কানাডায় নামে কিবা আসে যায়?
অক্টোবর ৯, ২০১৯
খুরশিদ আলম
প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত বিয়োগান্তক নাটক ‘রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট’ এর একটি সংলাপ এরকম – “A rose by any other name would smell as sweet”. অর্থাৎ গোলাপকে আমরা অন্য নামে ডাকলেও গোলাপের সুবাস তো একই থেকে যাবে। গোলাপ কে যদি বকুল বলি বা গন্ধরাজ বলি কিংবা অন্য কোন নামেও যদি ডাকি তা হলেও গোলাপ গোলাপই থেকে যাবে তার চরিত্রে ও বৈশিষ্ট্যে।
বাংলায়ও একটি প্রবাদ আছে এই বলে যে, ‘নামে কিবা আসে যায়?’ আসলেই তো, নামে কিবা আসে যায়? কারো নাম বদল করলে কি তার চরিত্র বদলে যাবে? না তার ইতিহাস পাল্টে যাবে? কিংবা বদলে যাবে তার বদনখানি? এর কোনটাই হবে না। কারো নাম কুমার থেকে করিম করা হলে কি তার ধর্ম পাল্টে যাবে? তাও যাবে না। যদি না সে ধর্মান্তরিত হয়।
কিন্তু কৌতুহলের বিষয় হলো, কানাডায় ‘নামে কিবা আসে যায়’ এ কথা বলার সুযোগ নেই শতভাগ। এখানে নামে অনেক কিছুই আসে যায়। নাম বদল করে চাকরী পাওয়া যায়, এমনকি আয় উপার্জনও বৃদ্ধি করা যায়!
শুনেছি কানাডায় একসময় নাম বদল করে একাধিক নামে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। জনাকয়েক বাঙ্গালীও নাকি এই কর্ম করেছেন অতীতে। তারা এক প্রভিন্সে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ের কাগজপত্র দাখিল করার কিছুদিন পর তারা চলে যেতেন অন্য কোন প্রভিন্সে। তারপর সেখানে তারা নাম বদল করে আরেক দফা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতেন। উদ্দেশ্য ছিল দুই জায়গা থেকে ওয়েলফেয়ার মানি কালেক্ট করা।
এগুলো অবশ্য বহু বছর আগের ঘটনা। তখন কম্পিউটার যুগ ছিল না। বা থাকলেও সেটি ছিল কম্পিউটারের প্রাথমিক যুগ। ফলে চট করে কারো সম্পর্কে তথ্য যোগার করা ছিল কঠিন। আর সেই সুযোগে কেউ কেউ এ কাজগুলো করতেন। তবে এখন যুগ পাল্টেছে। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট এর বদৌলতে তথ্য গোপন করা এখন মোটেও সহজ কাজ নয়।
আর শুধু নাম নয়, অতীতে বয়সও পাল্টানো হতো। পাল্টানো হতো সম্পর্কও। অর্থাৎ বোনকে স্ত্রী হিসাবে বা ভাইকে স্বামী হিসাবে স্পন্সর করার ঘটনাও নাকি ঘটেছে অতীতে! এগুলোর পিছনে নানাবিধ কারণ থাকতো। কিন্তু পর্যায়ক্রমে বিষয়গুলো ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর এখন যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। সিকিউরিটি চেক করা হয় অত্যন্ত্য গুরুত্ব সহকারে।
তবে ইমিগ্রেন্টদের মধ্য নাম পরিবর্তনের অন্য একটি কারণও আছে। আর এই নাম পরিবর্তন এর সঙ্গে জালিয়াতির কোন সম্পর্ক নেই। এটি করা হচ্ছে মূলত চাকরীর বাজারে বিদ্যমান কিছু বাধা অতিক্রম করার জন্য। এই বাধাগুলোর মধ্যে আছে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যমূলক আচরণ। ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে যারা শ্বেতাঙ্গ নন, অর্থাৎ যাদের গায়ের রঙ বাদামী বা কালো এবং যাদের নামের মধ্যে খ্রীষ্টীয় গন্ধ নেই তারা প্রায়ই বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন চাকরী পেতে গিয়ে। চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠান বা ঐ প্রতিষ্ঠানের হায়ারিং অথরিটি যদি বর্ণবাদে বিশ্বাসী হন, তারা যদি সুপরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগেন বা হোয়াইট সুপ্রীমেসী আদর্শে বিশ্বাসী হন তবে নিশ্চিতভাবেই তারা কোন অশ্বেতাঙ্গ আবেদনকারীর আবেদনের প্রতি সাড়া দিবেন না। আবেদনপত্রটির স্থান হবে রিসাইকেল বিনে।
এই পরিস্থিতি কানাডায় নতুন নয়। পাশ্চাতের অন্যান্য দেশের মত কানাডায়ও এশিয়ান ও আফ্রিকান দেশগুলো থেকে আসা ইমিগ্রেন্টদেরকে এই সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। দেখা গেছে তারা যে পদের জন্য আবেদন করেন সে পদে তাদের যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা কি আছে তার মূল্যায়ন করা হয় না। প্রথমেই দেখা হয় আবেদনকারীর নাম। নামে যদি মনে হয় আবেদনকারীর ব্যাকগ্রাউন্ড এশিয়ান বা আফ্রিকান অথবা মুসলিম তাহলে চাকুরীর ইন্টারভিওতে তার ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ৯/১১ এর পর মুসলিম আবেদনকারীরা অধিকমাত্রায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন চাকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে।
