মানবতার স্বপ্ন

সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

রোজানা নাসরীন

মানুষের সৃষ্টিশীলতার প্রক্রিয়া স্রোতের মত বয়ে চলছে জনমানবের পথ চলার ঊষালগ্ন থেকেই। মানুষের বিচিত্রতার কারণেই তৈরি হয়েছে মানুষের স্তর। কোন কোন মানবগোষ্ঠী কেবল সচ্ছলভাবে বেঁচে থাকাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে আবার কেউ কেউ এর বাইরেও কিছু ভেবেছে। ভাবনাটা এসেছে মেধা ও মনন থেকে। কারো কারো মেধা সাধারণের তুলনায় অনেকটা অগ্রগতিশীল। এ অবস্থা সে নিজেই প্রথম আবিষ্কার করেছিল তারপর সমাজ। তারা মানুষের বিভিন্ন কাজের প্রতিযোগিতায় অগ্রসর শ্রেণী বলে মানুষের মধ্যে পরিচিত ছিল। হয়তো মানুষের মধ্যে স্তর রচনার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । এটাকে বৈচিত্র বলা যায় কিন্তু মানুষকে উচু এবং নিম্ন শ্রেণীভুক্ত করা যায়না। মানুষের পরিচয় একটাই সে মানুষ, এর বাইরে যত হেরফের তা হচ্ছে প্রতিভা ও সুবিধার, কখনও মনুষ্যত্বের নয়। যারা সাধারণভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে তারা এক ধরণের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে ; যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে মানব সভ্যতার বহির্জগত, আর এক শ্রেণীর মানুষ সেই সময়ের প্রয়াসকে প্রলম্বিত করে ভবিষ্যতের বহমানতার সাথে মিশিয়ে প্রবল বেগ প্রদানের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। তাদের প্রতিভা ছিল, মেধা, মনন ছিল সমাজে অন্যান্য মানুষদের তুলনায় ব্যতিক্রমী ও স্বাপ্নিক। যে স্বপ্নগুলি উত্তাল হয়ে মানুষের সাধারণ ভাবনাগুলোকে অতিক্রম করে যাওয়ার বেগ নিয়েছে এবং এই স্বাপ্নিক জগতটি অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে যখন বাস্তব জগতে এসে হাজির হয়েছে তখন মানবগোষ্ঠী অনেক বেশি লাভবান হয়েছে। যেটা প্রথমে ছিল হৃদয়ের অন্তর্জগত তারপর মানব সভ্যতার বাইরের হাতছানি। তাই স্বপ্নকে উপেক্ষা করা মানে মানুষের শুভচিন্তাকে উপেক্ষা করা। স্বপ্নগুলো সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সৃষ্টি হয়েছে। যখন যে বিষয়গুলি মানুষের জীবনের তীব্র প্রয়োজন বলে মনে হয়েছে সে বিষয়গুলিকেই সেই সময়ের চাহিদা বলা যেতে পারে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী যে ধরণের প্রতিভার প্রয়োজন হয়েছে মানুষ সেই প্রতিভা নিয়েই জন্মগ্রহন করেছে । জন্ম হয়েছে কত বৈজ্ঞানিক, কত দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, কবিসাহিত্যিক নানা ধরণের প্রতিভার যার হিসেব নেই। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই সেই গুণীদের মনীষার পূজা করে এসেছে। যেমন যখন সক্রেটিস এর প্রয়োজন ছিল তখন তিনি জন্মেছেন মানুষকে নতুন সভ্যতার কথা, জীবনের কথা জানাতে। এভাবে এরিস্টটল, প্লেটো, আইনস্টাইন, ইস্টিফেন হকিং এমনি অগণিত মনীষীদের আগমন ঘটেছে মানব সভ্যতার প্রয়োজন এবং সময়ের চাহিদা অনুসারে , সেই সময়টাই যেন তাঁদেরকে হাত ধরে ডেকে এনেছে এ জগতের বিচিত্র সভায়। তাঁরা সকলেই নতুন নতুন স্বপ্নে ছেয়ে দিয়েছেন মানুষের চর্চিত জীবন।

