কানাডায় বৈচিত্র্য ও বর্ণবাদ: পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি দেশকে জেন্ডার, প্রজন্মের ভিত্তিতে গভীরভাবে বিভক্ত করছে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত ২১ জুন কানাডায় জাতীয় আদিবাসীজন দিবসে এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট তাদের এক সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে যাতে দেখা যায়, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের সামান্য বেশি সংখ্যক কানাডীয় বিশ্বাস করে যে, তাদের দেশটি বর্ণবাদী।
এমন বিশ্বাস পোষণকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৩৫ বছরের কম বয়সী নারী (৫৪ শতাংশ), অশ্বেতাঙ্গ (৪২ শতাংশ), ৩৫ থেকে ৫৪ বছরের নারী (৩৯ শতাংশ) এবং আদিবাসী জনগণের (৩৬ শতাংশ) মধ্যে।
সমীক্ষায় অংশ নেয়া সর্বস্তরের ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই কানাডাকে বর্ণবাদী রাষ্ট্র বলে বর্ণনার বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছেন। ভিন্নমত জানানো ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা হিসাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক হলেন ৫৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী পুরুষ (৭৯ শতাংশ), ৩৫ থেকে ৫৪ বছরের পুরুষ (৭২ শতাংশ) এবং ৫৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের নারী (৭০ শতাংশ)।
কানাডার অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট তাদের ওয়েবসাইটে এই সমীক্ষার ফলাফল বিস্তারিত তুলে ধরে। গুরুত্বপূর্ণ এই সমীক্ষার ফলাফলগুলো প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।
১১ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত অনলাইনে ১,৯৮৪ জন কানাডীয়র মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। ‘ভ্যাঙ্কুভার উত্তর আমেরিকায় এশীয়-বিরোধী বিদ্বেষমূলক অপরাধের কেন্দ্র’ ব্লুমবার্গে এই শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশের পর পরই ওই সমীক্ষা চালানো হয়।
অন্টারিও’র লন্ডনে একটি মুসলিম পরিবারকে লক্ষ্য করে চালানো হামলা ও পরিবারটিকে হত্যা করা, প্রাক্তন আবাসিক স্কুলের জায়গায় শত শত শিশুর গণকবর উদ্ঘাটনের গভীর বেদনা এবং এশীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয়দের প্রতি বৈষম্য বিষয়ে বর্তমানে যেসব রিপোর্ট প্রকাশ পাচ্ছে তার প্রেক্ষাপটে অনেকেই বৈচিত্র্য ও সমতার নীতির প্রতি এই জাতির মনোভাবে বহুসংস্কৃতিবাদের বিষয়ে পৌরাণিকতা আরোপের মাধ্যমে এক ধরণের সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট এই সমীক্ষা চালায় ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউটের ধারাবাহিক সমন্বিত গবেষণার এটি দ্বিতীয় রিপোর্ট। এই সমীক্ষা বৈচিত্র্য ও বর্ণবাদ বিষয়ে এদেশবাসীর উপলব্ধি ও মনোভাব আলোকিত করে তুলতে নাগরিকদের অনুভূতির গভীরে অবতরণ করেছে।
জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের কাছে কানাডা হলো বিভিন্ন বর্ণ ও জাতিসত্ত্বার মানুষের আবাস আর এটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক। দেশের সব অঞ্চল, সব বয়সভিত্তিক গ্রুপ, রাজনৈতিক আদর্শ ও জাতিগত পরিচয়ের কানাডীয়রাই এই বিষয়ে একমত।
কিন্তু প্রতিটি মানুষই কি এটা অনুভব করে? বৈপরীত্ব আছে প্রচুর। পুরোপুরি এক-তৃতীয়াংশ মানুষ (৩৪%) বলেছে, ‘কানাডা একটি বর্ণবাদী দেশ।’ এটি গভীরভাবে বিশ্বাস করে এমন লোকেদের মধ্যে রয়েছে: অশ্বেতাঙ্গ (যাদের ৪২ শতাংশ এরকম বলেছে), এবং নারী, বিশেষভাবে ৩৫ বছরের কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এই ধারণা পোষণের সম্ভাবনা পুরুষের চেয়ে বেশি (৫৪%)।
