টরেটক্কা টরন্টো

ক্যারিয়ার গঠন- ২

কাজী সাব্বির আহমেদ

দেখতে দেখতে এক সময় ‘গুডউইল জব শপ’-এর দুই সপ্তাহের ওয়ার্কশপ প্রায় শেষ হয়ে এলো। আজ প্রায় চৌদ্দ বছর পরেও আমার স্মৃতিতে গুডউইলের সেই দুই সপ্তাহের অভিজ্ঞতা যেন জীবন্ত হয়ে আছে। সেখানে পরিচয় হয়েছিল বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আমার মতন আরো বেশ কিছু নতুন ইমিগ্র্যান্টদের সাথে। ক্রিকেটের দেশ জিম্বাবুই থেকে আসা এক ছেলে ছিল সেখানে যে কিনা কানাডাতে এসেছে উদ্বাস্থ বা রেফিউজি হিসেবে। আবার বাংলাদেশ থেকে আসা বেক্সিমকোর সফটওয়্যার ডিভিশনে চাকুরী করা শংকর’দার সাথেও পরিচয় হয়েছিল এখানে। সুদান থেকে আসা একজনের সাথেও আলাপ হয় এখানে যে কিনা কানাডাতে আসার আগে দুবাইতে কাজ করত। ফিলিপাইনের বেশ কিছু মহিলা এসেছিল আমাদের এই ওয়ার্কশপে। আর এসেছিল ইন্ডিয়া থেকে আসা একজন যে কিনা ঠিক নতুন ইমিগ্র্যান্ট নয়, প্রায় তিন বছর আগে এদেশে তার আগমন। একটা জিনিষ আমি আবিস্কার করলাম যে আমি বাদে সবাই পার্টটাইম কিছু না কিছু কাজ করছে। কথা প্রসঙ্গে একদিন ইন্ডিয়া থেকে সেই লোকটা আমাকে জানাল যে তার ‘ই-কমার্স’-এর ব্যবসা আছে। সেই সময় ‘ই-কমার্স’ ছিল একটি বড় ধরণের ‘বাজ-ওয়ার্ড’, সবাই ভাবত কম্পিউটারের মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করার একটি সহজ পদ্ধতি। ‘ই-কমার্স’-এর বড় উদাহরণ ছিল ‘অ্যামাজন-ডট-কম’। বই বিক্রী করা দিয়ে শুরু করলেও তখন তারা আরও বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রী করা শুরু করেছে। তাদের ওয়েব সাইটে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিয়ে ক্লিক করলেই আপনার দরজায় আপনার অর্ডার করা পণ্য এসে হাজির হবে যথাসময়ে। তাই সেই লোকটির কথায় আমি কিছুটা আগ্রহ বোধ করলাম। আমার সেই আগ্রহকে অনুধাবন করতে পেরে সে আমাকে জানাল যে আসছে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় এক হোটেলে এই ই-কমার্স নিয়ে এক সেমিনার হবে। আমি চাইলে তার সাথে সেখানে যেতে পারি। তবে সেখানে যেতে হলে ফুল স্লিভ শার্টের সাথে টাই পরে যেতে হবে – ড্রেস কোড।
যথা সময়ে ড্রেস কোড মেনে টাই লাগিয়ে হাজির হলাম টরন্টোর কনজুমার রোডস্থ র‌্যাডিসন হোটেলের লবিতে। সেখানে দেখি বেশ কিছু লোকের ভীড়। ভীড়ের ভেতর থেকে আমার পরিচিত সেই লোকটি এসে আমাকে নিয়ে বসায় এক হলরুমের ভেতর। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় সেই সেমিনার। আসলে সেটি ছিল মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং-এর এক ফাঁদ। নিত্য প্রয়োজনীয় টয়েলেট্রিজ সামগ্রী যেমন সাবান, টুথপেস্ট, ডিটারজেন্ট, টিস্যু পেপার ইত্যাদি বিক্রী করতে হবে। আর এই নাম না জানা অখ্যাত ব্র্যান্ডের সামগ্রীগুলি থাকবে একটা ওয়েবসাইটে যেখান থেকে আমাকে প্রতি মাসে আমার জন্য নির্ধারিত টার্গেট অনুযায়ী বিক্রী করতে হবে। আর এই ব্যবসাকে তারা নাম দিয়েছে ‘ই-কমার্স’। আমি যদিও তাদের সেই ফাঁদ থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছিলাম, কিন্তু কিছুদিন পর আমার পরিচিতা এক মহিলার ই-মেইল পেলাম যেখানে সে অনুরোধ জানিয়েছে তার ওয়েবসাইট থেকে কিছু হেলথ সাপ্লিমেন্ট প্রডাক্ট কেনার। আমার বুঝতে আর বাকী রইল না যে সেই মহিলাটি এক মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং-এর ফাঁদে আটকা পড়েছে। নতুন ইমিগ্র্যান্টদের টার্গেট করে এদেশে আবার অনেকে অনেক ধরণের তথাকথিত ‘চালু ব্যবসা’ বিক্রী করার চেষ্টা করে। বয়সে তরুণ আমার এক পরিচিত ছেলে তার এক বন্ধুকে নিয়ে টিটিসি সাবওয়ে স্টেশনের ভেতর ‘গেটওয়ে’ নামক ফ্রানচাইসি-এর এক কনভিনিয়েন্স স্টোর (আমাদের দেশের মুদি দোকান) কিনে বিরাট বিপদে পড়েছিল। কারণ সব সাবওয়ে স্টেশনে লোকজনের যাতায়াত সমান হয় না আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে বেচাকেনাও সমান নয়। কিন্তু চুক্তিনামায় ‘ফাইন প্রিন্ট’ অক্ষরে লেখা আছে যে প্রতি সপ্তাহে ফ্রানচাইসি-এর কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান পণ্য কিনতে হবে, বিক্রী হোক বা না হোক। পরে সেই ছেলেটি তাদের সেই ‘গেটওয়ে’ দোকানটি অন্য আরেকজনের কাছে গছিয়ে দিয়ে রক্ষা পেয়েছে।
অবশেষে একদিন গুডউইলের দুই সপ্তাহের কর্মশালা শেষ হলো। সেখান থেকে বিদায়ের আগে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের কী করণীয় সে সম্পর্কে একটা বিশদ গাইডলাইন দেয়। যেমন যাদের ইংরেজী ভাষাতে তেমন দখল নেই তাদেরকে সরকারী অনুদানে পরিচালিত ‘লিংকস’ থেকে বিনামূল্যে ইংরেজী শেখার কোর্স করার জন্য উৎসাহিত করা হলো। যারা দেশ থেকে মেডিক্যাল ডিগ্রী নিয়ে এসেছে তাদেরকে সরকার দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন রকমের ‘ব্রিজিং’ প্রোগ্রামের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার জন্য বলা হলো। মূলত এই সব ‘ব্রিজিং’ প্রোগ্রামের লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা আর্কিটেক্টরা কিভাবে কানাডাতে তাদের প্রফেশনাল লাইসেন্স পেতে পারে সে বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতা করা। আর যেসব প্রফেশনালদের লাইসেন্সিং-এর ঝামেলা নেই কিন্তু এদেশে চাকুরীর কোন অভিজ্ঞতা নেই তাদেরকে দেয়া হলো বিভিন্ন ধরণের ‘কো-অপ’ প্রোগ্রামের সন্ধান। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে এদেশের বিভিন্ন ব্যবসা অথবা কারিগরি প্রতিষ্ঠান শিক্ষানবীশ হিসেবে ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদেরকে স্বল্প মেয়াদের জন্য বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে যাতে তারা পাশ করার পর ইন্ডাস্ট্রিতে সহজেই কাজ খুঁজে নিতে পারে। নতুন ইমিগ্র্যান্টদের জন্যও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান একই রকম সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে কেবলমাত্র হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এই ‘কো-অপ’-এর জন্য আবেদন করা যায়। ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’ হচ্ছে এমনই একটি প্রতিষ্ঠান যারা ‘অ্যাডাল্ট কো-অপ প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে নতুন ইমিগ্র্যান্টদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। গুডউইল থেকে ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’-এর খোঁজ পাওয়াটা ছিল একটি বিশেষ পাওয়া যা আমাকে এবং আমার পরিচিত অনেককেই বিশেষভাবে উপকৃত করেছে। গুডউইল থেকে আমাদেরকে বলা হলো যে ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’ বছরে শুধু মাত্র দুই বার তাদের এই ‘অ্যাডাল্ট কো-অপ প্রোগ্রাম’ পরিচালনা করে থাকে এবং এই প্রোগ্রামে চান্স পাওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে তাদের দ্বারা পরিচালিত একটি ইংরেজী প্রফেসিয়েন্সি টেস্টে পাশ করা। গুডউইলের শেষ উপদেশ ছিল, কানাডাতে চাকুরী পাওয়ার জন্য কোন ব্যক্তি বিশেষ কিংবা কোন এজেন্সীর সাথে কোন প্রকার টাকা পয়সার লেনদেন না করার এবং নিজের ‘স্যোসাল সিকিউরিটি নাম্বার’ কোনভাবেই কারো সাথে শেয়ার না করার। এই শেষ উপদেশটি হচ্ছে একটি বিশেষ উপকারী উপদেশ, কারণ নর্থ আমেরিকা হচ্ছে ফ্রড বা ঠক-বাটপারদের দেশ। এদেশে এসে প্রতারকের খপ্পরে পড়েনি এমন লোকের দেখা পাওয়া যাবে না। সরাসরি প্রতারকের দেখা না পেলেও সবাই কিন্তু প্রতারকদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতারনামূলক টেলিফোন ঠিকই পেয়েছেন।
ইন্টারনেট ঘেঁটে টরন্টোর পশ্চিম প্রান্তে অরফাস রোডে অবস্থিত ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’-এ গিয়ে উপস্থিত হলাম একদিন। এই সেন্টারটি আসলে ইয়র্কডেল সেকেন্ডারি স্কুলের একটি অংশ। ‘অ্যাডাল্ট কো-অপ প্রোগ্রাম’-এর জন্য এসেছি জানাতেই ঢুকিয়ে দিল ইংরেজী টেস্টের জন্য একটি বিরাট হলরুমে। মনে হল যেন বাংলাদেশের ম্যাট্রিক পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়েছি। আমার মতন অনেকেই এসে হাজির হয়েছে এই পরীক্ষা দেয়ার জন্য। প্রায় এক ঘণ্টার এই পরীক্ষা ছিল বেশ কঠিন। পরীক্ষা শেষে প্রায় সাথে সাথেই আমাদেরকে ফল জানানো হলো। উত্তীর্ণের লিস্টে আমার নাম দেখে মনে হলো যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমরা যারা ইংরেজী টেস্টের বৈতরণী পার হতে পারলাম তাদেরকে ‘অ্যাডাল্ট কো-অপ প্রোগ্রাম’-এ ভর্তি করা হলো। চার মাস ব্যাপী এই প্রোগ্রামের প্রথম মাসে আমাদেরকে এখানে এসে ক্লাস করতে হবে। তারপর আমাদেরকে তিনমাসের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করার জন্য পাঠানো হবে। কয়েকদিন বাদেই আমাদের এই প্রোগ্রাম শুরু হবে। অনেকটা যুদ্ধ জয়ের আনন্দ নিয়ে সেদিন ঘরে ফিরলাম।
‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’-এর প্রোগ্রাম শুরু হলো সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। সকাল এগারোটা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত আমাদের ক্লাস। সামার তখন যাই যাই, বাতাসে ‘ফল’-এর হিমেল পরশ বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে। সিঙ্গাপুর থেকে সাথে করে আনা হাল্কা জ্যাকেট দিয়ে সেই হিমেল বাতাস ঠেকিয়ে আমাকে বেশ কষ্ট করেই প্রতিদিন অরফাস রোডে অবস্থিত ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’-এ যেতে হত। কারণ সরাসরি কোন বাস কিংবা সাবওয়ের যোগাযোগ ছিল না। পথে বেশ কয়েকবার বাস আর সাবওয়ে বদল করতে হত। প্রথমে