কাহিনী বিচিত্রা

সাইদুল হোসেন

কিছু টুকরা কাহিনী

(এক)

শান্তির সন্ধানে

একটা হিন্দি মুভি দেখলাম। একটা দৃশ্যে দেখলাম এক যুবক হাতজোড় করে চোখ বোজে হিন্দুদের কোন একজন ভগবানের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে একান্তচিত্তে প্রার্থনা জানাচ্ছে। সেখানে এক বৃদ্ধও উপস্থিত ছিল।

যুবকের প্রার্থনা শেষ হলে সেই বৃদ্ধ তাকে প্রশ্ন করলো ঃ বেটা, ভাগওয়ানসে ক্যায়া মাংগা জো তেরা পাস নেহী হ্যায়? (ভগবানের কাছে তুমি কি চাইলে বাবা যা তোমার কাছে নেই?)

যুবকটি শান্তস্বরে বললো : শা-ন্তি! – নভেম্বর ১৬, ২০১৫

(দুই)

আমাদের কোন নাতিপুতি নেই

বাইশ বছর ধরে ভলানটিয়ারিং করছে Olive Leslie. মূলতঃ আয়ারল্যান্ডের অধিবাসী। আজ থেকে ৬২ বছর আগে ক্যানাডায় ইমিগ্রেশন, তখন ওর বয়স ছিল ২৬ বছর। বর্তমান বয়স ৮৮ বছর। অতি অমায়িক হাসিখুশী মহিলা।

পনর বছর ধরে ভলানটিয়ারিং করছে CORA. জ্যামাইকান কালো মহিলা। বয়স ৭৭ বছর।

এরা দু’জন খুব অন্তরংগ বন্ধু, প্রায়ই চোখে পড়ে ওরা একই সংগে কোথাও যাচ্ছে, অথবা আসছে, অথবা ক্লিনিকের ভেতরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। দু’জনের সংগেই আমার হৃদ্যতা বর্তমান।

একদিন দু’জনকে এক সংগে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম : তোমাদের grandchildren ক’জন?

আমার প্রশ্ন শুনে হাসলো দু’জনেই। Olive বললো : একজনও নয়। Cora-ও বললো : একজনও নয়। বিষ্মিত দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকালাম। একে একে দু’জনেই জানালো যে ওরা চিরকুমারী, জীবনে কোনদিন বিয়েই করেনি। Therefore, naturally, we don’t have any grandchildren. -নভেম্বর ১৬, ২০১৫

(তিন)

শাশুড়ির খোঁজে বৃদ্ধ এক ইটালিয়ান

আজকের একটা মজার ঘটনা।

ষাটোর্ধ বয়সের এক ইটালিয়ান আমার ডেস্কের সামনে দাঁড়াতেই মনে হলো যে তিনি পেশেন্ট নন, অন্য কাউকে খুঁজছেন। জিজ্ঞাসা করলাম ঃ কাকে খুঁজছেন, স্যার? তিনি হাসতে হাসতে জবাব দিলেন : I am looking for that generous lady who gave her daughter to be my wife!

প্যাঁচালো জবাব কিন্তু বুঝতে কোন কষ্ট হলো না যে তিনি তার শাশুড়িকে খুঁজছেন।

কি নাম তার? জানতে চাইলাম আমি।

নামটা বললে অন্য একজন ভলানটিয়ার ভদ্রলোককে ক্লিনিকের ভেতরে ডেকে নিয়ে গেল।

কয়েক মিনিট পর দেখলাম এক বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুলে wheelchair-এ বসা অন্য এক বৃদ্ধাকে ঠেলেঠেলে আমার দিকে আসছেন, আগে আগে সেই ভদ্রলোক। জিজ্ঞাসা করলাম : Is she a good wife, sir? তিনি আগের মতই হাসতে হাসতে জবাব দিলেন : Oh, ya! Sure! She is a wonderful wife indeed!

ততক্ষণে wheelchair ঠেলতে ঠেলতে সেই মহিলাও আমার সামনে হাজির। তাকে উদ্দেশ করে বললাম :  Ma’m, your husband is very pleased with you and said that you are a wonderful wife.

শুনে হাসিমুখে মহিলা বললেন : Yes, better be!

ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫

(চার)

Female circumcision

এক যুবতী সোমালি ভলানটিয়ারকে জিজ্ঞাসা করলাম : তোমাদের সোমালিয়াতে তো শুনেছি এবং পত্রপত্রিকায় পড়েছি যে অতি অল্প বয়সেই সেখানে মেয়েদের female circumcision করানো হয়ে থাকে। Very painful. তোমার অভিজ্ঞতা কি?

সে বললো : হ্যাঁ, এটা করানো হয় একথা সত্য, তবে আমাদের পরিবারে এটার প্রচলন নেই বলে আমি ও আমার বোনেরা সেই কষ্ট থেকে রক্ষা পেয়ে গেছি। মাবাবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। -ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫

(পাঁচ)

ক্যানাডায় ইমিগ্রেশনের প্রতিযোগিতা

এক বন্ধু টেলিফোন করে গল্প শোনালেন-

বয়ষ্ক বাংলাদেশী এক ভদ্রলোকের বড় বড় চারটি সন্তান। টরোন্টো শহরেই নিজ বাড়িতে বাস করেন, অর্থের কোন অনটন নেই। অল্প ক’দিন আগে হঠাৎ করে স্ত্রী মারা গেছেন। স্ত্রী বিয়োগের শোকটা কাটিয়ে উঠেই তিনি বাংলাদেশে গেলেন, দিন কয়েক সেখানে কাটিয়ে টরোন্টোতে ফিরে এলেন, তার হাতে পাঁচটি মেয়ের ফটো ও বিয়ের প্রস্তাব। বন্ধু মহলের গুঞ্জন থেকে জানা গেল যে তিনি বাংলাদেশে গিয়ে একে একে পনরটি মেয়ে দেখেছেন, অবশেষে পাঁচজনের ফটো হাতে নিয়ে ফিরে এসেছেন। অচিরেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেই পাঁচ নারীর কোনটির দিকে ঝুঁকবেন। তার সম্মতির অপেক্ষায় সেই নারীগণ দিন গুনছেন। ক্যানাডায় ইমিগ্রেশনের অপেক্ষায় তারা সবাই এক পা’ তুলে দাঁড়িয়ে আছেন! -জানুয়ারী ২৪, ২০১৬

(ছয়)

Carlos Mohammed .বাবার খেয়ালিপনা

আমাদের হসপিটালেরই নূতন একজন ভলানটিয়ার, তার নাম Carlos Mohammed. দেখা হলে বললাম : তোমার first name-টা তো Spanish Catholic Christian-দের মত কিন্তু last name-টা মুসলিমদের মত। তুমি আসলে কি?

Carlos বললো : আমি একজন Catholic Christian. দেশ Trinidad. বাবা জন্মগতভাবে Muslim ছিলেন কিন্তু পরে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে  Catholic Christian হয়েছেন। তা সত্বেও তিনি তার সব সন্তানদের নামের শেষেই একটা Muslim name জুড়ে দিয়েছেন যদিও আমরা কেউই আর মুসলিম নই। আমার নামটাও বাবার সেই খেয়ালিপনার একটা নিদর্শন।

তবে আমি মুসলিমদের সংগে অহরহই মেলামেশা করে থাকি, মত বিনিময় করি। অন্য ধর্মের লোকজনদের সংগেও মিশি। আমি একজন উদারচিত্ত ব্যক্তি, আমার হৃদয়ে আমি অন্য ধর্মের প্রতি কোন ঘৃণা পোষণ করি না।

-জানুয়ারী ৩০, ২০১৬

(সাত)

None to hug me on my birthday!

সকাল বেলা হসপিটালে যাওয়ার জন্যে বিল্ডিংয়ের সামনে Wheel-Trans-এর Taxi-র জন্য একটা বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করছি এমন সময় ৩৫-৪০ বছর বয়সের দরিদ্র পোশাক পরা একটি সাদা মহিলা এসে আমার পাশে বসলো, এবং শোনলাম বিড়বিড় করে নিজেনিজেই কি যেন বলছে। কানে এলো my birthday কথাটা।

জিজ্ঞাসা করলাম : Your birthday today?

ম্লান মুখে বললো : Yes, sir. But I have none in this world to greet me, hug me, hold me, to give a gift to me. I am so unfortunate, sir!

কথাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে ধরে বললাম : Happy Birthday to you! And this is a small gift from me. I’ll be happy if you accept it.

