আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য উত্তম প্রার্থী

ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় কানাডাকে গন্তব্য হিসাবে বেছে নিচ্ছে তারা : দক্ষ শ্রমশক্তির এক সম্ভাবনাময় উৎস হিসাবে দেখা হচ্ছে এই শিক্ষার্থীদেরকে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : শিক্ষা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় কানাডাকে গন্তব্য হিসাবে বেছে নিচ্ছে। শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০০ সালের ১২২,৭০০ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৬৪২,৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ‘ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এ্যান্ড সিটিজেনশীপ কানাডা’ এর সূত্র থেকে এই তথ্য জানা যায়। 

এই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে ক্রমবর্ধমান হারে দক্ষ শ্রমশক্তির এক সম্ভাবনাময় উৎস হিসাবে দেখা হচ্ছে যাদেরকে কানাডার শ্রম বাজারে যোগ দেওয়ার জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। কানাডা সরকারের ২০১৯-২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক শিক্ষা কৌশলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে “পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য উত্তম প্রার্থী: তারা তুলনামূলকভাবে তরুণ, অন্তত একটি দাপ্তরিক ভাষায় ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন, কানাডার শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন এবং কানাডার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শ্রমবাজারের, বিশেষ করে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমশক্তির চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে পারে” বলে বর্ণনা করা হয়েছে।”

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডা সম্প্রতি ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা’র সহযোগিতায় এ দেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়।  সমীক্ষার ফলাফলটি প্রকাশিত হয় গত ২৩ জুন। এটি তৈরী করেছেন ইউজিন চোই, ইডেন ক্রসম্যান ও ফেং হউ। সমীক্ষার ফলাফলটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো নিচে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা আগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিলো তারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে অন্য কোনও দেশে শিক্ষা গ্রহণকারী অভিবাসীদের চেয়ে শ্রম বাজারে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি এবং ভাষাগত দক্ষতা নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম বাঁধার মুখে পড়েন, এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে তারা পরিচিত এবং এরই মধ্যে এখানে তাদের সামাজিক নেটওয়ার্কও গড়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে ক্রমবর্ধমান হারে দক্ষ শ্রমশক্তির এক সম্ভাবনাময় উৎস হিসাবে দেখা হচ্ছে যাদেরকে শ্রম বাজারে যোগ দেওয়ার জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। ছবি: Ken Jones

কানাডার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কর্মসূচি (Canadian International Student Program) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট ও বাছাই করা ছাড়াও তাদের জন্য কাজের সুযোগ করে দেয়া এবং তাদেরকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পেতে সহায়তা করার কাজও শুরু করেছে। বর্তমানে যারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, যারা সদ্য গ্রাজুয়েশন করেছেন এবং যারা অস্থায়ী কর্মী হিসাবে এরই মধ্যে কানাডায় কর্মজীবন শুরু করেছেন বর্তমানে তাদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হবার সুযোগ রয়েছে।  কানাডার শিক্ষা সনদ এবং কাজের অভিজ্ঞতা অস্থায়ী রেসিডেন্টদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হবার যোাগ্যতা অর্জনে সহায়ক হচ্ছে। ২০০৮ সালে কানাডীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শ্রেণী (The Canadian Experience Class) প্রতিষ্ঠা করা হয়, বিশেষ করে কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে সময় কাটানো ব্যক্তিসহ দক্ষ অস্থায়ী বিদেশী কর্মীদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার সুযোগ করে দেবার লক্ষ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক প্রাদেশিক নমিনি প্রোগ্রামেও গ্রাজুয়েশন করা ব্যক্তি (চাকরির প্রস্তাবসহ বা ছাড়া) ও অস্থায়ী বিদেশি কর্মী আকর্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্সপ্রেস এন্ট্রি অ্যাপ্লিকেশন ম্যানেজমেন্ট সিলেকশন সিস্টেমের (২০১৫ সালে শুরু করা) মাধ্যমে যারা এদেশে শিক্ষা অর্জন বা কাজ করেছেন অথবা যাদের স্বামী বা স্ত্রী কানাডায় শিক্ষা অর্জন বা কাজ করেছেন তাদেরকে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) পয়েন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

