অনুসন্ধানের অন্ধগলি

নভেম্বর ৩, ২০২০

জালাল কবির

আমরা যারা প্রবাসে বসবাস করছি সবাই কোন না কোন একটি সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি। সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে দৈনন্দিন জীবনকে চালাতে হচ্ছে এক অস্থিরতার ভেতর। মনের আয়নায় একটু পেছন ফেরে তাকালে মনে হয় সবকিছুই যেন স্বপ্নের মত। যে সন্তানকে কিছুদিন আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম আজকে তারা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ছে না হয় শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে চাকুরিতে ব্যস্ত। এখন তাদের সংসারী হবার সময়। কাজেই আমাদের সন্তানাদি যারা বিবাহ উপযুক্ত, তাদেরকে আমরা বিয়ে দিতে পারলেই আমাদের মাথা থেকে চল্লিশ মন ওজনের দুশ্চিন্তাটি লাঘব হয়। কারণ প্রত্যেক পিতা-মাতাই এনিয়ে ভাবেন। এখন নিজের জীবনের চেয়ে সন্তানের জীবনই সবার কাছে অসীম গুরুত্ব বহন করে।

সন্তানেরা বহন করছে মা বাবার রক্তের কণিকা, গভীর স্নেহের এক অদৃশ্য ম্যাগনেট, কোষ কণিকার জীন থেকে জীনের বংশ প্রবাহ। তাই সন্তানের সুখ শান্তি, মা বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে এক পরম শান্তনা। অতএব সন্তানদের বিয়ে দিতে গিয়ে আমাদেরকে অনেক কিছু ভাবতে হয়। বিশেষ করে বিয়ের ব্যাপার নিয়ে ইসলামি আর বাঙালি কালচারকে বিসর্জন দিয়ে উত্তর আমেরিকার কালচার কিংবা খ্রীষ্টিয় কালচারকে আমরা গ্রহণ করতে পারি না। প্রত্যেক জাতির একটি নিজস্ব জীবন ব্যবস্থার মধ্যে তার জীবনকে প্রবাহিত করতে হয়।

বিবাহ উপযুক্ত মেয়ের জন্য এখন পাত্র বা নওশা আর ছেলের জন্য পাত্রী বা কন্যা কোথায় পাবেন ? আমরা যারা তৃতীয় বিশ^ কিংবা গরিব দেশ থেকে এদেশে এসে তিথু হয়েছি এবং ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছি,তখন মনে করি যে আমরা বিশাল এক কাজ করেছি। আনন্দ আর গর্বে আমাদের বুকটা যেন শান্তির ছায়ায় দুলতেই থাকে। কিন্ত এই শিক্ষা; জীবনের জন্য অপরিহার্য হলেও তা কিন্ত সবকিছু নয়। এটা পরিবারে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আর বিলাসিতা আনতে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে। কিন্ত জীবনকে সুন্দর ভাবে চালাতে হলে প্রয়োজন আছে অনেক কিছুর, এরমধ্যে গুরুত্ব বিষয়টি হচ্ছে ভাষার ব্যবহার। অন্যকথায় বলতে পারি গুছিয়ে কথা বলার দক্ষতা। কথা বলার মধ্যেই মানুষের নম্রতা ভদ্রতা বিনয় ধৈর্য ও শান্তনা পাওয়া ও দেওয়ার মত গুণাবলী সমূহ নিহিত থাকে। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা অহরহ এসবের মুখোমুখি হই। ভাষা ইংলিশ হোক আর বাংলা হোক এতে কিছু আসে যায় না। কিন্ত এই ভাষা ব্যবহারের মধ্যে ফুটে উঠে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের চরিত্রের কৃতজ্ঞতা আর অকৃতজ্ঞতা, শ্লীলতা আর অশ্লীলতা, মুরত আর বেমুরতি, অহংকার আর সরলতা, স্বার্থপরতা আর বন্ধুভাবাপন্নতার মৌলিক ইঙ্গিতচিত্র।

মনে রাখা উচিত কোনও ছেলে বা মেয়ে কোনও বিষয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে মাষ্টার্স কিংবা পি.এইচ.ডি করেছে এর মানে এই নয় যে, সে মহাবিদ্যায় মহাজ্ঞানী হয়ে গেছে। সে একটা বিশেষ বিষয়েই দক্ষ বা শিক্ষিত হয়েছে কিন্ত তাই বলে সে যে “সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞানী” হয়ে গেছে এমনটি ভাবার কোনও কারণ নেই। জ্ঞানী হওয়া আর শিক্ষিত হওয়া দুটি পৃথক বিষয়। জ্ঞান সারা জীবনই আহরণ করা যায়, আর শিক্ষা কেবল মাত্র প্রতিষ্ঠানের বাছাই করা কারিকুলাম এর মধ্যে সীমিত। এই কারিকুলামের অনেক ব্যাখ্যা ও বিশালত্ব আছে আর তা হজম করে স্মরন রাখতে পারলেই শিক্ষিত শব্দটির গভীরতা আর গুরুত্ব বেড়ে যায় বহগুণে। তবে চাকুরির বিষয়টিও অনেক ঘাপলার, কেউ উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েও মনের মত চাকুরি পায় না। কেউ কেউ কম ডিগ্রী নিয়েও বেশ ভাল উপার্জন করতে পারে। কেউ কেউ কম ডিগ্রী নিয়ে ও নানাবিধ চাকুরির বিনিময়ে অভিজ্ঞতা অর্জন দ্বারা তর তর করে বেয়েওঠে হয়ে যান অনেক কোম্পানীর গুরুত্বপূর্ণ কর্ণধার। কেউ কেউ চাকুরির জন্য জাম্প দিচ্ছেন এক প্রভিন্স থেকে অন্য প্রভিন্সে না হয় চলে যাচ্ছেন আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়ায় বা চুক্তিতে মিডিল ইষ্টে। আবার চাকুরি ভেদে কত ধরণের ষ্ট্রেস বা মানসিক চাপ আছে, রেসিজমও আছে সেটার কথা অনেকেই স্বীকার করেন না।

আমরা অনেক সময় দেখতে পাই কোনও কোনও ক্ষেত্রে বা ঘটনায় এসব উচ্চশিক্ষিত ডিগ্রীধারী মানুষটি অতি সাধারণ বিষয়েও তার জ্ঞানের বর্হিপ্রকাশ ঘটাতে জানে না কিংবা একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সে হিমশিম খাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে ফ্যামেলি মেইনটেইন করার মত বা সামাজিকতা বজায় রাখার জন্য অনেক কিছইু অনেকে জানে না। তার কথাবার্তা চলাফেরা অনেকটা অশোভন। অনেক ছেলে সন্তান রয়েছে যারা হাইস্কুল শেষ করার পর মেয়ে বন্ধ,ু ধুমপান, এলকোহল আর জুয়া খেলার মত বাজে অভ্যাসে পতিত হয়ে জীবনকে করে তুলে দুর্বিসহ। তদ্রুপ অনেক মেয়ে সন্তান রয়েছে যারা গলাবাজিতে মহা ওস্তাদ। ফ্যাশন, বসন, চ্যাট, ফেইসবুক, আর বন্ধু বান্ধব নিয়েই ওরা মহাব্যস্ত। এসব ছেলেমেয়েরা অভিভাবকদের কোন কথাই শোনে না, নিজ ব্যক্তি স্বাধীনতায় যা ইচ্ছে তা করার মনোভাব নিয়ে চলাফেরা করে। কথায় কথায় ওদের বলতে শোনা যায় আমি এখন মেচ্যুরড/এডাল্ট, আমি বেবী নয়। তারপর ‘আই ডোন্ট কেয়ার’ শব্দটি তাদের জিহবার ডগায় লেগেই থাকে। কলেজ ভার্সিটিতে পড়াশোনার বয়েস, অনেক আবেগী বয়েস। এসময়ে ছাত্রছাত্রীরা কমবেশি প্রচন্ড আবেগপ্রবণতায় ভোগে আর রঙিন স্বপ্ন দেখে। অন্য কালচারের ছেলেমেয়েরা কেবল মাত্র বয়ফ্রেণ্ড আর গার্লফ্রেণ্ড নামের সম্বন্ধটি স্থাপন করে তারা তাদের যৌবনের শারিরীক চাহিদা মিটিয়ে ফেলে। তাদের বিয়ের দরকার পড়ে না।

কিন্ত আমাদের কালচারের ছেলেমেয়েদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত তাই উপযুক্ত সময়ে তাদেরকে বিয়ে দিতে না পারলে আমাদের মগজের ভেতর এক অদৃশ্য অশান্তির পোকা কুট কুট করতেই থাকে। কারণ আমরা কম বেশি এই যৌবনের উত্তেজক সময়টি পার করে এসেছি। যৌন মিলনের মধ্যে রয়েছে সুস্বাস্থ্য রক্ষার অনেক অনেক উপকারি দিক। যার মধ্যে ১০টি উপকারিতার চুড়ান্ত দিক বর্ণনা করেছেন ডাক্তর ও বৈজ্ঞানিকগণ। সুতরাং এটা আর কোনও হাস্যকর কিংবা ফালতু বিষয় নয় যে এটাকে অবহেলা করে এড়িয়ে চলা একটা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করা। এসব বিষয় আজকাল ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব সাইটে গেলেই তা দেখতে ও পড়তে পারা যায়। একারণে আমাদের ধর্মে সন্তানকে উপযুক্ত বয়েসে বিবাহ দেবার জন্য ফরজ হিসেবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রবাসে বসে আমরা যেভাবে পাত্র পাত্রী খুঁজতে গিয়ে নানা মুনীর নানা মত শুনি ও দেখি তারপর অন্ধকারে ঢিল ছুড়ার মত কতজনের দ্বারস্থ হই। ‘মাট্রিমনিয়েল’ নামের নানাবিদ ওয়েব সাইট সহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের আশ্রয় গ্রহণ করি তখনও দেখা যায় নতুন করে একেকটা অসুবিধা বা সময় ক্ষেপনের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। বাস্তবতা আমাকে এটাই বলতে বাধ্য করছে যে আমরা যে মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে পাত্র বা পাত্রী খুঁজ করি এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে আমরা যেন ‘অনুসন্ধানের অন্ধগলি’ দিয়ে হাটছি।

এবারে পুর্ব কথার মতই কিছু কথা পাত্র-পাত্রী নিয়ে বলতে চাইছি। যেমন ধরুন পারিবারিক কিছু অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে একটা দূরদৃষ্টি বিষয় হলো অর্থ সঞ্চয় [সেইভ করা], তারপর পরিবারে কেউ অসুখ বিসুখ হলে সময় দেওয়া, ঘর দোয়ার পরিস্কার রাখা, নিজের কাপড় চোপড় কিংবা ঘর সংসারের অনেক কিছু যত্ন ও পরিপাটী করে রাখার মত অভিজ্ঞতা যদি [ বিবাহ উপযুক্ত ] ছেলেমেয়েদের থাকে তাহলে সংসারের শুরুতে ঝামেলা অনেক কম হবে। এখানকার ছেলেমেয়েরা ভালই বুঝে এখানে নারীপুরুষের সমান অধিকার তাই এই অধিকারের ভিত্তিতে রান্না বান্নার কাজটিও তারা ভাগাভাগি করার জন্য প্রত্যাশা করে। কিন্ত আমাদের ইসলামি ও বাঙালি কালচার এইক্ষেত্রে মেয়েদের উপর দায়িত্বটা পুর্ণমাত্রায় চাপিয়ে দিতে চান। এর বিপরীতে ছেলে বাজার করবে, স্নো বা বরফ সাফ করবে আর ঘর দোয়ার পরিচ্ছন্নতার কাজে কিঞ্চিত হেলপ করবে।

পুঁজিবাদী বা কেপিটালিষ্ট দেশে মানুষকে বেশিমাত্রায় খরচপাতি বা বাজার করার জন্য সঞ্চয় বা সেইভ এর যে প্রথা চালু করেছে তা বাল্যকাল থেকে দেখে শোনে বাচ্চাদের মনে এটাই একটা দৃঢ় বিশ^াস জন্মে যায় যে, ‘বেশি দামের জিনিস কম দামে’ কেনার নাম সেইভ বা সঞ্চয়। কিন্তু এটা যে একটা বড় ফাঁকিবাজি তা এই দেশে জন্ম নেয়া সন্তানদের কে বুঝাবে ? যে কোন দামী ব্র্যান্ডের একটা জিনিস সেল বা কম দামে কিনতে পারলেই তাদের তৃপ্তির সীমা থাকে না। কিন্ত যেকোনও বিপদে আপদে কিংবা কাউকে বড় ধরণের হেলপ করতে গিয়ে যদি কোনও ছেলে বা মেয়ে তার ব্যাংক ব্যালেন্স যথেষ্ট পরিমান সমৃদ্ধ থাকে তবে সেটাই যে বড় সেভ বা বড় সঞ্চয় সেই বিশ^াসটি তাদেরকে বোঝানো যায় না। নানা যুক্তিকে ব্যাখ্যা করে তারা তাদের ক্রেডিট কার্ড দ্বারা সব সমস্যার সমাধান করে দেবে এই মনোভাবের অহংকারটি তাদের ফুটানি করার বড় স্তম্ভ বা পিলার। অথচ শুনতে হাস্যকর হলেও পুঁজিবাদীদের কাছে এক ডলারের সুদ এক সেন্ট অনেক বেশি মুল্যবান। আর এই ব্যবসাই তাবৎ বিশে^র সব ব্যবসাকে ম্লান করে দিয়েছে এবং এর উপর দাঁড়িয়ে আছে ধনবাদী শোষণের জয় জয়কার। কেউ অস্বীকার করতে পারবেন ? পুঁজিবাদী বিশে^ আপনি যখন ঋণ করবেন, সেই ঋণটাও হিসাবে ধরা হয় এটা আপনার আয় বা ইনকাম। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেটার ট্যাক্সও আপনাকে দিতে হবে। এই ঋণের টাকা আপনি কীভাবে পরিশোধ করবেন সেটা নিয়ে ঋণদাতা ব্যতীত কেউ জানতে চাইবে না। দুঃখিত যে এক প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অন্য প্রসঙ্গে চলে আসার জন্য।

যে কথা বলছিলাম তা হলো পাত্র-পাত্রী চয়ন কিংবা সন্তান বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি। এখানে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা কার বাপ দাদা কিংবা ভাইবোন কে কতটা ডিগ্রী নিয়েছেন, কার কত সম্পদ আছে, সেটা নিয়ে তাদের কোনও আগ্রহ নেই। তাদের কাছে পাত্র কিংবা পাত্রীর ব্যক্তিত্ব* পেশা* শিক্ষা* এবং হবি* বা সখ এই চারটা বিষয়ই মুখ্য। ওরা শুধু ব্যক্তি স্বার্থের দিকটা ছাড়া অন্য কিছু বোঝতে চায় না। মা বাবার পেশা কী? কত টাকা ইনকাম করেন? ভাই বোন কতটুকু উচ্চ শিক্ষিত? কে কি করে ওসব তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় বিষয়। তাদের সোজা সাফটা কথা হলো ওসব দিয়ে আমার কি হবে ? কেবল লাইফ পার্টনারের ঐ উপরে উল্লিখিত চারটি বিষয়ই তাদের কাছে ফরজ বা অত্যাবশ্যক, বাদবাকি সব বিষয়গুলো নফল। আমরা যারা অভিভাবক বা মাতাপিতা আমাদের জীবনের বহুমুখি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই ভবিষ্যতের সুচিন্তাকে তাদের ব্যাপারে কাজে লাগানোর সুযোগটা যে নেই বা অবহেলিত এই শুন্যতার জন্য আমরা হা পিত্যেশ করে মরি।

অনেক পাত্রী আছে তারা কিছুতেই পাত্রের মা বাবার সাথে একই বাড়িতে থাকতে একটুও রাজি নয়। শ^শুর যেমন তেমন, শাশুড়ি ঠিক যেন তাদের কাছে এক বিশাল ডাইনি। তারা শাশুড়িকে এক বিরাট প্রব্লেম মনে করে। আমাদের বাঙালি সমাজের শাশুড়িগণ সন্তানের কল্যাণের জন্য ‘অপচয় আর নোংরামী’ দেখতে পারেন না বলেই তারা পুত্রবধু কে হয়তো উপদেশ দেন। কীভাবে ইলেকট্রিসিটির বিল, পানির বিল ইত্যাদি কম হবে ? তার প্রতি নজর রাখতে অনুরোধ করেন। অনুরোধ করেন দামী মোবাইল নিয়ে শিশুরা যেন খেলা না করে কিংবা অতি দামী সোফা সেটটি শিশুরা লাফাতে লাফাতে স্প্রিং ও চামড়ার অবস্থা নাজেহাল না করে। জামানার অজুহাতে বা হালতে বউমা যদি অঢেল কাপড় চোপড় কেনে তবে কিনুক অসুবিধা নেই কিন্ত সেই গুলোর সদ্ব্যবহার যদি না হয় আর তা কেবল লোক দেখানো বিষয় হয়, তবে তা নিয়ে কথা উঠবেই। আর বিশেষ করে পাকঘর বা কিচেন যদি অপরিচ্ছন্ন থাকে, সময় আর বাচ্চা সন্তানের দোহাই দিয়ে প্রতিদিন এটো বাসন কুশন ফেলে রাখা হয়, গার্বেজ গুলো ঠিকমত ও সময়মত সরানো না হয়, নিজের বিছানা সোফা ইত্যাদি ঘর সংসারের জিনিস নোংরা থাকে তবে একজন শ^শুড় বা শাশুড়ি তা নিয়ে কথা বলতে পারেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে [মনে রাখবেন আমি অধিকাংশের কথা বলছি, ঢালাও ভাবে সবার কথা বলছি না ] দেখা গেছে যত সুন্দর করে অনুরোধ করা হোক না কেন নব বধুরা সেটাকে বিশাল অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর বিষয় হিসেবে মনে করেন। নিজের বাচ্চারা যেমন ইচ্ছে খেলবে সোফা আর দামী ফোন এরা বড় হলে শত শত কিনবে তাই বলে বাচ্চাদের উপর খবরদারি, বাচ্চাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এটা যেন তাদের বুকে শেল বিধে যাওয়ার মত বিষয়। অতএব এসবের জের ধরে বিষয়টিকে অপবাদ, মনোমালিন্যতা ও নোংরা পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাদের মনে কোন শান্তি নেই। তখন স্বামীর কাছে নানাবিধ মিথ্যা ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মাতাপিতাকে দুশমনে পরিণত করা

হয়। এসব বাস্তবায়িত করার জন্য যত প্রকার কৌশল কুটচাল ও নিজের মা বাবার কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে চোখের জল ফেলে যেভাবে তিলকে তাল করে সব বর্ণনা করা হয়, তা দেখে শুনে একদম অক্ষরজ্ঞানহীন মা বাবাও রেগে আগুন হয়ে যান। তারপর তারা এমন সংসারে থুতু দিয়ে চলে আসার পরামর্শ দেন। এখানকার যুবক ছেলেরা যেমন সেনসেটিভ বা সংবেদনশীল তার চেয়ে মেয়েরা অধিক গুণে সেনসেটিভ। তাদের আরেকটি বড় হাতিয়ার আছে তা হলো সর্বত্র এসব কথা প্রচার করে দেওয়া। যাতে স্বামী ও স্বামীর মা বাবা’র ইজ্জতের চোদ্দোগাষ্ঠী উজাড় হয়। যে বউটি এত কিছু করছে অথচ স্বামী নামের প্রফেশনাল মানুষটি কিছুই বলেন না। এর পেছনে কারণ হলো তিনি স্ত্রীকে অসীম ভালবাসেন, তাই স্ত্রীকে কিছু বললেই স্ত্রী আঘাত পেয়ে চোখের জল ফেলবে রাতের অভিসারটি হয়ে যাবে বিশৃঙ্খল। অতএব তিনি স্ত্রীর কোনও যুক্তিকেই আর খাটো করে দেখতে চান না। শুধু সমাজ ও মা বাবার ইজ্জতের খাতিরে ভেজা বেড়ালের মত মিন মিন করে কিছু একটা বলে দায়িত্ব পালন করবেন। সন্তানের সখ করে কেনা কোন দ্রব্য কিংবা জিনিস নষ্ট হোক সেটা পৃথিবীর কোন মা-বাবাই চায় না। তারা জীবন অভিজ্ঞতা থেকে জানেন রোজগার কত কষ্টের। অথচ যুবতী পুত্রবধুদের কেউ কেউ শাশুড়ির মুখের উপর বলে দেবে, ‘কে না রোজগার করে ? কে না কষ্ট করে ? সবাই তো করে ? এর জন্য এত দরদ দেখাবার কি আছে ?’

আমার কথাগুলো পড়ে দয়া করে কেউ উত্তেজিত হবেন না, কারণ এটাই বাস্তবতা। দেখা গেছে যেসব মেয়েরা এসব করে তারা শুধু স্বামীকে নিয়ে আলাদা হয়ে অন্যত্র চলে গেলেও দু’চার বছরের মধ্যে ডিভোর্স এর খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলে। আমরা তখন স্বভাবতই প্রশ্ন করতে পারি ঐসব কুটনৈতিক মাথাওয়ালা মেয়েদের কাছে বা পাত্রীদের কাছে যারা তালাক বা ডিভোর্স নিয়েছেন। এতদিন শ^শুর শাশুড়ি বা ননদ নিয়ে কমপ্লেইন ছিল, তারপর শুধু স্বামীকে নিয়েও কেন সংসার করতে পারলেন না? এইটুকু ধৈর্যগুণ যদি না থাকে তবে বাকী জীবন তো তোমার এভাবেই উচ্ছিষ্ট হবে। আমরা ভালই জানি সব মেয়ে এরকম নয়, অনেক মেয়ে বা পাত্রীরা আছে তারা এসব হাবিজাবি কিছু বুঝতেই পারে না। এত প্যাঁচ বুঝে না, সবাইকে নিয়ে হাসি খুশি থাকতে চায়। সংসারে কাজের চাপ একটু বাড়তি হলে তারা স্বামীকে বা শ^াশুড়িকে বিনয়ের সঙ্গে তা প্রকাশ করে, এতে করে সবাই স্বত:স্ফুর্ত ভাবে খুশি মনে সাহায্য করে এবং আমি মনে করি এটাই বুদ্ধির পরিচয়। রাগ, অহংকার, ধৈর্য্যহীনতা, কোন দিনও পরিবারে শান্তি আনয়ন করতে পারে না। মুখের মিষ্ট ভাষা পারিবারিক সমস্যাকে সব সময় দুরে ঠেলে দেয় এই বোধটুকু সবারই থাকা উচিত।

যারা শ^শুর শ^াশুড়িকে একটু আদর, একটু শ্রদ্ধা বা তোয়াজ করে চলে তারা যে এই বিদেশ বিভুইয়ে কত সাহায্য ও দোয়া পেয়ে থাকে তা একটু গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে অবাক হতে হয়। এই সমাজ এমন এক সমাজ কেউ কাউকে দু দশ মিনিট সময় দেবার ফুরসত বা সুযোগ নেই। অথচ যৌথ পরিবারে সন্তান ও নাতিপুতিদের মঙ্গলের জন্য শ^শুর শাশুড়ি কত অবদান রাখেন তা নিজে বুড়ো না হওয়া পর্যন্ত [বা দাদা দাদী কিংবা নানা নানীর পর্যায়ে না পৌছা পর্যন্ত ] সেটা অনুভব করা ও এর বাস্তবতা বুঝা খুবই কঠিন। অবশ্য সব শ^শুর বা শাশুড়ি যে ধোয়া তুলসী পাতা তা নয়। তাদেরও অনেকের অনেক প্রকার হিংসা এবং কুটবুদ্ধি থাকে। এসব শ^শুর শাশুড়িরা দেশের পরিবেশ থেকে এখানে এসে খাপ খাওয়াতে পারেন না। তারা মুখে না বললেও দারুণ হতাশায় ভোগেন। বুদ্ধিমান সন্তানদের উচিত এসব মা বাবাকে এখানে স্থায়ীভাবে না রেখে দেশের মাটিতেই রাখা। প্রয়োজনে ভাল দেখে বেশি বেতন দিয়ে সিরিয়াস গৃহকর্মী রাখা। যাতে মা বাবার আদর যত্নের তেমন একটা ত্রুটি না হয়। কোন মা বাবাই বিদেশের মাটিতে মৃত্যু হোক এটা তারা কখনও চান না। তারা চান নিজ দেশের মাটিতে তাদের দাফন কাফন। আমার কথা যদি বিশ^াস না হয় তাহলে আজই সিরিয়াস ভাবে মা বাবাকে এখনই জিজ্ঞাসা করুন। মা বাবা হয়তো ভদ্রতা বদান্যতা ও ছেলে বা মেয়ের মন রক্ষার জন্য বলবেন ‘তোদের ছেড়ে আমরা থাকি কেমনে?’ তোমরা ছাড়া আমাদের জীবনে কি আছে ? প্রাণটা যে আই টাই করে। অনেকে মা বাবার বয়স্ক ভাতা বা পেনশনের জন্য মা বাবাকে এখানে ধরে রাখতে চান, দেশের নানাবিধ সমস্যা ও অজুহাত উত্থাপন করেন। অনেকে আবার এখানকার ফ্রি চিকিৎসার সুবিধার জন্য মা বাবাকে কিছুতেই দেশে রাখতে চান না। বিষয়গুলি এভাবেই বহুমুখি এবং বহুধরণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। সুতরাং আমি এখানে কোন রেজিষ্টার্ড উপদেশ দাতা নই। শুধু বাস্তব বিষয়টি নিয়ে এর গুরুত্ব অনুধাবন করার নিমিত্তেই আমার এই কথাগুলো বলা।

পাত্র পাত্রীকে সময় নিয়ে যাচাই করবে, কিংবা পাত্রী পাত্রকে সময় নিয়ে যাচাই করবে এই অলিখিত মনস্তাত্বিক বিধানটি প্রয়োগ করার এত সময় কই? তবুও উচিত তাদের উভয়কে এই সুযোগ দেওয়া। আমরা যারা পাত্র-পাত্রীর মা বাবা হিসাবে জীবিত আছি, আমরা অনেকেই এটাকে একটা বিরাট অপমান কিংবা অযৌক্তিক হিসাবে উড়িয়ে দিতে চাই। ফোন, ফেইসবুক ইমেইল বিনিময়ের কথা শুনলেই ক্ষেপে উঠি। পাত্র ব্যাটা তো কয়দিন দেখা শোনা, আলাপ চারিতা, ফোন, চ্যাট কিংবা ঘুরাঘুরি করে একদিন এসে বলবে এই মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি। এতে মেয়েটার ইজ্জত চলে যাবে না ? পুরুষের ইজ্জত নিয়ে কেউ কেয়ার করে না। কিন্ত একটা মেয়েকে আরেকজন অপছন্দ করেছে এই বার্তা শোনা মাত্রই মগজ বিগড়ে যায় অনেকেরই। অথচ এই মেয়েই কলেজ ভার্সিটিতে গিয়ে সহপাঠীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। শপিং করতে যাচ্ছে, আচার অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। কাজ কর্মের পেশায় চলতে ফিরতে কত মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত হচ্ছে, হাসি তামাশা হচ্ছে এতে করে কোনও ইজ্জতই যাচ্ছে না, যাবেও না। কিন্তু পাত্র-পাত্রীর কথা বলে দেখা সাক্ষাত হলেই বিপদটা যেন একদম ঘাড়ের উপর চলে আসে। তৃতীয় পক্ষের কেউ দূতিয়ালী করলে তার উপর ও চলে আসে নানা দোষা কিংবা অপবাদ। যে দূতিয়ালী বা ঘটকের কিঞ্চিত ভুমিকা পালন করলেন তিনিও গাল মুখ ফুলিয়ে বলবেন, ‘আমার ইজ্জত তো আপনারা রাখলেন না’। পাঠক ভাই বোনদের কাছে আমার শুধু একটি ক্ষুদ্র প্রশ্ন, সব বিষয়ে যদি সবাই এত সেনসিটিভ হয়ে যাই, এত সম্মান খুঁজানির অলিগলি খুঁজতে যাই, তাহলে ছেলে-মেয়েদের আমরা কিভাবে বিয়ে দেব? এখানে ছেলে মেয়েদের অনেক স্বীকৃত রাইট বা অধিকার আছে, তাইবলে তাদেরকে শুধু ভজো! ভজো! হরি ভজো! করলে কি আর চলবে ? অথচ আমরা চোখের সামানেই দেখতে পাচ্ছি এই রাইট আর স্বাধীনতার নামে কত ছেলেমেয়ে কত ভাবে যে নষ্ট হচ্ছে তা কি আর চাপা দিয়ে রাখা যায় ?

অনেক যায়গায় বিয়ের আলাপ আলোচনা করতে গিয়ে দেখা যায় পাত্রীর বাবা কিংবা পাত্রের বাবা তার চৌদ্দগোষ্ঠীর কে কোথায় প্রতিষ্ঠিত, কত বড় এডমিনিস্ট্রেটরের পদ বাগিয়ে বসে আছেন, কার প্রতাপ ও দৌরাত্ম কতটুকু এসব বর্ণনা দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলেন। আজকালকার যুগে এসব উচ্চ ডিগ্রীধারীদের কিংবা আমলা ও পেশাজীবীদের এবং রাজনীতিবিদদের অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে লুটপাট দুর্নীতি ও দুই নম্বরী করে যাচ্ছেন নির্লজ্জভাবে। তা তো আর মানুষের অজানা নয়। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো পর্যন্ত তাদের দুর্নীতির কারণে আজকে বেহাল দশায় পতিত হয়ে আছে। এই দেশটাকে এই সমাজটাকে ধ্বংসের শেষ সীমানার দুর্গন্ধময় নর্দমায় টেনে এনেছে এসব লোভী, অত্যাচারি, দুর্নীতিবাজ দুই নম্বরী শিক্ষিত ও ডিগ্রীধারী পেশাজীবীর দায় দায়িত্বে থাকা পাপীগুলো। সুতরাং এই পাপীদের বংশ বুনিয়াদের কারো সাথে কোনও সৎ ও বিবেকবান মানুষেরা কোনদিনও আত্মীয়তা করতে চাইবে না। এইসব হামবড়া অহংকারি রক্ত-শোষকদের আমরা মন থেকে ঘৃণা করে থুতু ছিটাই। সুতরাং এদের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা আত্মীয়তা করতে চান তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা এই চ্যাপটারটি বন্ধ রেখে ছেলেমেয়ে বিয়ে দেওয়ার কথা মাথায় রাখবেন। এদেশে নতুন প্রজন্মরা সবাই কাজ করে খাওয়াকে জীবনের স্বার্থকতা [লাইফের এনজয় ] মনে করে। আপনার ভাই, বাপ, চাচা, কত বড় ‘শমসের বিন মুসা’ সেটা কেউ কেয়ার করে না।

জালাল কবির

টরন্টো