ক্রিপ্টোকারেন্সি কেলেঙ্কারিতে লাখ ডলারের বেশি খোয়ানোর পর মুখ খুললেন অন্টারিওর দুই নারী
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর দুজন নারী ক্রিপ্টোকারেন্সি (ডিজিটাল মুদ্রা) কেলেঙ্কারিতে লাখ ডলারের বেশি খোয়ানোর পর এ নিয়ে মুখ খুলেছেন এবং অন্যদের সতর্ক করছেন। সম্প্রতি এ বিষয়ে এক খবর প্রকাশ করে সিটিভি নিউজ। রিপোর্ট করেছেন প্যাট ফোরান।
টরন্টোর লি বলেন, “আমি বিধ্বস্ত বোধ করছি। আমি সত্যি জানি না, এখন কী করার আছে।” তিনি তার প্রকৃত নাম ব্যবহার না করতে সিটিভি নিউজকে অনুরোধ করেন।
লি বলেন, তিনি ফেসবুকে সক্রিয় থাকাকালে কেউ একজন তাকে নক করে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অর্থ বিনিয়োগ করে কীভাবে সহজে টাকা বানানো যায় সেটি তাকে শিখিয়ে দিতে পারে বলে জানায়। তিনি বলেন, “আমরা যখন ট্রেড অপশন গিয়ে কাজটা শুরু করি তখন আমি বিস্মিত হই কারণ আমার টাকার পরিমাণ সত্যি দ্রুত বাড়ছিলো।”
তিনি শুরু করেন ২,০০০ ডলার বিনিয়োগ করে এবং কিছুক্ষণ পর যখন দেখতে পান তার হিসাবের অঙ্ক ঊর্ধ্বমুখি তখন আরও কয়েক হাজার ডলার বিনিয়োগ করেন, যে লোকটি তাকে এই খেলায় নিয়ে এসেছে সে তাকে আরও বেশি অর্থ বাজি ধরতে উৎসাহ দেয়।
“আমি সঞ্চত সব অর্থ বিনিয়োগ করি, এমনকি আমি আমার ‘নিবন্ধিত অবসর সঞ্চয় পরিকল্পনার’ (RRSP) অর্থও তুলে নিয়ে ওখানে বিনিয়োগ করি। আর বন্ধুদের কাছ থেকে পর্যন্ত অর্থ ধার নিয়েছিলাম,” বলেন লি।
২৪,০০০ ডলার বিনিয়োগ করার পর তিনি তার অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখনই তাকে জানানো হয় যে, টাকা তুলে নেয়ার আগে ৫,০০০ ডলার টক্স শোধ করতে হবে এবং তার ওপর মাইনারস ট্যাক্স হিসাবে আরও ৫,০০০ ডলার দিতে হবে।
শেষ পর্যন্ত তার অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। তিনি মনে করছেন, তার সব টাকাই জলে গেছে।
লি বলেন, “আমি বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করা টাকা নিয়ে চিন্তিত, এমনকি আমার সঞ্চয় নিয়েও, আর আরআরএসপির টাকা তো গেছেই। আমি ব্যাপারটা কোনওভাবেই বিশ্বাস করতে পরছি না।”
অন্য মহিলাটিও টরন্টোর। ধরুন তার নাম মেল। কারণ তিনিও নিজের প্রকৃত নাম ব্যবহার না করার জন্য বলেছেন। মেল বলেন, একটি ডেটিংয়ের সাইটে বিচরণের সময় কোনও একজনের সঙ্গে যোগাযোগ হবার পর তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেন।
“তারা নিজেদের অ্যাকাউন্ট দিয়ে কত টাকা অর্জন করেছে সেই কাহিনী শোনাবে, তারপর জানতে চাইবে আপনি তাদের কাছ থেকে এই ব্যবসায় সম্পর্কে শিখে নিতে আগ্রহী কিনা,” বলেন মেল।
তিনিও অল্প কয়েক হাজার ডলার দিয়ে প্রথমে শুরু করেছিলেন, তারপর আরও বিনিয়োগ করতে থাকেন। যখন দেখা যায়, তার অ্যাকাউন্টে লাখ ডলারের বেশি জমা হয়েছে তখন তিনি অর্থ তুলে নেয়ার ইচ্ছা জানান। তাকেও জানানো হয় যে, অর্থ তুলে নিতে হলে ট্যাক্স ও অন্যান্য ফি দিতে হবে।
ডেটিং সাইটে পরিচয় হওয়া লোকটিকে তিনি শেষ পর্যন্ত ৮০,০০০ ডলার দিয়েছেন, কিন্তু সে অর্থ আর ফিরে পাননি।
মেল বলছিলেন, “এখন আমি সত্যি ভীত, কারণ আমি চাই টাকাটা ফিরে পেতে, আর ওই টাকা আমার সত্যি খুব প্রয়োজন।” তিনি আরও যোগ করেন, “জানি টাকাটা গেছে, সম্ভবত একেবারেই গেছে।”
ভিরিডি ফান্ডের (Viridi Funds) ডেভিড খালিফ একজন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, প্রতারকরা শিকার ধরার জন্য সামাজিক মাধ্যমকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে।
খালিফ বলেন, “আমার মনে হয়, একটি বিশ্বাসভাজন উৎস খুঁজে পাওয়াটাই ক্রিপ্টোকারেন্সির কঠিন দিক।”
খালিফ বলেন, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে বিনিয়োগের জন্য দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর ব্যাপারে যা খুবই সত্য বলে মনে হবে। আর জড়িত হতে হবে শুধু এমন উৎসের সঙ্গেই যাদের সুনাম আছে, সামাজিক মাধ্যমে আসা লোকদের সঙ্গে নয়।
তিনি বলেন, “এটা বুঝতে পারাই সবচেয়ে বড় বিষয় যে, স্ক্রিনের ওপারে যে লোকেরা
আছে, আপনি যদি তাদের না চেনেন তাহলে তারা হতে পারে পৃথিবীর যে কেউ।”
বিনিয়োগকারীদের প্রতি খালিফের পরামর্শ হলো এ বিষয়ে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এবং কেবল বিশ্বাসযোগ্য বিনিময়ে জড়িত হওয়া, কারণ আপনার পক্ষ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করছে বলে দাবি করা কারো কাছে একবার টাকা পাঠালে তা ফিরে পাওয়া প্রায় পুরোপুরিই অসম্ভব।
খালিফ বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক যে, ব্লকচেইনে (ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিচালনার কমপিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা) একবার টাকা পাঠিয়ে দিলে তা ফিরে পাবার কোনও উপায় নেই। এটি ব্যাংকের মতো নয় যে একজন ব্যক্তি অন্য কাউকে কল দিয়ে বলতে পারে, এটি প্রতারণা।”
মেল এখন মেনে নিয়েছেন যে, তার ৮০,০০০ ডলার সম্ভবত কখনই ফিরে পাবেন না।
তিনি বলেন, “কারণ আমি এই ইলেক্ট্রোনিক স্থানান্তরের অনুমোদন দিই। আমি নগদ অর্থ তুলে নেয়ার অনুমতি দিই, সব দায় আমারই। ব্যাংক এটাকে প্রতারণা বলতে পারবে না। সুতরাং এই টাকার কিছুটাও ফিরে পাবার কোনও উপায় নেই। আমি চাই মানুষ জানুক যে, এসব ঘটছে, কারণ আমার মনে হয়, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই প্রতারণার শিকার হবে।”