প্রাক্তন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশন করার পর পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিটের (PGWP) আওতায় কানাডায় কাজ করার যোগ্য হবেন। পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট প্রোগ্রাম (PGWPP) হলো আন্তর্জাতিক গমনাগম কর্মসূচির {International Mobility Program (IMP)}অধীন অস্থায়ী শ্রমিক নেওয়ার একটি কর্মসূচি। এটিকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কর্মসূচির মূল উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। PGWPP কর্মসূচি কানাডার কোনও স্বীকৃত মাধ্যমিকোত্তর প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাজুয়েশন করা শিক্ষার্থীদেরকে কানাডায় কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয় যা তাদের জন্য ইকোনোমিক-ক্লাশের অভিবাসন কর্মসূচির বেশ কিছু ক্ষেত্রে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজের অভিজ্ঞতা এনে দেয়।

প্রথমবারের মত স্টাডি পারমিট পাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ১০ জনের তিনজন ১০ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হতে পারেন

যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ২০০০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে প্রথম স্টাডি পারমিট পান তাদের মধ্যে ২১% প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার পাঁচ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হয়েছেন। এই অনুপাত বেড়ে ৩১% এ দাঁড়ায় যখন প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার পর পর্যবেক্ষণের কাল ১০ বছরে বাড়ানো হয়। আর ১৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হলে তা ৩৩% এ বৃদ্ধি পায়।

উল্লেখ করা জরুরি যে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কমে যাওয়া অংশটি তাদের স্টাডি পারমিট পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে নবাগত অভিবাসী ( landed immigrant ) হয়ে ওঠেন (২০০০-২০০৪ সালের শিক্ষার্থীদের ১৩% এবং ২০১০-২০১৪ সালের শিক্ষার্থীদের ৮% এই পছন্দ বেছে নেন)। তবে, পছন্দ পরিবর্তনের এই ক্রমবর্ধিত হার দীর্ঘমেয়াদে হ্রাস পায়নি, বরং পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা বেড়েছে।

স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা অর্জনের জন্য এসে প্রথমবার স্টাডি পারমিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই ১০ বছরের মধ্যে নবাগত অভিবাসী হয়েছেন

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হতে পারার হার সামাজিক ও জনসংখ্যাগত কারণে ভিন্ন হয়, যেমন লিঙ্গ, বয়স, শিক্ষার স্তর, বসবাসের প্রদেশ এবং উৎস দেশ।

সব ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীর পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি অর্জনের হার অভিন্ন। অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সীদের তিনটি গ্রুপের (যেমন, ১৭ বছর বা তার কম, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী এবং ২৫ থেকে ৩৪ বছর) মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী গ্রুপের উত্তরণের হার সবচেয়ে বেশি, আর পরের গ্রুপগুলোতেও এই হার বেড়েছে। বিপরীতে, গত পাঁচ বছরের ধারাবাহিক উত্তরণের হারে ১৭ বছর বা আরও কম বয়সে যারা স্টাডি পারমিট পেয়েছিলো তাদের তিনটি ব্যাচের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হার কমেছে।

কানাডায় মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা অর্জনের জন্য যারা প্রথম স্টাডি পারমিট পান তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষার স্তর ও পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার ক্রমবর্ধমান হারের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিম্নস্তরে বা মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষার্থীদের চেয়ে ধারাবাহিকভাবে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হার বেশি।

মাস্টার্স ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের প্রতি ১০ জনে পাঁচজন এবং ডক্টরেট পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি ১০ জনে ছয়জন তাদের প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার ১০ বছরে মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পান। সে তুলনায় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পান প্রতি তিনজনে একজন।