চকলেটটা হাতে নিয়ে মেয়েটি কেঁদে দিল। বলল : Thank you. God bless you, sir! -আগষ্ট ১৬, ২০১৬

মানু আগরওয়াল ও তার স্ত্রী

আজ সন্ধ্যায় নর্থ ইয়র্কের Rivalda Road-G Talim-ul Islam মসজিদের bookstore-এ গিয়েছিলাম কিছু ইসলামী বই কিনতে। সেখানে দেখা হলো ৩৫-৪০ বছর বয়সের ইন্ডিয়ান এক ভদ্রলোকের সংগে, নাম বললেন মানু আগরওয়াল। আগরওয়াল সাধারণতঃ ইন্ডিয়ান হিন্দুদের নাম হয়ে থাকে। তাই একটু উৎসুক হয়ে জানতে চাইলাম, বিষয়টা কি?

তিনি জানালেন : জী, আপনার অনুমান (ধারণাটা) সত্য, আগরওয়াল ইন্ডিয়ান হিন্দুদেরই নাম হয়ে থাকে বটে। আমিও হিন্দুই ছিলাম। আজ থেকে ৯ বছর আগে আমি ও আমার স্ত্রী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম হয়েছি। আলহামদুলিল্লা-হ! তবে আগরওয়াল পদবীটা রেখে দিয়েছি, বর্জন করিনি। এখানে এসেছি কিছু ইসলামী বই কিনতে, নিজেরা পড়বো, অন্যদেরকেও দেবো।

তাকে congratulations and thanks জানিয়ে একটা বই কিনে তার হাতে গিফট হিসেবে তুলে দিলাম। বললাম : এই বইটার লেখক একজন প্রাক্তন হিন্দু, বর্তমানে সপরিবারে মুসলিম, তিনিও তার জন্মগতভাবে প্রাপ্ত পদবীটা ত্যাগ করেননি তার অতীতের স্মৃতি হিসাবে। তার বর্তমান নাম Sohail Kapoor.

মানু আগরওয়াল খুশী হয়ে আমাকে Many thanks জানালেন। -ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১৬

মনে নেই, ভুলে গেছি!

(এক)

এক অতি বৃদ্ধা পেশেন্টকে Wheel-Trans এর এক ট্যাকসি ড্রাইভার তার wheelchair-এ বসিয়ে ঠেলেঠেলে এনে আমার সামনে রেখে বললো ঃ আমি একে পৌঁছে দিয়ে গেলাম, তিন ঘন্টা পর এসে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। এখন তোমরা এই lady-কে দেখো।

বৃদ্ধাকে একজন সেক্রেটারির সামনে ঠেলে নিয়ে গেলাম। সে বৃদ্ধাকে বললো : তোমার appointment card-টা দাও।

বৃদ্ধা : আনতে ভুলে গেছি, মনে নেই।

সেক্রেটারি : তোমার Health Card-টা দাও।

বৃদ্ধা : সেটাও আনতে ভুলে গেছি।

সেক্রেটারি : তোমার last name?

বৃদ্ধা : মনে নেই।

সেক্রেটারি : তোমার first name?

বৃদ্ধা : Caroline.

সেক্রেটারি : তোমার family doctor-এর নাম কি?

বৃদ্ধা : মনে নেই, ভুলে গেছি।

সেক্রেটারি পড়লো মহাবিপদে। এই পেশেন্টকে নিয়ে কি করা যায়?

আমি আর অপেক্ষা করতে পারলাম না, আমার ডেস্কে ফিরে এলাম।

প্রায় আধ ঘন্টা পর সেই সেক্রেটারি আমাকে ডেকে বললো ঃ সাঈদ, এই পেশেন্টকে তোমার কাছে নিয়ে যাও, inside call আসলে আবার হেল্প করতে হবে। নিয়ে এলাম তাকে। ড্রাইভার এসে এক সময় তাকে নিয়েও গেল। আগামী সপ্তাহে জিজ্ঞাসা করে দেখবো সেই সেক্রেটারিকে এই পেশেন্টের necessary particulars সে কেমন করে, কোথা থেকে collect করেছিল। ভাবনার উদয় হলো মনে, মানুষ বৃদ্ধ হয়ে গেলে কতইনা অসহায় হয়ে পড়ে! -মার্চ ০৯, ২০১৬

(দুই)

বাসার ঠিকানা ভুলে গেছি!

