কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর মূর্তি বার বার ভাংচুর হওয়ার নেপথ্য কাহিনী

জুন ৬, ২০১৯

 খুরশিদ আলম

কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর মূর্তি আবারো ভাংচুর এর শিকার হয়েছে। এবার তার মূর্তি ভাংচুর করা হয় মন্ট্রিয়লে। মে মাসের ১৭ তারিখে মন্ট্রিয়লে Brigade de solidarité anticolonial Delhi-Dublin নামে ঔপনিবেশবাদ বিরোধী একটি গ্রুপ এই ভাংচুর এর ঘটনা ঘটনায়। তারা একই সময় রাণী ভিক্টোরিয়ার একটি মূর্তির উপরও হামলা চালায়।

গত ২০ মে ছিল ভিক্টোরিয়া ডে। বৃটেনের রাণী ভিক্টোরিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে এই দিবসটি পালন করা হয় কানাডায় সরকারী ভাবে। কারণ বৃটেনের রাণী অফিসিয়ালী কানাডারও রাণী। ঐ দিন কানাডায় সরকারী ছুটি থাকে। আর এর ঠিক দুদিন আগে রাণীর মূর্তির গায়ে লাল রং লেপ্টে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য যে কানাডায় রাণী ভিক্টোরিয়ার মূর্তির উপর হামলা এই প্রথম নয়, অতীতে এরকম ঘটনা আরো ঘটেছে। এই বছর মার্চ মাসেও মন্ট্রিয়লের ম্যাক্গিল ইউনিভার্সিটিতে বসানো রাণী ভিক্টোরিয়ার ব্রোঞ্জ মূর্তির উপর সবুজ রং লেপ্টে দেয়া হয়। Delhi-Dublin Anti-Colonial Solidarity Brigade নামে একটি সংগঠন এই কাজটি করে।

যারা রাণীর মূর্তিতে রং লেপ্টে দিয়েছে তাদের ভাষ্য হলো, ঔপনিবেশবাদ এর বিরোধীতা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। অন্যদিকে কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী মেকডোনাল্ডকে তারা একজন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বা আধিপত্যবাদী হিসাবে আখ্যায়িত করে তার মূর্তির উপর হামলা চালাচ্ছে। এদের দাবী, কানাডার বিভিন্ন স্থান থেকে ম্যাকডোনাল্ডের সব মূর্তি সরিয়ে যাদুঘরে স্থানান্তর করতে হবে। কারণ, ম্যাকডোনাল্ড কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি ছিলেন প্রচন্ড ভাবে বর্ণবাদী! তিনি কানাডার আদিবাসীদের দেখতে পারতেন না। কানাডার আদিবাসীদের সনন্তানদের জোর করে ধরে এনে বিতর্কিত আবাসিক স্কুলে ভর্তি করানোর পিছনেও তার ভূমিকা ছিল জোরালো। সেই স্কুলে আদিবাসী শিশুদের উপর চালানো হয়েছিল নির্মম অত্যাচার। যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়েছিল ঐ শিশুরা।

কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর মূর্তি বার বার অবমাননার এর শিকার হচ্ছে : ছবি : thewhig.com

উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর মূর্তির উপর হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ম্যাকডোনাল্ড কি আসলেই বর্ণবাদী ছিলেন?

এর সোজাসাপ্টা উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে- হ্যা তিনি বর্ণবাদী ছিলেন। এবং প্রচন্ডভাবেই ছিলেন। এবং তিনি নিজেই তার জীবদ্দশায় এ কথা স্বীকার করে গেছেন।

ম্যাকডোনাল্ড শুধু কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী তা নয়। তিনি সুদীর্ঘ সময় ধরেই এই পদ দখল করে ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সময়কাল প্রায় অর্ধ শতাব্দীর। জন্মেছিলেন যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো-তে ১৮১৫ সালের ১০ জানুয়ারী।

তার বাল্যকালেই তার বাবা মা কানাডায় চলে আসেন। সেই সময় তারা অবস্থান করছিলেন ওন্টারিওর কিংস্টনে। সময়টা ছিল ১৮২০ সাল। ম্যাকডোনাল্ড এর বাবা হিউ ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। কিন্তু ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরে তিনি চলে এসেছিলেন কানাডায়। তবে এখানেও সুবিধা করতে পারেননি।

স্কুল জীবনের পর ম্যাকডোনাল্ড কানাডায় নিজেকে একজন আইনজীবী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরে রাজনীতিতে। জন ম্যাকডোনাল্ড ১৮৯১ সালে মৃত্যুর আগে প্রায় দুই দশক ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। দেড় ’শ বছরেরও আগে কানাডার কনফেডারেশন গঠনের পেছনে তার কিছু ভূমিকাই মুখ্য চালিকাশক্তি ছিলো বলে তিনি দেশটিতে শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তার নাম ও ছবি টাঙ্গানো রয়েছে দেশের বিভিন্ন হাইওয়ে, ভবন, স্কুল ও সড়কে। আর তিনি রয়েছেন বেশিরভাগ কানাডীয় নাগরিকের মানিব্যাগে – ১০ ডলারের নোটে ছবি হিসাবে।

তার প্রধানমন্ত্রীত্বকালেই ‘কানাডা ট্রান্সকন্টিনেন্টাল রেলওয়ে’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং প্রতিষ্ঠত হয় কানাডার প্রথম আবাসিক স্কুল। আর এই আবাসিক স্কুল নিয়েই পরবর্তীতে বিস্তর সমালোচনা হয়। প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেড় লাখের মত আদিবাসী শিশুকে এ ধরণের আবাসিক স্কুলে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে “শিশুদের প্রতি অবহেলা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে” বলে জানিয়েছে কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন। কমিশন বলেছে, ওই স্কুল কর্মসূচি ছিলো “সাংস্কৃতিক গণহত্যা”র সামিল।

আবাসিক স্কুলের এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এমনই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে সম্প্রতি সরকারকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাইতে হয়।

ম্যাকডোনাল্ড কানাডার আদিবাসী সম্প্রদায়কে ভাল চোখে দেখতেন না। ইউনিভার্সিটি অব রিজাইনা’র এ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর এবং লেখক জেমস ডাচেক লিখেছেন, “স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড দেশটি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু তার সিদ্ধান্ত ছিল আদিবাসীদের কোন স্থান নেই এই দেশটিতে। তারা ডিসপোজএবল।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস এর কলামিস্ট ইয়েন অস্টিন তার এক কলামে লিখেন, “ম্যাকডোনাল্ড এর যারা ভক্ত তারাও জানতেন তিনি ছিলেন একজন চরম বর্ণবাদী ব্যক্তি।”

ম্যাকডোনাল্ড কানাডায় বসবাসরত চাইনীজদেরও ভাল চোখে দেখতেন না। চাইনীজদের বিরুদ্ধেও তিনি বর্ণবাদী আচরণ করেছেন। এ্যালকোহলে তার আশক্তি ছিল ভীষণ রকমের। তিনি জনসভায় ভাষণ দেবার সময় অতিরিক্ত এ্যালকোহলের প্রভাবে বমি করে দেন এমন ঘটনাও আছে।

অবশ্য স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড যখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন কানাডায় বর্ণবাদকে অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হতো না। বর্ণবাদকে সমর্থন করার পিছনে ম্যাকডোনাল্ড এর যুক্তি ছিল এই রকম – আমি এরকম একটি দেশ চালাচ্ছি যে দেশটি বর্ণবাদী মানুষে ভরা। এ কারণেই আমি বর্ণবাদকে সমর্থন করে গেছি।

ম্যাকডোনাল্ড এর বিরুদ্ধে আদীবাসীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ ইদানিং নতুন মাত্রা পেয়েছে। যারা ঔপনিবেশবাদের বিরুদ্ধাচারণ করে আসছেন তারাও ম্যাকডোনাল্ড এর ব্যাপারে সমানভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন।

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভিক্টোরিয়া সিটি কর্তৃপক্ষ গত বছর কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং দেশটির আবাসিক স্কুল ব্যবস্থার প্রবর্তক স্যার জন এ ম্যাকডোনাল্ডের একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি সিটি হলের প্রবেশদ্বারের পাশ থেকে সরিয়ে ফেলেছে। এটি স্থানীয় আদিবাসী জনগণের সঙ্গে সৌহার্দ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি সৌজন্যমূলক পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আদিবাসীরা স্যার ম্যাকডোনাল্ডের মূর্তি সরিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল।

