কানাডা অভিবাসন জোরদার করছে : সরকার যা অর্জন করতে চায়

জানুয়ারী ৭, ২০১৯

মাহাম আবেদী

কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার গত বুধবার ঘোষণা করেছে যে তারা ২০২১ সালের মধ্যে অভিবাসী গ্রহণের হার বাড়াবে। এতে করে মাত্র এক বছরে সাড়ে তিন লাখ ব্যক্তিকে অভিবাসী হিসাবে গ্রহণ করা হবে।

অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হুসেনের এই ঘোষণা এসেছে সরকারের তিন বছর মেয়াদি অভিবাসন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে।

এই সব নতুন অভিবাসীর বেশ বড় অংশই আসবেন অর্থনৈতিক কর্মসূচির আওতায় যা গ্রহণ করা হয়েছে দক্ষ জনশক্তির অভাব এবং শ্রম বাজারের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে।

হুসেন বলেন, দেশের যেসব এলাকায় শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে এবং বয়স্ক মানুষের ওপর নির্ভরশীল সেইসব এলাকায় অর্থনৈতিক অভিবাসীর প্রয়োজন খুবই বেশি।

মন্ত্রী বলেন, “এই পরিকল্পনা আমাদেরকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় আরও সক্ষম করে তুলবে। এটি আমাদেরকে ভবিষ্যতেও প্রতিযোগিতায় থাকার উপযুক্ত রাখবে, কানাডাকে অব্যাহতভাবে একটি স্বাগত জানানোর মতো দেশ হিসাবে তুলে ধরবে এবং দক্ষ জনশক্তি আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে আমাদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে সহায়ক হবে।”

এষড়নধষ ঘবংি মন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিষয়ক দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং জানতে চায়, সরকার এই নবাগতদের জন্য কোথায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারবে বলে আশা করে। কিন্তু এই নিবন্ধ প্রকাশিত হবার আগে সরকারের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

সিরিয়ান এক উদ্বাস্তু শিশুর সঙ্গে প্রধানন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: হাফিংটন পোস্ট

অর্থনৈতিক অভিবাসী কী?

অর্থনৈতিক অভিবাসী হলো সেইসব ব্যক্তি যারা ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অর্থাৎ অধিকতর উন্নত জীবনমান অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কানাডায় আসেন।

রায়ারসন ইউনিভার্সিটির রাজনীতির প্রফেসর জন শিল্ডস ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এই অভিবাসীরা তাদের শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আসবেন এবং “চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এরা অপেক্ষাকৃত প্রাণবন্তু।”

পার্লামেন্টে পেশ করা ২০১৮ সালের অভিবাসন বিষয়ক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের নবাগত অভিবাসীদের অর্ধেকেরও বেশি ব্যাচেলর বা তারও চেয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারীÑ এরা হবেন কানাডায় জন্মগ্রহণকারী একই বয়সের জনসংখ্যার ২৫ শতাংশেরও কম।

২০১৭ সালে বেশিরভাগ আবেদনকারীর জন্য শীর্ষ পাঁচটি চাকরি ছিলো তথ্যব্যবস্থা সম্পর্কিত অ্যানালিস্ট ও কনসালট্যান্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কমপিউটার প্রোগ্রামার ও ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া ডেভেলপার, অর্থনৈতিক অডিটর ও কনসালট্যান্ট এবং প্রশাসনিক সহকারী।

লিবারেল সরকার কানাডার কোথায় এদের আবাসনের ব্যবস্থা করবে?

শিল্ডস ব্যাখ্যা করে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি যেমন টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার ও মন্ট্রিল এখনও অভিবাসীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও নতুন অঞ্চলের প্রতি আগ্রহ বাড়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে যেমন ক্যালগেরি এবং এডমন্টন।

অভিবাসন বিষয়ক ২০১৮ সালের রিপোর্টে আরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে, গত বছর অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসাবে আগতদের মধ্যে ৩৪ শতাংশই বসবাসের জন্য মন্ট্রিল, টরন্টো বা ভ্যাঙ্কুভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো বেছে নেননি। অথচ ১৯৯৭ সালে এসব শহরের বাইরে আবাসন খুঁজে নিয়েছিলো মাত্র ১০ শতাংশ অভিবাসী।

শিল্ডস বলেন, “সারাদেশে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কমিউনিটি রয়েছে যারা নবাগতদেরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, ভ্রমণের অধিকারের কারণে সরকার অভিবাসীদেরকে বলতে পারবে না দীর্ঘমেয়াদে কোথায় তারা বসবাস করবে।

তিনি বলেন, তারা যেটা করতে পারে সেটা হলো উৎসাহ যোগানো, সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরা এবং নতুন অবকাঠামো গড়ে তোলা যেমন সেটেলমেন্ট এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা যারা অভিবাসীদের সহায়তা দিয়ে থাকে।

তারা আসলে কোন্ শ্রমিক ঘাটতির কথা বলছে?

