ভ্যাকসিন বিরোধী আন্দোলনের নামে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা আবারও সক্রিয়

কানাডায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এবার তাঁরা কলকাঠি নাড়ছেন লরি চালকদের ভ্যাকসিন বিরোধী আন্দোলনের নেপথ্যে থেকে। তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য লরি চাকলদেরকে তাঁরা উষ্কে দিচ্ছেন সরকারের বিরুদ্ধে। বিপুল পরিমাণের অর্থও যোগান দিচ্ছেন তাঁরা আন্দোলনকারীদের অযৌক্তিক ও অরাজক আন্দোলনকে সফল করার জন্য।    

শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ইন্ধন ও উষ্কানী পেয়ে জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কানাডার রাজধানী অটোয়ার কেন্দ্রস্থলের রাস্তাঘাট ও পার্লামেন্ট ভবনের আশপাশের রাস্তাঘাট একেবারেই অচল করে দেন লরি চালকদের একটি দল। একই সাথে কানাডার অন্যান্য শহরেও চলছে লরি চালকদের এই তান্ডব।

অটোয়ায় কানাডার পার্লামেন্ট ভবনের সমনে লরি চালকদের অবস্থান। ছবি:কানাডিয়ান প্রেস

সম্প্রতি কানাডায় কভিড-১৯ এর নতুন ভেরিয়েন্ট অমিক্রন এর প্রদুর্ভাব ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে ফেডারেল সরকার নতুন এক আইন জারি করে লরি চালকদের জন্য। ঐ আইনে বলা হয়, লরি চালকদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ফেরত আসার সময় করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন প্রমাণ দাখিল করতে হবে। গত ১৫ জানুয়ারী থেকে এই আইন কার্যকর হয়। আর তাতেই ক্ষেপে যান লরি চালকদের একটি অংশ যাঁরা ভ্যাকসিন নেননি। এবং এই সুযোগটিকে কাজে লাগান শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা।

আর ভ্যাকসিন বিরোধী এই লরি চালকরাও প্রায় সকলেই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ভাবধারায় বিশ^াসী। ফলে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সংগঠনগুলোর পক্ষে কাজটি সহজ হয়েছে তাঁদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামানোর জন্য।

উল্লেখ্য যে, অটোয়ায় বিক্ষোভ চলাকালে লরি চালকদের কেউ কেউ এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে, তাঁরা পুলিশকেও  হুমকী এবং ভীতি প্রদর্শন করতে ছাড়েননি। হুমকী ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন সাংবাদিকদের প্রতিও। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের প্রতীক কনফেডারেট পতাকাও উড়াতে দেখা গেছে লরি চালকদের সমাবেশে। ঘৃণা-বিরোধী বিশেষজ্ঞরা বলেন, লরি চালকদের মিছিলটি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ও ইসলাম বিরোধীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। আর এই মিছিলের যারা সংগঠক তাঁরাও সেই দলেরই। আর তার প্রমাণ পাওয়া যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আন্দোলনরত লরি চালকদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে! তিনি এক সমাবেশে বলেন, ‘আমরা কানাডার সেই মহান লরি চালকদের জানাতে চাই যে আমরা  তাঁদের সাথেই আছি।’

চরম শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের নেতা হিসাবে ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের পরিচিতি সর্বজনবিদিত। এরকম একজন লোকের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার অর্থ দাঁড়ায় কানাডার এই লরি চালকদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের একটি সুগভীর যোগসাজস রয়েছে। তাছাড়া ‘কানাডিয়ান এন্টি-হেট নেটওয়ার্ক’ এর নির্বাহী পরিচালক ইভান বালগর্ড গ্লোবাল নিউজকে বলেন, ‘মিছিলের সংগঠকরা প্রথম থেকেই অতি ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা অতীতেও অতি ডানপন্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ইসলাম বিরোধী মন্তব্যও করেছেন।’  

শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ আসলে নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের কারণে শ্বেতাঙ্গদের অনেকের মধ্যে এক ধরনের অহংবোধ ও শ্রেষ্ঠত্ববোধ তৈরি হয়েছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আর থেকে থেকেই এরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেন তাঁদের অতীত সেই ‘গৌরব’ তথা নৃশংসতাপূর্ণ সমাজব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে।

আমাদের মনে রাখতে হবে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদও সন্ত্রাসবাদ। এই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ও নব্য নাৎসিবাদীরা ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বহুত্ববাদের সংস্কৃতির জন্য রীতিমত হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বের সার্বিক মানব কল্যাণের জন্য এদেরকে সময় থাকতে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।