এক বর্ষা রাতে
মোয়াজ্জেম খান মনসুর
নিপু এবং দিপু দুই ভাই। নিপু দুই বছরের বড় দিপুর চেয়ে। দিপুটা ভীষন চঞ্চল। মা চোখে চোখে রেখেও মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে যায়। চোখের পলকে সে উধাও। খোঁজ খোঁজ- দেখা গেল পড়ার ছেলেদের সাথে দল বেঁধে আয়ুবআলী সর্দারের বস্তিতে সকাল সকাল চড়ুই পাখী শিকারে চলে গেছে। গুলাইল হাতে হাটু গেড়ে তারকাটা সীমানার উপর বসে থাকা চড়ুই দুটোর উপর নজর রাখছে। বাড়ীতে এলে মায়ের গা সয়া বকা ঝকা খেয়ে নাস্তা সেরে স্কুলে যাওয়া। বাড়ীর পাশেই নতুন পল্টন স্কুল। দুমিনিটেই স্কুলে পোঁছে যায় দুই ভাই। লেখাপড়ায় দিপু তার বড় ভাই নিপু ভাইয়ের চেয়ে মেধাবী। ক্লাসের টিচাররা তার দুষ্টুমীতে অসন্তুস্ট এবং বিরক্ত হলেও তাকে ইংরেজী শিক্ষক জামান আলি এবং অংক শিক্ষক মান্নান ভুইয়া খুব আদর করে।
পাড়ায় মারামারিতেও দিপু কম যায় না। আজ হয়ত কার নাক ফাটিয়ে এসেছে বা কাল কোন ছেলের মাথা ফাটিয়ে এসেছে। পরশু কার বাড়ীর আম চুরি করে এসেছে। কোনদিন আবার পিন্টুর মা’র মুরগী চুরি করে পিকনিক। আবার কোনদিন পাড়ার আদর্শ স্কুলের দাড়ায়োনকে বেঁধে রেখে খেজুরের রস চুরি করেছে। এসব নালিশ শুনতে শুনতে বাবা আজগর আলী অতিষ্ঠ। মাঝে মাঝেই বেধরক পেটায় ছেলেকে। পশের ঘরে মা কাঁদতে কাঁদতে এসে বলে এবার ছেড়ে দাও আর করবে না। ছেলেটাকে মেরে ফেলবা নাকি। বাবা রাগত স্বরে চিৎকার করে বলে এমন ছেলে আমার দরকার নেই।
যা বের হয়ে যা বাড়ী থেকে। জীবনটা আমার শেষ করে দিল। কই দিপুর নামেতো কোন নালিশ আসে না তোর নামে কেন এত নালিশ প্রতিদিন। দিপু কাঁদতে কাঁদতে মায়ের আচঁলে মুখ লুকায়।
মেট্রিক পরীক্ষায় দিপু এবং নিপু ভাল ভাবেই পাশ করে। দিপু সাইন্স থেকে প্রথম ডিভিশন পেয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয় আর নিপু ভর্তি হয় সিটি কলেজে। কলেজে উঠে দিপু লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী হয়ে উঠে। তার একটা বন্ধু মহল তৈরী হয়। সবাই খুব মেধাবী। সজল এসেছে বরিশাল থেকে, ফজল এসেছে কুমিল্লা থেকে, মামুন এসেছে টংগী থেকে, বেলাল এবং দুলাল এসেছে নারায়নগঞ্জ থেকে। তারা সবাই কলেজের আবাসিক হলে থাকে। দিপুর বাড়ী থেকে ঢাকা কলেজ পনের মিনিট হাটা পথ। ঢাকা কলেজে রাজনীতির তুমুল উত্তাপ ছাত্রদের সকাল বিকাল মিটিং মিছিল তাদের টানে না। তারা ক্লাস- লাইব্রেরী- ক্লাস নিয়ে থাকে। শিক্ষকরাও তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে। খুব স্নেহ করে তাদের পুরো গ্রুপটাকে। নিপু আবার সিটিকলেজ এ রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেছে। লেখাপড়ায় তার খুব