সপ্তাহে চার কর্মদিবস চালুর পরীক্ষাকারী অন্টারিও’র একজন সিইও বলেন, পিছিয়ে আসবো না

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর একটি কোম্পানি কর্মচারীদের সপ্তাহে চার দিন কাজ করার বিষয়টি পরীক্ষা করছে। সেই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সম্প্রতি বলেছেন, তিনি আর কখনই পুরো সপ্তাহ কাজের ধারায় ফিরে যাবেন না।

টরন্টোর নিয়োগ কোম্পানি দ্য লিডারশিপ এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জেমি স্যাভেজ ২০২০ সালের অক্টোবরে তার কোম্পানিতে চার কর্মদিবসের সপ্তাহ চালু করেন। মিজ. স্যাভেজ বলেন, মহামারির সময় তিনি খেয়াল করেছেন যে, তার কর্মচারীরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তিনি তাদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করতে চেয়েছেন। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন সিন ডেভিডসন।

“আমাদের কিছু পরিবর্তন আনার দরকার ছিলো।” বুধবার টরন্টোর সিটিভি নিউজকে স্যাভেজ বলেন, “আমি ভাবলাম, আমরা কি চার কর্মদিবসের সপ্তাহ চালু করতে পারি না। দেখি এটা চালু করে।”

সপ্তাহে চার কর্মদিবসের ফলাফল হলো, কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে আসছেন কম মানসিক চাপ নিয়ে এবং তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে। ছবি : সিটিভি নিউজ

স্যাভেজ বলেন, তার নয়জন কর্মচারী এখনও আগের মত একই বেতন এবং বছরে প্রাপ্য সব ছুটি পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “সত্য এই যে, এটি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ব্যবসায় প্রভাব ফেলেছে।” “তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব ছিলো কর্মীদের কল্যাণ।”

স্যাভেজ বলেন, তার কর্মচারীরা অতিরিক্ত সময় কাটাচ্ছেন বিশ্রামে, ফিটনেস ক্লাসে কিংবা এমনকি  থেরাপির মাধ্যমেও।

তিনি বলেন, এর ফলাফল হলো, তারা কর্মক্ষেত্রে আসছেন কম মানসিক চাপ নিয়ে এবং তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে।

স্যাভেজ বলেন, তিনি জানেন, অনেক কোম্পানি চারদিনের কর্মসপ্তাহ চালু করতে ভয় পায় উৎপাদন কমে যাবার ভয়ে। কিন্তু তার কোম্পানিতে পাওয়া সুফল ঝুঁকির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, তার কর্মচারীরা আগের চেয়ে বেশি খুশি, বেশি উৎপাদনশীল এবং তারা অন্য কোম্পানিতে চলে যাচ্ছে না।

তিনি স্বীকার করেন যে, “এই বিষয়টি সব জায়গায় প্রয়োগ করা সম্ভব এমন নয়।” নির্দিষ্ট কিছু শিল্পে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া কঠিন।

তিনি বলেন, চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করে  তার কোম্পানি যে সুফল পেয়েছে তা “শেষ পর্যন্ত অন্য সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে।”

“ঘটনা এই যে, আমরা করতে পেরেছি, আর এর অর্থ হলো, অন্য অনেক কোম্পানিও এটা করতে পারে। আমরা যত বেশি জনের সঙ্গে এই বিষয়টি শেয়ার করবো এবং এ বিষয়ে আলোচনা করবো ততই তা অন্য কোম্পানিগুলোকেও এ পথে এগিয়ে আসতে সাহস যোগাতে সহায়ক হবে।”

স্যাভেজ কখনও প্রচলিত পাঁচ দিনের কর্মসপ্তাহে ফিরে আসবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তার জবাব একদম স্পষ্ট।

“কখনই না,” তিনি বলেন। “আমরা বরং আমাদের কর্মচারীদের আরও কীভাবে কল্যাণ করা যায় সেই উপায় খুঁজে দেখছি। আমি অন্য সবার চেয়ে সব সময় আলাদা থাকার বিষয়টিকে আমার জীবনের এক মিশনে পরিণত করবো।”

চলতি বছরের শুরুর দিকে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত কর্মসপ্তাহ সম্পর্কিত এক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার পর আইসল্যান্ড খবরের শিরোনামে এসেছিলো।

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, বেতন ঠিক রেখে সপ্তাহের কর্মঘণ্টা কমানোর প্রক্রিয়ার “সাফল্য অভিভূত” হবার মত।

রিকিয়াভিক সিটি কাউন্সিল পরীক্ষামূলকভাবে ওই ব্যবস্থা চালু করে এবং জাতীয় সরকার দেখতে পায় যে এই ব্যবস্থা কর্মীদের কল্যাণে নানা সূচকেই “নাটকীয়ভাবে” বেড়ে গেছে, যেমন, মানসিক চাপ ও অবসাদগ্রস্ততা থেকে সুস্বাস্থ্যে ফেরা এবং কর্ম ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। গবেষকরা দেখেছেন যে, উৎপাদনশীলতা ও পরিষেবা আগের মত একই থেকেছে অথবা বেশিরভাগ কর্মস্থলে তার উন্নতি হয়েছে।