৬১০ মিলিয়ন ডলারের জাতীয় নির্বাচন-২০২১

জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টির আবারও মাইনোরিটি বিজয়

মোয়াজ্জেম খান মনসুর

জাস্টিন ট্রুডো তৃতীয় বারের মতন প্রধান মন্ত্রীত্বের পদটি নিশ্চিত করেছেন গত ২০ সেপ্টেম্বরের স্নেপ নির্বাচনের (Snap election) মাধ্যমে। তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ট্রুডো যে ভাবে এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যশা করেছিলেন সেটা হয় নি। ট্রুডো মাত্র দু’বছরের মাথায় করোনা পেনডেমিক মাথায় করে- বলা যায়-  প্রায় হটাৎ করেই গত ১৫ আগস্ট আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।  মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন যুদ্ধে নেমে পরেন। গত ২০১৯ নির্বাচনে মাত্র ১৫৭ আসন নিয়ে এসে মাইনোরিটি সরকারের প্রধান মন্ত্রী হিসেবে তার যে খুব বড় সমস্যা হচ্ছিল সেটা কিন্তু না। এনডিপি’র জাগমিৎ সিং তাকে বিল পাশ করার জন্য সাহায্য করছিল। ব্লক কুবেকুয়া বা এনডিপি কেউই ট্রুডো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা বিল উথ্যাপন করেনি। আর কনজার্ভেটিভ দলের ১২১ আসনের ক্ষমতা নেই যে একাই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করে সরকার পতন ঘটাতে পারে। তবু গত জুন মাসে বিরোধী দল একটি বিল আটকে দেয়। সে কারণে লিবারেল দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় (ট্রূডো) পেন্ডামিক সফল ভাবে সামাল দিতে পারার ফলে দলের ভাবমূর্তি খুব ভাল এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা ৩৮% এখন তুঙ্গে। এই সময়ে দল এবং ট্রুডোর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে মেজরিটি সরকার গঠন করা যেতে পারে। সে কারণে প্রায় আচমকা পাঁচ সপ্তাহ হাতে রেখে ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে নেমে আসার পর দেখা গেল লিবারেল দলের জনপ্রিয়তা ৩৮% থেকে তর তর করে নীচে নেমে আসছে। ট্রুডো আচমকা নির্বাচনের ডাক দিয়ে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দেননি সেটা ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছিল। ঐ সময়ে নির্বাচন জরীপে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের মধ্যেই জনপ্রিয়তার সূচক কনজার্ভেটিভ এবং লিবারেল ‘নেক টু নেক’ এ নেমে আসে। কখনো লিবারেল ২৯%-৩০% উঠছে বা কখনো উঠছে কনজার্ভেটিভ দল। ট্রুডোর প্রধান মন্ত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা প্রায় সমানভাবে নীচে নামছিল।নির্বাচনের আগের দিন রবিবার ‘ন্যানোস পুল’ এর জরিপে দেখা যায় লিবারেল দলের জনপ্রিয়তা ৩১.৮% এবং কনজার্ভেটিভ দলের জনপ্রিয়তা ২৯.৭%, আর এনডিপি’র ১৫%।

ন্যানোস পুল এর জরিপ দেখে মুটামুটি একটা ধারণা করা যাচ্ছিল যে এই নির্বাচনে আবার ও হাড্ডাহাড্ডী লড়াই হবে।

ট্রূডো গতবারের ১৫৭ আসনগুলোই ধরে রাখতে পারবে কিনা সে শংকা নিয়ে লিবারেলের কপালে ভাঁজ ঘাম দেখা গিয়েছিল। আর মেজরিটি আসন নিয়ে আসা, সেটা নিতান্তই দৈবক্রমে যদি ঘটে যায়। কনজার্ভেটিভ দলের নেতা এরিন ও’টুল অত্যন্ত জোরাল কন্ঠে এই আগাম নির্বাচনের সমালোচনা এবং বিরোধীতা করেছেন। তিনি বলেন, ৬১০ মিলিয়ন ডলার খরচের নির্বাচন ট্রুডোর নিজস্ব স্বপ্ন বাস্ত্যবায়নের জন্য, জনগনের জন্য নয়। আমরা কেউ  করোনা আক্রান্ত সময়ে নির্বাচন চাইনি। চেয়েছেন শুধুমাত্র জাস্টিন ট্রুডো তার স্বপ্ন পুরনের জন্য। তিনি চাচ্ছেন এবারের নির্বাচনে মেজরিটি আসনে জিতে সরকার গঠন করবে। যাতে করে তার সরকার কোন বিল পাশ করাতে বাঁধাপ্রাপ্ত না হয়। তাদের লাগামহীন কোভিড ফান্ডিং নিয়ে কোন দল বাঁধা না দিতে পারে।