মন নেই। কলেজে মিটিং মিছিল পোস্টারিং আড্ডায় তার লেখাপড়ার চেয়ে বেশীর ভাগ সময় কাটে। সেকেন্ড ইয়ারে উঠে নিপু কলেজের বড় নেতা আর সেই নেতা হবার সুবাদে ভাগ পায় কলেজ এলাকায় শহরের চাঁদাবাজিতে। ভাগবটোয়ারার একটা বড় হিস্যা তার পকেটে আসে। কলেজ সংলগ্ন মার্কেট নিউমার্কেটের কাজ, ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকে সেলামী নেয়া, রাস্তার নির্মান কাজের ভাগ ছাত্র নেতাদের পকেটে আসে। মিটিং মিছিল গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য উপর নেতাদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকার সেলামী মাঝে মাঝে পায় ব্যংকক সিংগাপুর যাবার টিকেট সহ নানারকম উপহার। নিপু বাবা মায়ের শাসন এখনা আর গা করেনা। সে তার মত চলে। রাত-বিরাতে বাইরে থাকে। মাঝে মাঝে নেশা করে বাড়ী ফেরে। বাবা বুঝেন ছেলে এখন আর তার শাসনের সীমানায় নেই। একটা তীব্র মনোবেদনা বুকের ভেতর জমা হয়ে থাকে। সময়ের হাত ধরে কষ্টগুলো দিন দিন বাড়তেই থাকে। বাবা আজগর আলী বলেন, তোমার এখন কলেজে লেখাপড়া করার সময়। তুমি সেটা না করে মিটিং মিছিল চাঁদাবাজী করছো সেটা আমাদের কাম্য নয়। তোমার ভবিষ্যত তুমিই নষ্ট করছো। রাজনীতি কর তাতে আমাদের কোন সমস্যা বা আপত্তি নেই, কিন্তু দেশের জন্য রাজনীতি করতে হলে প্রথমেই তোমাকে শিক্ষিত হতে হবে। তোমাকে হতে হবে সৎ জ্ঞানী এবং বিচক্ষণ। তাহলেই দেশের নেতৃত্ব নিয়ে জন্মভূমিকে একটি স্বপ্নের আবাস ভূমি করে তুলতে পারবে। অশিক্ষিত মূর্খ অসৎ চোর চাঁদাবাজ হলে তোমার প্রিয় জন্মভূমিকে কিছুই উপহার দিতে পারবে না। হয়ত তোমার নিজের আখের গুছাতে পারবে কিন্তু দেশের মানুষের ভালবাসা সন্মান শ্রদ্ধা কিছুই পাবে না, পাবে শুধু ঘৃণা আর অভিশাপ। তার ফলে এই দেশ অশিক্ষিত মেধাহীন অসৎ দুষ্ট ভন্ড রাজনীতিবিদদের হাতে চলে যাবে। এতে করে দরিদ্র জনগনের ভাগ্য বদলাবে না। ভাগ্য বদলাবে কতিপয় লোকের। দেশ ডুবে যাবে গভীর অন্ধকারে, একদিন পুরো দেশ চলে যাবে নষ্টদের অধিকারে।
দিপু ইন্টামিডিয়েট পাস করে কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। নিপু সিটি কলেজেই রয়ে গেছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তার যথেষ্ট মার্কস ছিল না। সারা বাংলাদেশের ভাল ভাল শিক্ষার্থীদের প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ^^বিদ্যায়য়। কাজেই এখানে ভীষন কম্পিটিশন। খুব মেধাবী না হলে পরীক্ষায় টিকা যায় না। দিপুর পড়াশুনা নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তা নেই। সে তার পড়াশুনা নিয়ে বরাবরের মতন দিন রাত ব্যস্ত। তাদের দুই বন্ধু ঢাকা মেডিকেলে আর তিনজন বুয়েটে ভর্তি হয়েছে।
