরীক্ষা করে দেখতে আগ্রহী হন।

তিনি বলেন, “হৃদরোগে আক্রান্ত একজন পুরুষ জরুরি বিভাগে এসে নারী বা পুরুষ যে চিকিৎসকের কাছেই চিকিৎসা পান না কেন উভয়ের কাছেই তিনি সমভাবে ভালো ফল পান। কিন্তু একই কারণে একজন নারী সেখানে এলে তিনি ভালো ফল পান যদি কোনও নারী চিকিৎসক তাকে দেখেন।

“আর এটিই আমার মধ্যে এমন ভাবনার সৃষ্টি করে যে, নারী ও পুরুষ চিকিৎসকরা নারী ও পুরুষ রোগীর সঙ্গে ভিন্নভাবে মিথষ্ক্রিয়া করেন। আর এটি যদি হৃদরোগের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে তাহলে সার্জারির রোগীদের ক্ষেত্রেও এর একটা ভূমিকা থাকার কথা।”

সানিব্রুক হেলথ কেয়ার সেন্টারের হার্টের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং সমীক্ষার সহযোগী

লেখক ডা. এঞ্জেলা জারাথ বলেন, এটিও উল্লেখ করা জরুরি যে, সার্জারি বিষয়ে যারা লেখাপড়া করেন তাদের মাত্র ১০ শতাংশের মত নারী। তিনি বলেন, এই চিকিৎসা খাতটি পুরোপুরিই পুরুষদের নিয়ন্ত্রিত।

তবে একই সঙ্গে, ডা. জারাথ বলেন, সমীক্ষার লেখকরা মনে করেন না যে, সমীক্ষার ফলাফল অপারেশনের বিধিবিধান সম্পর্কিত কারিগরি বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “উপাত্তগুলো এত বড়ো যে, মুষ্ঠিমেয় সার্জনদের দিয়ে এটির প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা কম, যারা তাদের প্রতিপক্ষের মত সংখ্যায় বিশাল নয়। আমার মনে হয়, প্রত্যেকেরই এটি অনুধাবন করা গুরুত্বপূর্ণ যে, সার্জারি কেবল অপারেশন রুমে ঘটা কোনও প্রক্রিয়ামাত্র নয়। সেটি এর এক ক্ষুদ্র অংশ শুধু।”

জারাথ আরও যোগ করেন, লৈঙ্গিক পার্থক্যের বিষয়টি অপারেশন রুমের বাইরে তাদের দক্ষতার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারে।

খোদ সমীক্ষাটিতে কিন্তু সার্জারি পরবর্তী প্রতিকূল ফলাফল নিয়ে আলোকপাত করেনি বরং তার মূল লক্ষ্য ছিলো মহামারিজনিত প্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলি। ডা. ওয়ালিস বলেন, সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এর লেখকরা কিছু প্রতিক্রিয়া ঘটবে বলে ধারণা করেছিলেন, তবে তারা আশা করেন যে, চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতরা কীভাবে “আরও ভালো করতে পারেন” সেটি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এই গবেষণা সহায়ক হতে পারে।”

তিনি বলেন, “আমি এটিকে আমার ব্যবহারিক পেশাজীবনকে অভিযুক্ত করার বিষয় হিসাবে দেখি না বরং একটি সুযোগ হিসাবে দেখি যাতে করে আরও বেশি সংবেদনশীল ও চিন্তাশীল হতে পারি এবং আমার নারী ও পুরুষ রোগীদের সঙ্গে কীভাবে মিথষ্ক্রিয়া করা দরকার যাতে তাদের আশার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানো নিশ্চিত করতে এবং পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ও পুরোপুরি বুঝতে পারছি কিনা এসব বিষয়ে চিন্তা করতে পারি।”

“আমার মনে হয়, কোন ব্যক্তিবিশেষকে নিশানা বানানোর উদ্দেশ্যে এই সমীক্ষার পরিকল্পনা করা হয়নি বরং সব রোগীর ক্ষেত্রে ফলাফল আরও উন্নত করাই এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। এটি বলে দিচ্ছে, নাররিা সার্জারির ক্ষেত্রে কতটা মূল্য ও শক্তিমত্তা যোগ করেছেন সেটিও তুলে ধরেছে এই সমীক্ষা।”