মানসিক রোগীর নতুন সুনামী মোকাবেলায় আরও সহায়তা চায় অন্টারিও মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে, রোগীদের অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, পরবর্তী মহামারির জন্য প্রস্তুতি
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর ডাক্তারদের একটি গ্রুপের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে রোগীদের অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনা; মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, মাদকাসক্তি ও হোমকেয়ার সার্ভিস সম্প্রসারণ; এবং পরবর্তী মহামারির জন্য প্রস্তুতির বিষয়গুলি।
গত ২৬ অক্টোবর প্রকাশিত নতুন এক রিপোর্টে অন্টারিও মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এই প্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের সুপারিশমালা প্রকাশ করেছে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন হলি ম্যাককেনজি-সাটার।
এতে পাবলিক হেলথ ইউনিটগুলো জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডা. আদম কাসেম বলেন, মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বিদ্যমান দীর্ঘদিনের ঘাটতিগুলো এবং এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যায়ন কীভাবে পাল্টে গেছে সেই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।
এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, মহামারির কবলে পড়া প্রতিটি মানুষই উল্লেখিত মূল্যায়নের বিষয়টি এবং একটি জোরালো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন।”
তিনি বলেন, বিদ্যমান সমস্যাগুলির সমাধানের ওপরই নির্ভর করছে মহামারির কবল থেকে এই প্রদেশের বেরিয়ে আসার মূল চাবিকাঠি।
“স্বাস্থ্যসেবার পুনরুদ্ধার ছাড়া আমাদের পক্ষে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না।”
গ্রুপটি আগামী বছর জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য প্রাদেশিক নির্বাচনের আগে মূল অলোচ্য বিষয় হিসাবে তাদের সুপারিশমালা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি আহবান জানায়।
তারা বলছে, রোগীদের অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনাসহ মহামারিকালে যেসব সেবা কার্যক্রম অসম্পাদিত থেকে গেছে সেগুলি অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে।
রিপোর্টে বকেয়া কাজগুলো সম্পন্ন করা, প্রতিটি সেবা কার্যক্রমে যথেষ্ট সংখ্যক কর্মচারীর নিয়োগ নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা, হাসপাতালের বাইরেও অধিকতর স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রাখা এবং তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার দ্বারস্থ হওয়া “নতুন রোগীর সুনামি” মোকাবেলায় সরকারি অর্থায়নে জনসমাজে অবশ্যই জনগণের সাধ্যের মধ্যে অধিকতর পরিষেবা থাকতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ডাক্তারের কাছে আসছে দ্বিগুণ মানুষ, উপাত্তে প্রকাশ
এতে প্রদেশগুলোর জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ও মাদকাসক্তি সম্পর্কিত পরিষেবার পৃথক মান নির্ধারণ, এসব পরিষেবায় অধিকতর অর্থ যোগান দেযা, স্বাস্থ্যখাতের কর্মীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং ওষুধ সেবনের সঙ্গে যুক্ত ওয়েবসাইটগুলোর ওপর আরও বেশি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করা হয়।
ডা. কাসেম বলেন, অতীতের বিপর্যয়কর ঘটনাবলীর তথ্য-উপাত্তের ছক থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, কানাডায় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে পেশাদারদের কাছে আসা লোকের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে এবং বিষণ্নতা নিরাময়ের ওষুধের ব্যবহার বাড়বে।
হোমকেয়ার পরিষেবায় আরও বেশি বিনিয়োগ এবং এতে জনবল নিয়োগ ও তা ধরে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর ফলে হাসপাতালের শয্যা সুলভ হবে এবং অন্য রোগীদের অপেক্ষার সময় কমে আসবে।
এতে আরও সুপারিশ করা হয় যে, পারিবারিক চিকিৎসক নেই এমন লোকেরা যেন হোম কেয়ারের সেবা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক নথিপত্র রক্ষার কাজটা কমে যাবে এবং যেসব পরিবার সার্বক্ষণিক সেবক নিয়োগ করেন তাদের ওপর ট্যাক্সের বোঝা কমবে।
দীর্ঘমেয়াদী সেবার জন্য রিপোর্টে বাড়িতে চিকিৎসকের ভূমিকা জোরদার করার সুপারিশ করা হয়। এজন্য বিশেষভাবে দীর্ঘমেয়াদী সেবা কার্যক্রমের বিষয়টি দেখাশোর জন্য চিফ মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ, এ বিষয়ে স্থায়ী জনবল নিয়োগ এবং হাসপাতাল ও কেয়ারহোম ব্যবস্থার মধ্যে সংযোগ উন্নততর করার কথা বলা হয়েছে।
মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, অন্টারিও প্রদেশকে পরবর্তী মহামারির জন্য প্রস্তুতির কাজ এখনই শুরু করতে হবে। আর এটি করতে হবে আইন করে একটি প্রাদেশিক মহামারি পরিকল্পনা প্রণয়ন বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে। সেই মহামারি পরিকল্পনা অবশ্যই পাঁচ বছর পর পর পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করতে হবে।
সংগঠনটি অন্টারিওর পাবলিক হেলথ বিভাগ ও পাবলিক হেলথ ইউনিটগুলোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ বরাদ্দ করা এবং এ খাতে তহবিল যোগানোর একটি মানসম্মত প্রক্রিয়া নির্ধারণেরও আহবান জানিয়েছে।
এই রিপোর্টের একাংশ এ সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রকাশ করা হয় যাতে অন্টারিওর উত্তরাঞ্চলের বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগ নিবদ্ধ ছিলো।
ডাক্তারদের এই গ্রুপটি বলেছে, কানাডা হেলথ দেশের স্বাস্থ্য খাতে মোট যে অর্থ ব্যয় করে তার ৩৫ শতাংশ প্রদেশ ও টেরিটোরিগুলোতে স্থানান্তর করার জন্য প্রিমিয়াররা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি যে আহবান জানিয়েছেন তা সমর্থন করে তাদের সংগঠন।
মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত সংগঠন, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং অন্টারিওর হাজারও নাগরিকের দেয়া মতামত বা পরামর্শের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে।