কানাডায় বর্ণবাদী পতাকা উড়ানো বৈধ!

খুরশিদ আলম

কদিন আগে অন্টারিও’র লন্ডন শহরে এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে একটি বর্ণবাদী পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছিল। এটি কনফেডারেট পতাকা নামে পরিচিত। আর এটি উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত চরম বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের একটি প্রিয় প্রতীক যা এবার অটোয়াতে লরি চালকদের ভ্যাকসিন বিরোধী উন্মত্ত সমাবেশেও উড়াতে দেখা গেছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, বর্ণবাদের প্রতীক এই পতাকাটি উড়িয়ে কাউকেই কিন্তু আইনের মোখমুখি হতে হয়নি। না লরি চালকদেরকে, না লন্ডনের সেই বাড়ির মালিককে। অথচ বলা হয়ে থাকে যে, কানাডা একটি বহু সংস্কৃতির দেশ, শান্তির দেশ এবং নিরাপদ দেশ। কিন্তু এই দেশেই আবার প্রকাশ্যে এক সম্প্রদায়ের সদস্যরা অন্য সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে পারেন পতাকা উড়িয়ে! এবং এটি আইনের চোখে বৈধ!!

অন্টারিও’র লন্ডনে অবস্থিত যে বাড়িটির সামনে কনফেডারেট পতাকাটি উড়ানো হয়েছিল সেটি হয়তো অনেকেরই নজরে এসেছিল। কিন্তু প্রথম দিকে কেউই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ বাচ্য করেননি। হতে পারে তাঁদের অনেকেই এই পতাকার ইতিহাসটি জানেন না। বা জানলেও মনে মনে এর সমর্থক তাঁরা।

তবে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের কয়েকজনের নজরে আসার পর তাঁরা এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এদেরই একজন ট্রিশ কিওয়ানুকা। তিনি ঐ বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেন সেখানে প্রায় দোতলা সমান উঁচু এক মাস্তুলের মাথায় কনফেডারেট পতাকাটি উড়ছে বাতাসে। সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, ‘এই দৃশ্যটি দেখে আমার হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার দশা হয়েছিল।’  তাঁর মতে ‘সংখ্যালঘু কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হিসাবে যখন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের প্রতীক কারো নজরে আসে তখন ভীত হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকে।’

উল্লেখ্য যে, এই কনফেডারেট পতাকাটির সাথে এমন এক ভয়ঙ্কর ইতিহাস জড়িয়ে আছে যা স্মরণ করলে আজও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের সদস্যরা শিউরে উঠেন। এই পতাকা তাঁদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় আমেরিকার বীভৎস সেই দাসযুগের কথা। সে যুগে যাঁরা দাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যাঁরা দাস মালিক ছিলেন, যাঁরা দাস প্রথাকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন তাঁদের প্রতীক হলো এই কনফেডারেট পতাকা।

হ্যামিলটনে একটি  কনস্ট্রাকশন সাইটের সামনে বর্ণবাদের প্রতীক কনফেডারেট পতাকা হাতে একজন শে^তাঙ্গ নির্মান কর্মী। অভিযোগ উঠার পর তিনি তা নামিয়ে নেন। ছবি : এডাম কার্টার /সিবিসি

এই পতাকাটি আরো যাদের প্রিয়, তাঁদের মধ্যে আছেন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। অতীতে ভয়াবহ ত্রাস সৃষ্টিকারী কুখ্যাত ‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’ (Ku Klux Klan) এর সদস্যাও এই পতাকা ব্যবহার করতেন তাঁদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সময়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তাঁদের মূল টার্গেট ছিল কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠি। কৃষ্ণাঙ্গদেরকে গুলি করে হত্যা করার পাশাপাশি ঘরের ভিতর আটকে রেখে পুড়িয়ে মারার ঘটনাও ঘটিয়েছেন তাঁরা। আজকে ঐ কু ক্লাক্স ক্লান এর উত্তরসূরীরা নর্থ আমেরিকায় মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সাউথ এশিয়ান, মিডল ইস্টার্ন ও আফ্রিকান অঞ্চল থেকে আসা ইমিগ্রেন্ট এবং রিফিউজিদের বিরুদ্ধে সময় সুযোগ পেলেই সোচ্চার হয়ে উঠছেন এবং সমাবেশ ও মিছিল করছেন।