ভিক্টোরিয়ার মেয়র লিসা হেলপ্স ঐ সময় বলেন, আবাসিক স্কুল ব্যবস্থার নির্মমতার ইতিহাস থেকে ম্যাকডোনাল্ডকে আলাদা করার কোনও উপায় নেই। তার মূর্তি অপসারণ করার প্রয়োজন ছিল। এক ব্লগ পোস্টে হেলপ্স তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, নিপীড়িত শিশুদের পরিবারের সদস্য ও অন্য আদিবাসীরা যখনই তাদের নগর সরকারের কাছে আসবে তখনই তাদেরকে ঔপনিবেশিক সহিংসতার বেদনাদায়ক ওই স্মৃতিচিহ্নের পাশ দিয়ে যেতে হবে- এমনটা এড়ানোর জন্যই মূর্তিটি সরানো জরুরী ছিল।”

ম্যাকডোনাল্ড এর মূর্তি বা নাম সরিয়ে ফেলার দাবী কানাডার অন্যান্য অঞ্চলেও জোরদার হচ্ছে। গ্লোবাল নিউজ এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দি এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও দাবী করে আসছে এখানকার কিছু স্কুল থেকে তার নাম মুছে ফেলার জন্য। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ম্যাকডোনাল্ড এর নাম একটি অনিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করছে শিশুদের মনে যখন তারা জানতে পারছে যে তিনি আদীবাসী জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর একজন স্থপতি। পিকারিং এ একটি স্কুল আছে যার নাম স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড পাবলিক স্কুল। এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও-র লিস্টে এই নামটি আছে। তারা চাচ্ছে এই স্কুলের নাম বদল করতে। কিন্তু স্থানীয় কনজারভেটিভ এমপি বলছেন এই দাবী ‘বিব্রতকর’।

ইউনিভার্সিটি অব রিজাইনা’র এ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর এবং লেখক জেমস ডাচেক লিখেছেন ম্যাকডোনাল্ড শুধু যে আদীবাসীদের ব্যাপারেই বিরোধীতা করেছেন তাই নয়, তিনি ১৮৮৫ সালে পার্লামেন্টে বলেছিলেন, কানাডায় বসবাসরত চাইনিজদের ভোটাধিকারও কেড়ে নেয়া প্রয়োজন কারণ তারা ইউরোপীয়দের তুলনায় ভিন্ন জাতির।

জেমস ডাচেক আরো লিখেন এটি বোধগম্য যে অতীতে কানাডায় বর্ণবাদ বেশ জাকালোভাবেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ম্যাকডোনাল্ড শুধু যে বর্ণবাদী ছিলেন তাই নয়, তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতিরও ছিলেন।

জেমস ডাচেক বলেন তিনি অনেকটাই দোদুল্যমান ছিলেন ম্যাকডোনাল্ড এর নাম বিভিন্ন ভবন থেকে মুছে ফেলার বিষয়ে। কারণ এটি কানাডার ইতিহাসেরই অংশ। কিন্তু তিনি এটিও মনে করছেন যে, নাম মুছে ফেলার দাবীটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ যখন ম্যাকডোনাল্ডের কীর্তি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং ইতিহাসের অন্ধার দিকগুলো বেরিয়ে আসছে।

ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক টিমথি স্ট্যানলি বলেন, আমি অটোয়ায় অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থেকে মেকডোনাল্ড এর মূর্তি অপসারনের পক্ষে নই। তবে ঐ মূর্তির নিচে অতীতে তার ভূমিকা নিয়ে ব্যাখ্যামূলক একটি প্লেট যোগ করা যেতে পারে। কিন্তু যখন স্কুলের নাম পরিবর্তনের প্রসঙ্গ আসে তখন আমি বলবো তা করা উচিত। কারণ, ম্যাকডোনাল্ড এর নামে কোন স্কুল নামকরণ এর অর্থ হলো, ‘দেশটিতে বর্ণবাদী আচরণ করা বা গণহত্যা চালানো কোন অপরাধ নয়’ এর পক্ষে কথা বলা । – সূত্র : গ্লোবাল নিউজ।

আমরা মনে করি, এ বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই শিশুদের মনে একটি বিভ্রান্তিকর এবং বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। আর এই প্রতিক্রিয়া কালক্রমে তাদের মধ্যে নৈতিকতার ঘাটতি সৃষ্টি করবে, তাদের (বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ শিশুদের) মধ্যে সৃষ্টি হবে হোয়াইট সুপ্রিমেসীর মনোভাব। মানুষকে তারা সম্মান করতে শিখবে না। মানুষের জীবনের মূল্য তাদের কাছে হবে কিটপতঙ্গসম।