পাঁচ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার ধারাবাহিক হারে বিভিন্ন ব্যাচের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরবর্তন এসেছে। শিক্ষা স্তরের ভিত্তিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো, কলেজ স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে উত্তরণের হার বৃদ্ধি। ২০০০ থেকে ২০০৪ সালের ব্যাচ থেকে শুরু করে ২০১০-২০১৪ পর্যন্ত সময়কালের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার পাঁচ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে মাধ্যমিক-উত্তর ডিগ্রি গ্রহণকারীদের অনুপাত দ্বিগুণেরও বেশি, তবে স্নাতক ও ডক্টোরাল ডিগ্রিতে অধ্যয়নকারীদের ক্ষেত্রে এই অনুপাত অর্ধেকে নেমে গেছে এবং মাস্টার্স ডিগ্রিতে অধ্যয়নকারী স্টাডি পারমিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল থেকেছে।

প্রথম স্টাডি পারমিট কোন প্রদেশে নেওয়া হয়েছে তার ওপরেও পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার ধারবাহিক হারের ভিন্নতা ঘটে। ২০০০ সালের শুরুর দিকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের যারা প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় গেছেন তাদের ১০ বছরের ধারাবাহিক উত্তরণের হার সবচেয়ে কম (২২%) এবং সবচেয়ে বেশি সেইসব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যারা প্রাথমিকভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরে (৩৯%) এবং অন্টারিওতে (৩৮%) গেছেন। এই শুরুর দিকের ব্যাচের সঙ্গে যখন ২০০৫ ও ২০০৯ সালের দিকে আসা ব্যাচের তুলনা করা হয় তখন ১০ বছরের ধারাবাহিক উত্তরণের হারে বড় ধরণের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয় তাদের ক্ষেত্রে, যারা প্রাথমিকভাবে আলবার্টা ও প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে যান। ২০০৫-২০০৯ সালের ব্যাচের উত্তরণের হার সবচেয়ে বেশি ছিলো আলবার্টায় (৪২%) এবং আগের মতই সর্বনিম্নে থেকে যায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় (২১%)।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কোন দেশ থেকে আসছেন তার ভিত্তিতেও উত্তরণের হারে ভিন্নতা দেখা যায়। লু অ্যান্ড হউয়ের সমীক্ষায় (২০১৫) দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্তরের দ্বারাও পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিতে উত্তরণের হার প্রভাবিত হয়। যেসব দেশের মাথাপিছু গড় প্রবৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত কম (যেমন ভারত) সেসব দেশের শিক্ষার্থীদের উত্তরণের হার বেশি প্রবৃদ্ধির হারবিশিষ্ট দেশ (যেমন দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে আসা শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিতে উত্তরণের বিষয়টি নির্ধারণে কিছু সীমাবদ্ধতার যৌথ ভূমিকা থাকে (সেটা হলো, পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য কাঙ্খিত চাহিদা পূরণ করা এবং শিক্ষার্থীর নিজস্ব আগ্রহ; কানাডার মত একই রকম আর্থ-সামাজিক অবস্থা রয়েছে এমন সব দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এদেশে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার ব্যাপারে কমই আগ্রহী থাকে।

উৎস দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়া, ভারত, ভিয়েতনাম ও চীন থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম  স্টাডি পারমিট পাবার ১০ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হার অন্য সব দেশের শিক্ষার্থীদের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম ও চীন থেকে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্টাডি পারমিট পাবার পাঁচ

বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিতে ধারাবাহিক উত্তরণের হার উপর্যুপরি তিনটি ব্যাচের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, অথচ ভারত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা বেড়ে যায়।

প্রথম স্টাডি পারমিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা শিক্ষাজীবনে অথবা ডিগ্রি অর্জনের পর কাজ করেছেন তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হয়েছেন

অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রথম কানাডায় আসার পর স্টাডি পারমিট না থাকলেও সাময়িক বাসিন্দা হিসাবে হয় শিক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো অথবা শিক্ষার পাশাপাশি কোনও কাজ করা কিংবা ডিগ্রি অর্জনের পর চাকরিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এ ধরণের শিক্ষার্থীরা এদেশে আগমন-পরবর্তী কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার ক্রমবর্ধমান হারের প্রতিনিধিত্ব করেন।