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৫ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনায় অবস্থিত একটি চার্চে প্রার্থনারত ৯ জন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন ডিলান স্টর্ম রুফ নামের এক শে^তাঙ্গ তরুণ। ভয়াভহ ঐ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই ওয়েবসাইটে ঐ তরুণের বেশ কিছু ছবি দেখা যায় যেখানে তিনি ঐ কনফেডারেট পতাকা হাতে নিয়ে পোজ দিয়েছেন। পরে পুলিশ অবশ্য  তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ঐ নৃশংস হত্যাকান্ডের পর গোটা আমেরিকায় কনফেডারেট পতাকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।    

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনো এই কনফেডারেট পতাকা ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোয় জাতীয় পতাকার পাশাপাশি এই কনফেডারেট পতাকা বিশেষভাবে সমাদৃত। এমনকি সরকারী ভবনেও এই পতাকা উড়তে দেখা গেছে এই কিছুদিন আগেও। এ প্রসঙ্গে মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের কথা বলা যায়। তাদের পতাকায় এই কনফেডারেট প্রতীক ব্যবহার করে আসা হচ্ছিল বহু বছর ধরেই। তবে ঐ পতাকা থেকে কনফেডারেট প্রতীক বাদ দেওয়ার জন্য কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো সুদীর্ঘকাল ধরে দাবী করে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে মিসিসিপি রাজ্যের পতাকা থেকে বর্ণবাদী কনফেডারেট প্রতীকটি বাদ দেয়ার পক্ষে রাজ্যের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট উভয় কক্ষই সম্মতি দেয়। এবং ২০২২ সালের জানুয়ারীতে মিসিসিপি অঙ্গরাজ্য তাদের পতাকা থেকে কনফেডারেট প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে আকাশে উড়ায়। 

বিবিসি’র এক খবর থেকে জানা যায়, মিসিসিপি-ই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ রাজ্য যারা পতাকায় কনফেডারেট প্রতীক ব্যবহার করে আসছিল। শ্বেতাঙ্গরা এ পতাকাকে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক মনে করেন। অন্যদিকে এই পতাকা কৃষ্ণাঙ্গদের স্মরণ করিয়ে দেয় শে^তাঙ্গ দাস মালিকদের হাতে তাঁরা কতটা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে কনফেডারেট পতাকা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। এই পতাকা মূলত ব্যবহৃত হত দাস-নির্ভর রাজ্যগুলোতে (১৮৬০ থেকে ৬৫ সালে) গৃহযুদ্ধর সময়ে। সে যুদ্ধে কনফেডারেটরা পরাজিত হয়।

কিন্তু আমেরিকার গৃহযুদ্ধে কনফেডারেটরা অর্থাৎ দাস প্রথা বজায় রাখার পক্ষে যাঁরা ছিলেন তাঁরা সেদিন পরাজিত হলেও তাঁদের অন্তর থেকে ঘৃণ্য বর্ণবাদী মনোভাব আজো দূর হয়নি। দূর হয়নি তাঁদের অন্তরের কলুষতা। তাঁরা এখনো আদিকালের সেই দাস প্রথার কথা স্মরণ করে পুলকিত হন। স্বপ্ন দেখেন শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ আবারো প্রতিষ্ঠিত হবে, ফিরে আসবে শ্বেতাঙ্গদের স্বর্গরাজ্য, আমেরিকা হবে ‘গ্রেট এগেইন’।