অবশ্য অন্যদিকে প্রতি আটজনে একজনেরও কম সংখ্যক (১২%) বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, এদেশে কিছু জাতি অন্যদের চেয়ে শ্রেয় হিসাবে বিবেচিত।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ঘাটন:
* ৫৫ বছরের বেশি বয়সী কানাডীয়দের তিন-চতুর্থাংশই দ্বিমত পোষণ করেন যে, কানাডা একটি বর্ণবাদী দেশ। অথচ ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে যাদের বয়স সেইসব নারীরা বলেন, এদেশ বর্ণবাদী।
* প্রতি পাঁচজন কানাডীয়র মধ্যে একজন (২১%) বলেন, তারা অনুভব করেন যে, কানাডায় তাদের সঙ্গে বহিরাগতর মতই আচরণ করা হয়। এমনটা অনুভব করেন ককেসীয়দের মধ্যে ১৭ শতাংশ, আদিবাসীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং অশ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ২৯ শতাংশ।
* যারা কানাডার পক্ষে কথা বলেন তাদের সংখ্যাও জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। এদের মধ্যে আছেন বয়স্ক এবং অধিকতর রক্ষণশীল কানাডীয়রা। এই গ্রুপের লোকেরা অন্যদের সবার চেয়ে আলাদা এই ক্ষেত্রে যে অন্যদের চেয়ে তাদের এ কথা বলার সম্ভাবনা অনেক বেশি যে, অভিবাসনের স্তর অনেক বেশি এবং কানাডায় বর্ণবাদ কোনও সমস্যাই নয়।
* কানাডীয়দের এক-চতুর্থাংশই জরিপে জানতে চাওয়া অন্য যে কোনও গ্রুপের মানুষের চেয়ে মুসলিমদের প্রতি বেশি “শীতল” বোধ করেন। ৫৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষেরা (৪২%) এবং কুইবেকবাসীদের (৩৭%) এমনটা বলার সম্ভাবনা বেশি।
* আলবার্টা (৫৪%) এবং সাসকাচুনের (৫৭%) অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে, বর্ণবাদ কোথায় বিদ্যমান সেটি না দেখার চেয়ে বরং অতিরঞ্জিত বর্ণবাদই কানাডার বৃহত্তর সমস্যা।
* এর পরও সাসকাচুনের (৪৪%) অধিবাসীদেরই এই বিষয়ে একমত হবার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি যে, কানাডা একটি বর্ণবাদী দেশ। এ বিষয়ে একমত হওয়া মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম কুইবেকে (২৪%)।
সমীক্ষার ফলাফলের প্রথম খন্ড
কানাডায় বৈচিত্র্যের অবস্থা
সবাই না হলেও বেশিরভাগ বলেন, বৈচিত্র্য কানাডাকে সমৃদ্ধতর করে
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কানাডা অভিবাসনের ওপর নির্ভরশীল। যেমনটা দেখা যায়, ২০১৬ সালে বিদেশে জন্মানো কানাডীয় নাগরিকদের প্রধানতম উৎস ছিল ভারত, চীন, ফিলিপাইন এবং যুক্তরাজ্য। লিবারেল দলের সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন যেসব রেসিডেন্ট আসতে যাচ্ছে তার এক-চতুর্থাংশ ভারতীয়দের দিয়ে পূরণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হ্রাসমান জন্মহার, জনসংখ্যার বুড়িয়ে যাওয়া এবং কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব ইত্যাদি বহুমুখি কারণে আগামী বছরগুলিতে ওই ধারাবাহিকতাই আরও বেশি করে চলবে বলে অনেকে মনে করছেন। কার্যত, স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার প্রত্যাশা অনুযায়ী, চলতি বছর কানাডার অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ পেরিয়ে যাবে।
গত তিন দশক ধরে কানাডার চেহারায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে থাকলেও আলোচ্য দুটি মুখ্য সূচকের বিষয়ে জনমত স্থিতিশীল ছিল। বর্তমানে আগের চেয়েও সামান্য বেশি সংখ্যক মানুষ বলছেন বৈচিত্র্য কানাডার জন্য মঙ্গলজনক হচ্ছে। বর্তমানে এই মত ৮৬% মানুষের যেটি ১৯৯৪ সালে ছিল ৮২ শতাংশে।
যারা একই ভাষা ও সংস্কৃতির লোকদের পাশাপাশি বাস করতে চান তাদের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ১৯৯৪ সালে এর হার ছিল ২৮%। ২০২১ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে শতকরা ১৮তে।