আজ হাসপাতালের কাজের শেষে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে TTC Wheel-Trans -এর bus-এ উঠে একটা সীট দখল করে বসলাম। ড্রাইভার বাসের দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছে ঠিক এমনি সময় এক ক্যানাডিয়ান বৃদ্ধা (বয়স ৮০’র কাছাকাছি হবে) তার walker ঠেলেঠেলে বাসের দরজার সামনে এসে ড্রাইভারকে বলল : ‘আমাকেও নিয়ে যাও।’ ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করল : কোথায় যাবে তুমি? ঠিকানা বল!

অসহায়ের মত মুখ তোলে বৃদ্ধা বলল : বাসার ঠিকানা? সেটা তো মনে নেই! ভুলে গেছি। তুমি আমাকে বাসায় পৌঁছে দাও, প্লীজ। দু’ঘন্টা ধরে বসে আছি আমার ট্যাকসির অপেক্ষায়।

আগের মতই ড্রাইভার বলল : ঠিকানা না বলতে পারলে তোমাকে নিয়ে কোথায় নামাবো? তুমি TTC-কে ফোন কর, এই … নাম্বারে। ওরা গাড়ি পাঠাবে তোমাকে নেয়ার জন্য। আমি তোমাকে নিতে পারবো না। তোমাকে বাসে উঠালে আমার মহাবিপদ হবে। সরি, ম্যা’ম।

দরজা বন্ধ করে ড্রাইভার আমাকে বাসায় পৌঁছানোর জন্য ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো। অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো বৃদ্ধা। এই স্মৃতিহারা অসহায় বৃদ্ধার জন্য মনে বড় বেদনা অনুভব করতে লাগলাম। -নভেম্বর ০২, ২০১৬

I Love God, God Loves Me

পঞ্চাশোর্ধ বয়সের এক ক্যানাডিয়ান মহিলা প্রতি দু’সপ্তাহে একবার ডাক্তারের সংগে দেখা করার জন্য Fracture Clinic-এ আসেন। তার এক পায়ে কোন একটা জটিল সমস্যার ফলে ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছেন, অথচ তিনি সদাহাস্যমুখ। খুব ভালো ব্যবহার করেন আমার সংগে। আজ সকালে আবার এসেছিলেন। তাকে বললাম : Ma’m, you are under so much pain, yet you maintain a smiling face all the time. How can you do that??

জবাবে তিনি বললেন : I love God, God loves me. I have complete faith in Him. I believe I am God’s favorite and am under His protection. That gives me strength. I love God. I love humanity. I try to forget my pains to show a happy face to those who are suffering. There is so much killing, torture, bloodshed, cruelty all around – so much unnecessary pain.
I am thankful to God for sparing me such unbearable pain. My pain is temporary, I have all my limbs together. I have hope of recovery and a painless life soon. But there are many who cannot expect or hope of recovery, they will continue to suffer.
I am grateful to God. To show my gratitude I don’t complain. I am blessed! So I smile.

তাঁর কথা শেষ হলে বললাম : May God bless you and grant you speedy recovery.

তিনি বললেন : Amen!

A Negative-Attitude Person Is Always Unhappy.

– মার্চ ১৫, ২০১৬

হসপিটালে আজ তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভংগী নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলো সহকর্মিনী আর এক ভলানটিয়ার। সে আজ ১৫ বছর ধরে ভলানটিয়ারিং করছে। কালো মহিলা, জ্যামাইকান। সে তার মতামতটা এভাবে বর্ণনা করলো-

দেখ সাঈদ, মানুষের অতিরিক্ত চাহিদা, হা-হুতাশ, অভিযোগ ইত্যাদি আমার পছন্দ নয়। দু’মাস পর আমার বয়স ৭৭ বছর পূর্ণ হবে। আমি চিরকুমারী, জীবনে কোনদিন বিয়েশাদী করিনি। আমার প্রয়োজন অতি সামান্যই, অতি সাধারণ জীবনযাত্রা আমার। কাজকর্ম করেছি, আয়-রোজগার করেছি কিন্তু কিছুই জমাইনি- আত্মীয়-বন্ধুদের প্রয়োজনে খরচ করেছি।

