টরেটক্কা টরন্টো – সন্তান প্রতিপালন

জুলাই ১৩, ২০২০

কাজী সাব্বির আহমেদ

আপনি যদি সদ্য আসা কোন অভিবাসী দম্পতিকে প্রশ্ন করেন, কেন এসেছেন কানাডাতে তবে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর পাবেন, সন্তানদের উন্নত এবং নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য। তার সাথে হয়ত যোগ হবে এদেশের উন্নত জীবন ব্যবস্থা, বিনামূল্যে বিশ্বমানের চিকিৎসার সুবিধা, সামাজিক নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাক স্বাধীনতা কিংবা ধর্মীয় স্বাধীনতা, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এটাও সত্যি যে অনেকেই পড়াশুনা কিংবা চাকরীর সুবাদে প্রথমে এদেশে এসেছেন, তারপর ধীরে ধীরে সময়ের প্রবাহে এদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। ষাট কিংবা সত্তুরের দশকে যাঁরা এদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছিলেন তাঁদের এক উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষা শেষে এদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁরা কালক্রমে এদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে তাঁদের ছেলেমেয়েদেরকে এদেশেই মানুষ করেন। আমার সাথে এরকম একজন দ্বিতীয় প্রজন্মের কানাডিয়ান বাংলাদেশীর পরিচয় হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। আয়েশা তার নাম, তার বাবা কানাডাতে এসেছিলেন ষাটের দশকে। বয়সে আমার চেয়ে বেশ নবীন আয়েশা যখন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে স্ট্যাটিসটিক ডিপার্টমেন্টে লেকচারার পদে যোগ দিয়েছিলেন আমি তখন সিঙ্গাপুর থেকে কানাডাতে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আয়েশার কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম কানাডাতে তার বেড়ে উঠার অভিজ্ঞতার কথা যা আমাকে এদেশ সম্পর্কে মানসিকভাবে কিছুটা পূর্ব প্রস্তুতি নিতে অবশ্যই সাহায্য করেছিল।

ইদানীং কানাডাতে উচ্চশিক্ষার্থে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সংখ্যাধিক্য চোখে পড়ার মত। এদেশে স্থায়ীভাবে থাকার উদ্দেশ্যেই যে তাদের এই আসা সেটা এখন সরকারের বিভিন্ন এজেন্সীর কাছে যেমন পরিস্কার তেমন এদেশের জনগণের কাছেও। বয়সে তরুণ এই প্রজন্ম ক্যারিয়ার গড়ার প্রবল উত্তেজনার মাঝে এক সময় হাতে পেয়ে যায় এদেশের নাগরিকত্ব, তাই কী পেলাম আর কী হারালাম তার কোন হিসাবই তাদেরকে কষতে হয়না। কিন্তু আমার মতন যারা কিছুটা পরিণত বয়সে অর্থাৎ মিড-ক্যারিয়ার পিরিয়ডে এদেশে আসেন তাদের জন্য এদেশে হঠাৎ একটি চাকরী বাগিয়ে ফেলা অনেকটা লটারি জয়েরই সামিল। কিন্তু তারপরও কেন এদেশে আসা? এই প্রশ্নের আসলে কোন সহজ জবাব তাদের কাছে নেই। নতুন অভিবাসীদের জন্য জীবন হয় বেশ চ্যালেঞ্জিং, আর প্রতি নিয়ত সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার ফাঁকে হয়ত অনেকের কাছে এই প্রশ্নের কোন অস্তিত্বই ধরা পড়ে না।

অভিবাসন প্রক্রিয়াটা অনেকটা একটি ম্যাচিউরড গাছকে শিকড়সহ উপড়ে তুলে অন্য একস্থানে রোপণ করার মতন। গাছের ক্ষেত্রেও যেমন একটা শক কাজ করে, তার যেমন সময় লাগে নিজেকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে আবারও নতুন পাতা ছড়াতে, মানুষের ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম অনুভূতি কাজ করে। অভিবাসন একটি জটিল মনস্তাত্তি¡ক প্রক্রিয়া কারণ এখানে কিছু পাওয়ার জন্য আমাদেরকে ছাড় দিতে হয় অনেককিছু। সে কারণে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের মনে একটা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় যা তারা সবসময়ই লুকিয়ে রাখতে চায়, এমনকি নিজের কাছ থেকেও। আমি যে বছর কানাডাতে আসি সেই বছরই মুক্তি পায় ‘নেমসেক’ – ঝুম্পা লাহিড়ীর উপন্যাস থেকে মিরা নাইর-এর নির্দেশনায় নির্মিত একটি হৃদয়স্পর্শী মুভি। কলকাতার মেয়ে অসীমা এমআইটি-তে অধ্যয়নরত বাঙালী ছেলে অশোককে বিয়ে করে পাড়ি জমায় আমেরিকাতে। সেখানে শুরু হয় তাদের সংসার, তাদের ছেলের নামকরণ করা হয় বিখ্যাত রুশ উপন্যাসিক নিকোলাস গগলের নামানুসারে ‘গগল’। সেই গগলের চোখে দেখানো হয় আমেরিকার সমাজে তার খাপ খাওয়ানোর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তার বাবা মার আকুলতা, তার বোনের খুব সহজেই এই জীবনকে মানিয়ে নেয়া। সহজ কথায় এক বাঙালী অভিবাসী পরিবারের ফেলে আসা দেশকে নিয়ে তাদের টানাপোড়নকে জীবন্ত করে দেখানো হয়েছে এই মুভীতে। আমি নিজে যেহেতু সেই সময় মাত্র অভিবাসী হয়ে কানাডাতে এসেছি, সেই কারণে হয়ত মুভিটি আমাকে বেশ গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। ‘নেমসেক’-এর দর্পণে যেন নিজেরই প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়েছিলাম।