‘জার্নাল অব লেবার ইকনমিকস’ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে যারা নাম পরিবর্তন করেন তাদের আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটির মাহমুদ আরাই এবং পিটার স্কোগম্যান এ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। গবেষণায় তারা এমন ইমিগ্রেন্টদের বেছে নেন যারা নাম পরিবর্তন করে পাশ্চাত্য ধাচের নাম গ্রহণ করেছেন। গবেষক দুজন বিশেষভাবে খোঁজার চেষ্টা করেন, এই ইমিগ্রেন্টদের আয় নাম পরিবর্তনের আগে কি ছিল আর নাম পরিবর্তনের পর সেই আয় কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নাম পরিবর্তনের পর এই ইমিগ্রেন্টদের আয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এমন নজিরও তারা দেখতে পান। এতে করে গবেষকগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইমিগ্রেন্টরা একটি দেশে কতটা গ্রহণযোগ্য হবেন বা তাদের প্রতি কি রকম আচরণ করা হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে তাদের নামের উপর। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে genealogyintime.com.
অন্যদিকে theatlantic.com এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯০০ সাল থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে যারা ইমিগ্রেন্ট হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় শতকরা ৭৭ জনই নাম পরিবর্তন করে আমেরিকান নাম রেখেছিলেন। আর এটি তারা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আসার এক বছরের মাথায়। এই প্রথাটি তখন ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় ছিল। আর এর পিছনে অর্থনৈতিক কারণটা ছিল মুখ্য।
গবেষকরা আরো দেখতে পেয়েছেন, ইউরোপের ফ্রান্স এ ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে জন্ম নেয়া অর্ধেকেরও বেশী আরবীয় বংশোদ্ভ‚ত শিশুর এমন নাম রাখা হয়েছে যার সঙ্গে আরব সংস্কৃতির কোন মিল নেই। এর পিছনেও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে বলে গবেষকগণ মনে করছেন।
২০০৯ সালে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানী গুইলারমিনা জেসো নিউ ইর্ক টাইমসকে বলেন, সাধারণভাবে ইমিগ্রেন্টরা তাদের সন্তানদের নামকরণ করেন তিনটি ধাপে। এর মধ্যে একটি হলো তাদের নিজস্ব ভাষা ও কৃষ্টির সঙ্গে মিল রেখে ছেলে-মেয়েদের নাম রাখা, দ্বিতীয়টি হলো ইউনিভার্সাল বা সর্বজনীন নাম রাখা এবং তৃতীয়টি হলো তারা যে দেশে ইমিগ্রেন্ট হয়ে আসেন সে দেশের ভাষা ও কৃষ্টির সঙ্গে মিল রেখে ছেলে-মেয়েদের নাম রাখা।
তবে বেশীর ভাগ এশিয় ইমিগ্রেন্ট তাদের নাম পরিবর্তন করেন না। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে আছে ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদির প্রতি আনুগত্য। কিন্তু যারা নাম পরিবর্তন করেন তারা প্রধানত চাকরী পাওয়ার কারণেই করেন। আরেক দল আছেন যারা মনে করেন স্থানীয় কালচারের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানদের নাম রাখা হলে অথবা নিজেদের নাম পরিবর্তন করে নিলে মূলধারার সঙ্গে বেশী মাত্রায় সম্পৃক্ত হওয়া যাবে।
অতীতে অবশ্য কানাডায় অশ্বেতাঙ্গদের নাম জোর করেই পরিবর্তন করা হতো। আর এর প্রধান শিকার হয়েছিলেন এখানকার আদিবাসীরা। কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্যার জন ম্যাকডোনাল্ড তার শাসনামলে আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে আদিবাসী পরিবারের ছেলে-মেয়েদের ধরে আনা হতো জোর করে। ঐ আবাসিক স্কুলগুলোতে প্রায় একশত বছরেরও বেশী সময় ধরে দেড় লাখের মত আদিবাসী শিশুর উপর চালানো হয়েছিল অকথ্য নির্যাতন। কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন ইতিপূর্বে বলেছে, “শিশুদের প্রতি অবহেলা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে”। কমিশন আরো বলেছে, ওই স্কুল কর্মসূচি ছিলো “সাংস্কৃতিক গণহত্যা”র সামিল। ওখানে খ্রীষ্ট ধর্মের সঙ্গে মিল রেখে আদিবাসী শিশুদের নামও পরিবর্তন করা হতো জোর করে। আমেরিকায়ও জোর করে আদিবাসীদের নাম পরিবর্তন করা হতো ঊনবিংশ শতকের দিকে। আদিবাসীদের ‘আধুনিক’ করার জন্য সরকারী উদ্যোগেই এই কাজটি করা হতো!