কানাডার জাতীয় নির্বাচনে আগাম ভোট দিচ্ছেন ভোটারগণ। ছবি : সোয়ার বোগদান/গ্লোবাল নিউজ

কানাডা এখনও করোনামুক্ত হয় নি। স্কুল কলেজ ব্যবসা- বাণিজ্য খুলেছে। করোনা রোগীর সংখ্যা আবার বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে  ফোর্থ ওয়েব আসছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। করোনা উত্তর কানাডার ইকোনমি শক্তিশালী করার জন্য জাস্টিন ট্রুডোর লাগামহীন ব্যায় বন্ধ করতে হবে। অন্টারিও’র ‘ডুরাম’ অঞ্চলের বাসিন্দা সদ্য নতুন এই নেতা এত স্বল্প সময়ের মধ্যে তার দল গুছিয়ে ফান্ডিং জোগার করে এবং ৩৩৮ প্রার্থী খুঁজে পাওয়া নিয়ে এক চেলেঞ্জের মুখামুখি হয়েছিলেন। চার নেতার টেলিভিশনে ইংরেজী ডিবেটের পর তার জনপ্রিয়তা উর্ধমূখী হয় এবং অবস্থান শক্তিশালী হয়। তিনি গত বারের নেতা এন্ড্রু শিয়ারের চেয়ে স্পষ্ট এবং জোরালো বক্তব্য রেখেছেন বলে পলিটিকাল পন্ডিতরা মতামত দেন। অপরদিকে ট্রুডো বিতর্কে ভাল করেনি বলে জরিপে জানা যায়। শেষ দুই সপ্তাহের টান টান উত্তেজনার মধ্যে দলের নেতারা মেরাথন নির্বাচন প্রচারনা চালিয়ে যান। নির্বাচনের আগের দিন রবিবার ‘সিপি২৪’ চেনেলে ‘ন্যানোস’ এর জরিপে দেখানো হয় লিবারেল দলের জনপ্রিয়তা ৩১.৮% এবং কনজার্ভেটিভ দলের ২৯.৮% -মাত্র এক পার্সেন্টের ব্যবধান। অর্থাৎ হাড্ডাহাড্ডী লড়াই। জাগমিত সিং এর  এনডিপি’র জনপ্রিয়তা ছিল ১৭%।

লিবারেল দলের নির্বাচন এজেন্ডা ছিল (১) হেলথকেয়ার ফান্ড বৃদ্ধি করা এবং মেন্টাল হেলথ খাতের  মান উন্নত করা (২) সারা দেশব্যাপী দিন প্রতি ১০ ডলারের চাইল্ড কেয়ার সেবা প্রদান করা। (৩) জলবায়ু ক্রাইসিসের চলমান প্ল্যান নিয়ে দ্রুত সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া। (৪) করোনা উত্তর কানাডাকে অর্থনীতির চরম মন্দা থেকে রক্ষা করা। (৫) ভেক্সিন পাসপোর্ট চালু করা।

ট্রুডোকে কানাডার জনগন আবারও পাশ করিয়েছেন তবে কোন ‘ব্ল্যাংক চেক’ দিয়ে নয়। ঠিক গতবারের মতন মাইনোরিটি সরকার গঠন করার মেন্ডেড দিয়ে। তবে এবার ট্রুডো মাত্র একটি সিট বাড়িয়ে নিয়েছেন। এবার সর্বমোট ১৫৮ সিট পেয়েছেন ৩৩৮ সিটের মধ্যে। তার মেজরিটি সরকার গঠন করতে হলে ১৭০ সিটের প্রয়োজন ছিল। সেটা হয়নি।