সিঙ্গাপুরের ‘বুকিত পানজাং প্রাইমারী স্কুল’-এর প্রথম শ্রেণীর ছাত্র আমাদের সাত বছরের পুত্র টরন্টোতে এসে সরাসরি গ্রেড টু-তে ভর্তি হলো ‘ট্যামো-শেনটার জুনিয়র পাবলিক স্কুল’-এ। স্কুলটি টরন্টোতে আমাদের নতুন বাসস্থান ক্যারাবব কোর্টের অ্যাপার্টমেন্টের একদম লাগোয়া। ভর্তির জন্য দরকার হয়েছিল আমাদের সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট ও ভ্যাক্সিনেশন হিস্ট্রি, আমরা যে কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা সেটার প্রমাণপত্র আর বাসস্থানের প্রমাণ স্বরূপ আমাদের ঠিকানাতে আসা ব্যাংক স্টেটমেন্ট। এদেশে বয়স অনুসারে ছাত্রের গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। আমি বেশ কিছু বাংলাদেশী পরিবারকে জানি যারা দেশ থেকে তাদের ছেলেমেয়েদের বয়স কমিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট করিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু এতে তাদের ছেলেমেয়েরা এখানে এসে একাডেমিক ইয়ারে পিছিয়ে পড়েছে অর্থাৎ হিতে বিপরীত হয়েছে। আপনার সন্তানকে কোন স্কুলে ভর্তি করাবেন তার জন্য রয়েছে স্কুলের জন্য নির্ধারিত এলাকার নিয়ম। অর্থাৎ আপনি যদি সেই নির্ধারিত এলাকার ভিতর বাস করেন তবে স্কুল আপনার সন্তানকে ভর্তি করতে বাধ্য। সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়ানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই ভালো স্কুলের এলাকাগুলোতে সবাই বাস করতে চায়। আমাদের দেশে যেমন ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে ভর্তি পরীক্ষার ঝামেলা রয়েছে, এদেশে রয়েছে ভালো স্কুলের এলাকাতে বাস করার প্রতিযোগিতা। ফলে সেই এলাকাগুলোতে বাড়ীর দাম অনেকটা চড়া অথবা হাইরাইজ বিল্ডিংগুলোতে ফ্ল্যাট ভাড়া পাওয়া বিশেষ দূরূহের ব্যাপার। আর ভালো স্কুলের খবর পেতে হলে আপনাকে ঘাঁটতে হবে ‘ফ্রেজার ইনিষ্টিটিউট’-এর করা হালনাগাদ তালিকা। এই ইনিষ্টিটিউট টরন্টোর স্কুলগুলির র‌্যংকিং করে সেটার তালিকা প্রকাশ করে থাকে। আমরা অবশ্য এত কিছু ভেবে ক্যারাবব কোর্টে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করিনি, শুধু দেখেছিলাম ক্যারাবব কোর্ট এলাকার অ্যামেনিটিস আর বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব।

