কানাডার গভর্নর জেনারেলের কার্যালয়ে বিষাক্ত কর্মপরিবেশ
আগস্ট ৬, ২০২০
খুরশিদ আলম
কানাডার গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াট তাঁর অফিসে এক বিষাক্ত কর্ম পরিবেশ তৈরী করে রেখেছেন কর্মীদের মৌখিকভাবে উৎপীড়ন ও হয়রানি করে। তাঁর অত্যাচারে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন আবার কেউ কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। গত চার/ পাঁচ মাসে কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ের মধ্যেও জুলি পেয়াট এর কমিউনিকেশন টিমের চারজন সদস্য বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আরেকজন আগামী সপ্তাহে চলে যাচ্ছেন। দুইজন গেছেন লম্বা ছুটিতে।
জুলি পেয়াট এর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে কর্মীদের অন্যত্র চলে যাওয়ার অতি সাম্প্রতিক ঘটনা এগুলো। অথচ কানাডার গভর্নর জেনারেল এর কার্যালয়টির পরিবেশ ইতিপূর্বে বেশ উপভোগ্য ছিল কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য। কিন্তু বর্তমান গভর্নর জেনারেল এর সময় তা হয়ে উঠেছে অত্যন্ত আতঙ্কজনক একটি কর্মস্থল। প্রতিনিয়ত বুলিং এবং হেনস্থার শিকার হচ্ছেন এখানকার কর্মীদের অনেকেই। কানাডার প্রথম সারির টিভি চ্যানেল সিবিসি গত ২১ জুলাই এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকার এসব তথ্য তুলে ধরে।
এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা সন্দেহ নেই! কানাডার মতো একটি সুসভ্য দেশে এরকম পরিস্থিতি কল্পনাও করা যায় না। বিশেষ করে গভর্নর জেনারেল এর কার্যালয়ে। অনেকে বলেন বিশ্বসেরা শিষ্টাচারের দেশ কানাডা। কথাটা বাড়িয়ে বলা হয় তা কিন্তু নয়। সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা, বিনয়, অথবা শিষ্টাচার যাই বলিনা কেন এ বিষয়ে কানাডিয়ানদের জুড়ি মেলা ভার। বরং বিশ্বে কানাডিয়ানদের একটি ‘বদনাম’ আছে এই বলে যে, তারা একটু বেশী ভদ্র। তাছাড়া, কানাডিয়ানরা সাধারণভাবে বন্ধুবৎসল ও বিনয়ী। সততা, সংবেদনশীলতা, সহানুভূতি এবং নম্রতা তাদের চরিত্রের গভীরে প্রোথিত। অন্যের গোপনীতা এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তারা। ভুল করুন বা না করুন, অপরাধ করুন বা না করুন, সরি বলতে বা এপলজি চাইতে তারা মোটেও কার্পন্য করেন না। আর কথায় কথায় কথায় থ্যাং ইউ বলাতেও তাদের জুড়ি নেই। মোট কথা, উপরে উল্লেখিত আচরণগুলোকে কানাডার মূলধারার নৈতিকতা বলেই বিবেচনা করা হয়। আর সেই দেশেরই সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির অফিসে কর্মরত লোকদের সঙ্গে এরকম অশোভন আচরণ? গভর্নর জেনারেল কানাডায় রানী এলিজাবেথ (দ্বিতীয়) এর প্রতিনিধি। এ পদটি পদাধিকার ও সম্মানের দিক থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রীরও উপরে। রানীর পরেই তার অবস্থান।
কর্মস্থলে গভর্নর জেনারেল এর অশোভন আচরণ নিয়ে সিবিসি নিউজ বেশ কয়েকজন লোকের সঙ্গে কথা বলেছে। এরা সরাসরি গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াট এর অফিসের সঙ্গে যুক্ত আছেন বা ছিলেন। চাকরী হারাতে পারেন বা ক্যারিয়ার এর উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে এই আশংকায় তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সিবিসি নিউজকে জুলি পেয়াট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেন। তারা বলেন, জুলি পেয়াট প্রায়শই অফিসে তার অধীনস্থ কর্মীদের সাথে চিৎকার-চেচামেচি করে কথা বলেন, তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন এবং জনসমক্ষে তাদেরকে অপদস্থ করতেও ছাড়েন না। কাগজপত্র ছুড়ে ফেলা এবং অশোভন শব্দ ব্যবহার করার অভিযোগও করেন তারা।