লিবারেল দল আসন পেয়েছে ১৫৮টি, কনজার্ভেটিভ ১১৯টি, এনডিপি ২৫টি,  ব্লক কুবেকুয়া (কুবেক প্রভিন্সের দল) ৩৪টি এবং গ্রীন পার্টি ২টি। পিপিসি (পিপলস পার্টি অফ কানাডা) কোন আসন জিততে পারেনি। কনজার্ভেটিভ থেকে বেরিয়ে কুবেক এম পি ম্যাক্সিম বার্নিয়ে গতবার এই নতুন দল তৈরী করেন। এবারের নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ  পার্টি ২টি সিট হারিয়েছে। গ্রীন পার্টি হারিয়েছে ১টি। কুবেকুয়া ২টি সিট বেশী পেয়েছে।

লিবারেল দল গতবার ২০১৯ পশ্চিম কানাডায় আলবার্টা এবং সাস্কাচুয়ানে সাট অফ ছিল। সেখানে মোট ৪৮ আসন যার একটিও পায় নি। এবার আলবার্টায় লিবারেল দল যোগ করেছে ২টি আসন। বরাবরের মতন সাস্কাচুয়ানে ১৪ আসনে একটিও পায়নি। আলবার্টার ৩৪ আসনের মধ্যে দুটি আসন পাবার জন্য আলবার্টা প্রিমিয়ার জেসন কেনীর ভুল পেন্ডেমিক প্লানিংকে দায়ী বলা যেতে পারে। কারণ জেসন কেনী বরাবরই করোনা মোকাবেলায় ভেক্সিন পাসপোর্টের বিরোধিতা করে আসছিলেন। তার দলের অনেক নেতারা করোনা রোগের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাই তার পক্ষে কঠোর বিধিনিষেধের বিপক্ষে যাওয়া কঠিন ছিল। কেনি সে কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ নিচ্ছিলেন না। মাসিভ ভেক্সিনেসন প্রোগ্রাম এবং ভেক্সিন পাসপোর্টের বিরুদ্ধে ছিল তার কঠোর অবস্থান এবং কেনীর পক্ষে সরব ছিলেন কনজার্ভেটিভ নেতা  এরিন ও’টুল।  গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলবার্টার স্বাস্থ্যবিভাগ সম্পূর্ণ ভেংগে পরেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এখন কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে আলবার্টা। করোনা মোকাবেলা ব্যর্থতায় জেসিন কেনীর নেতৃত্ব প্রচন্ড হুমকির মুখে। এদিকে কনজার্ভেটিভ নেতা এরিন ও’টুল কেনীর পক্ষে কথা বলায় সাংবাদিকদের তুমুল চাপের মুখে ছিলেন নির্বাচনের শেষ সপ্তাহ। কারণ ও’টুল ভেক্সিন পাসপোর্টের পক্ষে নন সে কথা সরাসরি না বললেও  কারো বুঝতে  অসুবিধা হয়নি।

কুবেকে ব্লক কুবেকুয়া’র নেতা Yves Francois টেলিভিশনে ইংরেজী বিতর্কে কুবেকের পক্ষে অত্যন্ত জোড়ালো ও শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল। কুবেকুয়ারা সম্পূর্ণ নিজেরদের মতন অন্য কারো মতন নন সেকথা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন। সে কারণে কুবেকুয়ারা তাকে ২ সিট বেশি দিয়ে পুরুস্কৃত করেছেন। Gilles Duceppe এর রেখে যাওয়া ২০১৫ সালের ১০ সিট থেকে ২০১৯ নির্বাচনে ৩৪সিট আর এবার ৩৬ সিট জেতা ফ্রান্সোয়ার নেতৃত্ব জনপ্রিয়তা পেয়েছে নি:সন্দেহে বলা যায়। এবার লিবারেল দলের দুই জন মন্ত্রী তাদের আসন হারিয়েছেন। একজন অন্টারিও পিটারবরোর মারিয়াম মুন্সেফ। তিনি রুরাল ডেভেলাপমেন্ট এবং নারী বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। তিনি কনজার্ভেটিভ দলের রচার্ড লিয়োনক্সের কাছে হেরে যান।

নভাস্কোসিয়ার ফিসারিজ মন্ত্রী Bernadette Jordan তার আসনে হেরে যান।

কানাডার পার্লামেন্টের সর্বাধিক আসন রয়েছে অন্টারিওতে। আসন সংখা ১২১টি। সেখানে  লিবারেল পেয়েছে ৭৮টি, কনজার্ভেটিভ ৩৭টি, এনডিপি ৫টি, গ্রীন পার্টি ১টি।

কুবেকে রয়েছে আসন ৭৮টি। সেখানে লিবারেল পেয়েছে ৩৩টি, ব্লক কুবেকুয়া ৩৬টি, কন্সারভেটিভ ১০টি, এনডিপি ১টি।

ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় আসন সংখ্যা ৪২টি। সেখানে লিবারেল আসন পেয়েছে ১৫টি, কনজার্ভেটিভ ১৩টি, এন ডি পি ১৩টি এবং গ্রিন পার্টি ১টি।

নোভাস্কোসায় ১১ আসন। লিবারেল পেয়েছে ৮টি, কনজার্ভেটিভ ৩টি।

এবারের নির্বাচনে ওন্টারিতে তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিভিন্ন দলের হয়ে প্রার্থী হয়ে ছিলেন। তবে কেউ জিততে পারেননি। টরন্টোর স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট বাঙ্গালী অধ্যুষিত রাইডিং। মোট ভোটার সংখা ৭৮,২৪৬। ভারতীয়, পাকিস্তানী, শ্রীলংকান, ফিলিপিনো, বাংলাদেশী ইস্ট ইউরোপিয়ান-সহ বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের বসবাস এই কমিউনিটিতে। লিবারেল দলের প্রার্থী বিল ব্লেয়ার জয়ী হয়েছেন। এ নিয়ে তৃতীয় বার জয়ী হলেন এই মন্ত্রী। ভোট পেয়েছেন ২৩,৬২৩টি। কনজার্ভেটিভ দলের প্রার্থী মহসিন ভুইয়া পেয়েছেন ৮,৬৩৩টি, এনডিপি’র প্রার্থী ৬,৫৫৯টি, পিপিসি’র প্রার্থী ১,২২৬টি, গ্রীন পার্টির প্রার্থী ১০০৬টি। এই রাইডিংয়ে গত ২০১৯ সালে লিবারেল ভোট পেয়েছিল ২৮৬৪০টি, কনজার্ভেটিভ দলের কিম্বারলি ফাউসেট পেয়েছিলেন ১০,৪২১টি এবং এনডিপি’র প্রার্থী ৭৮০০টি।

এবার ভোটার টার্নাউট ছিল মাত্র ৫২.৬১%। বিল ব্লেয়ার পেয়েছেন ৫৭.৫% ভোট। মহসিন ভুইয়া ২১% ভোট।  গত বার দলের ভোট ছিল ২০.৮%। এবার তার ভোট .৯২% বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে হাতেগুনা কিছু ভোট ছাড়া অন্য কমিউনিটির কোন ভোট পাননি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে সব দলের একটা ভোট ব্যংক থাকে সেই ভোটসহ বিভিন্ন কমিউনিটির ভোট সমন্বয় করে নির্বাচন জয়ী হতে হয়। শুধুমাত্র দলের ভোটের উপর নির্ভর করে এসকল আসনে জয়ী হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। স্কারবরো সেন্টার রাইডিং থেকে লিবারেল দল থেকে তৃতীয় বারের মতন জয়ী হয়েছেন সালমা জাহিদ (পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত)। ভোট পেয়েছেন ২২,০১২টি। কনজার্ভেটিভ দলের পুনায়েন মালকম (শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত) পেয়েছেন ৯৩৩৫টি এবং কামাল ফায়াজ (বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত) এন ডি পি থেকে পেয়েছেন ৫১৩৮টি ।

ওসোয়া রাইডিং থেকে দুইজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রার্থী ছিলেন। Colin Carrie কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে জয়ী হয়েছেন। ভোট পেয়েছেন ২২,৪০৯টি। লিবারেল প্রার্থী আফরোজা হোসেন ভোট পেয়েছেন ১২,৮৬৬টি এবং গ্রীন পার্টি থেকে সানি মীর ভোট পেয়েছেন ১১১০টি। পিপলস পার্টি অব কানাডার Darryl Mackie ভোট পেয়েছেন ৩,৯৮৫টি। NDP’র Shailene Panylo ভোট পেয়েছেন ১৬,০৫৭টি।