সপ্তাহে কয়েক বার তাদের আড্ডা জমে টিএসসি চত্বরে বা নিউ মার্কেটের রেস্তোরায়। দেশের বেসামাল রাজনীতি নিয়ে বন্ধুদের মাঝে তুমুল আলোচনা সমালোচনা তর্ক বির্তক চলে প্রচন্ড উত্তেজনা খেলা করে তরুণ রক্তের ভেতর।
ফল অফ আফগানিস্তান অন তালিবান নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে চায়ের টেবলে। পশ্চিম বিশে^র রাজনীতি এবং আফগানিস্তানে আমেরিকার বিশ বছরের দখলদারিত্ব, তাদের শোষন শাসন আর ৮৭ বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু কাহিনী, এ সবই উঠে আসে আলোচনার টেবিলে।
কাবুল বিমান বন্দরে আমেরিকান এয়ার ক্রাফটে উঠার জন্য হাজার হাজার আফগানি প্রাণপন চেষ্টা করছে। কারগো প্লেনের ফ্লোরে শত শত আফগান নর নারী শিশু ঠাই করে নিয়েছে দেশ ছেড়ে আমেরিকা যাবার উদ্দেশ্যে। এই সকল আফগানরা গত বিশ বছর আমেরিকান প্রশাসনের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে আসছিল। সরকারি বেসরকারি প্রসাশনের সাথে যুক্ত ছিল তারা। ফলে নিশ্চিত ভাবে তালেবান যোদ্ধাদের শত্রু তালিকায় রয়েছে তাদের নাম। এখন প্রাণ বাঁচানোর জন্য যেভাবেই হোক দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
নিপু বিএ পাস করে বছর খানিক বসে ছিল। দলের বড় নেতা মালেক সাহরিয়ারের উপরের কানেকসনে পুলিশে এ এস আই পদে চাকুরী হয়ে গেছে নিপুর। দিপু বেক্সিমকো গ্রুপে চাকুরি করছে। ভাল বেতন এবং উপরে উঠার সুযোগ আছে। দিপুর বিদেশে চলে আসার খুব ইচ্ছা। খুব টানে পৃথিবীর বড় বড় শহর। ধবল বরফের উপর হাটা, আমেরিকান বড় গাড়ী নিয়ে হাইওয়ে কাঁপিয়ে শহর থেকে শহর, দেশ থেকে দেশে ছুঁটে যাওয়া তার খুব ইচ্ছা করে। বিদেশে লেখাপড়া শেষে বড় কোন কম্পানীতে চাকুরি করা। স্বপ্নের ডানায় ভর করে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। আমেরিকা কানাডায় বিভিন্ন বিশ^^বিদ্যালয়গুলোতে দিপু ভর্তি হবার জন্য এপ্লিকেসন করেছে। গত সপ্তাহে কানাডার আলবার্টার একটি বিশ^^বিদ্যালয় ছোট্ট একটা স্টাইফেন অফার করেছে। কিন্তু বছরের দুটো সেমিস্টারের জন্য পুরো টাকাটা ভর্তির সময় দিতে হবে। এক বছর চাকুরি করে যে টাকা জমেছে সেটা দিয়ে শুধু টিকেট কাটা আর কাপড় জামা কেনা যাবে কিন্তু ভর্তি ফি দেওয়া যাবে না।
দিপুর বন্ধুরা তার এই সুসংবাদটি জানে। তারা খুব খুশি দিপু পড়াশুনার জন্য কানাডায় যাবে। গত সপ্তাহে এই উপলক্ষে বন্ধুরা ধানমন্ডিতে বেইজিং চাইনিজ রেস্তোরায় পার্টি দিয়েছে। খাওয়া দাওয়া হই হল্লোর ছবি তোলা ভীষন জমিয়ে আড্ডা হয়েছিল। জীবনের পথ ধরে কে কোথায় চলে যাবে একদিন। কার সাথে কবে দেখা হবে, কি হবে না কেইবা জানে! বন্ধুরা সবাই মিলে তিন লাখ টাকা ধার দিয়েছে দিপুকে বাকি টাকা বাবার প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে তুলে দিপু কানাডায় এসেছে।
