নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে পুনঃসংযোগ মানুষকে কীভাবে নিজকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টিয়ারা জেড চুটকেন-এর জীবনের এমন এক সময়ে তার ক্যারিবীয় শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটে যখন তিনি জবাব খুঁজে ফিরছিলেন।
“আমি অনুভব করেছি যে, আমি আমার জীবনের এই বিস্ময়কর জায়গাটিতেই ছিলাম যেখানে আমি সত্যি জানতাম না কোথায় যাচ্ছি।” তিনি স্মরণ করেন। “এই অভিজ্ঞতা ছিল সত্যি অভিভূত হবার মত, আর এটি ছিল এক ধরণের কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাপার কারণ আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি আমার নিজেকেই যথেষ্ট চিনি না।”
চুটকেনের শিকড় ত্রিনিদাদ ও গায়ানীজ সংস্কৃতিতে প্রোথিত। ২০১৯ সাল থেকে তিনি তার সাংস্কৃতিক পরিচয় সম্পর্কে আরও বেশি জানার জন্য সফর শুরু করেন। তিনি বলেন, আসলে আগে তিনি কখনই তার শিকড়ের দিকে তাকাননি এমনকি তার প্রপিতামহ বা প্রপিতামহীর নামও জানতেন না।
তিনি বলেন, তার ক্লাশে ইন্দো-ক্যারিবীয় হিসাবে পরিচয় দেয়ার মত কেউই ছিলো না। সবাই তাকে ভারতীয় বলে মনে করতো।
“যখন আমি অপেক্ষাকৃত তরুণ তখন এ বিষয়ে ব্রাখ্যা করার মত তথ্য সত্যিই আমার কাছে ছিল না।”
তিনি বলেন, “আচ্ছা, আমি কেন দেখতে ভারতীয়?” “কারণ সেই… আমি কখনই নিজের সম্পর্কে ওভাবে ভাবিনি, নিজেকে ভেবেছি শুধুই আমি যা: একজন ত্রিনিদাদীয়-গায়ানীজ। আমার পরিচিতিকে সব সময়ই একেবারে বাতিল একটি বিষয় বলে অনুভব করেছি।”
চুটকেন বলেন, তার সফর শুরু হয় ইন্দো-ক্যারিবীয় ইতিহাসের বই পড়ার মধ্য দিয়ে। এটি তার জন্য আরও অনেক বিচিত্র ধরনের বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করতে সহায়ক হয় যা তাকে আরও বেশি জানতে সাহায্য করে।
‘অবশেষে আমি যা, সেটাই মেনে নিই’
ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রোভিনা জেসেল বলেন, তিনি তার শিখ ও পাঞ্জাবি সংস্কৃতি পুরোপুরি মেনে নিতে সব সময়ই দ্বন্দ্বে ভুগেছেন। মিশিগানে এসে বেশিরভাগ দক্ষিণ এশীয় বন্ধু পাবার পরও এটা এখনও তার কাছে বেশ বিব্রতকর।
জেসেল বলেন, তিনি দক্ষিণ এশীয় ছুটির দিন উদযাপনের জন্য কিছু করার বিষয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা জবাব দিয়েছে, “আমরা তো ফোবস (FOBs) নই”, এটি হলো তাদের কমিউিনিটিতে চালু একটি পরিভাষা যার অর্থ নবাগত (Fresh Off The Boat) নই।
তিনি বলেন, “এটা এমন নয় যে তারা ভিন্ন সংস্কৃতির কোন মানুষদের দিয়ে ঘেরাও হয়ে আছে। তারা তাদের নিজের মানুষদের মধ্যেই রয়েছে, যারা সবাই কিছুটা হলেও একধরণের লজ্জার বুদ্বুদের মধ্যে, এক ধরনের সাংস্কৃতিক লজ্জার মধ্যে বাস করছে।”
তিনি বলেন, যখন তিনি ইউনিভার্সিটিতে ঢোকেন তখনই সব কিছু পাল্টে যায়, যেখানে তার মত দেখতে অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে তার নিজের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরতে উৎসাহিত করতো।
“আমি আমার এমন বন্ধু পেযেছি যারা ঘটনাক্রমে ভারতীয়, কারণ আমি স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় সংস্কৃতি ভালবাসে এমন কাউকে চাইতাম। আর এর অর্থ হলো স্বাভাবিকভাবেই সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি অনুসরণ করা।”
“আমি অনুভব করতাম যেন, তারা আমাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। অবশেষে, শুধু আমাকে গ্রহণ করে নেয়া লোকেদের মধ্যে থাকার কারণেই নয়, বরং আমার মনে হয়, এটা হলো এ কারণে যে, আমি আসলে নিজে যা তা হিসাবেই নিজেকে মেনে নিতে পেরেছি।”
অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্ম বেশি বেশি শিখতে আগ্রহী, বলেন প্রফেসার
রায়ারসন ইউনিভার্সিটির প্রফেসার ক্যামিলা হারনানদেজ-রামডওয়ার বলেন, নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ হওয়াটা প্রতিটি মানুষের জন্যই ভিন্নতর কিছু।
হারনানদেজ-রামডওয়ার বলেন,“কিছু মানুষের কাছে, তাদের পরিচয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ছাড়া তারা নিজেকে পরিচয়হীন বলে অনুভব করতে পারে। তারা এমন ধারণা খুব জোরালোভাবে অনুভব করে যে, সে কে এবং কোত্থেকে এসেছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।”
“কিছু মানুষের কাছে এই বিষয়টি তাদের পরিচিতির মূল হিসাবে বিবেচিত, তারপর অন্যদের কাছে, এটি এমন কিছু যে বিষয়ে তারা কৌতুহলী।”
তিনি বলেন, যে কেউ যে কোনও বয়সে আত্ম অনুসন্ধানের এই সফরে বেরুতে পারে, তবে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এ নিয়ে বিস্ময়বোধ কাজ করে।
হারনানদেজ-রামডওয়ার বলেন, “গত শতকের শেষ দুই দশকে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের (second generation of millennials ) জীবনে কিছু হারিয়ে যাওয়া বিষয় আছে, আর এখন একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে যারা তারুণ্যে পৌঁছেছে (Generation Z ) তারা এখন আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান করে চলেছে।
“এটি এমন এক অনুভব যে, কানাডীয় হওয়াটা যথেষ্ট নয়, কারণএই প্রজন্ম ঠিক আমার প্রজন্মের মত সেই একই প্রশ্ন নিজেদের জিজ্ঞাসা করছে যে, ‘তুমি কোত্থেকে এসেছো?’”
তিনি বলেন, অনেক মানুষই এখানকার সংস্কৃতিতে একীভূত হয়ে যায় অথবা নিজের সংস্কৃতি লুকিয়ে রাখে। কিন্তু এখন, সময় এসেছে নিজের ঐতিহ্য প্রকাশ্যে উদযাপন করার।
“আমি মনে করি তরুণ প্রজন্ম তাদের শিকড় নিয়ে গর্বিত হতে চায়।” -সূত্র : কীর্তন শশীসরণ/ সিবিসি নিউজ