ক্যারাবব কোর্ট থেকে টিটিসি-এর বাসে চেপে ডন মিলস স্টেশন, সেখান থেকে সাবওয়ে ধরে এগলিংটন ইস্ট। তারপর সেখান থেকে আবার বাসে চেপে আসতে হত এগলিংটন ওয়েস্ট সাবওয়ে স্টেশনে। আবার সাবওয়ে নিয়ে এক স্টপ উত্তরে ইয়র্কডেল স্টেশনে যেতে হত আমাকে। তারপর সেখান থেকে হেঁটে ইয়র্কডেল মলের একপ্রান্ত দিয়ে ঢুকে আরেক প্রান্ত দিয়ে বেরোলেই অরফাস রোড। বাসা থেকে আসতে প্রায় দেড় ঘণ্টার ধাক্কা। অর্থাৎ আসতে যেতে তিন ঘণ্টার মামলা। মজার ব্যাপার এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে কিন্তু আমাকে টিটিসি-এর একটি টিকেটের সমান ভাড়া লাগত। তার উপর আমার মাসিক পাস কেনা ছিল, ফলে আলাদা করে কোন টিকেট কিনতে হত না। অর্থের তেমন অপচয় না হলেও সময়ের অপচয় তো হত। তাই এই তিন ঘণ্টা সময় যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য সাথে নিতাম কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর টেক্সটবুক জাতীয় একটা বই। ‘রিম’-এর ইন্টারভিউ থেকে আমি জেনে গেছি আমার পরবর্তী ইন্টারভিউ-এর জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাসে এবং সাবওয়ের এই দীর্ঘ যাতায়াতের পথে পড়তে শুরু করলাম সেই বই একেবারে গোড়া থেকে যাতে এর পরের ইন্টারভিউতে কেউ যেন আমাকে আর আটকাতে না পারে।
‘অ্যাডাল্ট কো-অপ প্রোগ্রাম’-এর প্রথম দিনে কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। বিশাল হলরুমে প্রায় শ’খানেক লোকের সমাগম এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে। ডায়াসের উপর দুই জন ইন্সট্রাক্টর দাঁড়িয়ে। দুই জনই সাদা ‘ওল্ড স্টক’ কানাডিয়ান। তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করল এই প্রোগ্রাম। গোড়াতেই ধারণা দেয়া হল প্রোগ্রামের অবজেক্টিভ এবং এক্সপেক্টেশন সম্পর্কে। প্রথম দুই সপ্তাহে কিভাবে রেজুমি লিখতে হবে, কিভাবে ইন্টারভিউ দিতে হবে এগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে। যখন সবারই একটি গ্রহণযোগ্য রেজুমি তৈরি হয়ে যাবে এই সময়ের মাঝে তখন তারা বিভিন্ন কোম্পানীতে সেই রেজুমি পাঠানো শুরু করবে। সেখান থেকে যাদের ইন্টারভিউ-এর ডাক পড়বে তারা ইন্টারভিউ দিতে যাবে। সেই ইন্টারভিউতে টিকতে পারলেই তবে সুযোগ পাওয়া যাবে তিন মাস মেয়াদী ‘কো-অপ’ পজিশনের। এই তিন মাসে কোন বেতন পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ যারা বর্তমানে অন্য কোন সারভাইভাল জব করে সংসার চালাচ্ছে তাদেরকে সেই জব ছাড়তে হবে। আমি যেহেতু সাথে করে আনা জমানো টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি তাই ব্যাপারটা আমার জন্য তেমন গুরুতর ছিল না। কিন্তু অনেককে দেখেছি এই তিনমাস কিভাবে চলবে সেই কারণেই এই প্রোগ্রামে নাম লিখাতে পারেনি, অথচ এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা কিন্তু তাদের সঠিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারত কানাডাতে। অনেকটা ‘ক্যাচ-২২’-এর অবস্থা। যা হোক, শিক্ষানবীশকালীন পারফর্মেন্স যদি ভালো হয় তবে কোম্পানী সাধারণত পার্মানেন্ট পজিশনে হায়ার করে নেয়। যদি না নেয় তাহলে অন্তত চাকুরীর