২০২১ সালে কানাডীয়দের কাছ থেকে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার প্রতারণাবিরোধী সেন্টারের (ঈঅঋঈ) হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কানাডীয়রা বিভিন্ন ধরণের প্রতারণার কারণে ১৬৩ মিলিয়ন ডলার খুইয়েছেন। সংস্থার কাছে প্রতারণার অভিযোগ এসেছে ৩৩ হাজার।

পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন ধরণের প্রতারণার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ খোয়া গেছে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রতারণায়। এতে প্রতারিত হয়েছেন ১,১৪৫ জন মানুষ যাদের খোয়া যাওয়া অর্থের পরিমাণ সব মিলিয়ে ৬১.৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর অর্থ হলো প্রত্যেক ব্যক্তি গড়ে ৫৪ হাজার টাকা করে খুইয়েছেন। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন আলেক্সান্দ্রা মায়ে জোন্স।

অর্থ খোয়া যাওয়ার পরিমাণের ভিত্তিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতারণার মাধ্যম ছিলো “রোমান্স”, যাতে ৬৭১ জন কানাডীয়র কাছ থেকে প্রতারকরা হাতিয়ে নিয়েছে  প্রায় ৩২ মিলিয়ন ডলার বা মাথাপিছু গড়ে ৪৮ হাজার ডলার। এই প্রেক্ষাপটে একজন প্রতারক তার শিকারকে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে আগ্রহী করে তোলে যাতে তার বিশ্বাস অর্জন করা যায়। পরে সেই বিশ্বাস কাজে লাগিয়ে অর্থ চায় কিংবা কোনও ধরণের ভুয়া ব্যবসায়ের উদ্যোগে বা অন্য কোনও খাতে অর্থ বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করে।

২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কানাডীয়রা বিভিন্ন ধরণের প্রতারণার কারণে ১৬৩ মিলিয়ন ডলার খুইয়েছেন। সংস্থার কাছে প্রতারণার অভিযোগ এসেছে ৩৩ হাজার। ছবি : ইউটিউব

আর্থিক সংশ্লিষ্টতার দিক থেকে প্রতারণার তৃতীয় ও চতুর্থ বৃহত্তম জায়গা দখল করেছে যথাক্রমে স্পিয়ার ফিশিং (স্পিয়ার ফিশিং হলো ই-মেল বা ইলেক্ট্রোনিক যোগাযোগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তি, সংগঠন বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে প্রতারিত করা।) এবং চাঁদাবাজি। জানুয়ারি থেকে স্পিয়ার ফিশিংয়ে ৫৭২ জন কানাডীয় ২১ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন এবং চাঁদাবাজির ঘটনায় ১১ মিলিয়ন ডলার গচ্চা দিয়েছেন ১,৬৩০ জন কানাডীয়।

প্রতারণার কোন উপায়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ খুইয়েছেন বিষয়টি এভাবে না দেখে, কোন উপায়ে কত বেশি সংখ্যক কানাডীয়কে প্রতারণা করা হয়েছে সে দিকটি বিবেচনায় নিলে পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন যে উপাযে সেটি হলো ‘ব্যক্তিগত তথ্য’ সম্পর্কিত বিষয়ে প্রতারণা। এতে প্রতারণার শিকার হন ৩,০৬০ জন। সিএএফসি এটিকে ডলারের মূল্যে বিচার করেনি, কারণ এ ধরণের প্রতারণার লক্ষ্য হলো একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা, ঠিক সেই মুহূর্তেই তাদেরকে আর্থিকভাবে প্রতারণা করা নয়। সিএএফসির ওয়েবসাইটের বক্তব্য অনুযায়ী, ওইসব ব্যক্তিগত তথ্য হয়তো পরে পরিচয় নিয়ে জালিয়াতির মত কাজে ব্যবহার করা হতে পারে।

ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে প্রতারণার ঘটনা নিয়ে সংস্থার কাছে অভিযোগের সংখ্যাও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে অভিযোগ আসে ৪,৫৪৯টি, চাঁদাবাজির ঠিক পরেই যার অবস্থান। চাঁদাবাজির অভিযোগ আসে মোট ৫,৭৪১টি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ প্রতারিত হয়েছেন ‘পণ্য কেনাবেচা’ সম্পর্কিত ঘটনায়। এতে ২,২২২ জন কানাডীয় হারিয়েছেন মোট ৪.৬ মিলিয়ন ডলার। এ ধরণের প্রতারণার ক্ষেত্রে অহরহ ভুয়া বিজ্ঞাপনের সংশ্লিষ্টতা থাকে যা দিয়ে ভুয়া পণ্য বেচাবিক্রি করা হয় অথবা বৈধ কোনও বিক্রয় সংস্থা যে পণ্যের দাম নিয়েছে সেটির পরিবর্তে ভিন্ন পণ্য পাঠিয়ে প্রতারণা করে। সিএএফসির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারকরা সচরাচর তিনটি কৌশল ব্যবহার করে। প্রতারণার প্রথম ধরণ হলো, প্রতারিত ব্যক্তিকে এমন বার্তা পাঠানো হয় যে, পরিশোধিত মূল্য এখনই পৌঁছে যাবে, তবে সেটা তুলে নিতে হলে একটি ট্র্যাকিং নম্বর লাগবে। বিক্রেতা তখন ওই অর্থ সংগ্রহের জন্য ট্র্যাকিং নম্বর তৈরির স্বার্থে দ্রুত পণ্যটি পাঠিয়ে দেন। দ্বিতীয় ধরণটি হলো, প্রতারকরা বিক্রেতাকে বলে যে, তাদের অ্যাকাউন্টে সমস্যা আছে, সমস্যা মেটানোর জন্য বিক্রেতা যদি তাদের কাছে অর্থ পাঠান তাহলে পরে সে অর্থ তারা ফেরত দিয়ে দেবে। কিন্তু সে অর্থ আর ফেরত আসে না। তৃতীয় যে কৌশল প্রতারকরা ব্যবহার করে সেটি হলো, যখন প্রতারক তার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠিয়ে দেয় এবং বাড়তি অর্থ ফেরত পাঠাতে বলে। পরে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মূল পেমেন্টই ছিলো ভুয়া।

প্রতারণা এড়ানোর জন্য সিএএফসির কিছু কৌশল আছে। এর একটি হলো, কোনও কিছুর জন্য সাইন আপ করতে হবে, কিছু কিনতে হবে বা কাউকে টাকা পাঠাতে হবে এমন অতিরিক্ত চাপ আছে এমন বিক্রয় কৌশলের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন। আরেকটি হলো, পুরষ্কারের মতো কোন কিছু গ্রহণ করা সময় আগাম অর্থ পরিশোধের বিষয়ে সতর্ক থাকা।

কারো কাছে অর্থ পাঠানোর আগে সব সময়ই গবেষণা করে যাচাই করতে হবে যে, সংগঠনটি প্রকৃতই অস্তিত্বশীল কিনা বা বৈধ কিনা। একজন প্রতারক যদি ফোন করে বলে যে তাদের পারিবারিক নম্বরটি নিয়ে সমস্যা আছে তাহলে ওই পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। আর কোনও অযাচিত ব্যক্তিকে কখনই নিজের ঠিকানা, স্যোসাল ইনন্সুরেন্স নম্বর বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর ইত্যাদির মত ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না।