মহামারীর কারণে ৭৫% কানাডীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বিলম্বিত করতে বাধ্য হয়েছেন
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কোভিড-১৯ মহামারীতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত এবং তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলি বদলে যাওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গত ১৫ মাস ধরে স্থগিত রেখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক নতুন সমীক্ষায় এমনটাই দেখা গেছে। খবর গ্লোবাল নিউজ এর। রিপোর্ট করেছেন সাবা আজিজ।
সমীক্ষায় অংশ নেয়া ৫০ শতাংশেরও বেশি কানাডীয় বলেছেন, তারা তাদের লক্ষ্য পূরণে অসমর্থ ছিলেন। শারীরিক দূরত্ব ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা গত বছরজুড়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
বিমা কোম্পানি belairdirect দেশজুড়ে এক হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে অনলাইনে যে জরিপ চালায় তাতেই এই তথ্য উদঘাটিত হয়।
belairdirect-এর সঙ্গে জরিপের অংশীদার একজন ব্যবসায়-মেধা বিশেষজ্ঞ ব্রাইন ওয়াইনগার্ড বলেন, “মানুষ সত্যিই নিজেদের জীবনের চালকের আসনে ফিরে আসতে চায় এবং এটি একটি চ্যালেঞ্জিং এবং ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে না পারার কারণে যে অচলাবস্থার অনুভূতি সৃষ্টি হয় তা মানুষের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে।
টরন্টোর একজন জীবন বিষয়ে প্রশিক্ষক ক্রিস্টা রোয়েসলার বলেন, মহামারী সারা বিশ্বেই বিপুল সংখ্যক মানুষকে তাদের গতিপথে আটকে দিয়েছে এবং থামিয়ে দিয়েছে।
মিজ. রোয়েসলার গ্লোবাল নিউজকে বলেন, “আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে এমন অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে যা আমাদের জীবন-পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও বহু পরিবর্তনের সূচনা করেছে। আর এ কারণে আমাদেরকে অনেক বড় সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, গত বছরজুড়ে মহামারীর কারণে তার মক্কেলদের অনেকেরই ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়ার “অপরিমেয়” দৃষ্টান্ত তিনি দেখেছেন।
“কোভিড আমাদের সবাইকে অনাগত অনেক প্রজন্ম ধরে অজানা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং প্রচণ্ড ভীতির মুখোমুখি করে দিয়েছে।”
পরম লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার
কঠিন পরিস্থিতিতেও ৮৩ শতাংশ কানাডীয় এখনও তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদী। আর অনেকেই গত এক বছরে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিতও করেছেন।
মহামারীকালে যে তিনটি শীর্ষ লক্ষ্য ফলপ্রসু হয়েছে তার মধ্যে ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের বাড়ি বা ঘর সাফল্যর সঙ্গে সংস্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
৪২ শতাংশ বলেন, তারা নতুন কিছু শিখতে পেরেছেন, অন্যদিকে ২৭ শতাংশ বলেন, তারা শারীরিক ফিটনেস সম্পর্কিত লক্ষ্যপূরণ করতে পেরেছেন।
বড় ধরণের সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে, সম্পর্কে জড়ানো অনেক জুটি কোভিড-১৯ মহামারীর সময় বিয়ে করার চেষ্টায় বিরত থেকেছেন। আর অনেক নিঃসঙ্গ মানুষ জুটি খুঁজে নিতে তৎপর হন।
মিজ. রোয়েসলার বলেন,“আমরা দেখেছি অনেক তরুণ-তরুণী যারা সহসাই কোভিড-এর কারণে নষ্ট হওয়া সময়ের ক্ষতিপূরণ ও একাকীত্ব ঘুচানোর তাগিদ বোধ করেছে তারা নিছক তাদের ‘যথাযথ’ জুটি খুঁজে নেয়ার জন্যই এখন আন্তরিকভাবে ডেটিং করছে।
মহামারীকালে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন শিল্প, যখন করোনাভাইরাসের মহামারী প্রথম প্রাদুর্ভাব হলে বিভিন্ন দেশ তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
মাত্র ছয় শতাংশ কানাডীয় বলেছেন, তারা গত বছর তাদের বিশ্ব ঘুরে দেখার স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হয়েছেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায়,
অনেককিছুই খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন কানাডীয় কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তাদের পরিকল্পনা ও স্বপ্নের ক্ষেত্রে “অগ্রাধিকারের কিছু বিষয়” পরিবর্তন করেছেন।
রোয়েসলার বলেন, এটি ছিলো “ইতিবাচক পরিবর্তন”।
রোয়েসলার উল্লেখ করেন যে, বাহুল্য কোনও বিলাস ব্যসন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে মনোযোগের সুযোগ না থাকায় জনগণ পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, জীবনের ভারসাম্য বিধানের মত কিংবা নিজের জন্য আনন্দদায়ক কোনও কাজে ব্যস্ত থাকার মত কিছু মৌলিক মূল্যবোধের বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
“এই মৌলিক মূল্যবোধগুলো এমন কিছু বিষয় যেগুলির প্রতি মানুষ মহামারীর অভিজ্ঞতার পর অগ্রাধিকার দিতে শুরু করে।”
আগের অবস্থান ধরার চেষ্টা
মহামারী যখন মানুষকে তাদের মূল পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে আগের অবস্থানে ফেরার চেষ্টা করতে বাধ্য করছে, তখন রোয়েসলার বাস্তবসম্মত আশাবাদ নির্ধারণ এবং নতুন করে শুরু করার পরামর্শ দেন।
রোয়েসলার বলেন, কারও লক্ষ্য পুনর্মূল্যায়ন ও তা পূরণে এগুনোর ক্ষেত্রে SMART পদক্ষেপ সহায়ক হতে পারে: যা তার লক্ষ্যগুলো সুনির্দিষ্ট, পরিমিত, বাস্তবসম্মত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্নযোগ্য রাখবে SMART হলো Specific, Measurable, Achievable, Realistic, and Timely এই শব্দগুলোর সংক্ষিপ্ত রূপ)।
তিনি বলেন, “আমরা সবাই অনুভব করি, আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এজন্যে প্রথম পদক্ষেপ হলো, আপনি এই মুহূর্তে কী অবস্থায় আছেন এবং কোথায় পৌঁছাতে চান তা খতিয়ে দেখে লিখে ফেলা।”
ওয়াইনগার্ডবলেন, “বিষয়টিকে নিজেদের জীবনে সহজভাবে গ্রহণ করাটা” লোকেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রোয়েসলার ও ওয়াইনগার্ড উভয়েই বলেন, প্রয়োজন হলে জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথে নিজেকে স্থাপনের জন্য কারোরই পেশাদার কারো সহায়তা নিতে শঙ্কিত হওয়া উচিৎ নয়।