এরকম স্বপ্ন দেখার লোকের অভাব নেই কানাডায়ও। ‘MAKE CANADA GREAT AGAIN’ স্লেগানে বিশ্বাসীরা সর্বক্ষণই স্বপ্ন দেখেন কানাডা হবে শুধু শ্বেতাঙ্গদের। এই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা দিনে দিনে আরো বেশী মাত্রায় সংগঠিত হচ্ছেন। এমনকি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের ভাবধারায় বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দলও আত্মপ্রকাশ করেছে কয়েক বছর আগে। এই দলটির নাম ‘পিপল’স পার্টি অব কানাডা’। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্সিম বার্নিয়ার হলেন একজন চরম বর্ণবাদী ব্যক্তি। স্মরণ করা যেতে পারে যে কয়েক বছর আগে কানাডার জাতীয় নির্বাচনে অংশও নিয়েছিল এই দলটি। আর এই নির্বাচন প্রাক্কালে চরম রক্ষণশীল দল পিপল’স পার্টি অব কানাডার প্রধান ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের ছবি সম্বলিত একটি বিলবোর্ড এর বক্তব্য নিয়ে তখন চরম বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সুদৃশ্য ঐ বিলবোর্ডে লেখা ছিল ‘Say NO to mass immigration’। ভেঙ্গুভার, ক্যালগারী, হ্যলিফেক্স, টরন্টো এবং রিজাইনাতে এই বিলবোর্ড সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

আমরা জানি কানাডায় ইমিগ্রেন্ট ও দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ডানপন্থী একাধিক রক্ষণশীল গ্রুপ সর্বদাই সক্রিয়। আর এদের জাতীয় নেতা হিসাবে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছেন ম্যাক্সিম বার্নিয়ার।

‘অন্টারিও টেক ইউনিভার্সিটি’র হেট ক্রাইম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডক্টর বারবারা পেরির বক্তব্য অনুযায়ী, সারা কানাডায় কমপক্ষে ১৩০টি চরম ডানপন্থী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, এই সংখ্যাটি ২০১৫ সালের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।

প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা গেছে, কানাডায় বেশিরভাগ গ্রুপই তৈরি হয়েছে বিশেষ কোনও ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিরুদ্ধ বা ঘৃণার মনোভাব থেকে। আর এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো মুসলিম ও ইহুদি বিরোধী গ্রুপ। এছাড়া ইমিগ্রেন্ট, আদিবাসী, নারী, এলজিবিটি সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা থেকেও বিভিন্ন চরমপন্থী গ্রুপ তৈরি হয়েছে।

আমরা দেখেছি, এডমন্টনে ইতিপূর্বে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী এক প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছিল এবং সেটা প্রকাশ্য এক সমাবেশের মাধ্যমে। পোস্টারে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী নানা বক্তব্য লিখে উক্ত সমাবেশে এই প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হয়। ঐ সময় ইমিগ্রেন্ট বিরোধীরা রঙ্গীন পোস্টারে ‘Keep Canada Canadian’, ‘No Migration’ এই জাতীয় স্লোগান লিখে সমাবেশ করেন। সমাবেশে তাঁদের আচরণ ছিল অত্যন্ত আগ্রাসী। যারা তাঁদের এই অভিবাসন বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে আসেন  তাঁদের উপর  তাঁরা শারীরিক হামলা চালান। শুরুতে উপস্থিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে পরে আরো অধিক সংখ্যক পুলিশ ডাকতে হয়েছিল ঘটনাস্থলে।

কানাডার এন্টি-হেইট নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ইভান ব্যালগর্ড বলেন বলেন, ওইসব লোকেরা ক্রমশই বেশি করে মূল ধারার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িত হচ্ছে। 

সম্প্রতি রাজধানী অটোয়া-সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ভ্যাকসিন বিরোধিতার নাম করে লরি চালকরা যে সকল অবৈধ কর্মকান্ড ও তান্ডব চালিয়েছেন তার পিছনেও ইন্ধন ও আর্থিক সহায়তা ছিল এই ইমিগ্রেন্ট বিরোধী কিছু রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠনের। এদের উস্কানী ও সমর্থন পেয়ে লরি চালকদের কেউ কেউ সমাবেশে এসে কানফেডারেট পতাকা উড়িয়েছেন। লন্ডনে যে ব্যক্তি তাঁর বাড়ির সামনে কনফেডারেট পতাকা উড়িয়েছিলেন তিনিও সম্ভবত লরি চালকদের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করার জন্যই এ কাজটি করেছিলেন। এবং এই সমর্থন ব্যক্ত করার নেপথ্যে মূল যে উদ্দীপনা বা অনুপ্রেরণা কাজ করেছে সেটি নিশ্চই ছিল শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদের আদর্শের প্রতি আনুগত্য।