প্রচন্ড শীতের দেশ কানাডা। এত ভয়াবহ শীত যা কল্পনাও করতে পারেনি দিপু। অদ্ভূত এই দেশ। ভীষন সুন্দর ছবির মতন, গোছানো পরিপাটি বাড়ী ঘর রাস্তা ঘাট, পাহাড় সমুদ্রের গর্জন, নীল আকাশ। শীতের মৌসুমে ভয়াবহ ঠান্ডা। হিমাংকের ৪০ ডিগ্রী নীচে চলে যায় তাপমাত্রা। বাইরে কিছুক্ষণ থাকলেই কান বা আংগুলে ফ্রস্ট বাইট হবার সম্ভবনা থাকে। কন কনে ঠান্ডায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। দিন রাত শুভ্র ধবল বরফ বিরামহীন পরতেই থাকে। মনে হয় যেন আকশের ছাদ ভেংগে গেছে। বরফ আর বরফ ডেকে দেয় পথ ঘাট বাড়ী ঘর। জীবন চলাচল থেমে থাকে না। আর গরমের সময় প্রচন্ড গরম। সি বিচে থাকে উপচে পরা মানুষের ঢল। শহরের পার্কে পার্কে চলে বার্বিকিউ পার্টি। বিকেলের রোদে হালকা বাতাসে ভেসে যায় চিকেন, বিফস্টেক, বার্গারের হট ডগের পোড়া গন্ধ। আনন্দ উল্লাসে হই হোল্লোরে মেতে উঠে মানব জীবন। মাত্র কয়েক মাসের গৃষ্মকাল তারা পুরোটাই উপভোগ করতে চায়। কেউ কেউ আসে গিটার হাতে গলা ছেড়ে গায় জীবনের জয়গান।
‘এসো সখি ভালবাসি এই বসন্ত দিনে
জীবনের প্রহর বয়ে যায় ক্ষনে ক্ষনে’
দিপু প্রথম বছর পড়াশুনা চালিয়ে গেছে কারণ টিউশন ফি দেওয়া ছিল। দ্বিতীয় বছর টিউশন ফি দেবার জন্য আর হাতে টাকা নেই। কাজেই এখন পড়াশুনা বন্ধ। পার্ট টাইম একটা কাজ শুরু করেছে দিপু, গ্যাস স্টেসনে রাতের সিফটে। সারা রাত কাজ করে ভোরে বাড়ী ফেরে দিপু। রাত জাগা কাজে ভীষন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে। শীতের ভোরে বাস থেকে নেমে বুক সমান বরফ ঠেলে দশ মিনিট পথ হেটে বাসায় ফেরা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার গল্প। গরম দেশের মানুষ এমন ভয়ংকর শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবনের পথে হেটে চলা সে এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। ঘর ভাড়া এবং খাওয়া দাওয়া শেষে কয়েকশ ডলার পকেটে থাকে। সেইথেকে মাঝে মাঝে মা’কে কিছু পাঠিয়ে দেয়। আর ফোন করে বলে মা খুব ভাল আছি, খুব ভাল আছি মা। দিপুর সাথে একত্রে কাজ করে রিটা। দুবছর প্রেম করে তারা বিয়ে করে। ফুল টাইম কাজ করে দিপু এখন মাসে মাসে কিছু ডলার জমায় তার পড়াশুনার জন্য। এর মধ্যে কয়েক হাজার ডলার জমেছে ব্যংকে। পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট এর কাগজ হয়ে গেছে গত মাসে। এখন আর ফরেন স্টুডেন্ট হিসেবে তিনগুন টিইশন ফি দিতে হবে না।