বিভিন্ন জাতিগত পটভূমি থেকে আসা অনেক মানুষের একটি জনসমষ্টি কানাডার মঙ্গল করছে কিনা জানতে চাওয়া হলে ৮৫ শতাংশ মানুষ বলেন, সেটা হচ্ছে। নারীদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের জবাব প্রায় সর্বসম্মত। যদিও উল্লেখ্য যে, ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে বয়স এমন পুরুষদের প্রতি পাঁচজনে একজন (২১%) এবং ৫৪ বছরের বেশি বয়সের পুরুষদের প্রতি পাঁচজনে একজন (২১%) বলেন, তারা এই প্রশ্নের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
সব বয়সের পুরুষদের মধ্যে ওই একই অনুপাতের অর্থাৎ প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ বলেন, তাদের যদি বেছে নেয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে তারা এমন একটি সমাজে বসবাসে অগ্রাধিকার দিতেন যে সমাজে শুধু তাদের মত একই নৃগোষ্ঠীর মানুষের বাস। এই প্রশ্নে ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরণের জবাব অনেক কম মাত্র ১২ শতাংশের।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে, আলবার্টা, সাসকাচুন ও ম্যানিটোবার মানুষেরা বৈচিত্র্য বিষয়ক এসব প্রশ্নের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক। অন্যদিকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও আটলান্টিক কানাডার মানুষ খোলামেলাভাবেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের উৎসাহ প্রকাশ করে।
বৈচিত্র্য বিষয়ে এই দুটি বক্তব্যের প্রসঙ্গে সর্বাধিক উচ্চারিত বিভেদ দৃশ্যত রাজনৈতিক বা আদর্শগত বলে প্রতীয়মান হয়। ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ বা ‘Bloc Quebecois’ দলকে সমর্থনকারীদের এক-চতুর্থাংশ দ্বিমত পোষণ করেন যে, বৈচিত্র্য কানাডার জন্য মঙ্গলজনক এবং তারা এমন প্রতিবেশিদের সঙ্গে বসবাস করতে পছন্দ করেন যারা দেখতে তাদেরই মত। তুলনায় অন্য তিনটি প্রধান কেন্দ্রীয় দলের ভোটারদের মধ্যে খুব সামান্য সংখ্যকই এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।
দৃশ্যমান সংখ্যালঘু ও আদিবাসী পরিপ্রেক্ষিত
নিজেদেরকে অশ্বেতাঙ্গ বলে পরিচয় দেন এবং আদিবাসী কানাডীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি সমভাবে ককেসীয় জবাবদাতাদের অনুরূপ। তারা বলেন যে, তারা অনুভব করে, কানাডার
বৈচিত্র্য একটি শক্তি।
উল্লেখ্য, অশ্বেতাঙ্গদের অর্ধেক ‘জোরালোভাবে একমত’ যে, বৈচিত্র্য কানাডাকে একটি ভালো দেশে পরিণত করে। এতে কানাডীয় সমাজের কিছু মানুষের কাছে এই বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তারই ওপর আলোকপাত করে।
প্রতি চারজনে একজন কানাডীয় মুসলিমদের প্রতি ‘শীতল’ বোধ করেন
অন্টারিও’র লন্ডনে সংঘটিত সাম্প্রতিক ট্রাজেডির কারণে কানাডার মুসলিম সমাজের প্রতি সহানুভূতি অনেকটাই চাঙ্গা হয়েছে। গত ৬ জুন এক ব্যক্তি গাড়িচাপা দিয়ে একটি মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডকে একটি সুপরিকল্পিত হেট ক্রাইম বা ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। ওই ঘটনার পরের দিনগুলিতে কানাডার সব প্রধান কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দল কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
এই সমন্বিত সমীক্ষার অংশ হিসাবে লন্ডন ট্রাজেডির আগের সপ্তাহগুলিতে এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট এদেশের অশ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের কতিপয় অংশের জনগণের প্রতি কানাডীয়দের অনুভূতি কেমন সে বিষয়ে জানতে চায়। এতে কৃষ্ণাঙ্গ, চীনা বা পূর্ব এশীয়, দক্ষিণ এশীয় অথবা মুসলিমদের প্রতি কানাডীয়রা ‘উষ্ণ’ অথবা ‘শীতল’ বোধ করে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। দেখা যায়, প্রতিটি শ্রেণির মানুষের প্রতিই বেশিরভাগ কানাডীয় উষ্ণতা অনুভব করে। অবশ্য এটি অর্থবহ যে, পুরোপুরি চারজনে একজন (২৫%) বলেছেন, কানাডীয়দের মধ্যে যারা মুসলিম তাদের প্রতি তারা ‘উষ্ণতার চেয়েও বেশি শৈত্য’ বা ‘শীতলতা’ অনুভব করেন।