আজকে হয়তো সেই অতীত দিনের মত জোর করে কারো নাম পরিবর্তনের সংস্কৃতি নেই কানাডায় বা আমেরিকায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নাম পরিবর্তনের এই চাপটি ভিন্ন পন্থায় রয়েই গেছে। এই চাপ ইমিগ্রেন্টদের উপর নানান কৌশলে প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর এর অন্যতম প্রমাণ হলো, বিভিন্ন এথনিক গোষ্ঠির লোকদের চাকরীতে নিয়োগ না দেয়ার প্রবণতা। আবেদনপত্রে প্রার্থীর নাম দেখে কোন নিয়োগদাতার যদি ধারণা হয় যে এই ব্যক্তি খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী নন বা তিনি শ্বেতাঙ্গদের কেউ নন তখন এক ধরণের পক্ষপাতিত্ব তার মধ্যে কাজ করে যেটি আগে থেকেই তার মনের গভীরে গ্রোথিত হয়ে ছিল। অর্থাৎ বর্ণবাদ। বর্ণবাদী মনোভাব ঐ নিয়োগদাতার মনের মধ্যে কোন না কোন ভাবে আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল।
তবে কানাডাসহ পাশ্চ্যতের সব নিয়োগদাতাই বর্ণবাদী সে কথা বলা যাবে না। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মলিকগণ জানেন বর্তমান বিশ্বে কারো গায়ের রঙ বা ধর্ম বিশ্বাস দেখে নিয়োগ দিতে গেলে ব্যবসা লাটে উঠবে। কারণ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে লেবার ফোর্স এর একটা বড় অংশই এখন ইমিগ্রেন্ট। আর এই ইমিগ্রেন্টদের, বিশেষ করে এশিয় ইমিগ্রেন্টদের অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষিত এবং তাদের যথেষ্ট কর্ম দক্ষতা রয়েছে যেটা হোমগ্রোন শ্বেতাঙ্গ কর্মীদের মধ্যে কম। সুতরাং শিল্প মালিকদের বর্ণবাদী হওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে। আর যদি কেউ বর্ণবাদী হনও, তবু তা ব্যবসার স্বার্থে তা গোপন রাখেন।
ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো ও রায়ারসন ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণা তথ্যে দেখা গেছে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এথনিক গ্রæপের সদস্যদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ হয়ে থাকে বেশী। বৃহদাকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর মাত্রা কম। এর কারণ, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রফেশনাল হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট থাকে এবং চাকরীর আবেদনকারীদেরকে নিয়োগদানের অধিকতর সুযোগ থাকে। গবেষণা তথ্যে দেখা গেছে ৫ শত বা তারো বেশী কর্মী আছে এমন প্রতিষ্ঠানসমূহে এথনিক গ্রæপের (বিশেষত চাইনিজ, ভারতীয় বা পাকিস্তানী) আবেদনকারীদেরকে চাকরীর ইন্টারভিওতে ডাকার সময় পক্ষপতিত্ব করা হয়েছে। অন্যদিকে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে দ্বিগুণ মাত্রায়। এই গবেষণা কর্মে নিয়োজিত ছিলেন রুপা বেনার্জি, জেফরী জি. রিটজ এবং ফিল অরিওপলাস।
cheatsheet.com এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার জব মার্কেটে এশিয়ান নামধারী (বিশেষত চাইনিজ) কোন প্রার্থীকে স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ কোন প্রার্থীর তুলনায় অন্তত ৬৮% বেশী আবেদনপত্র জমা দিতে হবে যদি তিনি চাকরীর ইন্টারভিওতে ডাক পেতে চান। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডাটা অনুযায়ী আরো দেখা গেছে, একজন আদিবাসীকে চাকরীর ইন্টারভিওতে ডাক পেতে হলে শ্বেতাঙ্গ কোন প্রার্থীর তুলনায় ৩৫% বেশী আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। একজন ইটালিয়ান প্রার্থীকে জমা দিতে হবে ১২% বেশী আবেদনপত্র। আর একজন আরবীয় প্রার্থীকে জমা দিতে হবে ৬৪% বেশী আবেদন পত্র যদি তিনি ইন্টারভিওতে ডাক পেতে চান।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে আফ্রিকান নামযুক্ত কোন ব্যক্তি চাকরীর জন্য আবেদন করলে ইন্টারভিওতে ডাক পাবার সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অনেক কম। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে আমেরিকার বোস্টন ও সিকাগোতে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে শ্বেতাঙ্গ নামধারী ব্যক্তিগণ চাকরীর ইন্টারভিওতে ৫০% বেশী ডাক পেয়েছেন।