আমরা এসেছি জুলাই মাসের প্রথম ভাগে যখন সামার ভ্যাকেশন চলছে। ফলে স্কুলে রেজিষ্ট্রেশন করার পরও হাতে প্রায় দু’মাস সময় রয়েছে ক্লাস শুরু হওয়ার। আর আমিও তখন চাকরি খোঁজা শুরু করিনি, ফলে আমার এবং আমার স্ত্রীর হাতেও অফুরন্ত সময়। তাই আমরা মনযোগ দিলাম কীভাবে এই সময়টার উপযুক্ত ব্যবহার করা যায়। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমরা সবাই টরন্টো পাবলিক লাইব্রেরীর সদস্য হলাম। বাসা থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বে পাবলিক লাইব্রেরীর শাখা থাকাতে আমরা সেখানে গিয়ে বই, ম্যাগাজিন আর সিনেমার সিডি ঘাঁটাঘাঁটি করে সময় কাটাতাম আর ফেরার সময় বেশ কিছু বই অথবা সিনেমার সিডি ধার করে নিয়ে আসতাম। আমাদের ছেলেও তার পছন্দমতন শিশুতোষ কিছু বই কিংবা অ্যানিমেশন সিনেমা নিত। সেসব যখন পড়া কিংবা দেখা হয়ে যেত, তখন আবার আনা হত নতুন কিছু বই কিংবা সিনেমা। আমি ছোট বেলা থেকেই ছিলাম বইয়ের পোকা, ক্লাস থ্রি-ফোর থেকেই নিজে নিজে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ‘আরিফ বুক ডিপো’ থেকে ভাড়া করে দস্যু বনহুর, কুয়াশা কিংবা দস্যু মোহন সিরিজের বই পড়তাম। আমার সেই পড়ার বাতিক যাতে আমার ছেলের মাঝেও প্রবাহিত হয় তাই তাকে নিয়ে লাইব্রেরীতে যাওয়া। কালক্রমে আমার ছেলে এক সময় পড়ুয়া হয়েছে বটে তবে আমার মতন ‘ফিকশন’ নয় বরং সে কঠিন কঠিন ‘ফ্যাক্টস’ নিয়ে ডুবে থাকে এখন। তার প্রিয় বিষয় বিজ্ঞান আর ইতিহাস। এই দুই বিষয়ের জন্য সে এখন হয়েছে আমার ‘চলন্ত রেফারেন্স বুক’, কোন কিছু জানার দরকার হলে ইন্টারনেট ঘাঁটার আগে আমি প্রথমে তাকে জিজ্ঞেস করি।

আমি আমার শৈশবে এবং কৈশোরে খেলাধুলাতেও ছিলাম খুব উৎসাহী। আমাদের সময় খেলাধুলার জন্য সময় নির্ধারিত ছিল বিকেল বেলা – আসরের আযান থেকে মাগরিবের আযান পর্যন্ত। সেই সময়ের এই অলিখিত নিয়মের জেরে মাগরিবের আযান দেয়া মাত্রই আমাদের খেলা হতো সাঙ্গ, যে যার বাসার দিকে দিতাম ভো দৌড়। কারণ আযান শেষ হওয়ার আগেই বাসায় পৌঁছতে হবে। মসজিদের শহর ঢাকাতে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন আযানের ধ্বনি আপনার কর্ণগোচরে পৌঁছাবেই। সেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই আবর্তিত হত আযানের সময় ধরে। কিন্তু টরন্টোতে সেই আযানের ধ্বনি অনুপস্থিত, ফলে আপনাকে চোখ রাখতে হবে ঘড়িতে কখন বিকেল কিংবা সন্ধ্যা হলো তার হিসেব রাখতে। তাই আমরা কিনে ফেললাম একটা আযান-ঘড়ি যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে রুটিনবদ্ধ করতে বিশেষ সহায়তা করেছে।

আমার শৈশবে খেলার জন্য নির্ধারিত বিকেল বেলাতে মূলত খেলতাম ফুটবল, তবে শীতকালে ক্রিকেট। ফলে ফুটবল আর ক্রিকেট এই দুই খেলাতেই আমি বেশ দক্ষ হয়ে উঠি। ফুটবলে গোলকীপার পজিশনে খেলে বেশ নাম কুড়িয়েছিলাম, ফলে নিজের পাড়ার বাইরেও অন্য পাড়ার টিম থেকে ডাক পড়ত ‘হায়ার’-এ খেলার জন্য। ফুটবল এবং ক্রিকেটের বাইরে আরেকটি খেলাতে ছিল আমার বেশ দক্ষতা – টেবিল টেনিস। ঢাকার লালমাটিয়াতে আমাদের সামনের বাসায় ছিল টেবিল টেনিস খেলার বিশাল আয়োজন। তখনকার আমলের বিখ্যাত সব টেবিল টেনিস প্লেয়াররা

আসতেন সেখানে খেলতে। আমি তখন ক্লাস ওয়ান-টুতে পড়ি। মুগ্ধ হয়ে তাদের খেলা দেখতাম আর দুপুরে যখন বড়রা কেউ খেলতো না তখন আমরা ছোটরা সেখানে খেলতাম। এগুলো ছাড়া আরও খেলতাম মার্বেল কিংবা লাটিমের নানান ধরণের খেলা। রোমাঞ্চকর বই নিয়ে ডুবে থাকা আর বিভিন্ন রকমের খেলা নিয়ে মেতে থাকা – এই দুই নিয়ে আমার শৈশব আর কৈশোর কাল ছিল উত্তেজনায় ঠাঁসা। আজকালকার ছেলেপেলেদের মতন ‘বোর’ হওয়ার কোন সুযোগই ছিল না তখন।