বর্তমানে কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর নামে ১৩ টি সরকারী স্কুল আছে। এর মধ্যে অন্টারিওতে আছে ৩ টি। গত বছর সামারে এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও একটি রেজুলেশন পাস করে এবং ঐ রেজুলেশনে স্কুল বোর্ডসমূহের প্রতি আহ্বান জানানো হয় এই বলে যে, স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর নামে যে সকল স্কুল ও ভবন আছে সেগুলোর নাম যেন পরিবর্তন করা হয়। কারণ তিনি এমন সব নিয়ম বা তন্ত্র উদ্ভাবন ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন যেগুলোর পরিনতিতে কানাডার আদীবাসীদের উপর চালানো হয়েছিল গণহত্যা।

তবে ম্যাকলিন’স ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও-র এই আহ্বানের বিরোধীতা করে তৎকালীন প্রিমিয়ার ক্যাথলিন উইন বলেছিলেন, আমাদের সন্তানদেরকে সার্বিক ইতিহাসটাই জানাতে হবে। ঔপনিবেশবাদ, কানাডার আদীবাসী গোষ্ঠি ও তাদের ইতিহাস এবং কানাডার যারা প্রতিষ্ঠাতা তারা কি করেছেন এ সবই শিশুদেরকে জানতে হবে।

ক্যাথলিন উইনের কথায় কিছুটা যুক্তি আছে মেনে নিতে হবে। কিন্তু কানাডার সার্বিক ইতিহাস জানার পর আমাদের মনে হয় না কোন শিশুর মনে স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড সম্পর্কে ইতিবাচক কোন ধারণা অবশিষ্ট থাকবে। হতে পারেন তিনি কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী, তিনি কানাডার ফাউন্ডার ফাদার, দেড় ’শ বছরেরও আগে কানাডীয় কনফেডারেশন গঠনের পেছনে তার কিছু ভূমিকাই মুখ্য চালিকাশক্তি ছিলো। কিন্তু তার অন্য যে সব ভূমিকা ছিল একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে সেগুলো বিবেচনায় আনলে কোন শিশুর মনে তিনি প্রাতস্মরণী ব্যক্তি হিসাবে স্থান পাবেন এমন ধারণা করা কতটুকু সঠিক তা বোধ করি ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।

আমরা জানি দেশ ও জাতির প্রতি যাদের অসাধারণ অবদান থাকে, যারা প্রাত স্মরণীয়, তাদের নাম বা মূর্তি স্থান পায় সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ভবনে। স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর অসাধারণ অবদান রয়েছে কানাডার প্রতি। তাই তিনি দেশটিতে শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছিলেন এতদিন। তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তার মূর্তি স্থাপন করা হয়। কানাডার দশ ডলার নোটে তার ছবি ছাপা হয়। তার নামে বেশ কিছু স্কুলের নামকরন করা হয়। কিন্তু বহু বছর পরে হলেও এখন তার অন্য দিকগুলো নিয়েও বিতর্ক ও ক্ষোভ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার মধ্যে আছে আদিবাসীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করে আদিবাসীদের সন্তানদের জোর করে নিয়ে আসা ও তাদের উপর নির্যাতন চালানো। তার বর্ণবাদী মনোভাব ও আচরণ।

আমরা জানিনা এই ক্ষোভ ও ক্রোধ কোন দিকে মোড় নিবে অদূর ভবিষ্যতে। আমরা লক্ষ্য করেছি ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভিক্টোরিয়া সিটিতে তার একটি মূর্তি অপসারণ করা হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চল থেকেও তার মূর্তি অপসারণের দাবী জোরদার হচ্ছে। দাবী জোরদার হচ্ছে তার নাম স্কুলগুলো থেকে মুছে ফেলার জন্যও।

আমরা জানি রাজনীতির গতি বা শ্রোত সবসময় এক পথে চলে না বা একই সূত্র ধরে এগুয় না। সময়ই বলে দিবে ভবিষ্যতে স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড এর সব মূর্তি অপসারন করা হবে নাকি সেগুলো বহাল তবিয়তেই থাকবে। কিংবা তার নাম বিভিন্ন স্কুল থেকে মুছে ফেলা হবে কিনা বা কানাডার দশ ডলার এর নোট থেকে তার ছবি বাদ যাবে কি না।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রবাসী কণ্ঠ