একজন সাক্ষী বলেন, এমনটাও দেখা গেছে যে, জুলি পেয়াট এর সঙ্গে মিটিং করার পর কয়েকজন কর্মী তাঁর অফিস থেকে বের হয়েছেন কাঁদতে কাঁদতে। কোন কোন দিন দেখা গেছে কর্মীদের কেউ কেউ অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে কান্না করছেন।
আর শুধু গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াটই নন, কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তাঁর সেক্রেটারী ও দীর্ঘদিনের বন্ধু আসুন্তা ডি লরেঞ্জো’র বিরুদ্ধেও।
গভর্নর জেনারেল এর এহেন কর্মকান্ডের রিপোর্টটি সিবিসি নিউজে প্রকাশ হবার পর সর্বত্রই আলোচনার ঝড় উঠে। আশ্চর্য হয়ে যান অনেকেই। কেউই ভাবেননি গভর্নর জেনারেল এর কার্যালয়ে এমন বিষাক্ত কর্ম পরিবেশ বিরাজ করছে। সিটিভি নিউজের এক খবরে বলা হয়, বিরোধী দল এনডিপি’র প্রধান জাগমিত সিং বলেছেন, ‘ট্রুডো সরকারের উচিৎ গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াট এর বিরুদ্ধে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা।’ পার্লামেন্টে তিনি আরো বলেন, ‘গভর্নর জেনারেল এর অফিসের কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তা অত্যন্ত যন্ত্রণাপ্রদ এবং প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। এ বিষয়ে তিনি তার নেতৃত্ব প্রদর্শন করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কি এই কাজটি করবেন? তিনি কি একটি স্বাধীন তদন্ত শুরু করার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিবেন?’
তবে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি তার উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘হয়রানি থেকে মুক্ত একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মক্ষেত্রে কাজ করার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক কানাডিয়ানের এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে গভর্নর জেনারেল এর কার্যালয় Rideau Hall থেকে সিবিসি-তে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীরভাবে এই রিপোর্ট এর বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করছি যা বাস্তব অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াট এবং তার অফিসের ম্যানেজমেন্ট দৃঢ়ভাবে একটি স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্রের গুরুত্বে বিশ্বাস করে।’
উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালে Rideau Hall এর কর্মীদের উপর পরিচালিত এক জরিপেও দেখা গেছে গভর্নর জেনারেল এর অফিসে কর্মরত লোকজন তাদের কর্মস্থলের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্য একটি টিভি চ্যালেন সিটিভি নিউজ জানায়, ঐ জরিপে শতকরা ২২ জন বলেছেন, বিগত বছরে তারা চাকরীতে হয়রানির শিকার হয়েছেন এমনটা তারা অনুভব করেছেন। আর জরিপে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে শতকরা ৭৪ জন বলেছেন তারা তাদের উপর কর্তৃত্বকারী কারো না কারো দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গভর্নর জেনারেল এর অফিসে কর্মরত যে কেউ হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে নালিশ করতে পারেন। পরে সেই নালিশ সেক্রেটারী আসুন্তা ডি লরেঞ্জো’র মাধ্যমে গভর্নর জেনারেল এর কাছে পৌছানো হয়। সিটিভি নিউজে এমনটাই বলা হয়েছে। এখন সমস্যা হচ্ছে গভর্নর জেনারেল নিজেই যেখানে কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং তার সেক্রেটারী ও দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত বন্ধু লরেঞ্জো-ও যেখানে অধস্তন কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন সেখানে কে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে? আর অভিযোগ করার মত দুঃসাহস কে দেখাবে?