সিবিসি নিউজের পক্ষ থেকে একজন সাংবাদিক গিয়েছিলেন লন্ডনের ঐ বাড়িতে পতাকা উত্তোলনের কারণটি জানার জন্য। কলিং বেল টিপার পর এক মহিলা এসে দরজা খুলেন।  তাঁর কাছে পতাকা উত্তোলনের কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এই পতাকা কোন অর্থ বহন করে না।’ এ বিষয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে চাননি। তবে কয়েক মিনিট পরই দেখা গেছে একজন পুরুষ বাড়ি ভিতর থেকে বের হয়ে এসে পতাকাটি নামিয়ে ফেলেন। তিনিও সিবিসি নিউজের সাংবাদিকের কোন প্রশ্নের জবাব দেননি।

তাঁদের এই আচরণই বলে দেয়, তাঁরা জেনেশুনেই পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন। কিন্তু ভাবেননি যে বাড়িতে টিভি’র সাংবাদিক এসে হাজির হবে। টিভি’র সাংবাদিক দেখেই তারা বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করেন।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের তৎপরতা যথেষ্ট পরিমানেই বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এর পিছনে সবচেয়ে বড় ইন্ধনদাতা হিসাবে কাজ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগে এই শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের কার্যক্রম ছিল সীমিত এবং প্রকাশ্যে খুব একটা আসতেন না এরা। এখন এরা যা কিছু করছেন তা প্রকাশ্যেই করছেন। কোন রকম ভীতি বা সংকোচ অথবা লোক লজ্জার তোয়াক্কা তাঁরা আর করছেন না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, গত নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে (Capitol Building) এই শ্বেতাঙ্গবাদীদের হামলা এবং কানাডায় কয়েক সপ্তাহ আগে লরি চালকদের একাংশ কর্তৃক অটোয়া অবরোধ। শুধু অটোয়াই নয়, কানাডায় আরো কয়েকটি স্থানে শ্বেতাঙ্গবাদীদের প্ররোচণায় অবরোধ সৃষ্টি করেছিল তাঁরা। কোন ভয় ডর ছিল না তাঁদের মধ্যে। সংকোচ বা লোক লজ্জা তো দূরের কথা। পরিস্থিতি এমন পর্যায় চলে গিয়েছিল যে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য হয়ে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছিল যা সচরাচর ঘটে না কানাডায়। খুব কম সময়ই কানাডাকে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ইতিপূর্বে।

বস্তুত অনেক দিন ধরেই কানাডায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবির্ভূত হওয়ার কিছুুদিনের মধ্যেই কানাডার কুইবেক প্রভিন্সের রাজধানী কুইবেক সিটিতে এই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের সমর্থক এক তরুণের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের ৬ জন সদস্য। ৯/১১ এর ঘটনার পর পর যখন সন্দেহের তীর মুসলিমদের প্রতি, তখনও এরকম হত্যাযজ্ঞ ঘটেনি গোটা উত্তর আমেরিকায়। এর পর অন্টারিও’র লন্ডন শহরে ঘটে আরেক মর্মান্তিক হত্যাকান্ড। সেখানে এক মুসলিম পরিবারের চারজনকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করেন এক শ্বেতাঙ্গবাদী তরুণ। 

কুইবেক সিটি ও লন্ডন সিটির দুটি নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছেন দুজন তরুণ। এককভাবেই তাঁরা হত্যাকান্ড দুটি ঘটিয়েছেন। তাঁদের সাথে কোন সহযোগী ছিল না। তবে যেটা ছিল সেটা হলো, একই চিন্তাধারার লোকদের উস্কানী ও উদ্দীপনা। এই চিন্তাধারার লোকেরাই কনফেডারেট পতাকার সমর্থক। এই দলের লোকেরাই বর্ণবাদের সমর্থক এবং এই দলের লোকেরাই সন্ত্রাসবাদের সমর্থক। সন্ত্রাসীদের কোন নির্দিষ্ট বর্ণ নেই, ধর্ম নেই, দেশও নেই।

আমরা জানি কানাডা একটি বর্ণনিরপেক্ষ এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে – যদি তাই হয়, তবে এরকম একটি দেশে চরম বর্ণবাদী কনফেডারেট পতাকা উড়ানো কি ভাবে বৈধ হয়? আর কানাডায় বর্ণবাদ যদি অপরাধ হয়ে থাকে তবে বর্ণবাদী পতাকা কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না?

