জরুরী কর্মী ও স্নাতকদের জন্য যে অস্থায়ী অভিবাসন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, বিপুল সংখ্যক লোক তার বাইরে থেকে গেছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ০৪ মে ২০২১ : অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মার্কো মেনডিসিনো গত মাসে নতুন এক অভিবাসন ব্যবস্থার ঘোষণা দেন। এই ব্যবস্থায় এরই মধ্যে কানাডায় অবস্থানরত ৯০ হাজার আবশ্যকীয় কর্মী ও আন্তর্জাতিক স্নাতক তাদের অস্থায়ী স্টেটাস পাল্টে তা স্থায়ী করতে পারবেন। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন রায়ান প্যাট্রিক জোন্স।

এই কর্মসূচি হলো অভিবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প-বেতনের ও স্বল্পদক্ষ শ্রমিকদের পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার এবং কার্যত কানাডার নাগরিকত্ব পাবার এক বিরল সুযোগ। স্বাভাবিকভাবে অভিবাসন কর্মসূচিতে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। নতুন কর্মসূচির আওতায় আবেদনপত্র নেওয়া শুরু হবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে।

কিন্তু অভিবাসী অধিকার নেটওয়ার্ক বলছে, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী, যাদের অভিবাসন স্টেটাস অস্থায়ী অথবা এ বিষয়ক কোনও নথিপত্র নেই, তারা এই নতুন অভিবাসন কর্মসূচিতে আবেদনের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না। গ্রুপটি বলেছে, আবেদনের জন্য যারা যোগ্য তারা এখন প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষার ফলাফল ও অন্যান্য দরকারি নথিপত্র সংগ্রহের জন্য ঠেলাঠেলি করছে। যেহেতু তাদেরকে সীমিত সংখ্যক ‘আগে এলে আগে পাবেন’ নীতিতে পরিচালিত কেন্দ্রে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে।

আজ প্রকাশিত গ্রুপের এক রিপোর্টে বলা হয়, “এই কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত এমনকি স্বল্প মজুরির কাজে নিয়োজিত হবে এমন শ্রমিকদেরও অধিকার, সুরক্ষা ও মর্যাদা দিতে পারবে সেই বিশ্বাস অল্প সময়ই স্থায়ী হয়।”

“শরণার্থী, নথিপত্রহীন মানুষ এবং অন্য হাজার হাজার অভিবাসী উপলব্ধি করছেন যে, এই কর্মসূচির বাধা ও আবেদনের চাহিদা তাদেরকে বাইরে রেখে দ্বাররুদ্ধ করে দিয়েছে।”

স্ট্যাটক্যান-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে কানাডা এক লাখ ৮৪ হাজার ৬২৪ জন অভিবাসী গ্রহণ করেছে যা ১৯৯৮ সাল থেকে পরবর্তী যে কোনও বছরের চেয়ে সর্বনিম্ন। মহামারির আগে কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিভাগ (ওজঈঈ) ২০২০ সালের জন্য ৩৪১,০০০ নতুন অভিবাসী গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়।

মন্ত্রী মেনডিসিনোর একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন এই কর্মসূচি হলো আইআরসিসির নেয়া এ যাবৎকালের সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদ্ভাবনী চিন্তার কর্মসূচি।

ই-মেলে পাঠানো এক বিবৃতিতে আলেক্সান্ডার কোহেন বলেন, “রাজমিস্ত্রি থেকে শুরু করে বাস চালক বা কেয়ারটেকার পর্যন্ত যাদেরকে পেশার দিক থেকে যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে তাদের জন্য এর চেয়ে বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক কোনও কর্মসূচি কখনও ছিলো না।”

“একইভাবে, সাম্প্রতিকালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরাও পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার একটি উপায় খুঁজে পাবে যদি তারা গত চার বছরের মধ্যে ডিগ্রি নিয়ে থাকে এবং বর্তমানে কর্মরত থেকে থাকে।”

অভিবাসীদের ওপর সমীক্ষা

এই কর্মসূচি যখন ঘোষণা করা হয় তখন মাইগ্র্যান্ট রাইটস নেটওয়ার্ক অনলাইনে একটি সুবিধা তৈরি করে যা এই কর্মসূচিতে আবেদনের যোগ্য কিনা তা জানতে অভিবাসীদেরকে সাহায্য করবে। এটি দিয়ে অভিবাসীরা তাদের বর্তমান অভিবাসন বিষয়ক অবস্থার তথ্য শেয়ারও করতে পারেন।

