কুইবেকের সুপিরিয়র কোর্ট ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারের ওপর বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে, তবে ইংরেজি-ভাষার স্কুলগুলোকে ছাড় দিয়েছে
সরকার আপিল করার পরিকল্পনা করছে। বলছে, এই অব্যাহতির কারণে কুইবেকে আরও বিভাজন সৃষ্টি হবে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কুইবেকের ধর্মনিরপেক্ষতার আইন এই প্রদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার লংঘন করে কিন্তু সংবিধানে একটি উপধারা থাকায় এই মৌলিক অধিকার লংঘন অনুমোদনযোগ্য। গত ২০ এপ্রিল এমনই রুল জারি করেছেন সুপিরিয়র কোর্টের একজন বিচারক।
কিন্তু বিচারক মার্ক-আন্দ্রে ব্লানচার্ড আরও ঘোষণা করেন যে, ওই আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো- অনেক সরকারি কর্মচারীর জন্য ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও ইংরেজি স্কুলের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা যাবে না।
ব্লানচার্ড তার সিদ্ধান্তে বলেন, ইংরেজি স্কুলবোর্ডগুলো কাকে নিয়োগ দেবে সেই সিদ্ধান্ত নেবার মধ্য দিয়ে বৈচিত্র্য লালনে তাদের আকাক্সক্ষার সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে অধিকার ও স্বাধীনতার সনদের সংখ্যালঘু-ভাষার শিক্ষার অধিকার সম্পর্কিত ধারায়। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন জোনাথন মনপেটিট ও বেঞ্জামিন শিঙ্গলার।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওই সনদের (২৩) ধারা উল্লেখিত উপধারা দিয়ে সংরক্ষিত নয়।
বিচারকের এই সিদ্ধান্ত জানানোর খুব কম সময়ের মধ্যেই কুইবেকের বিচারমন্ত্রী,শিমন জোলিন-ব্যারেটি, যিনি ২১ নং আইনের স্রষ্টা, বলেন, প্রাদেশিক সরকার আপিল করার পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, ইংরেজি স্কুলকে ছাড় দেয়ার ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত এই প্রদেশকে ভাষার ভিত্তিতে বিভক্ত করার হুমকি সৃষ্টি করবে এবং কুইবেকে দুই ধরণের নাগরিকের জন্ম দেবে।
তিনি বলেন, “আমরা এই রায়ের সঙ্গে একমত নই। কুইবেকে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই, আর এখানে জাতীয় সংসদে যেসব আইন গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রত্যেকের ওপর প্রযোজ্য হবে।”
রায়ে ইংরেজি স্কুল ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রেই আইনটি পুরোপুরি বলবৎ রাখা হয়েছে। আইনটি চারটি আইনী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে এবং এটি কেন অসাংবিধানিক সেই বিষয়ে প্রতিটি চ্যালেঞ্জেই বেশ কিছু যুক্তি রয়েছে।
![](https://probashikantho.com/wp-content/uploads/2021/06/ক্লাশ-1.jpg)
কুইবেকের জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল কোয়ালিশন অ্যাভেনির-এর সরকারের সময় এই ২১ নং আইন পাস করা হয়। এই আইন পাসের মোটামুটি দেড় বছর পর বিচারকের ২৪০ পৃষ্ঠার এই রায় এলো। আইনে শিক্ষক, পুলিশ অফিসার ও সরকারি আইনজীবীসহ কতিপয় সরকারী কর্মচারীর ওপর কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরকার বলেছিলো, কুইবেকের স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বা জনমানুষের মর্যাদা রক্ষার জন্য এই বিধিনিষেধ দরকারি।
কানাডীয় মুসলিম ন্যাশনাল কাউন্সিল ও কানাডার সিভিল লিবার্টিজ অ্যাসোসিয়েশনসহ নাগরিক মুক্তি বিষয়ক গ্রুপগুলো পাস হবার পর থেকেই আইনটির বিরুদ্ধে মামলা করতে শুরু করে।
আইন পাস করার জন্য কুইবেক সরকার তাতে উল্লেখিত উপধারা সংযোজন করে যার অর্থ হলো, অধিকার ও স্বাধীনতার সনদের ১৫টি ধারার মধ্যে ২ ও ৭ নং ধারায় প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লংঘন করে এমন যুক্তিতে এই আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
সনদের ওই দুই ধারায় স্বাধীনভাবে বক্তব্য প্রকাশ, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও লৈঙ্গিক সাম্য রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
আইনটির নিন্দা জানিয়ে সোমবার মন্ট্রিলের কেন্দ্রস্থলে দ্রুত একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। এতে আইনটি পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানানো হয়।
বিচারক বলেন, আইনটি সবচেয়ে ক্ষতিকর মুসলিম নারীদের জন্য।
ব্লানচার্ড বলেন, বিশেষ উপধারা সংযোজনের মাধ্যমে সরকার বিধানাবলির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে, যদিও কর্মক্ষেত্রে যেসব প্রতীক পরতে পারতো, যেমন হিজাব, নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে আইনটি সংখ্যালঘুদের অধিকার পদদলিত করেছে; তিনি বিষয়টি এভাবেই ব্যাখ্যা করেন।
রায়ে বলা হয়, “আদালত সেইসব নথিপত্রের ওপর আলেকপাত করেছে যাতে দেখা যায় যে, নিঃসন্দেহে ২১ নং আইনের সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মুসলিম নারীদের ওপর।”
“একদিকে এটি তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লংঘন করছে, অন্যদিকে এটি তাদের বাক-স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, কারণ পোশাক পরিচ্ছন্ন ও সরলভাবে অভিমতের প্রকাশ ঘটায় এবং এটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে তুলে ধরে।”
ইংরেজি স্কুলবোর্ডের জন্য বিজয়
বিচারকের রুলিং ইংরেজি স্কুলবোর্ডের জন্য একটি বিজয়। এসব বোর্ড এ আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো।
এ আইনের বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলো মন্ট্রিলের ইংলিশ স্কুলবোর্ড। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, ইংরেজিভাষী বোর্ডগুলোকে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্তে তারা “আনন্দিত”।
বোর্ডের চেয়ারম্যান জো অরটোনা বলেন, “আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার বৈচিত্র্যকে শ্রদ্ধা করি। কানাডা ও কুইবেকের অধিকার সনদ উভয়টিতেই এই বৈচিত্র্যের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।”
আরেক ইংরেজি স্কুলবোর্ড ড্রোভাল-ভিত্তিক লেস্টার বি পিয়ারসন স্কুলবোর্ড। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, এই রুলিং তাদের স্কুল ও সেন্টারগুলোতে “ধর্মীয় স্বাধীনতা অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।”
অধিকাংশ আইন বিশেষজ্ঞ আশা করছেন যে, এ বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত কানাডার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হবে।
কানাডিয়ান সিভিল লিবার্টিজ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক মাইকেল ব্রায়ান্ট বলেন, আদালতের রায়ে আইনটির ক্ষতিকারক কারণগুলো যে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে “সেটি আমাদেরকে আপিলের জন্য যথেষ্ট এগিয়ে দিয়েছে।”
কুইবেকের ধর্মনিরপেক্ষ আইন বিষয়ে রুলিং একটি ছোট্ট বিজয়, শিখ শিক্ষিকা
ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় চলে যাওয়া মন্ট্রিলের একটি স্কুলের শিক্ষিকা অমৃত কাউর বলেন, ২১ নং আইনের ওপর আদালতের রায় ইংরেজি স্কুলের শিক্ষকদের জন্য একটি ছোট্ট বিজয়, তবে ফরাসী স্কুলের শিক্ষকরা এখনও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।