নিপু বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। এ এস আই নিপু ২০০০ স্কয়াররের একটি ফ্লাট ভাড়া করে থাকে আজিমপুরে। বেশ সুন্দর গুছানো পরিপাটি তাদের বাসা। পুলিশ অফিসার হিসেবে তার আয় খুব ভাল। বেতনে হাত দিতে হয় না। উপরি ইনকামের টাকায় স্ত্রীর নামে গুলশানে একটা ফ্লাট কিনেছে কিছুদিন আগে। প্রতি মাসেই আমিন জুয়ার্লসে নতুন নতুন গয়না গড়ায়। নিপু মা বাবাকে দেখতে আসে কয়েক মাস পর পর। যদিও হটা পথ দুরত্ব। বেশি আসা যাওয়া তিশা পছন্দ করে না। মা বাবাকে টাকা পয়সা দেওয়া একদম সহ্য করতে পারে না তিশা। তিশা’র মা বাবা খুলনা থেকে এসে ঢাকায় মেয়ের কাছে থাকে মাসের পর মাস। মেয়ের জামাইয়ের অঢেল ইনকাম কোন অসুবিধা হয়না। আগে মাঝে মাঝে নিপু মাকে হাতখরচ দিত এখন প্রায় দেয় না বললেই চলে। বাবা একদিন নিপুকে পরিস্কার করে বলে দিয়েছে, তোমার বৈধ ইনকাম থেকে যদি আমাকে কিছু দিতে পার তাহলে সেখান থেকেই দেবে। তোমার অবৈধ আয়ের একটি পয়সাও আমাকে দিবে না। মা কারো কাছে হাত পাতে না, মা বলে, সন্তানেরা বাবা মাকে ভালবেসে দায়িত্ব পালন না করলে তাদের প্রতি কোন অধিকার আবদার তার নেই। নিজেদের যা আছে তা দিয়েই জীবন চলে যাক, যেমন চলে গেছে সারাটা জীবন একজন ছোটখাট সরকারী কর্মীর স্ত্রী হিসেবে খেয়ে না খেয়ে।
সারা জীবনের পরিশ্রম শেষে অবসরে আসার পর আজগর আলীর শরীর ভেংগে পরেছে। সংসারের উত্তাল তরংগ সামাল দিতে দিতে কেটে গেছে কতগুলো বছর। এখন নানা রোগ বাসা বেঁধেছে খাচার ভিতর।
সারা রাত ধরেই অবিরাম বৃষ্টি পরছে। বর্ষা কাল। বাবার কোলে দুইভাই নিপু দিপু খেলা করছে। বিকালে হাত ধরে দুই ভাই বাবার সাথে ইরাকি মাঠে হেটে বেড়াচ্ছে। চঞ্চল দিপুটা হঠাৎ এক দৌড়। বাবা চিৎকার করে ডাকছে এই দিপু এই দিপু। দিপু বিশ^^বিদ্যালয়ে যাবার প্রথম দিন বাড়ীতে বিরাট ভোজ। কি যে স্বাদের বিরানি ছিল। একদম পুরানো ঢাকার প্রফেশনাল বাবুর্চির মতন। দিপু-নিপুর মা’র রান্নার হাত খুব ভাল।
দিপুর প্রথম চিঠিটা লেখা -বাবা আমার সালাম নেবেন। আমি ভাল আছি। প্রাণের টুকরো ছেলেটার পৃথিবীর অন্য এক প্রান্তে বসবাস।
খুব শ^াস কষ্ট হচ্ছে আজগর আলীর। গত কয়েক দিন ধরেই শরীর খুব খারাপ। করোনায় আক্রান্ত শরীর। বড় ছেলে দেখতে আসে না। মা কয়েক দিন খবর দিয়েছে।
স্মৃতিতে আবছা আবছা ভেসে উঠে -ছোট্ট বেলার গ্রামে সাঁকো পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে আজগর আলী। চোখ থেকে গড়িয়ে পরছে অশ্রুজল। তীব্র শ^াস কষ্ট হচ্ছে। ছেলেদুটো’কে এক নজর দেখার জন্য আজগর আলীর চোখদুটো খোলা রেখেছে কিন্তু দেহটা শীতল হয়ে পরেছে কিছুক্ষণ আগে। বাইরে বর্ষার তুমুল ক্রন্দন।
২৫শে আগস্ট,২০২১
টরন্টো, কানাডা