এ ধরণের অনুভূতির প্রতি যাদের বেশি ঝোঁক তাদের মধ্যে আছেন ৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ (৪২%) এবং যারা কুইবেকে বসবাস করেন (৩৭%)। বাস্তবে অতীতে Bloc Quebecois দলের যারা ভোটার ছিলেন তাদের পুরোপুরি অর্ধেক (৫১%) এবং গত কেন্দ্রীয় নির্বাচনে সিপিসি (কনজারভেটিভ) দলের অতীত জনপ্রিয়তার হারের প্রায় সমান সংখ্যক (৩৮%) মুসলিমদের প্রতি এহেন শীতলতা বোধ করেন।
জাতিগত পরিচয় যা-ই হোক, সবাই নিজেকে সমাজের একজন বলে মনে করে না
অধিক সংখ্যক না হলেও স্বল্প সংখ্যক কানাডীয় একটি বৈচিত্রপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজের মূল্যায়ন করেন। পটভূমি নির্বিশেষে অনেক লোকই বলেছেন, এ দেশে তারা নিজেদেরকে খাপছাড়া মনে করেন। প্রতি পাঁচজনে একজন (২১%) এবং অশ্বেতাঙ্গ ও আদিবাসীদের মধ্যে প্রতি ১০জনে তিনজন বলেন, কানাডায় তাদের সঙ্গে বহিরাগতের মত আচরণ করা হয় বলে তারা অনুভব করেন। অন্যদিকে সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এক-চতুর্থাংশই নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরের মানুষের সঙ্গে তেমন কোনও জোরালো সংশ্লিষ্টতা বোধ করেন না।
সমীক্ষার ফলাফলের দ্বিতীয় খন্ড
কানাডায় বৈচিত্র্য ও বর্ণবাদ বিষয়ে চার ধরণের মানসিকতা
বৈচিত্র্যের বিষয়ে কানাডায় কানাডীয়দের মধ্যে চার ধরণের মানসিকতা রয়েছে। এগুলি হলো, প্রবক্তাগণ, গ্রহীতা, রক্ষণকারী এবং নিন্দুক (Advocates, Accepting, Guarded and Detractors)। প্রত্যেক মানসিকতাই প্রতিনিধিত্ব করে জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের, যেমনটা নিচের গ্রাফে দেখা যাচ্ছে:
প্রতিটি গ্রুপের কিছু সংজ্ঞায়নের বিস্তারিত নিয়ে এরপর একটি সারসংক্ষেপ দেয়া হলো:
প্রবক্তাগণ (Advocates)
– ১৮ থেকে ৩৪ বছরের নারীদের অর্ধেক হলো প্রবক্তা
– সর্বোচ্চ হার দেখা যায় অন্টারিওতে (২৮%), আটলান্টিক কানাডায় (২৭%), এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় (২৬%)
– তিন-চতুর্থাংশ বলেন কানাডা একটি বর্ণবাদী দেশ
– অর্ধেক (৪৭%) মানুষ বলেন, তারা প্রায়শই অন্যদের বর্ণবাদী মন্তব্য করতে শোনেন (চারটি গ্রুপেরই বেশিরভাগ মানুষ)
– এরা সর্বসম্মত (৯৯%) যে বৈচিত্র্য কানাডাকে একটি ভালো দেশে পরিণত করে
গ্রহীতা (Accepting)
– ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারী এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সী গ্রুপের মানুষেরা সাধারণভাবে গ্রহীতাদের মধ্যে পড়েন
– সর্বোচ্চ হারও দেখা যায় অন্টারিও, আটলান্টিক কানাডা, ব্রিটিশ কলম্বিয়ায়Ñ প্রত্যেক প্রদেশে এই হার ২৯ শতাংশ
– আগে লিবারেল দলের ভোটার ছিলেন এমন প্রতি তিনজনে একজন (৩৩%) গ্রহীতা, তেমনই আগের নিউ ডেমোক্রেটদের ২৮ শতাংশ
– ৮৬ শতাংশ বলেন যে, বর্ণবাদী বৈষম্য যেখানে অস্তিত্বশীল সেখানে না দেখে যেখানে এটি নেই সেখানে এর অস্তিত্বের ধারণা করাটাই মানুষের জন্য এক বৃহত্তর সমস্যা
– সব গ্রুপের লোকেরাই বলবেন যে তারা তাদের সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অনুভব করেন (৮০%)
রক্ষণকারী (Guarded)
– সাধারণভাবে ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী এবং ৫৫বছরের বেশি বয়সের পুরুষদের এই গ্রুপে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়
– আলবার্টা (২৮%), ম্যানিটোবা (২৭%), এবং কুইবেকে (২৭%), রক্ষণকারী গ্রুপের অনুপাত সবচেয়ে বেশি
– অতীতে Bloc Quebecois দলের ভোটারদের মধ্যে প্রতি তিনজনে একজন রক্ষণকারী গ্রুপের আছেন, তেমনই সাবেক কনজারভেটিভদের ২৯ শতাংশও
– এই গ্রুপের অর্ধেক (৫৫%) লোক বলেছেন, বর্ণবাদী বৈষম্য যেখানে সত্যি সত্যি অস্তিত্বশীল সেখানে এটি দেখতে জনগণের ব্যর্থতাই এক বৃহত্তর সমস্যা
– প্রতি পাঁচজনে একজন (২০%) একই জাতির প্রতিবেশিদের সঙ্গে বসবাসে প্রাধান্য দেন
নিন্দুক (Detractors)