অস্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদায় পরিবর্তন আনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক তাদের প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার পর অতিরিক্ত একটি অস্থায়ী বাসিন্দার পারমিটও পান। উপর্যুপরি তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছেন। উল্লেখ্য, পোস্ট গ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পারমিট (PGWP) নিয়েছেন এমন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর হিস্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিন গুণ বেড়ে ২০১০-২০১৪ সালের মধ্যে প্রথম কানাডায় আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৩% শতাংশে পৌঁছে।

এদিকে, স্টাডি পারমিট নিয়ে কানাডায় থেকে যাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের (অর্থাৎ, যারা কখনই অন্য কোনও ধরণের অস্থায়ী বাসিন্দার পারমিট পাননি) হিস্যা তিনটি ব্যাচের ক্ষেত্রেই কমে যায়। অন্যভাবে বললে, প্রথমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে কানাডায় আসার পর তাদের ক্রমবর্ধমান অংশই কানাডায় অবস্থান করছেন এবং কাজ করছেন।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা কাজ করে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি জানিয়েছেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যকের আয় ছিলো বছরে ২০ হাজার ডলারের কম (২০১৭ সালের ডলারের হিসাবে)।

যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বাড়তি অস্থায়ী রেসিডেন্ট পারমিট পান তাদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হার ছিলো শুধু স্টাডি পারমিট পাওয়া শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক বেশি। যেমন, পাঁচ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়া শিক্ষার্থীদের চেয়ে দ্বিগুণ এবং ১০ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়া শিক্ষার্থীদের চেয়ে তিন গুণ বেশি। এটা হতে পারে যে, যারা কানাডায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পেতে চেয়েছেন তারা অভিবাসন বিভাগের জন্য তাদের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এদেশে অবস্থানকাল দীর্ঘায়িত করতে অন্যান্য পারমিট পাওয়ারও  আবেদন করেছেন।

ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিতে উত্তরণের হার ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়াদের চেয়ে ছিলো অনেক বেশি। ২০১০-২০১৪ সালের ব্যাচের যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পোস্ট-গ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পারমিট (PGWP ) পেয়েছিলেন তাদের পাঁচ বছরের মধ্যে উত্তরণের হার আইএমপির মাধ্যমে অন্য ধরণের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়াদের চেয়ে বেশি ছিলো, যদিও এর আগের দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ছিলো ঠিক উল্টো। যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পিজিডব্লিউপি পান তাদের ৬২% প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার ১০ বছরের মধ্যে নবাগত অভিবাসী হতে পেরেছেন- যা আইএমপির মাধ্যমে অন্য ধরণের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তুলনায় সামান্য বেশি (উপর্যুপরি ২০০০-২০০৪ এবং ২০০৫-২০০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পেয়েছিলেন যথাক্রমে ৫৯% ও ৪৬%)। তবে কেবল স্টাডি পারমিট পাওয়া ওই দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তুলনায় ওই হার ছিলো দ্বিগুণেরও বেশি (ওই দুই ব্যাচের এধরণের শিক্ষার্থীরা পেয়েছিলো যথাক্রমে ২৮% ও ২৩%)।

আগের ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবেই, কানাডায় উপার্জনকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয় জন প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার ১০ বছরের মধ্যে কানাডার নবাগত অভিবাসীর মর্যাদা পান। ২০০৫-২০০৯ সময়কালের ব্যাচের ক্ষেত্রে কানাডার অস্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে বার্ষিক আয়ের স্তর ও ১০ বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়ার হারের মধ্যে স্পষ্ট সম্পর্ক ছিলো। যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কানাডায় ৫০ হাজার ডলারের বেশি (২০১৭ সালের ডলারের হিসাবে) উপার্জন করেছেন তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে নয় জনই প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার ১০ বছরের মধ্যে নবাগত অভিবাসীর মর্যাদা লাভ করেন। অথচ, যারা ২০ হাজার ডলারের কম উপার্জন করেন তাদের ওই মর্যাদা পাবার হার ছিলো মাত্র অর্ধেকের কাছাকাছি (অর্থাৎ, ৮৭% ও ৪৬% যথাক্রমে)।

মূল কথা হলো, যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবনে অথবা ডিগ্রি অর্জনের পর কানাডীয় কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তাদের নবাগত অভিবাসীর মর্যাদা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো অনেক বেশি।