মানুষের এক প্রয়োজন শেষ হয় তৈরি হয় অন্য প্রয়োজন, এভাবেই বিশ্বজীবন এগিয়ে যায প্রাপ্তির দিকে। আজ মানুষের অনেক প্রয়োজন মিটেছে কিন্তু একটা বিষয়ের তীব্র প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। মানুষের জীবন চর্চার সকল উপকরণ হাতের মুঠোয় এসেছে বলে একে আমরা বলছি সভ্যতার চরম সীমানা। কিন্তু সভ্যতার এই চরম প্রাপ্তির সময় এসেও আমরা যে বিষয়ের তীব্র প্রয়োজন অনুভব করছি তা হল মানবিকতার বিস্তার। যার জন্য এই সভ্যতাকে চরম সীমানা বলতে পারছিনা, এখনও মানুষকে অনেক পথ পারি দিতে হবে। এ কারণেই ‘মারটিন লুথার কিং’ সমতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর এই সমতার স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছিলেন কেবল কালো গোত্রভুক্তরাই নয় সাদা মানুষেরাও। তাঁর সেই ‘ড্রিম স্পীচ’ এর একটি ছোট্ট অংশ হল “I have a dream that my four little children will one day live in nation where will not be judges by the color of their skin, but by the content of their character.
I have a dream today! I have a dream that one day, down in Alabama, with its vicious racists, with its governor having his lips dripping with the word of ÔinterpositionÕ and ÔnullificationÕ—one day right there in Alabama little black boys and black girls will be able to join hand with the little white boys and white girls as sisters and brothers..” ——এই মানবতার স্বপ্ন এবং আকুতি শুধু মাত্র পৃথিবীর এক অংশের আবেদন নয়, এটা সমস্ত বিশ্বব্যাপী প্রবল ভাবে অনুভূত হচ্ছে। কেবল মাত্র বক্তব্যের ধরণ হয়তো অন্যরকম কিন্তু মানুষের চাইওয়া এক ও অভিন্ন। উন্নত দেশে এ স্বপ্ন অনেকটা পূরণ হলেও সারা পৃথিবী আজ পথ চেয়ে আছে সমতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, যা মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বপ্নের ঘোর মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে সেই আকাঙ্ক্ষার মন্দিরে। মানুষ যদি স্বপ্ন না দেখে তাহলে থেমে যাবে বিশ্বচরাচরের অগ্রগতির নিয়ম। তাই একমাত্র স্বপ্নই মানুষের নবীন আশার কথা বলে।

কানাডায় এখন আমরা বসবাস করছি কল্যাণ মূলক রাষ্ট্রে। এটাও একসময় মানুষের স্বপ্ন ছিল। পৃথিবীর সকল মানুষ এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর কল্যাণ মূলক রাষ্ট্রে সব মানুষই তার মৌলিক চাহিদাগুলোর নিশ্চয়তা পাবে, সে অনাহারে মৃত্যুবরণ করবেনা। সেই স্বপ্নের পথ ধরে ওয়েলফেয়ার স্টেট এর জন্ম হয়েছে যার উদ্দেশ্য ছিল মানব জীবনে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ সুখ। আজ পৃথিবীর অনেক দেশই ওয়েলফেয়ার স্টেট নামে পরিচিত। এটাকে মানুষের মনুষ্যত্ব বিজয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে বিবেচনা করা যায় যদিও এখনও কল্যাণ মূলক রাষ্ট্রকে স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক পথ পারি দিতে হবে। স্বপ্নদ্রষ্টার নিকট থেকে পাওয়া চিন্তাকে বাস্তবায়নের প্রাক্কালে মানুষের বিশ্বাস এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট স্বার্থপরতার আবরণে আচ্ছাদিত ছিল কিন্তু তাই বলে ধীমানরা থেমে থাকেননি। ফলে মানুষের ভালবাসার শ্রেষ্ঠ রূপ হিসাবে ওয়েলফেয়ার স্টেট এর জন্ম হয়েছে। এ ধরণের রাষ্ট্রে প্রত্যেকটি মানুষ অধিকারপূর্ন এবং নিরাপদে থাকতে সক্ষম হচ্ছে। এবং এই রাষ্ট্রে সকলের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও রয়েছে। এধরনের দায় আছে বলেই সে মানুষ হিসাবে নিজেকে পরিমাপ করতে পারছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা মানুষের প্রয়োজনেই মানুষ করেছে। এভাবে একটা একটা করে মানুষ স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে। স্বপ্ন যতদিন প্রাণময় এবং বাঙময় থাকবে জীবন ততদিন অর্থপূর্ণ হয়ে থাকবে। পৃথিবীর এক আংশে আবশ্য সেই স্বপ্নের সাফল্য অনেকটা সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। কিন্তু সমস্ত পৃথিবীকে স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্র করে তুলতে না পারলে পৃথিবীর একংশের দুঃখবোধের ভারে নত হয়ে থাকা মানুষের অবস্থান আর একাংশের সাফল্যকে সভ্যতার চরম সীমা বলা অনেকটা একচোখা হরিণেরর গল্পের মত শোনায়। মানুষের একটা স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পরে তার মনে হয় অনেক স্বপ্নের ঝড় তার জীবন যাপনের ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলছে। তাই সে সীমাহীন আবেগে ছুটে চলছে, সাথে সাথে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনেকদূর যেখানে আছে আশা পূরণের অমরাবতী। আমার চারপাশে যে স্বপ্নেরা ঘুরে মরছে তার প্রধানটি হল মানবের সমতার স্বপ্ন। যে স্বপ্ন দেখার চর্চা প্রজন্ম পরম্পরায় চললেও মানুষের মাঝে সমতার কল্পনা সোনার পাথর বাটির মতই কল্পিত চিত্র হিসাবে এখনও রয়ে গেছে। এই মানুষের সমতার স্বপ্ন অনেকেই দেখেছেন বড় বড় থিওরিও লিখে গেছেন কিন্তু তা কার্যকরের গতি এত ধীর যে সাধারণ চোখে মনে হচ্ছে এ স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবার নয়। তবু মানুষের হৃদয়ে স্বপ্ন বেঁচে থাকা এবং নতুন জীবনের পথে অগ্রসর হওয়ার একটি সফল মাধ্যম।