সিবিসি নিউজকে একটি সূত্র জানিয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে কর্মীগণ তাদের ম্যানেজারের কাছে হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করেতে গেলে ম্যানেজারগণ তাদের অপারগতা প্রকাশ করে কর্মীদের বলেন, তিনি নিজেও ঐ রকম হয়রানির শিকার।
আসলে কানাডায় বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই এক শ্রেণীর বস বা সুপারভাইজারদের বদ আচরণের কারণে চাকরী ছেড়ে দেন। চাকরী ছেড়ে দিয়ে তারা অন্যত্র যোগদান করেন। আর যাদের সেই উপায় থাকে না, তারা দিনের পর দিন এক চরম মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করেন। বদ প্রকৃতির ঐ সব বসদের অসদাচরণ বা অবমাননাকর আচার-আচরণের ভয়ে কর্মস্থলে তারা সারাক্ষণই একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। এখন দেখা যাচ্ছে কানাডার গভর্নর জেনারেল এর কার্যালয়ও এর বাইরে নয়। সিবিসি টিভি’র রিপোর্টে সেটাই প্রমানিত হচ্ছে। আর সেই সাথে এ কথাও প্রমানিত হচ্ছে যে, ‘শিষ্টাচারের দেশ কানাডা’ এ কথা সবসময় সত্যি নয়। অবশ্য আগের গভর্নর জেনারেলদের বেলায় এমন অভিযোগ তেমনটা শুনা যায়নি।
কানাডার হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনালস এসোসিয়েশন কর্তৃক পরিচালিত এক সমীক্ষায় ইতিপূর্বে দেখা গেছে এই বদ প্রকৃতির বস বা সুপারভাইজার অথবা ম্যানেজারগণ কর্মস্থলের জন্য একটি বড় ধরণের সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। তাদের বদ আচরণের কারণে অধস্তন কর্মীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ৭৩% হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনালসদের অভিমত, এক শ্রেণীর বদ প্রকৃতির বস কর্তৃক কর্মচারীদেরকে কঠোরভাবে তিরস্কার করা, তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা, আবার অন্যদিকে পছন্দের কোন কর্মচারীর প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখানোর কারণে এই সমস্যা তৈরী হচ্ছে।
কর্ম সন্ধানের ওয়েবসাইট ‘মনস্টার কানাডা’ কর্তৃক পরিচালিত এক সমীক্ষায়ও দেখা গেছে বদ প্রকৃতির বসদের জন্য নানান রকমের সমস্যা হচ্ছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ৪২% কর্মী চাকরী ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
এখন আমরা দেখলাম গভর্নর জেনারেল এর কার্যালয় থেকেও লোকজন চাকরী ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
শ্রমজীবী মানুষ নানান কারণেই চাকরী ছাড়েন বা বদল করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আসলে এরা চাকরী ছাড়ছেন না, ছাড়ছেন বসকে। অর্থাৎ বসের অশোভন ব্যবহারের কারণে বিরুপ হয়ে কোম্পানী বদল করেন। মনস্টার এর সমীক্ষায় বলা হয়, এটি নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান বা কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। কানাডায় সার্বিকভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মীই চাকরী ছাড়েন এই বদ প্রকৃতির বসদের কারণে। কোন প্রতিষ্ঠানে এরকম একজন বদ প্রকৃতির বস থাকলে কর্মীদের মধ্যে সার্বক্ষণিক আতংক বিরাজ করে এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদন প্রক্রিয়াই ব্যাহত হয়।
১০ বছর ধরে চালানো সুইডিশ একটি গবেষণায়ও দেখা গেছে যে, কর্মক্ষেত্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক কর্মীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ওই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। বিবিসি’র এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায় ।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়ও দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে চাপের কারণে হৃদরোগ, মুটিয়ে যাওয়া ছাড়াও মানসিক অস্থিরতাজনিত নানা রোগ হতে পারে। শিল্প-মনোবিজ্ঞান পরামর্শক রালফ ইভান্স বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যেসব বস অকারণে সব সময় চিৎকার-চেঁচামেচি করেন; তাঁদের সামনে কর্মীরা সবসময়ই তটস্থ থাকেন। এ অবস্থাটি তাঁদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
সুতরাং কানাডার গভর্নর জেনারেল এর অফিসে যে বিষাক্ত কর্মপরিবেশ বিরাজ করছে সেটাকে গুরুত্বহীন মনে করার কোন সুযোগ নেই। প্রথমত কর্মস্থলে বিষাক্ত পরিবেশ বিরাজ করলে কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত গভর্নর জেনারেল এর কার্যালয় কানাডায় একটি রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হওয়ার দাবী রাখে। এখন সেখানেই যদি অনিয়ম হয়, কর্মচারী-কর্মকর্তাগণ যদি মৌখিকভাবে নির্যাতিত হন, অশোভন আচরণের শিকার হন, জনসমক্ষে অপমানিত হন এবং সর্বোপরি তারা যদি এই সকল কর্মকান্ডের বিচার বা প্রতিকার না পান তবে কানাডিয়ানদের জন্য তা একটি কলংকজন প্রতিষ্ঠান হিসাবেই বিবেচিত হবে।