প্রশ্নটা সহজ কিন্তু এর উত্তরটা বেশ জটিল। কারণ কানাডায় কোন প্রতীক নিষিদ্ধ নয়। এমনকি নৎসীদের ‘সয়েস্টিকা’ প্রতীক বা  তাঁদের পতাকাও নিষিদ্ধ নয়। অথচ এই প্রতীক বা পতাকা ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কানাডার কুইবেক প্রভিন্সে ধর্মনিরপেক্ষাতার দোহাই দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিছু ধর্মীয় পোষাক ও প্রতীক। কুইবেকে এই আইনটি (বিল-২১) পাস হয় ২০১৯ সালে। ঐ আইনে বলা আছে কুইবেক প্রভিন্সে সরকারী চাকরীজীবীরা বিশেষত যাঁরা কর্তৃত্বের অবস্থানে আছেন তাঁরা কর্মস্থলে কোন ধর্মীয় পোষাক বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। এঁদের মধ্যে আছেন শিক্ষক, বিচারক, পুলিশ বাহিনীর সদস্য প্রমুখ। আর পোষাকের মধ্যে আছে মুসলমানদের হিজাব, বোরখা, শিখদের পাগড়ী, ইহুদীদের কিপ্পা (টুপি) ইত্যাদি। অথচ এগুলোর সঙ্গে বর্ণবাদ বা গণহত্যার মত কোন ঘটনার সম্পর্ক নেই।

এখানে হাস্যকর একটি বিষয় হলো, যে পার্লামেন্ট ভবনে বসে ধর্মীয় পোষাক বা প্রতীক ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইন পাশ করা হয়েছে, সেই ভবনেই স্পীকারের মাথার উপর ঝুলে আছে যিশু খৃষ্টের ক্রশবিদ্ধ বিশাল আকৃতির এক দেয়াল মূর্তি। এই মূর্তিটি কি ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক? এই প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন। এমনকি দাবীও উঠেছে এটি অপসারণের। কিন্তু আজো এটি সরানো হয়নি। ইতিপূর্বে ‘পার্টি কুইবেকো’ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অস্বীকৃতি জানিয়েছিল মূর্তিটি অপসারণের ব্যাপারে। অসঙ্গত বা পরস্পরবিরোধী আইন বোধ হয়ে একেই বলে।

কানাডার আইনে বলা আছে এদেশে অবমাননাকর কোন প্রতীক যেমন সয়েসটিকা, নাৎসি পতাকা ইত্যাদি ক্রয় করা বা সংগ্রহ করা কিংবা প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ নয়। তেমনি নিষিদ্ধ নয় কনফেডারেট পতাকাও। (তথ্য সূত্র : freshdaily.ca)