মানুষ আজ স্বপ্ন দেখছে পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে সুখানভুতি তৈরি করার। কিন্তু এনিয়ে যতদিন মানুষের মাঝে উচ্চতা ও নিচুতার রেখা স্পট হয়ে থাকবে ততদিন এ আশা শুধু আশাই থেকে যাবে। যদি স্বপ্নটি এমন হয় যে, মানুষের প্রতিভা অনুসারে একটা ক্রম রচনা করা গেলেও তাঁদের মধ্যে কোন পার্থক্য রচনা করা যায়না। কারণ এই ভাবনাই মানুষের একটি মৌলিক ও সঙ্গত আকাঙ্ক্ষা। মানুষের মনে একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রশ্ন হল একজন বৈজ্ঞানিক, একজন কোটিপতি, একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ আর একজন অশিক্ষিত, সাধারণ খেটে খাওয়া অথবা অনাহারে থাকা মানুষ কোনদিন এক হতে পারে? অবশ্যই পারে। এরা দুজনেই অভিন্ন ও শ্রেণী বৈষম্যহীন। কারণ এদের উভয়ের পরিচয় একটাই সে মানুষ। আপাত দৃষ্টিতে যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে সেটা মনুষ্যত্বের পার্থক্য নয় প্রতিভার পার্থক্য, সুবিধাভোগের পার্থক্য। এজন্য একজনের চেয়ে অন্যজন মানুষ হিসেবে ছোট বা নিকৃষ্ট নয় বা একজন অন্যজনের চেয়ে উৎকৃষ্টও নয়। এই বোধটা মানুষ কখন জন্মাবে কে জানে? কারণটা সেই শ্রেণী বৈষম্য। কার্ল মার্কস্ যে শ্রেণী বৈষম্যের কথা বলেছেন যা মানুষেরই রচিত। এই শ্রেণী বৈষম্যের মধ্যেই মানুষ জন্ম নিয়েছ এবং বেড়ে উঠেছে। এক একজন এক একটা শ্রেণীভুক্ত হয়েছে বলে শ্রেণী চরিত্রের উদ্ভব হয়েছে। এসব কারণেই মানুষের হাতে মানুষ খুন হচ্ছে, মানুষে মানুষে যুদ্ধ হচ্ছে, ধর্মে ধর্মে সহিংসতা হচ্ছে। একশ্রেণী অন্য শ্রেণীকে পৃথিবীর আলো দেখতে দিতে চায়না অথচ সূর্যের এতটুকু কার্পণ্য নেই মানুষের উপর, সে কখনও শ্রেণী বিশেষে আলো দান করেনা, ফুল কখনও মানুষ বিশেষে গন্ধ ছড়ায় না। কিন্তু পৃথিবীকে কারা শাসন করবে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। জাতিতে জাতিতে এই চরম বিভেদের কারণ মানুষ মানুষকে না জানা না বুঝতে চাওয়া এবং মানবিক অধিকারের জায়গাটি স্বীকার না করতে চাওয়া। কবি হেলাল হাফিজ বলেছিলেন , “নিউট্রন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝনা! “মানুষ হানাহানি ধ্বংসযজ্ঞে যতটা পারঙ্গম মানুষকে বোঝার জন্য ভাবতে ততটাই অক্ষম। যে ভাবনার দ্বারা মানুষ কল্পনায় শক্তির দেবতা হারকিউলিসকে সৃষ্টি করেছে। মানুষের মনে একটা প্রশ্ন আছে মানব সমাজ কেন শক্তি পরীক্ষাকে এত বড় করে দেখল? এই মহা বিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বেশি বলে হয়তো এই ভাবনা। মানুষ হয়তো মনে করে একমাত্র শক্তির কারণেই জীবনের আয়োজন সম্ভব, তাই হয়তো তারা যুদ্ধ করেছে বা করছে। কেউ যুদ্ধ করছে একটি মানচিত্রের জন্য, কেউ যুদ্ধ করছে জাতিগত অভিমান টিকিয়ে রাখার জন্য, কেউ যুদ্ধ করছে অন্য জাতিকে শোষণ করার জন্য। এই ধরণের বিভিন্ন আদর্শ নিয়ে মানুষ মানুষ হত্যায় মানব সমাজই মেতে আছে। শক্তি হয়ত জীবনের যাবতীয় অর্জনের জন্য অনেকটা সত্য, কিন্তু সময় গড়িয়ে গেছে বলে সর্বত্র শক্তিশালী মানুষকেই একমাত্র মানুষ হিসাবে গণ্য করলে এই সভ্যতা বিপন্ন হবে। জীবনের বেঁচে থাকার এত আয়োজন কেবল সবল শক্তিশালী মানুষের জন্য নয় সব ধরণের মানুষের জন্য। মানুষ যেদিন শক্তির দেবতা বানিয়েছে সেদিন কেউ ভাবেনি এই হারকিউলিসের শক্তি প্রমাণ করতে এবং তা প্রদর্শনে কত মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে? কেন একজনকে বড় প্রমাণ করতে গিয়ে অন্যকে প্রাণ দিতে হয়েছে? মানুষ কেন মানুষের কাছে বড় এবং ছোট প্রমানে ব্যস্ত? একজনের প্রাণ বিসর্জন কেন আরেকজনের সুখের কারণ ? মানুষ কেন নেপথ্যে মানুষের হন্তারক হয়ে উঠে ? এর জবাব একটাই মানুষকে চেনার অভাব, বোঝার অভাব, তাই সে জিঘাংসার জন্ম দেয়।