– এই গ্রুপে পুরুষদের অবস্থান (৩৪%) নারীদের চেয়ে (১৭%) দ্বিগুণ
– ৫৫ বছর বা তার চেয়েও বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে দুজন এই গ্রুপে আছেন
– অনুপাতিক হারের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আছেন সাসকাচুন (৩৮%), এর পরেই আলবার্টায় (৩২%)
– সাবেক কনজারভেটিভ ভোটারদের অর্ধেকই (৪৮%) নিন্দুক গ্রুপের, সাবেক Bloc Quebecois এর ভোটারদের ৩৯ শতাংশও এই গ্রুপে
– প্রায় সবাই (৯৪%) কানাডা বর্ণবাদী দেশ এই ধারণার সঙ্গে সম্মত নন
– বৈচিত্র্য কানাডার জন্য মঙ্গলজনক এমন ধারণার ব্যাপারে আপত্তি আছে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুজনেরও বেশি সংখ্যকের (৪৪%)
– এক-তৃতীয়াংশই অনুভব করেন যে, তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় যেন তারা কানাডায় বহিরাগত
জেন্ডারের সঙ্গে সঙ্গে বয়সও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। যতটা দেখা গেছে তরুণীদের প্রবক্তা হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, এর পরেই রয়েছে ৩৫ থেকে ৫৪ বছরের নারীরা। সব বয়সের নারীদের তুলনায় সব বয়সের পুরুষদেরই রক্ষণকারী বা নিন্দুক হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আঞ্চলিক পার্থক্যও গুরুত্বপূর্ণ। অন্টারিও, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, এবং আটলান্টিক কানাডা প্রবক্তা বা গ্রহীতাদের মূল আবাস হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, অন্যদিকে দেশের অন্যান্য অংশে রক্ষণকারী বা নিন্দুক গ্রুপের মানুষের বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
রাজনীতিও এই আলোচনার অংশ। ২০১৯ এর কেন্দ্রীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ দলকে সমর্থনকারীদের অর্ধেক নিন্দুক, যেমন Bloc Quebecois এর ৩৯ শতাংশ ভোটারও এই গ্রুপে। নিউ ডেমোক্রেটদের বেশিরভাগই প্রবক্তা।
উল্লেখ্য, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় ককেসীয়, আদিবাসী অথবা অশ্বেতাঙ্গ যা-ই হোক না কেন সেই পরিচয় নির্বিশেষে সূচকের প্রতিটি অংশই বৃহত্তর বর্ণালীজুড়ে প্রতিনিধিত্বশীল।
কানাডায় বহুসংস্কৃতিবাদ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী ধারণা
উপরোল্লিখিত চারটি গ্রুপের যে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে তা হলো অংশত কানাডীয় সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাদের বক্তব্যের তীব্রতার মাত্রা। উদাহরণস্বরূপ, বহুসংস্কৃতিবাদ কানাডার জন্য উপকারী নিন্দুকেরা প্রধানত এই ধারণার বিরুদ্ধে থাকবেন, যদিও প্রতিটি গ্রুপের ভেতরেই ওই নীতির বিষয়ে ঐকমত্য জোরদার হচ্ছে।
চারটি গ্রুপেরই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় শুধু নিজেদের মত প্রতিবেশিদের সমাজে বসবাসের ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করলেও নিন্দুক গ্রুপের প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজনই এ বিষয়ে একমত। অবশ্য প্রতিটি গ্রুপেই এই ধারণার বিষয়ে জোরালো অসম্মতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রবক্তারা প্রধানত নিজস্ব একটি শ্রেণিতে পড়েন যখন এমন ধারণার প্রসঙ্গ আসে যে কানাডা সহজাতভাবেই একটি বর্ণবাদী দেশ। তাদের তিন-চতুর্থাংশ (৭৬%) এই ধারণার সঙ্গে একমত, যদিও অন্য সব বিভাগের সংখ্যাগুরিষ্ঠ মানুষ একমত নন।
সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোর প্রতি আচরণ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি
কানাডার রয়েল মাউন্টেড পুলিশ (RCMP) স্বয়ং পদ্ধতিগত বর্ণবাদের স্বীকৃতি দিলেও অন্যদের তুলনায় অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি পুলিশের আচরণ কেমন সে বিষয়ে কানাডীয়রা বিভক্ত। পুলিশ এই গ্রুপের লোকদের কীভাবে সামলায় বলে মনে করেন এমন প্রশ্ন করা হলে নিন্দুকেরা মনে করেন খুব সামান্যই পার্থক্য আছে, রক্ষণকারীরাও মোটামুটি একমত বলেই দেখা যায়, যদিও গৃহীতাদের মধ্যে মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটে। প্রবক্তারা অনেক বেশি পরিমাণে নিশ্চিত যে, অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি পুলিশের আচরণ অন্যায্য।
স্বাস্থ্যসেবা, আদালত ও ব্যাংকসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রসঙ্গ এলে একটি সমরূপ চিত্রই উঠে আসে
অশ্বেতাঙ্গদের চেয়েও বেশি বর্ণবাদ দেখতে পান প্রবক্তারা
যেসব কানাডীয় নিজেদেরকে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু হিসাবে পরিচয় দেন সেই অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা অন্য সব নন-ককেসীয়দের তুলনায় তাদের প্রতি পুলিশ যে আচরণ করে সে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনামুখর। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় দুজন (৩৭%) বলেন, তাদের প্রতি পুলিশের আচরণ অসঙ্গতভাবে পক্ষপাতমূলক অথবা বর্ণবাদী। প্রবক্তা গ্রুপের কানাডীয়রাও উল্লেখযোগ্য মাত্রার ব্যবধানে অন্য সব গ্রুপের লোকদের ছাড়িয়ে যান এমন অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে যে, কানাডীয় সমাজ বিভিন্ন দিক থেকে অশ্বেতাঙ্গদেরকে কোণঠাঁসা করে।
সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি
যখন কানাডার সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোর প্রসঙ্গ সামনে আসে, সেটা ধর্মীয় বা জাতিগত যেটাই হোক, আগে যেমনটা বলা হয়েছে যে, মুসলিমরা হলো কিছু কানাডীয়র কাছে বিদ্বেষের উৎস। সবার ক্ষেত্রে এটি সত্য নয়, গ্রহণকারী এবং প্রবক্তাদের মধ্যে প্রায় সবাই মুসলিমদের উষ্ণ মনোভাব নিয়েই দেখে। রক্ষাকারী গ্রুপের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি কমে আসে দুই-তৃতীয়াংশে (৬৮%) এবং নিন্দুকদের মধ্যে মাত্র ৪৮ শতাংশে, যা কৃষ্ণাঙ্গ, চীনা, অথবা দক্ষিণ এশীয় কানাডীয়দের প্রতি উষ্ণতা অনুভবকারীদের চেয়েও অনেক নিচে।
নিন্দুক গ্রুপের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মুসলিম সমাজের প্রতি ‘অত্যন্ত শীতল’ অনুভব করে এবং উষ্ণ ও শীতল অনুভব করেন সমান সংখ্যক মানুষ। চিত্রের বিপরীতে প্রবক্তা গ্রুপের দুই-তৃতীয়াংশ (৬৬%) বলেন, তারা মুসলিম কানাডীয়দেরকে ‘অত্যন্ত উষ্ণতার’ সঙ্গে দেখেন।
সমীক্ষার ফলাফলের তৃতীয় খন্ড
কানাডায় বর্ণবাদ
কানাডা কি বর্ণবাদী? তিনজনে একজন বলেন, ‘হ্যাঁ’
এসব আলোচনার মৌলিক দিক হলো এই যে, এদেশের মানুষ মৌলিকভাবেই একমত অথবা অসম্মতি জানায় কিনা যে, এই দেশটির নিজেরই অন্তর্গত জাতিগত সমস্যা রয়ে গেছে।
এই প্রশ্নে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ (৩৪%) ‘হ্যাঁ’ বলেন। সাধারণভাবে এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন ৫৫ বছরের বেশি বয়সের নারী এবং ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী পুরুষেরা। দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, এই বক্তব্যটি খুবই বাড়াবাড়ি। কানাডা বর্ণবাদী দেশ এটা তারা বিশ্বাসই করেন না।
উল্লেখ্য, বৈচিত্র্য কানাডার জন্য ভালো নয় বলে মনে করেন এবং একই রকম জাতিগত পরিচয়ের মানুষের সঙ্গে বসবাস করতে চান এমন মানুষের সংখ্যা বেশি হবার সম্ভাবনা থাকলেও সাসকাচুন ও ম্যানিটোবার বাসিন্দারাই হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ যারা মনে করেন কানাডা একটি বর্ণবাদী দেশ। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার পাশাপাশি ওই দুটি প্রদেশ হলো তিনটি অঞ্চলের অংশ যেখানে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত দুইজন এ বিষয়ে একমত।