তবে কানাডার ক্রিমিনাল কোডের ৩১৮Ñ৩১৯ ধারায় বলা আছে এই প্রতীকগুলোর ব্যবহার তখনই বেআইনী হয়ে যায় যখন কেউ এগুলোকে কোন শনাক্তযোগ্য গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোন ধরণের বিদ্বেষ বা সহিংসতা অথবা গণহত্যার প্ররোচনায় ব্যবহার করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, কেউ যদি ইহুদীদের কোন স্থাপনায় বা উপাসনালয়ে সয়েস্টিকা চিহ্ন একে দেন বা কোন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা গাড়িতে কনফেডারেট পতাকা একে দেন তাহলে তা বর্ণবাদ বা বিদ্বেষমূলক আচরণ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং আইনের চোখে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কিন্তু আবার এরকমও দেখা গেছে যে, মুসলমানদের উপাসনালয়ে বর্ণবাদী বা বিদ্বেষী হামলার যথেষ্ট প্রমান পাওয়া সত্বেও পুলিশ সেটাকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। গত ২০২০ সালে টরন্টোতে কয়েকটি মসজিদে দুর্বৃত্তরা হামলা চালালে মসজিদের পক্ষ থেকে পুলিশকে অবহিত করা হয়। তখন টরন্টোর পুলিশের মুখপাত্র জেনিফারজিৎ সিধু বলেন যে, জুন মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত টরন্টোর দুটি মসজিদে চার দফা হামলার যে রিপোর্ট করা হয়েছে সে সম্পর্কে পুলিশ সচেতন আছে। তবে তিনি জানান, ‘এসব হামলার সব ক’টিরই তদন্ত হয়েছে এবং কোনওটিই ঘৃণাপ্রসূত হামলা বলে বিশ্বাস করার কারণ নেই।’

মসজিদে কি তাহলে চোর বা ডাকাতরা গিয়ে হামলা চালিয়েছিল টাকা পয়সা চুরি বা লুঠ করার জন্য? এ প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?

সে সময় কানাডার মুসলমানদের জাতীয় পরিষদের সিইও মোস্তফা ফারুক হাফপোস্ট কানাডাকে বলেন, হামলার ঘটনাগুলোর তদন্তে পুলিশ যে প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে তা ‘পুরোপুরি অর্থবহ নয়।’ তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যেমনটা বোঝা যাচ্ছে সেটি হলো, প্রথম সন্দেহভাজন চিহ্নিত হবার কয়েক দিন পরই পুলিশ ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ নাকচ করে দেয়। এটাই ‘সমস্যা।’

অর্থাৎ বর্ণবাদী বা ঘৃণাপ্রসূত কোন ঘটনা ঘটলে সেটা প্রমাণ করাও আরেক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর কানাডায় বাক স্বাধীনতা নামে আরেকটি বলিষ্ঠ আইন রয়েছে যা কোন বিতর্কিত প্রতীককে বা বক্তব্যকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে বা প্রায় অসম্ভব করে তুলে।

কিন্তু তারপরও কিছু সমাজ সচেতন ব্যক্তি ও রাজনীতিক আছেন যাঁরা বর্ণবাদ, ঘৃণা বা বিদ্বেষে বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। এমনই একজন হলেন লন্ডন অন্টারিও’র ‘মেলিসা এনজি’। এই মহিলা সম্প্রতি অনলাইনে এক পিটিশন চালু করেছেন কনফেডারেট পতাকাসহ অন্যান্য বিদ্বেষমূলক প্রতীক প্রদর্শনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করার জন্য এবং লন্ডনে এইসব প্রতীক নিষিদ্ধ করার জন্য। মেলিসা নিজে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের কেউ না হয়েও এই উদ্যোগ নিয়েছেন। সিবিসি নিউজকে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন অন্টারিও’র কলিংওড সিটি কাউন্সিলের একটি সিদ্ধান্ত থেকে। টরন্টোর উত্তরে অবস্থিত ওয়াসাগা সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত ঐ কলিংওড সিটির কাউন্সিলরগণ গত বছর সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন যেখানে বলা হয়েছিল, কনফেডারেট পতাকাসহ অন্য যে কোন ধরণের বিদ্বেষমূলক প্রতীক তাদের শহরে ব্যক্তিগতভাবে বা সরকারীভাবে প্রদর্শন করা যাবে না।

মেলিসা সিবিসি নিউজকে বলেন, ‘কোন ঘৃণার প্রতীক জনসমক্ষে থাকা বা প্রদর্শন করা উচিত নয়। একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে যিনি নৈতিকতা নিয়ে ভাল থাকতে চান তিনি কেন এমন একটি পতাকা উড়াবেন যা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে মানসিকভাবে আঘাত করে বা পীড়া দেয়?’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি আমাকে বিরক্ত করে, আমাকে হতাশ করে এবং যাঁরা এই বিদ্বেষী পতাকা দেখে নিজেরা ভয় পান, সন্তানদের কথা ভেবে ভয় পান তাঁদের কথা ভেবে দুঃখ পাই।’

