ড্যাগ ফোর্ডের দল নির্বাচনের আগে জনসমর্থনে এগিয়ে তবে তা খুবই নাজুক
জনসমর্থন সামান্য কমলেও জরিপে দেখা যাচ্ছে অন্টারিওতে এই দলটি এখনও বিভক্ত বিরোধী দলগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ০২ জুন, ২০২১: ২০২২ সালে অন্টারিওর প্রাদেশিক নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ডের প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভস পার্টি জনমত জরিপে এখনও এগিয়ে।
তবে জনসমর্থন কমে যাওয়ায় দলটির অবস্থান কিছুটা নাজুক। এই নাজুক অবস্থান আরও স্পষ্ট হতে পারে যদি ফোর্ডবিরোধী সব ভোট একটি দলের পক্ষে এসে যায়। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন এরিক গ্রেনিয়ের। -অন্টারিওতে নির্ধারিত নির্বাচনের তরিখ হলো ২০২২ সালের ০২ জুন।
– গত এক মাসে অনুষ্ঠিত তিনটি জনমত জরিপে দেখা গেছে পিসির (প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভস) প্রতি সমর্থন কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে।
– গত মে মাসের বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত লেজার ফর পোস্টমিডিয়া, মেইনস্ট্রিট রিসার্চ ও ক্যাম্পেন রিসার্চ-এর জরিপগুলোর সব কটিতেই অন্টারিওর রাজনৈতিক মানচিত্র একইরকম দেখা গেছে।
তিনটি জরিপেই পিসি ৩৩ ও ৩৬ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছে যেখানে লিবারেল দলের প্রতি সমর্থন ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ, নিউ ডেমোক্রেটদের ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টির ছয় থেকে নয় শতাংশ।
জনসমর্থনে পিসি পার্টি লিবারেল ও নিউ ডেমোক্রেটদের চেয়ে গড়ে আট শতাংশ এগিয়ে। আর পরের দল দুটির জনসমর্থন একেবারেই কাছাকাছি।
ফোর্ডের পিসি ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাত শতাংশ ভোটের ব্যবধানে এনডিপিকে পরাজিত করে। সুতরাং প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, তখন থেকে এদের কারোরই অবস্থার তেমন কোনও অবনতি ঘটেনি।
লিবারেলের উন্নতি, এনডিপির অবনতি
কিন্তু তিনটি জনমত জরিপ থেকে বোঝা যাচ্ছে, পিসির জনসমর্থন ২০১৮ সালের পর থেকে ছয় পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে, যখন লিবারেল দলের বেড়েছে সাত পয়েন্ট এবং এনডিপির কমেছে আট পয়েন্ট। গ্রিন পার্টি অর্জন করেছে তিন পয়েন্টের মত।
এর পরও, যদি এই মুহূর্তে নির্বাচন হয় তাহলে লিবারেল ও এনডিপির মধ্যকার বিভেদ পিসির জন্য সুবিধা হিসাবে দেখা দেবে, তাদেরকে বেশিরভাগ আসনে বিজয়ী হবার এবং সম্ভবত আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের সুযোগ করে দেবে।
তিনটি জরিপের ফলাফলে অঞ্চলভিত্তিক কিছু পার্থক্য আছে। দেখা গেছে, দক্ষিণপশ্চিম ও পূর্ব অন্টারিওতে দৃশ্যত পিসির অবস্থান ভালো এবং উত্তর অন্টারিওতে নিউ ডেমোক্রেটদের সঙ্গে তাদের অবস্থান সমানে সমান। হ্যামিল্টন-নায়াগ্রা অঞ্চলে ত্রিমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আভাস পাওয়া যায়।
জরিপের সব ফলাফল একসঙ্গে বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে, পিসি তার গ্রামীণ ভিত্তি থেকে পাওয়া আসন এবং ছোট ছোট নগর কেন্দ্র ও বৃহত্তর টরন্টো এলাকায় যথেষ্ট সংখ্যক আসন নিয়ে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের মত অবস্থায় রয়েছে। ২০১৮ সালে দলটি পেয়েছিল ৭৬টি আসন যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে ১৩টি বেশি। এখনও তারা কিছু আসন হারালেও সমস্যায় পড়বে না।
পিসির পক্ষে হাওয়া নিম্নমুখি
পিসির জন্য অবশ্য সমস্যা এই যে, হাওয়া ঠিক দলটির অনুকূলে বইছে না। তিনটি জরিপেই দেখা গেছে, এ বছরের আরও আগের দিকে যে সমীক্ষা করা হয়েছিলো তার তুলনায় পিসির জনসমর্থন কিছুটা কমেছে- ‘মেইনস্ট্রিট’এর তথ্যমতে গত ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১০ পয়েন্ট, ‘লেজার’এর তথ্যমতে গত মার্চের চেয়ে চার পয়েন্ট এবং ক্যাম্পেন’এর তথ্যমতে গত এপ্রিলের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট জনসমর্থন কমেছে দলটির।
