আফগানিস্তানে তালেবান আবারো ক্ষমতায়

সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে কানাডা-সহ বিশ্ববাসীর

নতুন করে আফগানিস্তানে শুরু হয়েছে তালেবানদের অপশাসনের অন্ধকার যুগ। নারীদেরকে কঠিন পর্দাপ্রথা মেনে চলতে হবে। ছবি: সিএনএন

কানাডার আইনে তালেবান এখনো একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। আর সেই সংগঠনটি আবারো আফগানিস্তানের ক্ষমতা দলখ করেছে। দুই দশক আগেও এই তালেবানরাই আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল এই তালেবানরা। তারপরই নারীদের আচরণ, পোশাক ও চলাফেরার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই সময় তাঁদের শাসনামলে মেয়েদের স্কুলে পড়া ছিল নিষেধ। যাঁরা তালেবানদের আদেশ মেনে চলতেন না তাঁদের প্রকাশ্যে অপমান ও চাবুক মারা হতো। নেইল পলিশ দেওয়ার কারণে ১৯৯৬ সালে এক নারীর আঙুল কেটে দিয়েছিল এই তালেবানরা। পরকীয়া করলে নারীদের পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হতো। সমকামিতার শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড। সেই তালেবান এখন আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায়। তাঁরা অবশ্য দাবী করছেন নারীদের আর বোরখা পরতে হবে না। হিজাব পরলেই হবে। উচ্চ শিক্ষাও নিতে পারবেন আফগান নারীরা। চাকরীও করতে পারবেন। সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করেছেন তাঁরা। কিন্তু কতটুকু বিশ^াসযোগ্য তাঁদের প্রতিশ্রুতি?
জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। আর তখনই আচ করা গিয়েছিল দেশটি অচিরেই আবার তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার সাড়ে তিন মাসের মাথায় তালেবানের দখলে চলে এসেছে দেশটি।
বাইরের কোন পরাশক্তি এসে একটি দেশ দখল করবে তা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এটি সরাসরি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। আমরা মনে করি প্রতিটি দেশের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়টি সে দেশের জনগণের উপরই ছেড়ে দেওয়া উত্তম। সেদিক থেকে আফগানিস্তানের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটির জনগণের ইচ্ছার প্রতি কানাডার সমর্থন থাকবে বলে মনে করি আমরা। আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে আসুক, এটাই আমরা চাই।
আমরা দেখেছি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের কঠোর শাসনকালে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সেদেশের জনগণকে। তারো অনেক আগে মধ্যযুগ থেকে শুরু করে শত শত বছর ধরেই আফগানিস্তান আগাগোড়া একটি ধর্মান্ধ দেশ ছিল। নানা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস নিয়ে চলত পর্বতময় দেশটির মানুষের জীবনযাত্রা। আর এ কুসংস্কার ও বৈষম্যের সবচেয়ে বড় শিকার ছিলেন সমাজের নারীরা।
মাঝখানে অবশ্য কিছুটা আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছিল দেশটি। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রথম পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। এ সময় আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় আরোহণ করেন আমানুল্লাহ খান নামের এক উদার শাসক। শুরু থেকেই নারী অধিকার নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই ইউরোপীয় অনেক দেশের বেশ আগেই ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা পেয়েছিলেন আফগান নারীরা। মোল্লাতন্ত্রের চোখ রাঙানি সত্বেও পরবর্তী তিন দশকের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ঘরের বাইরে বের হয়ে আসেন আফগান নারীরা। অংশ নেন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক তথা জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত। এরপরই আসে তালেবানদের অপশাসনের অন্ধকার যুগ।
আজ আবার নতুন করে শুরু হয়েছে তালেবানদের সেই অপশাসনের অন্ধকার যুগ। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই তাঁর। ইতিপূর্বে তালেবানরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখনও কানাডা তাঁদের স্বীকৃতি দেয়নি।
কানাডা অবশ্য ঘোষণা দিয়েছে তালেবান হামলায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় থাকা ২০ হাজার আফগান শরনার্থীকে আশ্রয় দিবে। এর মধ্যে আছেন নারীনেত্রী, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। আমরা এই ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। সেই সাথে চাই আফগানিস্তানে মোল্লাতন্ত্র নয়, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা পাক এবং শান্তি ফিরে আসুক ।