মেলিসা আশা করছেন তার অনলাইন পিটিশন দেখে লন্ডন সিটি কাউন্সিলরগণ এগিয়ে আসবেন কনফেডারেট পতাকাসহ অন্যান্য বিদ্বেষী প্রতীক বন্ধে আইন করার জন্য। 

এদিকে লন্ডন সিটি মেয়র ‘এডি হোল্ডার’ এর একজন মুখপাত্র জানান তাঁরা এই কনফেডারেট পাতার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন স্থানীয়দের কাছ থেকে। তবে পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে তাঁরা এর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না কারণ কনফেডারেট পতাকা প্রদশর্ন করা অপরাধের মধ্যে পড়ে না।

তবে আইনের চোখে এটি অপরাধ না হলেও মেয়রের অফিস থেকে বলা হয়, ‘এই ধরণের প্রদর্শনী জঘন্য।’ সিবিসি নিউজে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় এ কথা বলা হয়। ঐ বার্তায় আরো বলা হয়, ‘কনফেডারেট পতাকা উড়ানো যেহেতু বেআইনী নয় এবং তা অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না তাই আমরা এর নিন্দা করা ছাড়া অন্য কোন পদক্ষেপ নিতে পারছিনা।’

সিটি কাউন্সিল এর পক্ষ থেকে কনফেডারেট পতাকা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে কোন আইন করা হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে মেয়রের মুখপাত্র বলেন, মেয়র এখন অফিসে নেই।

সিটির পক্ষ থেকে এরকম প্রতিক্রিয়া শুনে মেলিসা মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘তারা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এমন একটি আইন নিয়ে কাজ করছে যা অনেক পুরানো, শ্লথ গতি সম্পন্ন এবং বর্তমান যুগের অনুপযোগী। এ ব্যাপারে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

লন্ডনের স্থানীয় কয়েকজন রাজনীতিকও কনফেডারেট পতাকা উড়ানোর বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। লন্ডন নর্থ সেন্টার থেকে নির্বাচিত লিবারেল এমপি পিটার ফ্র্যাগিসকাটোস

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর নিন্দা জানিয়ে বলেন, কেউ যদি এই পতাকা কি ভাবে বিদ্বেষ ছড়ায় বা এটি কিভাবে বর্ণবাদীদের প্রতীক সেটি বুঝতে না পারেন তবে তার উচিৎ এ নিয়ে গবেষণা করা।

অন্টারিও’র  নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন জন এমপিপি-ও এর নিন্দা জানান এবং বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটিতে এর কোন স্থান নেই’। এই তিনজন এমপিপি হলেন, পেগি স্যাটলার, তেরেসা আর্মস্ট্রং এবং টেরেন্স ম্যাককেনা।

মেলিসা সিবিসি-কে জানান যদি তার অনলাইন পিটিশনটি লন্ডন সিটি কাউন্সিলরদের উদ্বুদ্ধ করতে না পারে আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে তবে তিনি প্রভিন্সব্যাপী তার পিটিশনের ব্যাপ্তি ঘটাবেন। প্রয়োজনে কানাডা ব্যাপীও পিটিশনের ব্যাপ্তি ঘটাতে পারেন।

কানাডার মতো এরকম একটি সুসভ্য দেশে এরকম অসভ্য ও বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কোন আইন নেই তা ভাবতেও কেমন যেন অদ্ভুত ও অস্বস্তিকর লাগে। কোন দেশে বাক-স্বাধীনতা থাকা অবশ্যই অতি উত্তম একটি আইন। কিন্তু এই বাক-স্বাধীনতার নামে কারো বর্ণের অবমাননা করা, কারো ধর্মের অবমাননা করা বা কারো অনুভূতিতে আঘাত হানা অথবা কারো প্রতি বিদ্বেষী আচরণ করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি বাক-স্বাধীনতা নয়। এই আইনে পরিবর্তন আনা অবশ্যই উচিত।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রবাসী কণ্ঠ