ওইসব কমিউনিটি নবাগতদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে কারণ তাদের বিদ্যমান জনসংখ্যা বয়স্ক হয়ে পড়ছে।

অভিবাসন বিষয়ক রিপোর্টে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে যে, কানাডার শ্রমজীবীদের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। আর অপেক্ষাকৃত বয়স্করা অবসর নিলে এই ব্যবধান গুরুতর আকার ধারণ করবে। এই ব্যবধান পূরণে অভিবাসীরা সহায়ক হবেন।

রিপোর্টে কিছু শিল্প সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে যেগুলো অভিবাসী কর্মীদের দিয়ে উপকৃত হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, বিজ্ঞান, পরিবহন ও সরঞ্জাম এবং অন্যান্য দক্ষতানির্ভর ব্যবসা।

শিল্ড উল্লেখ করেন যে, এইসব শিল্পগুলো ছাড়াও বিভিন্ন প্রদেশেও বিভিন্ন খাতে ঘাটতি রয়েছে যেগুলো তারা অভিবাসনের মাধ্যমে পূরণ করতে চায়।

কেন্দ্রীয় সরকার তাদেরকে প্রভিন্সিয়াল নমিনি প্রোগ্রামের আওতায় অভিবাসী আকৃষ্ট করার সুযোগ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে প্রাদেশিক নমিনি প্রোগ্রামের সঙ্গে ২০১৭ সালের আটলান্টিক ইমিগ্রেশন পাইলট প্রকল্পের বিকাশের ফলে শুধু বৃহত্তর শহরগুলোতে অভিবাসীদের আগমনের ধরণ পাল্টাতে সহায়ক হয়েছে।

শিল্ডস মিনেটোবার দৃষ্টান্ত দিয়ে জানান, এই প্রদেশটি প্রাদেশিক নমিনি প্রোগ্রামকে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “তাদের কিছু ক্ষুদ্র কমিউনিটিতে অভিবাসীদের দিয়ে করানো যায় এমন অনেক কাজ ছিলো, যেমন মাংস প্যাকিংয়ের কাজ। নমিনি প্রোগ্রামের আওতায় তারা সেই ধরণের শ্রমিক আনতে সক্ষম হয়েছে। এটা এমন একটা ক্ষেত্র যেখানে কানাডায় জন্মানো অনেকেই কাজ করতে খুব কমই আগ্রহী।”

লিবারেল সরকার কানাডায় অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ের প্রবক্তারা আরও বেশি করে অভিবাসী আনার সুপারিশ করছেন।

অভিবাসনের পক্ষের অনেক প্রবক্তা এবং অর্থনৈতিক গ্র“প কানাডায় অভিবাসীর সংখ্যা আরও বেশি পরিমাণে বাড়ানোর আহবান জানিয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিশন ২০১৬ সালের রিপোর্টে সাড়ে চার লাখ অভিবাসী গ্রহণ করার সুপারিশ করেছিলো।

তবে হুসেন বলেন, সরকার এক্ষত্রে কিছুটা ধীর ও মাপা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

শিল্ডস বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে কানাডা বছরে সাড়ে চার লাখ অভিবাসী গ্রহণ করতেই পারে। কিন্তু লিবারেল সরকার যে পর্যায়ক্রমে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে তার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, “সরকারী দলের রাজনীতির আওতায় অভিবাসী গ্রহণের হার গ্রহণযোগ্য হওয়ার দরকার আছে। আমরা জানি অভিবাসন একটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।” অভিবাসীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়ানো হলে সেটা একধরণের রাজনৈতিক “ফুটবল খেলা” উস্কে দিতে পারে।

আর এই বিষয়েই লিবারেল দল কিছুটা সতর্ক।

সরকার অভিবাসনের পক্ষে একটি প্রচারাভিযানও শুরু করেছে যাতে এদেশে নবাগতরা কীভাবে লাভবান হতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হচ্ছে।

-গ্লোবাল নিউজ

কানাডিয়ান প্রেস-এর ফাইলের সহায়তায় প্রস্তুত।