আন নব উল্লাস হিল্লোল : টরন্টো থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল ২০১৯
জুন ১২, ২০১৯
আহমেদ হোসেন
বাবা টাবারা কেমন আছে?
না ভাই, বাবা টাবা নয়, বলুন বাবা কেমন আছে?
নাটক করতেন না
এখনো করি
আবৃত্তি করতেন না
এখনো করি
আবার কবে নাটক ফাটক আপনাদের
নাটক ফাটক না ভাই, বলেন নাটক
হ্যাঁ, আছে আছে নাটক আছে- অনেকগুলি। নাট্য উৎসব। জুলাই ৬ এবং ৭, ২০১৯ শনিবার, রবিবার
ফেয়ারভিউ থিয়েটার ( ফেয়ারভিউ লাইব্রেরি থিয়েটার), ডন মিলস আর সেপার্ড।
আহা সেদিন কি একটা দাওয়াত আছে। অবশ্য এই খাবার দাওয়াতের জন্যে আজ পর্যন্ত আপনাদের অনুষ্ঠান যেতে পারলাম না। এবার দাওয়াত বাদ, যা থাকে কপালে!
না, না এভাবে বলবেন না।
সময় সুযোগ পেলে তবেই আসুন। মনে রাখবেন আপনার পরিবার, বন্ধু-স্বজন প্রথম।
যদি সম্ভব আসুন।
যদি আছেন,থাকেন টরন্টোতে, কি আশেপাশে, তবে আসুন ;
এই অভিবাসী জীবনে, কত শত টানাপোড়েনেও সাথী হন আমাদের নাট্য উৎসবে । আমরা টরন্টোতে যে নাট্যদলগুলো নাটক করি তারা সম্মিলিতভাবে টরন্টো নাট্যোৎসব ২০১৯ করবো বলে স্থির করেছি এবং সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা এলে আমরা উৎসাহিত হবো ।
আমাদের এখানে প্রতিটি মঞ্চায়ন রীতিমত যুদ্ধ করে করতে হয়। যেমন করতে হয় মহড়াগুলি এখানে এই টরন্টোতে। আবার এটাও সত্যি,কারণের তালিকা তেমন দীর্ঘ না। প্রধানতম সমস্যা নাট্যকর্মী পাওয়া। একনিষ্ঠ, একাগ্র, বিনয়ী, কর্মঠ ছেলেমেয়ে পাওয়া চাঁদ পাওয়ার মতো। এখানে খুব বেশী নাট্যামোদী অভিনেতা,অভিনেত্রী, কলাকুশলী তৈরি হয় না। তেমন কাঠামো তৈরী করতে পারি নি আমরা।
এখানে বিশেষকরে বাংলা নাট্যচর্চার কথা বলছি। বলছি বাংলা কৃষ্টি সংস্কৃতির কথা। আউল বাউল, লালনের কথা।
বাংলাদেশে যারা গ্রুপ থিয়েটার করতেন, নিয়মিত মঞ্চে উঠতেন তেমন অনেকেই আর এখানে মঞ্চমুখি হন না। জানতে চাইলে বলেন জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যস্ত। ব্যস্ত সকলে তবুও এর মধ্যে যারা থিয়েটার পাগল তারা বসে নেই। যেভাবে পারছেন ছোট ছোট করে তাদের ভালবাসার নিদর্শন রেখে যাচ্ছেন। বছর বছর কষ্ট করে একটা দুইটা প্রযোজনা মঞ্চে আনছেন। জীবন যাত্রা পাল্টাছে, আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে, মানসিকতা উলট পালট হচ্ছে। হাতের মুঠো সেল ফোন দিয়ে সকল কাজ সারছি আমরা। ইচ্ছে হলে শুনে নিচ্ছি প্রিয় গান, প্রিয় কবিতা। দেখে নিচ্ছি টিভি নাটক, সিনেমা। এই ডিজিটাল আগ্রাসনে জীবন্ত নাটক জীবন্ত আছে সারা বিশ্বে, থাকবে যতদিন মানুষ থাকবে, যতদিন মানুষের ধমনীতে প্রবাহিত হবে রক্ত কনিকা; যতদিন মানুষ চাইবে চোখে চোখে চোখের ভাষা বুঝে নিতে, উপলব্ধি করবে অনুভব, শ্বাস প্রশ্বাস। ততদিন মঞ্চ নাটক থাকবে। থাকবে পোড় খাওয়া নাট্যকর্মী।