২০১৯ সালের নির্বাচনে গ্রিন পার্টি বা এনডিপিকে সমর্থনকারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বলেন, কানাডা একটি বর্ণবাদী দেশ। তবে এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন বেশিরভাগ লিবারেল, কনজারভেটিভ ও Bloc Quebecois দলের সমর্থক।
এই অনুভূতি কেমন দেখাবে তা নির্ভর করে খোদ জাতিগত বা বর্ণগত পরিচয়েরই ওপর। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা নিজেদেরকে আদিবাসী বা অশ্বেতাঙ্গ বলে পরিচয় দেন তাদের পক্ষে কানাডাকে বর্ণবাদী দেশ বলার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য না হলেও কিছু পরিমাণে বেশি।
উল্লেখযোগ্য যে, কানাডা বর্ণবাদী দেশ এই বিষয়ে ঐকমত্যের আধিক্য আছে কেবল প্রবক্তাদের মধ্যেই। অন্য আর সব গ্রুপেই এ বিষয়ে ভিন্নমত বেশি। নিন্দুকদের কাছে ওই বিবৃতিতে সত্যের লেশমাত্র নেই।
কিন্তু আসলে কিছু জাতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে কতজন?
এক-তৃতীয়াংশ মানুষ যখন বলছেন কানাডা একটি বর্ণবাদী দেশ তখন, মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত যে, এটিকে নিঃসংশয়ে বর্ণবাদী বলা চলে। এই দলের লোকেরা বলেন, তারা মনে করেন কিছু জাতি প্রাকৃতিকভাবেই অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে তারা মনে করেন। উল্লেখ্য, প্রতিটি জাতিগত গ্রুপে এমন বিশ্বাস পোষণকারী মানুষের সংখ্যা অন্তত ১১ শতাংশ এবং অশেতাঙ্গদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ।
এই প্রশ্নে কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ঐকমত্য আছে, যদিও উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৯ সালে কনজারভেটিভ দলকে সমর্থনকারীদের মধ্যে অন্যদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেনÑ যদিও এটিই এই গ্রুপের অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। রাজনীতিকরাই একমাত্র জনগোষ্ঠী যারা এই প্রশ্নে ভিন্নতা সৃষ্টি করতে পারে। সব বয়সের পুরুষ ও নারীর এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের সম্ভাবনা বেশি যাদের সংখ্যা আনুমানিক ১২ শতাংশ।
সূচক থেকে এই প্রশ্নে আরও বেশি বিভেদের চিত্র প্রকাশ পায়। নিন্দুক গ্রুপের প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন একমত যে, কিছু জাতি অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠÑ এই সংখ্যা সূচকের অন্য যে কোনও ভাগের চেয়ে বেশি।
কানাডীয়রা কি খুব বেশি বর্ণবাদে বিশ্বাসী? নাকি খুব বেশি নয়?
কার্যত, কিছু লোক যুক্তি দেন যে, ২০২১ সালে যেখানে বর্ণবাদ নেই সেখানেও এটি দেখতে পাবার একটি প্রবণতা রয়েছে। অন্যরা গোটা প্রশ্নটিই দূরে ঠেলে দিয়ে এটিকে বাস্তবতার প্রতি অস্বীকৃতি হিসাবে অভিহিত করেন। পাঁচজনের মধ্যে দুজন বলেন, যেখানে বর্ণবাদী বৈষম্য প্রকৃতপক্ষে নেই সেখানেও এটি দেখতে পাওয়া, যেখানে বর্ণবাদী বৈষম্য আছে সেখানে তা দেখতে না পারার ব্যর্থতার চেয়েও বৃহত্তর সমস্যা। পরের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় অশ্বেতাঙ্গ জনগণ ও নারীরা এর বিপুল সমর্থক। তবে পুরুষ ও আদিবাসীরা এ বিষয়ে বিভক্ত।
আলবার্টা ও সাসকাচুনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী বলেন, মানুষ বর্ণবাদকে অতিরঞ্জিত করছে এটাই কানাডায় বৃহত্তর সমস্যা, অথচ দেশের অন্য সব জায়গায় বেশিরভাগ মানুষ এই বিতর্কে ভিন্ন অবস্থান নেন।
বৈচিত্র্যের ধারণার প্রসঙ্গ এলে এ বিষয়ক সূচকে অর্থবহ বিভাজন দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। নিন্দুক ও প্রবক্তারা এক্ষেত্রে পরস্পরের প্রায় ভিন্ন মেরুতে। নিন্দুকেরা প্রায় একচেটিয়াভাবে (৯৪%) বিশ্বাস করে যে, যেখানে বর্ণবাদ নেই সেখানেও এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াটাই সমস্যা। অন্যদিকে প্রবক্তারা সম্পূর্ণ বিপরীতটাই সত্য বলে বিশ্বাস করে।
বর্ণবাদী বলতে কী বোঝা হয় কিংবা হয় না?