এসব বিষয়ে ড্যাগ ফোর্ডের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কোনও ভূমিকা নেই। যদিও লেজার-এর
জরিপ বলছে, প্রিমিয়ারের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার হার ৩৮ শতাংশ- যা তার নিজের দলের প্রতি সমর্থনের চেয়ে বেশি। কিন্তু ওই সংখ্যায়ও ক্রমশ নিম্নমুখি প্রবণতা দেখা যাচ্ছিলো মহামারির শুরুর দিকে ফোর্ডের জনপ্রিয়তা যে উচ্চতায় ছিলো তার চেয়ে।
জনসমর্থনের এই পতনের পেছনে মহামারির ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা যায়। লেজারের জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়গুলি পিসি যেভাবে মোকাবিলা করেছে তাতে সমর্থনদানের পরিমাণ মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ের আগে মার্চ থেকে দ্রুত ধসে পড়ে।
নিউ ডেমোক্রেট দল পেছনে এঁটে আছে
এনডিপির জন্য এটা কোনও ভালো খবর নয় যে দলটি পিসির সাম্প্রতিক সঙ্কট থেকে কোনও সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। গত নির্বাচনের সময় যতটা জনসমর্থন তাদের পক্ষে ছিলো এখন তার চেয়ে কম।
অবশ্য ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় এনডিপিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যতটা সক্ষম বলে মনে হতো এখন তার চেয়েও বেশি সক্ষম বলে দেখা যাচ্ছে। দলটি গত নির্বাচনে টরন্টো ও সাউথওয়েস্টের মত যেসব জায়গায় বড় সাফল্য পেয়েছিলো সেসব জায়গায় জনসমর্থনের অনেকটাই ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু এনডিপি টরন্টোতে গত নির্বাচনের চেয়েও জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হবে লিবারেল দলের পক্ষ থেকে।
তবে তার (এনডিপি নেতা আন্দ্রে হরওয়াথের) নামের স্বীকৃতি যথেষ্ট উঁচু, যা তাকে লিবারেল দলের নেতা স্টিভেন ডেল ডুকার চেয়ে অধিকতর সুবিধা দিতে পারে। কিন্তু তিনি অন্টারিও এনডিপির নেতৃত্বে আছেন ২০০৯ সাল থেকে, যেটি তাকে কানাডার কোনও আইনসভার সদস্য থাকা অবস্থায় কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক কোনও দলের দীর্ঘতম সময় ধরে নেতৃত্ব দানকারী নেতায় পরিণত করেছে। ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্বে থাকার কারণে তার প্রাপ্ত নম্বর সম্ভবত এর চেয়ে ভালো হতে পারতো না।
ডেল ডুকা কোনও ইতিবাচক ছাপ ফেলতে পারছেন না
ডেল ডুকার দরকার নিজের মূল্যমান (রেটিং) বাড়ানো। লেজারের জরিপে দেখা গেছে, অন্টারিওবাসীদের ৩৮ শতাংশ বলেছেন, তারা ডুকার বিষয়ে তেমন সচেতন নন অথবা তার সম্পর্কে যথেষ্ট জানেন না যাতে করে তার সম্পর্কে কোনও মতামত গড়ে তোলা যায়। আর এটি হলো জনগণকে নিয়ে পরিচালিত এক সমীক্ষায় ফলাফল যেখানে জনগণ কিছু রাজনৈতিক জরিপের প্রশ্নপত্রের জবাব দেন। এতে দেখা যায়, বৃহত্তর জনসংখ্যার চেয়ে এরা রাজনৈতিকভাবে অধিকতর সচেতন।
যাদের মতামত তৈরি আছে, তাদের মধ্যে ডেল ডুকার প্রাপ্ত নম্বর খুব বড় কিছু নয়: ১৯ শতাংশ বলেছেন ডুকা সম্পর্কে তাদের মতামত অনুকূল। সে তুলনায় তার সম্পর্কে প্রতিকূল মতামত পোষণ করেন ৩৯ শতাংশ মানুষ।
নগর অঞ্চলের বাইরে জনসমর্থনের ক্ষেত্রে লিবারেল দলের স্পষ্ট কিছু দুর্বলতা আছে- নির্দিষ্টভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্টারিওতে, যেখানে গত কয়েক দশক ধরে তাদের ভোট নিঃশেষ হয়ে গেছে। জরিপের ফলাফল বলছে, বৃহত্তর টরন্টো অঞ্চলেও লিবারেল দলকে এখনও কিছু কাজ করতে হবে, এনডিপিকে হঠাতে শহুরে এলাকায় এবং পিসিকে রুখতে পল্লী এলাকায়।
বিরোধীদল বিভক্ত- কিন্তু আর কতদিন?
পিসির অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী নির্বাচনে মূল প্রশ্ন দাাঁবে এটাই যে, পিসিবিরোধী সব ভোট লিবারেল বা এনডিপির পক্ষে চলে আসে কিনা।
এটি স্পষ্ট যে, পিসিবিরোধী ভোটারদেরই একেক সময় একেক দলের পক্ষে যাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। লেজারের তথ্যমতে, লিবারেল, এনডিপি ও গ্রিন পার্টির ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বলেছেন যে তারা দ্বিতীয় পছন্দ হিসাবে পিসি ছাড়া অন্য কোনও পার্টিকে বেছে নিতে পারেন। অন্যদিকে পিসির বেশিরভাগ ভোটার বলেছেন, তাদের পছন্দ চূড়ান্ত।