আমরা জানি কানাডায় কর্মস্থলে সকলেরই অধিকার আছে হয়রানি মুক্ত পরিবেশে কাজ করার। কর্মস্থলে ভয়-ভীতি, বুলিং, নিগ্রহ, বর্ণবাদ ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকার অধিকার এদেশের আইনেই স্বীকৃত। এটি সকলের মানবাধিকার। এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অধিকার কারো নেই। এমনকি গভর্নর জেনারেলেরও না। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও কদিন আগে বলেছেন, ‘হয়রানি থেকে মুক্ত একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মক্ষেত্রে কাজ করার অধিকার রয়েছে প্রত্যেক কানাডিয়ানের এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আজকে গভর্নর জেনারেল এর বিরুদ্ধে তার অফিসের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে হয়রানি ও অপমান করার যে অভিযোগ উঠেছে তা হাওয়া থেকে পাওয়া নয়। সিবিসি টেলিভিশন কানাডার প্রথম সারির একটি প্রভাশালী ও বিশ^স্ত সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতায়ও সিবিসি’র সুনাম আছে। তারা নিশ্চই গুজবের উপর নির্ভর করে জুলি পেয়াট এর বিরুদ্ধে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেনি। প্রতিবেদনে ভুয়া তথ্য থাকলে বা তথ্য প্রমাণ না করতে পারলে বিরাট অংকের মানহানির মামলা হতে পারে সেটাও সিবিসি’র জানা আছে।
টরন্টোর আরেক প্রভাবশালী সংবাদ প্রতিষ্ঠান ‘টরন্টো স্টার’ তাদের বিশেষ এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘গভর্নর জেনারেল এর আবাসিক ও অফিস ভবন Rideau Hall এ যে বিষাক্ত কর্মপরিবেশের কথা তুলে ধরেছে সিবিসি টেলিভিশন, সেটি জুলি পেয়াট-কে যারা তার চলতি মেয়াদকালে পর্যবেক্ষণ করেছেন তাদের কাছে বড় ধরণের কোন বিস্ময় নয়।’
ঐ সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, ‘এটি একটি কুৎসিত চিত্র; আর যদি ঘটনা সত্য হয় তবে শুধু Rideau Hall এর কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য তা শুধু অন্যায্যই নয়, কানাডার আইনেও সেটি অবৈধ।’
টরন্টো স্টার আরো লিখেছে, ‘আমরা এ সমস্ত কিছুর সত্যতা জানি না এবং জুলি পেয়াট এর সমর্থক বা রক্ষকও আছেন। যারা তার সঙ্গে কাজ করেছেন বা ভ্রমণ করেছেন তাদের কেউ কেউ বলেন, তিনি মানুষের সাথে ভাল আচরণ করেন এবং এ তার বিরুদ্ধে যে নিউজ হচ্ছে তা অপপ্রচার ছাড়া কিছুই নয়।’
‘তবে সিবিসি’র প্রতিবেদনটি হাওয়া থেকে আসেনি। আর ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে গভর্নর জেনারেল এর পদে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকেই জুলি পেয়াট আইনী ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন এমন কিছু রিপোর্ট এর কথাও শুনা যায়। আর বিশেষভাবে যা উল্লেখযোগ্য তা হলো, প্রথম বছরেই তিনি তার রাজকর্মের দায়িত্বের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। এ বিষয়ে অসংখ্য রিপোর্ট রয়েছে তার সম্পর্কে।’ টরন্টো স্টার এর সম্পাদকীয়তে এ তথ্যগুলোরও উল্লেখ রয়েছে।
সন্দেহ নেই গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াট এর বিরুদ্ধে Rideau Hall এর কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে অবমাননা ও হয়রানি করার যে অভিযোগগুলো মিডিয়াতে এসেছে তা অতিশয় গুরুতর। কানাডিয়ান প্রেস জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সরকারী কাজ-কর্ম দেখাশুনা করে যে দপ্তর (‘প্রিভি কাউন্সিল’), সেখান থেকেও সম্প্রতি বলা হয়েছে তারা একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য। জুলি পেয়াট-ও বলেছেন তিনি মিডিয়ার এই রিপোর্ট এর ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষণ কমিটিকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন।
আমরা জানি কানাডার গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াট অত্যন্ত মেধাবী একজন ব্যক্তি। গভর্নর জেনারেল এর দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন নভোচারী। শুধু তাই নয়, তিনি একাধারে একজন বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং বৈজ্ঞানিক বিষয়ের সম্প্রচারক। কর্পোরেট পরিচালক হিসাবেও তিনি ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে অবদান রাখার জন্যও তিনি সমাদৃত একজন ব্যক্তি।
সুতরাং তাঁর কাছে কানাডাবাসীরা অনেক কিছু আশা করেন এবং সেই সাথে আশা করেন শোভন আচরণও। আমরা অপেক্ষায় আছি প্রিভি কাউন্সিল জুলি পেয়াট এর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য যে পর্যবেক্ষণ কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে সেই কমিটি কি প্রতিবেদন দেয় তা দেখার জন্য।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