ক্ষেত্রে কানাডিয়ান একটা অভিজ্ঞতার সনদ পাওয়া যায় যা পরবর্তীতে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে একই রকম পজিশনে চাকুরী পেতে সহায়তা করে থাকে। আমি খেয়াল করে দেখলাম যে এখানে আমার মতন একেবারে আনকোরা ইমিগ্র্যান্টের সংখ্যা হাতে গোনা। প্রায় সবাই এক দুই বছর কিংবা তারও বেশী পুরানো। সাত বছর আগে ইস্ট ইউরোপ থেকে আসা এক ইমিগ্র্যান্টকে পেয়েছিলাম এখানে। আমার সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। তার কাছ থেকেই প্রথম জানতে পেরেছিলাম ‘রিজার্ভ’-এর খবর। ফার্স্ট নেশনদের জন্য নির্ধারিত ‘রিজার্ভ’ থেকে সে নাকি কম দামে সিগারেট কিনে আনে। ইরান থেকে আসা অনেকেরই দেখা পাই এখানে। সেই তুলনায় আমাদের সাব-কন্টিনেন্ট থেকে আসা ইমিগ্র্যান্টদের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। আমাদেরকে বলা হলো যে আমরা যেন এই প্রোগ্রামের পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগে চাকুরী খোঁজা অব্যাহত রাখি। চাকুরী পেলে আমরা ইচ্ছে করলে এই প্রোগ্রামের মাঝপথ থেকে কুইট করতে পারব, তবে তাদেরকে অবশ্যই জানিয়ে। আমাদের নিজেদের খোঁজে যদি কোন প্রতিষ্ঠান থাকে যারা ‘কো-অপ’ পজিশনে হায়ার করতে আগ্রহী, তবে যেন আমরা তাদেরকে সেই খবর দেই। তারা সেই সব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে আমাদেরকে সেখানে ‘কো-অপ’ পজিশনগুলি পেতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আমাদেরকে চাকুরীর বাইরে কিভাবে এদেশে ওন্টারপ্রনার হওয়া যায় সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের খোঁজ দেয়া হলো। অর্থাৎ আমাদেরকে এই মেসেজ দেয়া হলো যে কানাডাতে আমরা চাকুরীর বাইরেও অনেক কিছুকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারি। ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লেগেছিল, কারণ আমরা অনেকেই ক্যারিয়ার বলতে শুধু চাকুরীকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি এবং এই অর্থোডক্স মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারি না।

অরফাস রোডের একপাশে রেডিমেড পোশাকের দোকানের সারি (ছবি আন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত)


অরফাস রোডের একপাশ জুড়ে ছিল রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকানের সারি। অনেকটা আমাদের দেশের বঙ্গ বাজারের মতন। দুপুর দুইটার দিকে যখন বাসায় ফেরার পথ ধরতাম তখন সেই দোকানগুলি থেকে ভেসে আসত উঁচু ভলিউমের জনপ্রিয় ইংরেজী পপ সঙ্গীত। একটা উৎসব উৎসব আমেজে ভরা পরিবেশ তৈরি করত সেই উঁচু ভলিউমের গান যা সহজেই আকৃষ্ট করত ক্রেতাদের। সেই আকর্ষণে আমিও এই দোকান সেই দোকান করে কিছুটা সময় কাটিয়ে দিতাম বাড়ী ফেরার পথে। এই দোকানগুলির ভেতর কিছু ছিল বিভিন্ন নামী-দামী ব্যান্ডের আউটলেট। তবে বেশীর ভাগ দোকানেই বিক্রী হত নাম না জানা অখ্যাত সব ব্যান্ডের সস্তা কাপড় চোপড়। আমি এ রকম একটা দোকান থেকে কাপড়ের পুরু এক জোড়া গ্ল­াভস কিনেছিলাম যা এত বছর পর আজও শীতের সময় ব্যবহার করছি। চাকুরীর বাইরে আর কি ভাবে ক্যারিয়ার গড়া যায় অনেকটা সেই