মানুষ এবং পশুর মধ্যে মানুষই পার্থক্য খুঁজে পেয়েছে , তারপরও মানুষ শক্তিশালী মানুষকে ভয় করেছে, সমীহ করেছে; আবার কেউ কেউ দুর্বল মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কত আয়োজন করেছে। তাকে সুখী করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। তবুতো যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত একসময় কবিতার মাধ্যমে তাঁর স্বপ্ন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি উদাত্ত ভঙ্গিতে ঘোষণা করেছিলেন, “কালো আর ধলো বাহিরে কেবল / ভিতরে সবার সমান রাঙা”।

তাঁর উপলব্ধির মাঝে ছিল মানুষে মানুষে সমতার স্বপ্ন। তিনি ভেবেছিলেন , মানুষ যখন আপদমস্তক মানুষ হয়ে ওঠে তখন তাঁর কাছে মনে হয় মানুষের একটি মাত্র জাতি যার নাম শুধু মানুষ জাতি। যখন মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে থাকে সে হতে পারে প্রাকৃতিক কারণ অথবা মানব সৃষ্ট দুর্যোগ, তখনই মানব মনে দেখা দেয় তাঁর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদ। হয়তো এ কারণেই মানুষে মানুষে ভালোবাসার কথা বলা হচ্ছে এত উচ্চকণ্ঠে। আসলে ধ্বংস এবং ভালোবাসা দুটি বিপরীত ধর্মী চরিত্র। ধ্বংসকে যখন বীরত্বের রূপ দেওয়া হয় তখন মানুষ অনেকাংশে তাঁর মনুষ্যত্ব হারায়। বৃত্তের বাইরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয় হিংসা, বিদ্বেষ, মানুষের একমাত্র পরিচয় নয় , তাঁর পরিচয় মনুষ্যত্ব অর্জনে। যুদ্ধ মানুষকে মানুষের প্রতি অবহেলা শিখায় আর মানবতা শিক্ষা দেয় মানুষকে সম্মান করতে, তাঁর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে, আর মানুষের যাপিত জীবনের সুবিধাগুলিকে নিশ্চিত করতে। মানবের গোত্রগুলোকে শুধু মাত্র মানুষের ইচ্ছায় বাঁচতে এবং মানুষের ইচ্ছায় মৃত্যুবরণ যেন না করতে হয়। পৃথিবীময় মানুষ হত্যার জন্য মানুষ কতরকম পরিকল্পনা করছে; এই পরিকল্পনা গুলো যেন একদিন শুধু মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে, মানুষের চর্চিত জীবনের সকল সুখ নিশ্চিত করার পরিকল্পনায় রূপান্তরিত হয়। মানুষেরা অপেক্ষা করে আছে কবে সূচিত হবে সেইদিন যেদিন সমস্ত পৃথিবী জুড়ে কেবল একটি মানব জাতির মহত্বে মানুষ টিকে থাকবে ? মানুষ মানুষের জন্য ভালবাসা ছাড়া আর কোন জিঘাংসা টিকে থাকবেনা। সংস্কারের ঝাণ্ডার তলে মানুষকে বলি দিতে কেউ অগ্রস্রর হবেনা।

রোজানা নাসরীন

টরন্টো