বয়সজনিত সমস্যা আমার আছে কিন্তু আমি কোন অভিযোগ করি না, করে লাভও নেই কারণ কিছু না কিছু সমস্যা জীবনে থাকবেই। সেগুলোকে স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করে নিতে পারাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সর্বদা সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে।

Positive দিকটাই আমি দেখি, negative-টা নয় কারণ negative thinking and attitude হতাশা ডেকে আনে। পেনশন যা পাই মাসখরচ তাতে চলে যায়, কারো কাছে হাত পাততে হয় না। ধার করে ফ্যাশান-ফুটানি করা আমার অপছন্দ। বয়সের হিসাবে বেশ সচল আছি, ঘর-সংসারের কাজ অন্য কারো সাহায্য না নিয়ে সমাধা করতে পারি, নিজের পায়ে ভর দিয়ে ভলানটিয়ারিংয়ের কাজে আসতে পারি। ঘরে-বাইরে সবার সংগে হৃদ্যতা-সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলি, লোকেরা ভালো চোখে দেখে, আদর-শ্রদ্ধা করে। আর কি চাই? I am contented, I am happy. See my point, Sayed? বলে থামলো সে। -মার্চ ২৯, ২০১৬

স্বামী-স্ত্রী ও

সন্তান- সবাই বোবা

টরোন্টো শহরের Danforth Avenue-তে বাংলাদেশী মহিলাদের শাড়ি-ব্লাউজ-কামিজ ইত্যাদির একগুচ্ছ দোকান আছে- সব মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত। নামটা বড় সুন্দর সেই বিপনীকেন্দ্রের- দেশী দশ। নূতন ধরনের নাম একটা, স্বীকার করতেই হবে। আগেও গিয়েছি, পরশু দিন আবার গিয়েছিলাম স্ত্রীর সংগী হয়ে। নূতন একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলাম। অতি সংক্ষেপে বলছি।

ওখানে একটা দোকান (store) আছে যার নাম SUJAT’S ART. নানা ধরনের graphic arts করা হয়ে থাকে কাস্টমারদের চাহিদা অনুসারে। আর্টিস্টের নাম : SUJAT.

তিনি একজন বাংলাদেশী যুবক। চিটাগাংয়ের লোক। বেশ সুদর্শন, ভদ্র। কিন্তু তিনি বোবা।

স্ত্রীর নাম Tasmin. চোখে পড়ার মত সুন্দরী নারী। তিনি একজন ইরাকী। তিনিও বোবা।

মহিলার পূর্ব স্বামীর ঔরসের ছেলে সন্তান, নাম Parvez. বয়স ৭ বছর। সেও বোবা।

সুজাত ও তাসমীনের পরিচয় ও পরিণয় আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। আজো কোন সন্তানাদি হয়নি ওদের।

তাসমীন ওদের নিজেদের স্টোরের সামনের শাড়ি-ব্লাউজ-কামিজের স্টোরে পার্টটাইম কাজ করে। শুনলাম সে খুবই neat কাজ করে এবং খুব responsible worker.

সুজাতের অফিসে বসে নানা খবর জানলাম ওকে কাগজে লিখে প্রশ্ন করে করে। ঠোঁট নেড়ে কথা বলতে পারে- সদাই হাসিমুখ- তবে হাতের ভংগী ও চোখের ইশারা দেখে বক্তব্যটা বুঝে নিতে হয়। তেমন কোন কষ্ট হয় না।

তাসমীনের সংগেও কথা বলার চেষ্টা করলাম। খুব আদবের সংগে ওর সুন্দর মুখে হাসি ফুটিয়ে হাত ও মাথা নেড়ে আমার প্রশ্নের জবাব দিল। ইংলিশে কথা বললে lip reading করে সে অনেক কথা বুঝতে পারে, সে জানালো আমাকে।

সুজাত ফোনে কথা বলতে পারে না, তাই ওকে text message পাঠাতে হয়। আমি যতক্ষণ ছিলাম সে ততক্ষণ ওর computer-এ নানা ধরনের design আঁকছিল। দেখলাম খুব ব্যস্ত লোক সে। মুখে হাসি লেগেই আছে। খুব আদবের সংগে আমাকে বিদায় দিল সে।

সবই ঠিক আছে কিন্তু ভাবলে কষ্ট লাগে যে মা-বাবা-সন্তান সবাই বোবা! (চলবে)

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা