প্রবাসে পরহিতকর্ম -৬১
ইউরোপের পথে পথে
আগস্ট ১৯, ২০১৮
রীনা গুলশান
পৃথিবীর যেখানেই যান না দ্রষ্টব্য স্থান গুলো দেখতে গেলে আপনাকে হাটতে হবে। এতে কোন সন্দেহ নাই। এমনিতেই আমি কখনোই খুব একটা হাটতে ভালবাসি না। আর এখন তো ভাঙ্গা পা। দুই পাশে দুই লোহার ডান্ডা। প্যালেস দেখেই অবস্থা খারাপ। এত বড় একটা ক্যাসল, কে তোদের বানাতে বলেছিল, বাপু? এখন আমাদের হাটতে হাটতে জান শেষ।
যা হোক, বহুত কষ্টে দেখা দেখি শেষ করে, বড় বড় না ফেরার দেশে চলে যাওয়া লাট বাহাদুর, রাজা মহারাজাদের সালাম ঠুকে বের হলাম। এরকম একটা প্যালেস দেখলেই একদিনের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের তো একদিনে একটা দেখলে হবে না। আমরা হলাম টুরিস্ট। আমাদের হাতে মাত্র ৫/৬ দিন টাইম, এর মধ্যে লন্ডনের বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থানগুলো দেখতে হবে। তারমধ্যে একদিন আবার গোটা দিনটাই ব্রিটিশ মিউজিয়ামের জন্য রেখে দিয়েছি। আজকের মধ্যেই সেন্টারের সমস্তটাই দেখতে হবে। রায়হানের কাটখোট্টা আটিমেটাম। আর বাবুর মিষ্টি করে বলা অলটিমেটাম। দুটোর মানেই এক।
অতএব, এর পরে হাটি হাটি করে “Hay Galleria” উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথে যেতে যেতে গাইড বাবা মোটামুটি এর বৃত্তান্ত বলে যেতে লাগলো। ‘হে গ্যালারিয়া’ এটা লন্ডনের উপকণ্ঠে টুলি স্ট্রিটের (Tooly St) অবস্থিত। এই গ্যালারিতে যেতে হলে টিকিট কেটে যেতে হয়। এটারও একই ব্যবস্থা। ভালো হয় যদি আপনি অনলাইনে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখেন। বিল্ডিংটা অনেকটা রাউন্ড প্যাটার্নে তৈরী। মেইন রাস্তার উপর। যদিও এসব জায়গা খুবই ছিমছাম। পরিচ্ছন্ন। এখানে রীতিমত গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু বেশ আস্তে গাড়ি চলছে। কারণ গাদা গাদা টুরিস্ট। যার জন্য এক্সট্রা ট্রাফিক সিকিউরিটি কাজ করছে রাতদিন। বেশ দ্রুত রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাওয়া যায়।
ভেতরটা অনেকটা আর্ট গ্যালারির মত। আসলে গোটা ইউরোপটাই দেখলাম আর্টের খুব জয় জয়াকার। এখানেও ৩৮২ টা ফটো আছে। আর এর রিভিউ আছে ২৯৫টা। এই সব ছবি দেখতে দেখতে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তখন আর কিছু দেখতে ইচ্ছে করে না। যদিও এর মধ্যে একটা শপিং মলও আছে। প্রচুর সংখ্যক রেস্টুরেন্টও আছে। সারা পৃথিবীতে এখন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা জমজমাট। অন্যান্য ব্যবসায় যেমন মন্দা চলছে। সেই তুলনায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা নয়। কারণ ইচ্ছা না হলেও ক্ষুধা লাগলে মানুষকে খেতে হবেই। ‘হে গ্যালারিয়া’ তে বহু বছর আগে রয়্যালরাই থাকতো। এখন তাদের বেশ কিছু আত্মীয় স্বজনরা থাকে। আবার প্রচুর এপার্টমেন্ট আছে, যেগুলোতে এদের লেভেলের লোকজনই থাকে। আবার বেশ কিছু ওয়্যার হাউজও আছে।
‘হো গ্যালারিয়া’ থেমস নদীর দক্ষিণে অবস্থিত। এগুলি তাই ব্রীজের ধারেকাছেই অবস্থিত। এখানে খুবই নামকরা ‘এন্টিকস’ মার্কেটও আছে। এগুলি খুবই এক্সপেন্সিভ। যাদের প্রচুর টাকা আছে তারা এর মধ্যে প্রবেশ করেন, খালি হাতে কেউ বের হবেন না। তবে আমরা নৈব নৈব চ্। দেখেই চক্ষু সার্থক করতে হলো।
ব্রিজ বেন (ক্লক টাওয়ার), ব্রীজের গা ঘেষেই অবস্থিত। তবে এটা গত তিন বছর ধরেই ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ এ আছে। লোকাল লোকেরা বললো। শ্যাওলা শ্যাওলা সবুজ রং। যেহেতু এটা লন্ডনের সেন্টারে অবস্থিত। এবং টাওয়ার অব লন্ডন এবং টাওয়ার অব ব্রীজের গা ঘেষে তাই আমার মনে হয়, এটা দ্রুত ঠিক করা উচিৎ। অনেকে বললো, এটা নাকি খুব জোরে সাউন্ড হতো। তবে এখন কোন সাউন্ড নাই। শুধু ঘড়িটাই দেখতে হবে।
ওয়েস্ট মিনিস্টার প্লেসটা, এটার সামনের দিকটাও আন্ডার কন্ট্রাকশন অবস্থায় আছে। কিন্তু এটা অনেক বড় জায়গা। আমরা এবারে এগুলো দেখবার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। (চলবে)
রীনা গুলশান
টরন্টো
gulshanararina@gmail.com