চ্যালেঞ্জ এখন সব কিছুতেই। তারপরেও একজন নাট্যকর্মী হিসেবে হাড়ে হাড়ে টের পাই এই শহরে নাট্য চর্চা করা কতটা যে চ্যালেঞ্জের তা একমাত্র এর সংশ্লিষ্টগনেরাই বুঝেন। মহড়ায় লোক পাওয়া যায় না। আজ এর কাজ তো কাল তার কাজ। কারো সকালে কারো বিকেলে। সোমবার পারবে তো শনিবার সম্ভব না। দাওয়াত আছে, ছুটিতে শহরের বাইরে যাচ্ছি। এই হচ্ছে আমাদের সাতকাহন।
তাহলে কথা হচ্ছে কী করে তবুও হাল ধরে নাটকের নৌকা বেয়ে চলেছি আমরা গুটিকয়েক বছরের পর বছর, এই বিদেশ বিভুইয়ে?
উত্তর হলো সৃষ্টিশীলতার পোকা আর কমিটমেন্ট। মাইনাস চল্লিশে হাড় কাঁপানো শীতে শরীরকে সইয়ে বাইরের প্রতিকুলতা জয় করে যাওয়া যায় পথ হেঁটে বরফ মাড়িয়ে, সংকল্প প্রবল মন নিয়ে। আর নাটক বা যেকোন শিল্প তো হলো মনের খোরাক, মেধারও; বিরূপতার নয়।
ভালোবাসার।
এক সময় শ্লোগান ছিলো ‘ নাটক হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার’।
এই হাতিয়ার হাতে করে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন অনেকেই, মূলধারার সংস্কৃতিতেও ক্ষুদ্র করে হলেও ছাপ রেখেছেন। রেখে চলেছেন নিজস্ব সংস্কৃতিতে বছরের পর বছর, হাতিয়ার ফেলে দেন নি।
দরকার বেশি বেশি করে নাটক মঞ্চায়ন আর এদেশে জন্ম নেয়া, বেড়ে ওঠা আমাদের প্রজন্মকে আমাদের শেকড় ও সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করা। দরকার ঘন ঘন ওয়ার্কশপ বা প্রশিক্ষণ।
আমরা কয়েকজন, তিন চারটি নাট্যদল নিষ্ঠার সাথে এই কাজটি করে চলেছি অনেকদিন থেকেই। গত পচিশ বছর ধরে, এই টরন্টো শহরে নাটকের মশাল হাতে এগিয়ে চলেছেন বাংলাদেশ থিয়েটার। আর আমরা অন্যথিয়েটার টরন্টো প্রায় দশ বছর হয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা নাটক মঞ্চায়ন করে যাচ্ছি ফিবছর। আবার নাটক নিয়ে কাজ করছে থিয়েটার ফোকসও। দীর্ঘদিন নাটক নিয়ে কাজ করছেন শ্রদ্ধেয় আকতার ভাই তাঁর দল ” ইতিহাস দেশ সমাজ ” নিয়ে।
একজন নাট্যকর্মী হিসেবে অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি সামনে এই প্রথমবারের মতো তিনদল একত্রিত হয়ে উৎসব আয়োজন করতে পারছি বলে। ভাললাগা দ্বিগুণ হবে আপনারা এলে। দল বেঁধে নাটক দেখলে।
উল্লেখ্য, এই উৎসবে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, আমেরিকা, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা আছে।
বলি, নাটকের জয় হোক। জয় হোক মেহনতি মানুষের। জয় হোক সত্য, সুন্দর, আনন্দ ও কল্যাণের।
আহমেদ হোসেন
অন্যথিয়েটার টরন্টো