গ্রুপটি বলেছে, প্রায় তিন হাজার অভিবাসী সমীক্ষায় অংশ নেয়। তারা তাদের রিপোর্টের কিছু ফলাফল বিশ্লেষণও করে। তবে এটি বিজ্ঞানভিত্তিক নয় কিংবা জাতীয় পর্যায়কেও প্রতিনিধিত্ব করে না।

অনেকেই রিপোর্ট করেন যে, তারা এই কর্মসূচিতে আবেদন করার যোগ্যতা পূরণ করেন না নিচের যে কোনও একটি কারণে: অস্থায়ী ভিসার মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত সময় কানাডায় অবস্থানের কারণে তার কোনও নথি নেই কিংবা ওয়ার্ক পারমিট অকার্যকর হয়ে গেছে, তিনি শরণার্থী কোটায় প্রার্থী, তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কিন্তু এখনও ডিগ্রি অর্জন করেননি, অথবা কুইবেকে অস্থায়ী রেসিডেন্ট। (কুইবেকের সরকার এই নতুন কর্মসূচিতে যোগ না দেবার সিদ্ধান্ত নেয়, সেজন্যে এই কর্মসূচিতে আবেদনের যোগ্য হতে হলে তাকে কুইবেকের বাইরে থাকতে হবে।)

অন্য যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে বা অপরাধের কারণে দণ্ডিত হয়েছেন কিংবা যাদের সরকারি ভাষায় দক্ষতা বিষয়ক পরীক্ষার কার্যকর ফলাফল নেই তারা এতে আবেদনের যোগ্য হবেন না।

মাইগ্র্যান্ট রাইটস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক সাঈয়িদ হুসান আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার একটি নতুন কর্মসূচি তৈরি করেছে যাতে অনেককেই বাইরে রাখা হয়েছে। “আমাদের দরকার সবার জন্য পারমানেন্ট রেসিডেন্সির মর্যাদা।”

হুসান বলেন, কানাডায় যাদের পারমানেন্ট পর্যাদা নেই, শ্রম অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত। এই কর্মসূচিতে আবেদনের যোগ্য হননি এমন কয়েকজন অভিবাসীও হুসানের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এদের মধ্যে একজন হলেন আবদুল। তিনি মন্ট্রিলের বাসিন্দা। কিন্তু তিনি তার নামের শুধু প্রথম অংশটিই জানান, কারণ তার কোনও নথিপত্র নেই (আনডকুমেন্টেড) এবং তার নিয়োগদাতা বিরূপ হতে পারে বা অভিবাসন পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হতে পারে এমন আশঙ্কা আছে।

একজন অনুবাদকের সহায়তা নিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে ২০১৫ সালে কানাডায় আসার পর তিনি আইনগত অবস্থান হারিয়েছেন। তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন ধরণের কাজ করে টিকে আছেন- যেমন মুটে, গুদামের শ্রমিক, অথবা নির্মাণ শ্রমিক ইত্যাদি। এভাবে তিনি নিয়োগকারীর হাতে অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কারণ তারা তার অনডকুমেন্টেড হওয়ার সুযোগ নিয়েছে।

একটি উদাহরণ উল্লেখ করে আবদুল বলেন, তাকে কোনওরকম নিরাপত্তা বা সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই ত্রিশ ফুট উঁচু একটি মই বেয়ে উঠতে হয়েছে। একটি ঘটনায় তিনি মই থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পান কিন্তু ওই অবস্থাতেই তাকে কাজ অব্যাহত রাখতে হয়। কারণ স্বাস্থ্যসেবা ও বীমার সুবিধা পাবার কোনও সুযোগ তার নেই।

আবদুল বলেন, “এই কর্মসূচি অন্যায্য, কারণ এটি অনডকুমেন্টেড ও অন্য সব অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত অভিবাসীদের সঙ্গে রেসিডেন্সির স্টেটাস রয়েছে এমন অভিবাসীদের যে বিভেদ এরই মধ্যে রয়েছে সেটিকেই জোরদার করছে।”