এ কোন নুসরাতের দেশ ?

এপ্রিল ১১, ২০১৯

গুলফাম জান্নাত

প্রতিদিন সকালে আমার মেয়ের সাথে বলা অনেক কথার মাঝে নিয়ম করে জিজ্ঞেস করি “মা, তোমার মা’য়ের দেশ কোনটি ?/সব থেকে সেরা দেশ কোনটি?” আমার পনের মাসের মেয়েটি আধো আধো বাংলায় প্রতিবার বলে “বাম্মাদেশ” (বাংলাদেশ)। আমার মেয়েটি হয়ত সুদূর এই প্রবাসে বসে আমার মত করে দেশ কে অনুভব করতে পারবে না। কিন্তু তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কিছু গল্প তো জানতেই হবে, তার মায়ের দেশের জন্মের গল্পটি, ভাষার অনন্য গল্পটি।

চলে গেলেন ফেনীর সেই দগ্ধ ছাত্রী নুসরাত। নুসরাত এর মৃত্যুর সংবাদে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার বাবা মা এবং ভাই। ছবি : সংগৃহীত

কিন্তু আজ নুসরাতের বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকু হারিয়ে ফেলে মনে হল , এ কোন ‘বাম্মাদেশ (বাংলাদেশ)’ এর গল্প আমি আমার মেয়ে কে চেনাচ্ছি । কেনই বা প্রতিরাতে মেয়ে কে ঘুমাতে নিয়ে দেশের গান গেয়ে চোখের জল ফেলছি । এই মেয়েটি বড় হয়ে তার নিজের চোখ দিয়ে আসলে কোন বাংলাদেশের ছবি দেখবে ? তার মায়ের চোখের জল ফেলে শোনানো দেশের অহংকারের গল্প টি সে বিশ্বাস করবে কি ?

নুসরাত এর এ বয়সে তো কতশত স্বপ্ন থাকার কথা । একজন নুসরাতের তো নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাওয়ার কথা।। একজন ছোট নুসরাতের স্বপ্ন পূরণ করতে , জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তো আমাদের নতুন কোন বঙ্গবন্ধু, ম্যান্ডেলা, ফ্রেদেরিক ডগলাস, কার্ল মার্কস, বা একজন মাহাত্মা গান্ধির প্রয়োজন নেই। যেই দেশের তরুণরা নিজের ভাষা পেতে পুরা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়। নিজের দেশের জন্য অবলীলায় জীবন বিলিয়ে দেয়, যেখানে একজন জাহানার ইমাম একজন রুমির বিনিময়ে দেশের স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন থেকে কত দূরে সরে গেলে, নুসরাত, বা তনু-রা নিজের স্বাধীন দেশে নিরাপত্তা হারায়। একজন নুসরাত এর মা কে মেয়ের জীবন গড়তে পাঠিয়ে মেয়ে হারিয়ে নির্বাক হতে হয়। সেই স্বপ্নের দেশে এসব নরপিশাচ শিক্ষক দের কেন ঠাই হয়? এমনকি দেশ এখন জিডিপি এর প্রবৃদ্ধি হার দিয়ে রীতিমত চমকে দিচ্ছে, অথচ মানবতার উন্নয়ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও ছড়িয়ে পড়ছে না কেন? এখনও ট্রাফিক সিগনাল এ ফুটফুটে মেয়েটি কে ফুল বিক্রী করে অনিশ্চিত জীবন যাপন ই বা করতে হবে কেন?

তারপরে ও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে আর কোন ফুটফুটে মেয়ে কে নুসরাত, বা তনু হতে হবে না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে দেশ থেকে দূর এ বসে কোন নুসরাত এর মা এর জন্য আর কোনদিনও চোখ ভেজাতে হবে না । শুধু মাত্র পরম মমতায় প্রতিবার সেই আনন্দ-অশ্রু ঝরবে, প্লেন যখন দেশে বিমান বন্দরে নেমে প্রথম মাটি টি স্পর্শ করে। বা দেশে ফিরে প্রতিবার একটি মিশ্র পুলকানভুতিতে চোখ ভিজে যা্বে দেশেকে বড় বড় অবকাঠামো নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে দেখে। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে মায়ের বলা দেশের গল্পটি মেয়ে মমতা নিয়ে অনুভব করতে পারবে।সেই বাংলাদেশর ছবি দেখতে ইচ্ছে করে, যেখানে নুসরাত, তনু বা ট্রাফিক সিগনাল এ ফুল বিক্রেতা ফুটফুটে মেয়েটির জীবন এখানে আমার মেয়ের পাওয়া নিরাপত্তার মত নিশ্চিত ।

গুলফাম জান্নাত

টরন্টো, কানাডা।