অর্থাৎ কানাডাসহ শিল্পোন্নত দেশগুলোর চাকরীর বাজারে ইমিগ্রেন্টদের প্রতি যে বৈষম্য চলে আসছে সেটি এখন দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। অথচ এটি হওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু যেহেতু জব মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ইমিগ্রেন্টদের হাতে নয়, তাই তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজেদের নাম পরিবর্তন করে শ্বেতাঙ্গ নাম ধারণ করেন। এবং এই নাম পরিবর্তন সত্যি সত্যিই কার্যকর ভ‚মিকা রাখে ইন্টারভিওতে ডাক পাওয়ার ক্ষেত্রে!
cheatsheet.com এ প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো, মিসিসাগা ক্যাম্পাস কৃর্তক পরিচালিত দুই বছরের এক গবেষণা কর্মে দেখা গেছে, যারা তাদের নাম পরিবর্তন করে শ্বেতাঙ্গ নাম ধারণ করেছেন তারা অধিক সংখ্যায় ইন্টারভিওতে ডাক পেয়েছেন। গবেষণা কর্মের অংশ হিসাবে ১৬টি শহরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৬০০ আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছিল চাকরীর ইন্টারভিওর জন্য। আবেদনপত্রগুলো ছিল জাল। অর্থাৎ সত্যিকারের কোন ব্যক্তির পক্ষে ঐ আবেদনপত্রগুলো পাঠানো হয়নি। গবেষণা পরিচালনা করার জন্য এই জাল আবেদনপত্রগুলো পাঠানো হয়েছিল। ওতে দেখা যায়, যে সকল কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির নাম পরিবর্তন করে শ্বেতাঙ্গ নামে আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২৫ জন ইন্টারভিওর জন্য ডাক পেয়েছিলেন। অন্যদিকে যাদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি তাদের মধ্যে থেকে ডাক পেয়েছিলেন শতকরা ১০ জন। এশিয়ান নামধারীদের বেলায়ও একই চিত্র পাওয়া গেছে।
তাহলে কি ধরে নেয়া যায়, নাম পরিবর্তনের মধ্যেই সমস্যা সমাধান নিহিত? আপাত দৃষ্টিতে তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু ধরা যাক কোন একজন প্রার্থী নাম পরিবর্তন করে চাকরীর জন্য আবেদন করলেন এবং ইন্টারভিওতে ডাক পেলেন। ইন্টারভিও বোর্ডের সামনে তিনি যখন যাবেন তখন কি তিনি তার গায়ের রঙও পরিবর্তন করতে পারবেন? কিংবা একসেন্ট? অবশ্যই না। সেকেন্ড জেনারেশন এর ইমিগ্রেন্ট হলে হয়তো একসেন্ট সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে না। কিন্তু গায়ের রঙ তো আর পরিবর্তন করা যাবে না। আর কোন কারণে হয়তো তাকে হায়ার করা হলো। কিন্তু কানাডায় হায়ারিং ফায়ারিং তো এমপ্লয়ারদের জন্য পানিভাত। সকালে হায়ার করলে বিকেলেই ফায়ার করার ক্ষমতা রাখেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সুতরাং নাম পরিবর্তনই সব সমস্যর সমাধান নয়। এমপ্লয়ার বর্ণবাদী হলে নাম পরিবর্তনকারী সদ্য চাকরী পাওয়া ব্যক্তিটি যে কোন মুহ‚র্তেই চাকরী হারাতে পারেন।
আসলে প্রয়োজন মানুষের মনমানসিকার পরিবর্তন। এদেশে হায়ারিং অথরিটির মধ্যে যারা বর্ণবাদী তারা যদি তাদের হীনমন্যতা পরিত্যাগ না করেন তবে এই সমস্যার আশু কোন সমাধান নেই। একমাত্র শিক্ষাই তাদের এই হীনমন্যতাকে দূর করতে পারে।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