‘রাজনৈতিক শুদ্ধতা’র প্রসঙ্গ নিয়ে গত এক দশক ধরে অবিরত গণমাধ্যমে শিরোনাম, নিবন্ধ রচনা এবং সামাজিক মাধ্যমে যুক্তির জাল বিছানো হয়েছে। কোনটিকে শুদ্ধ বলা যায় এবং কার প্রসঙ্গে এটি কেউ বলতে পারে? কানাডীয়দের জন্য দৈনন্দিন বক্তৃতা বিবৃতিতে বর্ণবাদের ইস্যুটি একটি জটিল বিষয় যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মতানৈক্য সৃষ্টি করে এবং এই বিষয়টির শুদ্ধিকরণ যে কত কঠিন সেটি স্পষ্ট করে তোলে।
এ বিষয়ে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা তুলে ধরা হয় যেখানে তারা হয়তো কাউকে জনসমক্ষে কাউকে কিছু বলতে শুনবে বা করতে দেখবে। এরপর তাদেরকে প্রশ্ন করা হয়, প্রতিটি বক্তব্য বা কর্মই কি যথার্থ অথবা আপত্তিকর। এ ধরণের ‘মাইক্রোএগ্রেশন’ (প্রাত্যহিক বক্তৃতা বিবৃতিতে বা কাজের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পরোক্ষভাবে যেসব সূক্ষè আক্রমণ চালানো হয়) নিয়ে এই ধারাবাহিকের প্রথম খণ্ডেও আলোচনা করা হয়েছে যখন এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউট এশীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয়দেরকে তাদের নিজেস্ব অভিজ্ঞতার বিষয়ে প্রশ্ন করেছে।
এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ঐকমত্য দেখা গেছে এমন ঘটনায় যে, কেউ একজন অন্য কোনও নৃগোষ্ঠীর কোনও ব্যক্তির আচরণের অনুকরণ (পরিহাস) করছে। প্রতি তিনজনে একজন কানাডীয় বলেন, এটা বর্ণবাদী আচরণ (৩২%), অন্যদিকে ৩৮ শতাংশ বলেন, এটি আপত্তিকর বটে তবে বর্ণবাদী বলার উপযুক্ত নয়, সেটি নির্ভর করে বিষয় ও পরিপ্রেক্ষিতের ওপর।
অল্প কিছু সংখ্যক লোক বলেন, কাউকে একথা বলা যে, তারা ‘ভালো ইংরেজি বলেন’ বা অশ্বেতাঙ্গ কাউকে জন্মস্থান কোথায় এমন প্রশ্ন করা বর্ণবাদী আচরণের মধ্যে পড়ে, তবে মাত্র এক-চতুর্থাংশ মানুষ বলেন, ওই ধরণের বক্তব্য বা প্রশ্ন করার মধ্যে ভুল কিছু নেই।
কানাডীয়রা বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে এ ধরণের প্রতিটি প্রশ্নের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত সুসমঞ্জস দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে।
এসব উদাহরণের বিষয়ে নিন্দুকেরা কমই সচেতন, যদিও তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ বলেন, অন্য নৃগোষ্ঠীর লোকেদের অনুকরণ বা পরিহাস করা আপত্তিকর। প্রবক্তা শ্রেণি নিরঙ্কুশভাবে এমন মত পোষণ করে যে, ওইসব কাজের প্রতিটিই আপত্তিকর।
নারীরা, বিশেষ করে তরুণীরা পুরুষের তুলনায় এইসব পরিস্থিতির বর্ণবাদী বা আপত্তিকর হবার সম্ভাব্যতা বিষয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর। পুরুষদের ক্ষেত্রে এইসব ঘটনার প্রতিটিই গড়পরতাভাবে গ্রহণযোগ্য।