তাগিদে এবং কিছুটা ‘থিংকিং আউটসাইড দি বক্স’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে চিন্তা করলাম বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের স্টকলট এনে এই দোকানগুলিতে সাপ্লাই দেয়া যায় কিনা। আমার কিছু বন্ধুবান্ধব যারা বেশ কয়েক বছর আগেই এদেশে এসে থিতু হয়েছে তাদের সাথে এ নিয়ে আলাপ করলাম। একজন উৎসাহী সিনিয়র বন্ধু জানাল যে তার এই লাইনে পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। ফলে তার উৎসাহে আমরা চারজন মিলে এই সময় ‘ইউনাইটেড ফোর’ নামের এক কোম্পানী রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। আমাদের কোম্পানীর মূলনীতি ছিল, “ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড, ডিভাইডেড উই ফল”। তবে আক্ষেপের বিষয় এই যে আমরা কখনই ইউনাইটেড হতে পারিনি, ফলে আমাদের পতন ছিল অনিবার্য। কোন রকম ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হাত না দিয়েই বন্ধ করা হল সেই কোম্পানী। একদিক থেকে সেটা ছিল অনেকটা আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ পরবর্তীতে জেনেছি যে এই সব দোকানগুলি বিক্রীর পর টাকা দেয়ার শর্তে কাপড় নিয়ে থাকে। পরে সেই টাকা তোলা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ‘এভরি ক্লাউড হ্যাজ আ সিলভার লাইনিং’-এর তত্ত্বানুসারে এই ‘ইউনাইটেড ফোর’ নাটক থেকে আমার অবশ্য একটি ব্যক্তিগত উপকার হয়েছিল। কোম্পনী বন্ধ করার দায়িত্ব যখন আমার ঘাড়ে এসে পড়ে তখন একজন সুহৃদ অ্যাকাউন্টেন্টের সাথে পরিচয় হয় যার সাথে এখনও আমার সুসম্পর্ক বিদ্যমান।
এক সময় কিভাবে কানাডিয়ান কায়দায় রেজুমি ঠিক করতে হবে সেই ছবক পর্ব শেষ হয়। আমি যেহেতু ইতিপূর্বেই গুডউইল থেকে এই ছবক পেয়েছি তাই আমার জন্য এই পর্বে নতুন কিছু শেখার ছিল না। আমাদের দুই ইন্সট্রাক্টর ভাগাভাগি করে একে একে আমাদের সবার সাথে রেজুমি নিয়ে বসলো যাতে আমরা কে কোন ক্যারিয়ারে আগ্রহী সেটা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়। কারণ সেই মোতাবেক আমাদের রেজুমি বিভিন্ন কোম্পানীতে পাঠানো হবে। আমার ক্ষেত্রে চয়েস খুব ক্লিয়ার -ইনফরমেশন টেকনোলজী কিংবা ইনফো-টেক, আরও সংক্ষেপে আইটি। আইটি-এর আবার তিনটি আলাদা ভাগ রয়েছে, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডাটাবেইজ আর নেটওয়ার্কিং কিংবা ইনফ্রাস্ট্রাকচার সাপোর্ট। আমার স্কিল হচ্ছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। আমি একটা জিনিষ খেয়াল করে দেখলাম যে যাদের লেখাপড়া জেনারেল লাইনের তাদের বেশীর ভাগই ব্যাংকের টেলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে আগ্রহী। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টকে দেখেছি যে কানাডাতে এসে ‘চার্টার্ড প্রফেশন্যাল অ্যাকাউন্টেন্টস’ বা সিপিএ ডিগ্রী নিতে। এদের ভেতর অনেকেই আবার ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন দেশে। কানাডাতে হয়ত অ্যাকাউন্টেন্টদের চাহিদা আমাদের দেশের তুলনায় বেশী। প্রতি বছর ট্যাক্স রিটার্ন করার জন্য এদেশের প্রায় প্রতিটি করদাতা নাগরিককে প্রফেশন্যাল অ্যাকাউন্টেন্টের শরণাপন্ন হতে হয়। তাছাড়াও যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তারাও তাদের হিসাব নিকাশ ঠিক রাখা এবং ট্যাক্স রিটার্ন করার জন্য প্রফেশন্যাল অ্যাকাউন্টেন্টের কাছে যান। কানাডাতে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপরাধ প্রমাণিত হলে জরিমানা কিংবা জেল অথবা একই সাথে দুটোই হতে পারে। আমাদেরকে ট্যাক্স প্রদানের সঠিক নিয়ম কানুন সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’ সিআরএ অথবা কানাডিয়ান রেভিনিউ এজেন্সি থেকে একজন এক্সপার্টকে আমন্ত্রণ জানায়। সেই এক্সপার্ট তার দুই সহকারী নিয়ে আমাদেরকে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার পরিনাম কি ভয়াবহ হতে পারে সেই দিকগুলি যখন তুলে ধরছিলেন তখন আমার পাশে বসা লোকটি প্রশ্ন করার জন্য হাত তুললো। আলবেনিয়া থেকে আসা এই লোকটির সাথে ইতিমধ্যেই আমার বেশ খাতির হয়ে গিয়েছিল। সে তার দেশে এক সময় সিনেমা ইন্ড্রাস্টির সাথে জড়িত ছিলো। প্রশ্নটি ছিলো তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যদি কোন ইনকাম করে তবে কি তার ছেলেকে আলাদাভাবে ট্যাক্স ফাইল করতে হবে নাকি তার সাথে একত্রে করা যাবে? এক্সপার্ট ভদ্রলোক উত্তরে বেশ বিরক্তি ভরে জানালেন যে ‘চাইল্ড লেবার’ কানাডাতে অনুমোদিত নয়। সিনেমাতে অভিনয় করাটা চাইল্ড লেবারের আওতায় পড়বে কিনা জানতে চাইলে এক্সপার্ট ভদ্রলোক বেশ খানিকটা থতমত খেয়ে যান। কারণ নতুন ইমিগ্র্যান্টরা যে বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শিল্পকলাভিত্তিক কোন পেশায় নিয়োজিত হতে পারে সেটা হয়ত তার স্টেরিওটাইপ ধারণার বাইরে ছিল।
এক সময় আমার ইন্টারভিউ-এর ডাক পড়ে কো-অপ পজিশনের জন্য। তাও আবার দুইটি কোম্পানী থেকে প্রায় একই সাথে। প্রথম কোম্পানীর হায়ারিং ম্যানেজার ছিল হংকং থেকে আসা একজন চাইনিজ। তার টীমে চাইনিজ বংশোদ্ভূত লোকজনের আধিক্য দেখেই আঁচ করতে পারলাম যে এখানে হয়ত তারা আমাকে নিবে না। আমার আশঙ্কা অবশ্য অমূলক ছিল না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে হায়ারিং ম্যানেজার তার স্বজাতিপ্রীতির উর্ধ্বে
উঠতে পারে না। ফলে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে হয় ভারতীয় নয়তো চাইনিজ আইটি প্রফেশন্যালদের একপেশে আধিক্য দেখা যায়। যাই হোক দ্বিতীয় কোম্পানীতে ইন্টারভিউ দেয়ার পর আমাকে জানানো হলো যে তারা আমাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করার আগে আরো একবার ইন্টারভিউ নিবে। সেই ইন্টারভিউর জন্য দিন গুনছি তখন এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেল। ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’-এ যাওয়ার পথে বাসের ভেতর অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা ফোনকল পাই। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে উত্তর এলো, আমি ‘টেট এভেরি’, ‘ডিসিশনিং সল্যুশন’-এর ডেভ ম্যানেজার। জাভা ডেভেলপার পজিশনের জন্য টেলিফোনে সে আমার ইন্টারভিউ নিতে আগ্রহী। একই সাথে আমাকে জানালো যে সে আমার রেজুমি পেয়েছে কোন এক জব এজেন্সীর মাধ্যমে। আমি বুঝতে পারলাম যে গুডউইলে আমাদের রেজুমি সংগ্রহ করেছিল বেশ কয়েকটি জব এজেন্সী, তারই ভেতর কোন এক এজেন্সী থেকে ‘ডিসিশনিং সল্যুশন’ নামক কোম্পানীটি আমার রেজুমি পেয়েছে। আমি তাকে জানালাম যে আমি বাস থেকে নেমে একটি সুবিধাজনক স্থান থেকে তাকে কলব্যাক করতে পারি কিনা। সে আমাকে আশ্বস্ত করে জানাল যে সে আমার ফোনের অপেক্ষায় থাকবে। আমি ইয়র্কডেল সেকেন্ডারি স্কুলের চত্বরে ঢুকেই একটা নির্জন স্থান খুঁজে নিয়ে ‘টেট এভেরি’কে ফোন করলাম। সে আমাকে জানালো যে সে এখন আমাকে জাভা প্রোগ্রামিং-এর উপর কিছু স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্ন করবে যা কিনা সে সব ক্যান্ডিডেটকেই করছে। আমি প্রস্তুত জানাতেই ইন্টারভিউ শুরু হলো। প্রথম প্রশ্ন, জাভা অবজেক্ট এবং জাভা ক্লাসের মধ্যে পার্থক্য কি? আমি ইতিমধ্যেই জাভা প্রোগ্রামিং-এর সেই টেক্সট বই ভাঁজা ভাঁজা করে ফেলেছি। অতএব এইসব প্রশ্ন করে আমাকে আটকানোর আর সুযোগ নেই। আমাকে পরদিন অন-সাইট ইন্টারভিউর জন্য আমন্ত্রণ জানালো টেট। সাবওয়ে ধরে ইয়াং এন্ড ব্লোর স্টেশনে নেমে লাগোয়া ‘বে’ বিল্ডিং-এর বাইশতম তলাতে এসে হাজির হলাম পরদিন সকাল দশটায়। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই হিউম্যান রিসোর্সের হেড ‘লরি অ্যান’ আমাকে নিয়ে বসাল এক কনফারেন্স রুমে। একটু পরেই টেট এসে ঢুকল আমার অন-সাইট ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য। এক ফাঁকে কোম্পানীর মালিক এবং সিইও ‘ড্যারেন পার্কো’-ও এসে আমার সাথে কিছু কথা সেরে গেল। সেই কথাগুলি ছিল মূলত আমার স্যালারি সংক্রান্ত। তারপর আবার ‘লরি অ্যান’-এর প্রবেশ। হাতে এমপ্লয়মেন্ট এগ্রিমেন্ট লেটার। লরি অ্যান আমাকে সংক্ষিপ্ত আকারে ‘ডিসিশনিং সল্যুশন’ কোম্পানী সম্পর্কে একটা ধারণা দিল। এটি একটি নতুন কোম্পানী, বর্তমানে যার ওয়ার্কফোর্সে রয়েছে মাত্র আঠারো জন। কোম্পানীর মালিক ড্যারেন পার্কো হচ্ছে তার স্বামী। এটি মূলত একটি সফটওয়্যার কোম্পানী যার মূল প্রোডাক্ট হচ্ছে একটি ‘ডিসিশনিং ইঞ্জিন’। বিভিন্ন অটোমবিল ডিলারশীপ হচ্ছে এই কোম্পানীর ক্লায়েন্ট যারা কিনা তাদের কাস্টমারের ফাইন্যান্সিং-এর জন্য এই ‘ডিসিশনিং ইঞ্জিন’ ব্যবহার করে থাকে। আমার কাছে সবকিছুই কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছিল। এমপ্লয়মেন্ট এগ্রিমেন্ট লেটার হাতে পেয়ে আমি আমার স্ত্রীকে ফোনে জানালাম যে, কেল্লা ফতেহ। আমার চাকরী হয়ে গেছে। আমাকে জয়েন করতে হবে আগামী মঙ্গলবার, ১৪ই নভেম্বর।
এবার ‘ইয়র্কডেল অ্যাডাল্ট লার্নিং সেন্টার’ থেকে বিদায় নেয়ার পালা। আগেই বলা ছিল আমরা যদি মাঝপথে কোথাও চাকুরী পেয়ে যাই তবে তাদেরকে জানিয়ে আমাদেরকে এই কোর্স থেকে কুইট করতে হবে। আমি আমার ইন্সস্ট্রাক্টরকে জানাতেই সে আমাকে সহ আরো কয়েকজনকে পুরো ক্লাসের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। আমাদেরকে বলতে বলা হলো আমাদের এই সাফল্যের মূলে কি ছিল। আমি শুধু দু’টো পয়েন্ট বলেছিলাম, “ডোন্ট লুজ ইয়োর হোপ। পারসিভারেন্স ইজ দি কী টু উইনিং দিস জব হান্টিং গেম।” (চলবে)
কাজী সাব্বির আহমেদ
টরন্টো