তার ওপর, তাদের আয় ও পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হারের মধ্যে দৃশ্যত একটি ইতিবাচক সম্পর্ক থাকার বিষয়টি বলছে যে, উচ্চতর বেতনে কর্মরত বা উচ্চতর পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিলো।

এই বিশ্লেষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে যে, পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বেশি ছিলো নাকি যারা অস্থায়ী শ্রমিক হিসাবে প্রথম কানাডায় এসেছিলো তাদের। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে যারা এদেশে আসেন তাদের মধ্যে প্রথমবারের মত ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া ব্যক্তিদের পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে নবাগত অভিবাসী হতে পারার হিস্যা ছিলো বেশি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পেয়েছেন তাদের এটি পাবার হার কানাডায় আসার পরবর্তী ১৫ বছরের মাথায় ২৯% এ পৌঁছে; তুলনামূলকভাবে প্রথমবারের মত ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া শ্রমিকদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হার ছিলো ২২%। 

২০০৫-২০০৯ সালের ব্যাচে আগত প্রথমবারের মত ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া শ্রমিকদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার ক্রমবর্ধমান হার ছিলো আগের ব্যাচগুলোতে আগতদের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। ওই দুটি ব্যাচের ক্রমবর্ধমান উত্তরণের হার একইভাবে শুরু হলেও পরের ব্যাচের উত্তরণের হার পরবর্তী দশম বছরে ৩৩% এ পৌঁছে। আর আগের ব্যাচের হার ছিলো ২১%। প্রথমবারের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া ব্যক্তিদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিতে উত্তরণের ক্রমবর্ধমান হারের এই প্রবৃদ্ধি ঘটে অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিকদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যমে। অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া এই গ্রুপটি হলো এমন একটি গ্রুপ যাদের কানাডায় আসার দশম বছরের মধ্যে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিতে উত্তরণের হার ছিলো ৪৬% (তুলনায় আইএমপির আওতাধীন বিভিন্ন কর্মসূচিতে আগতদের হার ছিলো ২৪%)।

উপসংহার

গত দুই দশক ধরে কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই নিবন্ধে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার হার ও বিভিন্ন সময়ে এই হারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবর্তনগুলো নথিবদ্ধ করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে যে, ২০০০ বা তার পরবর্তীকালে কানাডায় আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি ১০ জনে তিনজন তাদের প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার ১০ বছরের মধ্যে নবাগত অভিবাসী হতে পেরেছেন। যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মাস্টার্স অথবা ডক্টোরাল ডিগ্রি পর্যায়ে পড়তে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে ওই হার অর্ধেকেরও বেশি বেড়ে যায়। 

যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কানাডায় আসেন তাদের মধ্যে এখানে আসার পাঁচ বছরের মধ্যে নবাগত নাগরিক হতে পারার হিস্যা ছিলো সবচেয়ে বেশি। এটা ছিলো তাদের মধ্যে বেশি যারা ইউনিভার্সিটির বাইরে মাধ্যমিক-উত্তর কর্মসূচি ও মাস্টার্স ডিগ্রি পড়তে আসেন। এসব কর্মসূচি সচরাচর অপেক্ষাকৃত কম সময়ের জন্য হয়, অনেক ক্ষেত্রেই যার মেয়াদ এক থেকে দুই বছর।

এই সমীক্ষায় এটিও দেখা গেছে যে, যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবনে বা ডিগ্রি অর্জনের পর চাকরি করেছেন তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জনই প্রথম স্টাডি পারমিট পাবার ১০ বছরের মধ্যে নবাগত অভিবাসী হতে পেরেছেন। শিক্ষাজীবনে বা ডিগ্রি অর্জনের পর চাকরিতে যারা উচ্চতর বেতন পেয়েছেন তারা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার বাড়তি সম্ভাবনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে, এসব ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, বিশেষ করে উচ্চতর বেতনের পেশায় কানাডীয় কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জন করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কানাডায় স্থায়ীভাবে থাকার আগ্রহ এবং পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণে তাদের সক্ষমতার প্রতিফলন।