টরন্টো ফিল্ম ফোরামের এজিএম এ নতুন কমিটি গঠন
আরিফ হোসেন বনি : গত ২৬শে নভেম্বর সন্ধ্যায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের ৩০০০ ড্যানফোর্থের কার্যালয়ে সংগঠনটির বাৎসরিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২১শে নভেম্বর টরন্টোর ২৬৭০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র বাংলাদেশ সেন্টারে ফোরামের সদস্যদের নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম গঠনের প্রধানতম উদ্দেশ্য ছিল, মননশীল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা, চলচ্চিত্র নির্মাণ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া এবং মানুষের কল্যাণে যে কোন কাজ ও কর্মসূচীতে অংশ নেয়া।
টরন্টো ফিল্ম ফোরাম চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চলচ্চিত্রপ্রেমীদের সংগঠন। যাত্রার একেবারে শুরু থেকে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম তার কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। প্রতি মাসেই চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট আলোচনা এবং যে কোন মননশীল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এই সংগঠন চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রকাশনা প্রকাশ করে থাকে। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম মনে করে, চলচ্চিত্র শুধু একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং ‘চলচ্চিত্র’ নামক এই মাধ্যম হচ্ছে সুন্দর চেতনা শাণিত করার একটা পথ, যা সুন্দর মানুষ, সমাজ, দেশ এবং পৃথিবী গড়ার জন্য মননশীল আর সংবেদনশীল মানুষদের প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে থাকে।
২০১৭ সালে কানাডা ফেডারেশনের ১৫০ বার্ষিকী উপলক্ষে বহুজাতিক কানাডার সম্প্রীতির পরিবেশকে আরও সম্প্রীতিপূর্ণ করার জন্য সেই বছর থেকেই টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ এর আয়োজন করে আসছে। এই চলচ্চিত্র উৎসবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন জাতির এবং ভাষার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং একে অপরের মধ্যে সৌহার্দের সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় চলচ্চিত্র উৎসব ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর প্রেক্ষাগৃহে আয়োজন করতে পারলেও করোনাজনিত কারণে ২০২০ সালে আমরা চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করতে পারি নি। তবে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এ বছর ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ২৮শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দিন ব্যাপী অনলাইনে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে ১১০টা দেশের ৩০০ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং সারা পৃথিবী থেকে ২,৭১,৮১১ দর্শক এই অনলাইন উৎসবে অংশগ্রহণ করে
করোনাজনিত কারণে ২০০০ সালে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসূচী গ্রহণ করতে না পারলেও ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা ভালোর দিকে এগুলে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কিছু কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সদস্যদের সম্মিলিত উদ্যোগে পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘আমার ৫০’ নামে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ। ৩৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং সুধি সমাজের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বহু সংস্কৃতির মূল সুর সমাজের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেবার জন্য এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের চলচ্চিত্র অনুধাবন এবং উপভোগ করার জন্য গত ১৩ই আগস্ট টরন্টো ফিল্ম ফোরামের টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থস্থ কার্যালয়ে ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টার’ এর যাত্রা শুরু হয়। ‘আমার ৫০’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে উপস্থাপিত পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্ক্যারবরো-সাউথ ওয়েস্ট এর এমপিপি ডলি বেগমের উপস্থিতে ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টার’ এর উদ্বোধন করা হয়। এ সেন্টারে প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়ে থাকে। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম নিজস্ব প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রায় ত্রিশ জন দর্শকের জন্য প্রতি সপ্তাহে ভিন্ন ভাষা বা সংস্কৃতির ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করে থাকে। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে এবং দর্শকরা বিনা অর্থ ব্যয়ে চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারেন।
গত ২৬শে নভেম্বরের টরন্টো ফিল্ম ফোরামের বাৎসরিক সাধারণ সভার শুরুতে কানাডা এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুলের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক এবং অর্থ সম্পাদক সাহিদুল আলম টুকু বাৎসরিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং উপস্থিত সদস্যরা উপস্থাপিত প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করেন। প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং আলোচনার পর বিষয় নির্বাচনী কমিটি আগামী ২০২২-২০২৩ বছরের কার্যনির্বাহী পরিষদের খসড়া উপস্থাপন করে। সদস্যদের আলোচনার ভিত্তিতে উপস্থাপিত খসড়া কমিটির চুড়ান্ত করে এনায়েত করিম বাবুলকে সভাপতি এবং মনিস রফিককে সাধারণ সম্পাদক করে ২৩ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ অনুমোদন দেওয়া হয়। কার্যনিবাহী পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছে, সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম খোকন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ নুর ময়না, অর্থ সম্পাদক সাহিদুল আলম টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক জগলুল আজিম রানা, অনুষ্ঠান সম্পাদক সোলাইমান তালুত রবিন, অফিস সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকার, ফিল্ম স্ক্রীনিং সম্পাদক রেজিনা রহমান, প্রেস এবং প্রকাশনা সম্পাদক আরিফ হোসেন বনি এবং প্রচার সম্পাদক গৌতম শিকদার। নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা হচ্ছে, শেখ শাহনওয়াজ, অপু রোজারিও, শাকিল হান্নান, সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল, দেলওয়ার এলাহী, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, পারভেজ চৌধুরী, হিমাদ্রী রয়, সাগর আহমেদ, আরিফ ভূঁইয়া, শিখা রউফ এবং গোপা চৌধুরী।
এছাড়া বাৎসরিক সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যদের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সাধারণ পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ পরিষদের সদস্যরা হচ্ছেন, নাদিম ইকবাল, শাকিল উদ্দিন, জিন্নাত জাহান, দিলারা নাহার বাবু, কোরবান আলী, নবিউল হক বাবলু এবং শারমিন শরীফ।
সভাপতির বক্তব্যে এনায়েত করিম বাবুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী দু’বছরের জন্য গঠিত নতুন কার্যনির্বাহী এবং সাধারণ পরিষদ টরন্টো ফিল্ম ফোরামের বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং ফোরামকে আরও সুন্দর জায়গায় উন্নীত করবে। সেই সাথে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে ঠিক রেখে এর কার্যক্রমকে আরও বেশী জনমুখী করবে। তাঁর বক্তব্যে তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে জানান যে, টরন্টো ফিল্ম ফোরামের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে অন্টারিও আর্ট কাউন্সিল আগামী মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য ১০০০০ কানাডিয়ান ডলার অনুদান হিসেবে প্রদান করেছে।