বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস : গুরুত্ব দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা হওয়া জরুরি
গত ১০ অক্টোবর শনিবার ছিল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করা হয়।
সাধারণভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বলতে আমরা বুঝি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য তা মেনে চলা যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সারা বিশ্বে বিশাল জনগোষ্ঠী মানসিক রোগে ভুগছে। নানা কুসংস্কার আর অসচেতনতার কারণে তা গোপন করা হয়। ফলে এই রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নীরবে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মানুষ প্রতিনিয়ত বিষণ্নতা, অ্যাংজাইটি, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, সাইকোসিস ডিজঅর্ডার, সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ, ওসিডি, হেলথ অ্যাংজাইটি, পোস্ট ট্রমাটিক ট্রেস ডিজঅর্ডার, প্যানিক অ্যাটাক, ফোবিয়া, কনভারশন ডিজঅর্ডার, পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার- এগুলোতে ভুগছে। এ ছাড়া আরও নানা রকমের মানসিক রোগের অস্তিত্ব আছে। শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ যেকোনো বয়সের মানুষই মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। একেকটা মানসিক রোগের ধরন ও লক্ষণ একেক রকম। তবে এগুলোর সবই ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য দেশের মতো কানাডায়ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়েছে অনেক। যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা এখনও এই রোগে আক্রান্ত হননি তাদের মাঝেও বাড়ছে মানসিক সমস্যা। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে করোনার এই মাহামারীকালে সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অন্য যে কোন বছরের তুলনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে তার শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং পরিনতিতে করোনার কাছে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ করোনা মহামারীর এই দুর্যোগকালে শরীরের পাশাপাশি মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখারও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, করোনার কারণে কানাডিয়ানদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সিটিভি নিউজের পক্ষে ন্যানোস রিসার্স পরিচালিত এক জরিপে অংশগ্রহণকারী কানাডিয়ানদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুজনই বলেছেন করোনা শুরু হওয়ার পর তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আগের তুলনায় আরো খারাপ হয়েছে এবং মদ্যপানের পরিমাণ ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমরা জানি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি চিরকালই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এবং বাস্তবতা হচ্ছে- আমরা শরীরের সুস্থতা নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন থাকি এবং যতটা নজর রাখি মনের সুস্থতার ব্যাপারে আমরা ততটাই উদাসীন। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সুস্থ শরীর ছাড়া যেমন সুস্থ মন সম্ভব নয় তেমনি সুস্থ মন ছাড়া সুস্থ শরীর, সুস্থ জীবন কোনটাই সম্ভব নয়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো শরীরের অসুখের মতোই মনেরও যে অসুখ হতে পারে সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। অনেকে আবার মনে করেন, মানসিক রোগ মানেই পাগল; সাইকিয়াট্রিস্ট মানেই পাগলের ডাক্তার। ব্যাপারটা আদৌ সে রকম নয়। মানসিক রোগ মানেই পাগল নয় এবং মানসিক রোগের ডাক্তার মানেই পাগলের ডাক্তার নন। প্রতিদিনই আমরা কোনো না সময় নানা কারণে উদ্বিগ্ন হই, বিষণ্নতা অনুভব করি, মানসিক চাপ অনুভব করি এবং এগুলো সবই মানসিক সমস্যার লক্ষণ। আবার এটাও মনে রাখতে হবে এগুলো অনুভব করা মানেই কেউ মানসিক রোগী নন। মানসিক সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমত জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। মানসিক রোগকে অবহেলা না করে বা লুকিয়ে না রেখে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানসিক রোগ শারীরিক রোগের মতোই একধরনের রোগ। শারীরিক রোগের মতোই গুরুত্ব দিয়ে এর চিকিৎসা হওয়া জরুরি।