কুইবেকে বাণিজ্যিক ও অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাদেশিক সরকারের ইংরেজিতে যোগাযোগ নিষিদ্ধ হচ্ছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৬ মে, ২০২১ : প্রাদেশিক ভাষা আইন সম্পর্কিত আইন পাসের দুই দশক পর আইনের একটি নির্দিষ্ট বিধান, যা এ যাবৎকাল “অপ্রযুক্ত” রাখা হয়েছিল সেটি আগামী বছর থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। প্রাদেশিক সরকার গত বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দিয়েছে। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন সেলেনা রস। 

এর পর থেকে কুইবেকের সব কোম্পানি ও সরকারি সংস্থা প্রাদেশিক সরকারের কাছ থেকে, অন্তত লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে, শুধু ফরাসী ভাষায় বক্তব্য পাবে।

কুইবেকের সব পৌরসভা ও অন্যান্য সরকার এবং সেইসঙ্গে সব স্কুল বোর্ড, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এই আইনের আওতায় পড়বে।

এই পরিবর্তন কুইবেকে প্রতিষ্ঠিত সব কোম্পানিসহ সব আইনী ব্যক্তি (legal persons) ও প্রতিষ্ঠানের ওপরও প্রযোজ্য হবে।

২০২২ সালের ৫ মে এই পরিবর্তন কার্যকর হবে। ওই সময় পর্যন্ত সরকার এ সম্পর্কিত পরিস্থিতি এবং এ বিষয়ে কোনওরকম ছাড় দেয়া যায় কিনা সেসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে।

সর্ব প্রথম, এ সম্পর্কে ঘোষণায় শুধু বলা হয়েছিলো, উল্লেখিত গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে “প্রদেশকে তার লিখিত যোগাযোগে অবশ্যই শুধু ফরাসী ভাষা ব্যবহার করতে হবে।” কোনও কোম্পানি যদি প্রদেশের কাছে ইংরেজিতে চিঠি লেখে,  তাহলে কী হবে সেই বিষয়টি ঘোষণায় অস্পষ্ট রেখে দেওয়া হয়। তারা কি আদৌ চিঠির জবাব পাবে? নাকি তাদেরকে ফের ফরাসী ভাষায় চিঠি লিখে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হবে? উল্লেখ্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজিতে চিঠি লেখার অধিকার কোম্পানিগুলোর রয়েছে।

ইংরেজিভাষী ব্যক্তিদের ইংরেজিতে পরিষেবা পাবার ক্ষেত্রে এই আইন কোনওরকম পরিবর্তন আনবে এমন কোনও আভাসও ঘোষণায় ছিলো না। কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ইংরেজিতে পরিষেবা পাবার অধিকার তাদেরও আছে।

কুইবেকের সব কোম্পানি ও সরকারি সংস্থা প্রাদেশিক সরকারের কাছ থেকে, অন্তত লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে, শুধু ফরাসী ভাষায় বক্তব্য পাবে। ছবি : সিটিভি

সরকারের মুখপাত্র মিজ. পল-জিন চ্যারেস্ট বৃহস্পতিবার বলেন, আদালতের ব্যবস্থাপনায় এবং সেখানে লোকেদের ইংরেজি বলার সুযোগের কোনও পরিবর্তন হবে না।

জানার অনেক বাকি, বলছেন কমিউনিটির নেতারা

কিছু পেশাজীবী গ্রুপের লোকেরা এখনও নিশ্চিত নন যে, এই আইনের আওতায় তাদেরকে আইনি ব্যক্তি হিসাবে গণ্য হবেন কিনা- যেমন, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো।

কুইবেকের কমিউনিটি গ্রুপস নেটওয়ার্ক বা কিউসিজিএন-এর মুখপাত্র মিজ. রিটা লেগল্ট বলেন, “আমরা এই আইনের সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। দৃশ্যত এটি সামাজিক সংগঠনগুলোকে প্রভাবিত করবে।”

সামাজিক গ্রুপ ও করপোরেট নয় এমন সংগঠনগুলো এই আইনের আওতায় আসবে কিনা সে সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি চ্যারেস্ট।

মন্ট্রিলের ইংরেজি স্কুলবোর্ডের একজন মুখপাত্র বলেন, এটি বোর্ডের ক্ষেত্রে কী ধরণের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে সে বিষয়ে বলার মত সময় আসতে এখনও অনেক বাকি। তবে প্রাদেশিক সরকার বলছে, আইনটি সব স্কুলবোর্ডের জন্যই প্রযোজ্য হবে।

লিবারেল দলের এমএলএ গ্রেগ কেলি বলেন, এই পরিবর্তন কোনওরকম গুরুতর বিক্ষোভের সৃষ্টি করবে কিনা তা জানার সময় আসেনি। বিশেষ করে যখন বেশিরভাগ স্কুলবোর্ড এরই মধ্যে প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে ফরাসী ভাষাতেই যোগাযোগ করছে।

সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০৪ নং প্রস্তাবিত আইনের এই ধারাটি তৈরি করা হয় ২০০২ সালে। শুধু ধারাটি সে সময় পাস করা হয়নি। বিলে সংশোধনী এনে তাতে এই নতুন পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে এবং সেটি সরকারি ডিক্রির মাধ্যমে জারি করা হচ্ছে।

কুইবেক ১৯৭৭ সালে প্রথম ভাষা সম্পর্কিত সনদ পাস করে। এতে ফরাসীকে প্রদেশের একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা করা হয়। সনদের সেই প্রথম সংস্করণে স্পষ্ট করে বলা হয়, আইনি ব্যক্তিবর্গ ও অন্য সব সরকারের সঙ্গে সরকার শুধু ফরাসীতে যোগাযোগ করবে।

অবশ্য পরে আলোচ্য ধারা সংযোজনের মাধ্যমে সনদে পরিবর্তন আনা হয়। ২০০২ সালে নতুন সংস্করণ তথা ১০৪ নং বিল পাস করা হয়। কিন্তু তাতে এই বিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০১৯ সালে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ৩৯ শতাংশ সরকারি কর্মজীবী কখনও কখনও ফরাসী ছাড়া অন্য কোনও ভাষা ব্যবহার করেন।