কানাডার সিভিল সার্ভিসে ‘ভীতি, হয়রানি, প্রতিহিংসা এবং বৈষম্যমূলক কর্মকান্ডের বিষাক্ত সংস্কৃতি’র চিত্র উঠে এলো রিপোর্টে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কিছু সরকারি কর্মচারী মনে করেন যে, অন্টারিওর পাবলিক সার্ভিস ‘মৌলিকভাবেই বর্ণবাদী।’ আইএনডিসাইট (INDsight) কন্সালটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ৬৩ হাজার কর্মচারী সমৃদ্ধ প্রাদেশিক আমলাতন্ত্রে কর্মস্থলের সংস্কৃতি ও নীতিমালা বিষয়ে তদন্ত চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। খবর পলিটিকস টুডে নিউজ এর।

পরামর্শকরা ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসব আলোচনা থেকে উদঘাটিত হয়, ‘ভীতি, হয়রানি, বৈষম্য এবং প্রতিহিংসাপরায়ন একটি বিষাক্ত সংস্কৃতি।’ একজন কর্মচারী ওপিএসকে (অন্টারিও পাবলিক সার্ভিস) এমনকি একটি ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সংগঠন’ বলেও তকমা এঁটে দেন। রিপোর্টে বলা হয়, অনেক কর্মচারী নিজেই কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানি, প্রত্যক্ষ বর্ণবাদ এবং/অথবা দৈনন্দিন কাজে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মৌখিক, আচরণগত বা পরিবেশগতভাবে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়ার বা প্রত্যক্ষ করার কথা বলেছেন। রিপোর্টটি গত মার্চে প্রস্তুত করা হয় এবং গত সপ্তাহে সরকারি কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

রিপোর্টের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় অন্টারিওর শীর্ষ সরকারি আমলা স্টিভেন ডেভিডসন এক ই-মেল বার্তায় তার স্টাফ সদস্যদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

ডেভিডসন লিখেন, ‘যে সমাজে আমরা বাস করি- তার ইতিহাস, তার সংস্কৃতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলো- অবয়ব পেয়েছে উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ এবং বিদেশিদের প্রতি অমূলক ভীতির অনুভূতি থেকে।’

আমলারা প্রকাশ করেন যে, তারা আমলাতান্ত্রিক কর্মপ্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছেন, এর অর্থ হলো, কর্মস্থলের বিষয়ে তাদের যেসব উদ্বেগ রয়েছে সেগুলোর নিরসন করতে হবে। মানব সম্পদ কর্মচারীদের পক্ষে বলে ধরে নেয়া হয়, আর তারা ভীত এজন্যে যে, সত্য কথা বলতে গেলে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হবে বা এর ফলে ক্যারিয়ারে উন্নতির সুযোগ খর্বিত হবে। জাতিগত সম্প্রদায়ের কর্মচারীরা বলেন, তারা একটি নির্দিষ্ট অসুবিধা অনুভব করেন, যেমন একজন সরকারি কর্মচারী বলেছেন, ‘শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিতদের মধ্যে কোনরকম পরিবর্তন দেখার প্রকৃত ইচ্ছা নেই, কারণ পরিবর্তনের অর্থ হলো তাদের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া।’

স্বজনপ্রীতি, ক্রোনিজম এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার চাপ

সরকারি কর্মচারীরা নতুন নিয়োগ দানের প্রক্রিয়া নিয়েও অভিযোগ করেন, যেখানে স্বজনপ্রীতি এবং ক্রোনিজম  (যোগ্যতার বিচার না করে শীর্ষপদে নিজের লোকদের নিয়োগ দেয়া) উভয়ই ব্যাপকভাবে প্রচলিত যার ফলে বৈচিত্র্য সামান্যই পরিলক্ষিত হয়। প্রদেশের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ওপিএস দপ্তরে কর্মচারীরা কর্মস্থলের এমন বিস্তারিত বিবরণ দেন যেখানে ‘প্রত্যেক কর্মচারীই ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্কিত।’

পরামর্শকরা সুপারিশ করেন যে, যারা ভেতরের গলদ ফাঁস করে দেবে তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত উত্তম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া এসব সমস্যা থেকেই যাবে। রিপোর্টে কর্মচারীদের সুপারিশের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলা হয় যে, হয়রানির প্রতিকারসহ বৈচিত্র্য রক্ষার সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা এবং বাধ্যতামূলক অগ্রগতির প্রতিবেদন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

‘বেশিরভাগ কর্মচারী জানান, সাংস্কৃতিক, যৌন অভ্যাস কিংবা এমনকি পছন্দের দিক থেকে ওপিএস-এ ‘ভিন্নতর’ হবার কারণে তাদেরকে কর্মস্থলের সংস্কৃতির প্রতি নেতিবাচক এবং ঐক্য বিনাশী বলে ধরে নেওয়া হয়।’

ম্যানেজাররা বিদ্যমান বৈষম্য ও হয়রানির পেছনে প্রশিক্ষণের অভাবকেই মূল চালিকা হিসাবে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, এ ধরনের ঘটনা রোধের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের তাদের অভাব রয়েছে।