এবার ২০২১ নির্বাচনে  সতেরজন Indo- Canadian প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, NDP প্রধান Jagmeet Singh, লিবারেল সরকারের  ডিফেন্স মিনিস্টার Harjit Saijjan, মিনিস্ট্রি অফ ডাইভারসিটি আন্ড ইয়থ এর Bardish Chagger এবং মিনিস্টার অফ পাবলিক সার্ভিস এর Anita Anand।

এবারের নির্বাচন স্বপ্ন পূরন হয়নি ট্রুডোর

জাস্টিন ট্রুডো এবারের নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে জয়ী হতে পারেনি। যেটা তার একান্ত প্রত্যাশা ছিল। তবে করোনা মাহামারী আক্রান্ত কানাডাকে এ বছরের শুরুতে  ভেক্সিনের আওতায়  আনতে কয়েক মাস বেশী সময় লেগে গিয়েছিল সেটা নিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে পত্রিকায় তাকে তুলাধুঁনা করা হয়েছে। তার আমেরিকা এবং ইউরোপের সাথে চুক্তি থাকার পরও তারা সময়মত ভেক্সিন পাঠায়নি এবং ট্রূডো সরকার কানাডাতে ভেক্সিন তৈরী করার পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা নেয়নি সেই ব্যর্থতার কথা  Toronto Sun পত্রিকার পাতায় কয়েক পাতা জুড়ে ছিল। সেই দু:সময়ে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার কানাডাকে পাঁচ মিলিয়ন এস্ট্রাজেনিকা ভেক্সিন পাঠিয়ে ট্রুডোর পাশে দাড়িয়েছিলেন। এপ্রিল/২১ থেকেই কানাডা ফাইজার, মডার্না এবং এস্ট্রাজেনিকা ভেক্সিন চুক্তি অনুযায়ী পেতে থাকে । ফলে দুর্বার গতিতে চলতে থাকে ভেক্সিন দেবার কার্যক্রম। সরকার অত্যন্ত সফল ভাবে পুরো কানাডাকে ভেক্সিনের আওতায় নিয়ে আসে। সেপ্টেম্বর ১৮/২১ পর্যন্ত ৭৬.৭১% (মহিলা) কানাডিয়ান প্রথম ডোজ ভেক্সিন নিয়েছেন। পুরুষ কানাডিয়ান নিয়েছেন ৭৩.৩৪%। দুই ডোজ নিয়েছেন (মহিলা ) ৭১.৭৪% পুরুষ ৬৭.৩৭%।

অন্টারিও সরকারের বর্তমান নতুন আইন অনুযায়ী  সরকারী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালগুলোতে কর্মচারীদের ভেক্সিন সার্টিফিকেক না থাকলে চাকুরিচ্যুত করা হবে। অন্টারিও, বৃটিশ কলম্বিয়া, কুবেক প্রভিন্সে রেস্তোরা, জিম, স্টেডিয়ামগুলোতে যেতে হলে অবশ্যই ভেক্সিন সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। ভেক্সিন সার্টিফিকেট  মেন্ডাটরি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে  ট্রূডো সরকার অত্যন্ত সফল  এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই কঠোর বিধিনিষেধ চালু থাকলে  আগামীতে  সম্ভাব্য ফোর্থ ওয়েব সামাল দিতে পারবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ আশা করছে। করোনা উত্তর কানাডাকে অর্থনৈতিক ভাবে চাঙ্গা রাখা হবে ট্রুডো সরকারের বিরাট চেলেঞ্জ। পেন্ডামিক মোকাবিলা করতে বিলিয়ন্স অফ ডলার খরচ হয়েছে, সেটা  পুষিয়ে বাজেট ব্যলেন্স করার সাফল্যের উপর নির্ভর করছে ট্রুডো সরকারে আগামী ভবিষ্যত। যদি তারা সফলতার পরিচয় দিতে পারে তবে তিন টার্মের প্রধান মন্ত্রী ৪৯ বছর বয়সী জাস্টিন ট্রুডো আগামী আরো কিছু বছর -তার বাবা পিয়ের ট্রুডোর মতন -প্রধান মন্ত্রিত্ব করতে পারবেন বলে ধারনা করা যায়। আগামী সোনালী  বছরগুলোর জন্য জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি রইল আমাদের অফুরান শুভেচ্ছা এবং সাগরসম শুভকামনা।

মোয়াজ্জেম খান মনসুর

২৪সেপ্টেমবর,২১

টরন্টো, কানাডা