আমার ছেলের শৈশবও যেন আমার কাটানো শৈশবের মতন প্রাণবন্ত হয়ে উঠে সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে বিকেলে আমাদের ক্যারাবব কোর্টের অ্যাপার্টমেন্ট লাগোয়া প্লে গ্রাউন্ডে তার সাথে বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠলাম। আমি নিজে যেহেতু এক সময় বেশ ভালো ক্রিকেট খেলতাম তাই সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন আমার ছেলের জন্য বিখ্যাত ‘মুস্তাফা সেন্টার’ থেকে ব্যাট-বল কিনে দিয়েছিলাম যা টরন্টো আসার সময় সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম। আর টরন্টোতে এসে ওয়াল-মার্ট থেকে কিনে ফেললাম একখানা সকার বল। সেই ক্রিকেট ব্যাট-বল আর সকার বল নিয়ে আমরা যখন বিকেলে প্লে-গ্রাউন্ডে যেতাম, তখন আমার ছেলের বয়সী অন্যান্য বাচ্চারাও এসে যোগ দিত আমাদের সাথে খেলাতে। তবে লক্ষ্যণীয় যে সেই সব বাচ্চাদের সবাই ছিল আমাদের উপমহাদেশীয়, নর্থ আমেরিকার পরিভাষায় ‘দেসি’। অর্থাৎ তারা আমাদেরকে দেখেই বুঝতে পেরেছিল যে আমরা তাদের স্বগোত্রীয়, তাই আগ বাড়িয়ে খেলতে আসতে তাদের ভিতর কোন দ্বিধা কাজ করেনি। কিন্তু এই বাচ্চারাই হয়ত যেখানে চাইনিজ কিংবা ল্যাটিনো বাচ্চারা খেলাধুলা করছে সেখানে গিয়ে ভিড়বে না। সিঙ্গাপুরের মতন এক মাল্টি রেসিয়াল এন্ড কালচারাল দেশে দীর্ঘ এক দশকের বেশী সময় বাস করে এসেছি বলে আমরা খুব সহজেই অন্য রেসের লোকদের সাথে মিশতে পারি। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশ থেকে যারা সরাসরি এদেশে আসেন তাদের অনেকের ভিতর অন্য রেসের প্রতি কিছুটা প্রেজুডিস থেকেই যায় যার ছায়া গিয়ে পড়ে তাদের সন্তানদের উপর। একই ভাবে যারা গণচীন থেকে আসেন, তারাও এই প্রেজুডিস থেকে মুক্ত নন। বাচ্চাদের আচরণে সেই প্রেজুডিসের সরল প্রতিফলনও প্রকট হয়ে চোখে পড়ে। ফলে এখানকার স্কুল কলেজে বন্ধুত্বের যে বলয় গড়ে উঠে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় কমিউনিটি ভিত্তিক। সামাজিক এই ফেনোমেননকে এখানকার সমাজ বিজ্ঞানীরা ‘কালচারাল মোজাইক’ বলে অভিহিত করে থাকেন। আমরা অবশ্য আমাদের সন্তানকে এই প্রেজুডিস থেকে দূরে রাখার জন্য বিভিন্ন কালচার এবং রেসের লোকজনের সাথে খোলামনে মেলামেশা করে গেছি।

আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ কিংবা নিজস্ব কালচারের সাথে এদেশের পলিটিক্যাল কালচারের মাঝে যে বিরোধ কিংবা অমিল আছে সেটাকে আমাদের জীবনে কীভাবে ন্যাচারালাইজড করা যায় সেটা অবশ্যই একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই ব্যাপারে আমরা যদি বিশেষ নজর না দেই, তবে আমরা আমাদের অজান্তেই একদিন এমন এক জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে যাব যার সাথে আমাদের হয়ত কোন পরিচয় নেই। সেই জীবনের অর্থ খুঁজে বের করা হয়ত আমাদের জন্য হবে বেশ বেদনাদায়ক কিংবা বিষন্নকর। আমাদের কিংবা আমাদের সন্তানদের জীবন যাতে সেই খরস্রোতে হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদেরকে আগে থেকেই সাবধান হতে হবে। আমাদের সন্তানদেরকে অর্থবহ জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য গোঁড়ামিমুক্ত ধর্মীয় শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই আমরা আমাদের ছেলেকে নিয়ে হাজির হলাম আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হাঁটা দূরত্বের পথ পাড়ি দিয়ে ‘নামিরা মস্ক’ -এ। সেখানকার কোরানিক ক্লাসে ভর্তি করাতে। (চলবে)

কাজী সাব্বির আহমেদ। টরন্টো