কানাডীয় ‘স্কাউট বয়’ বনাম সৌদি ‘এম. বি. এস.’ কূটনৈতিক দ্বৈরথের নেপথ্য-ভাবনা
আগস্ট ২৭, ২০১৮
সুরজিৎ রায় মজুমদার
প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য-বিরোধের জের হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একটি নতুন খেতাব পেয়েছেন। বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাউবয় ইমেজের বিপরীতে ছেচল্লিশ বছরের হেলেনিক গড়নের সুদর্শন মিতভাষী তরুণ প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক মহলে ‘স্কাউট বয়’ বলেই হালে সমধিক সমাদৃত। ব্যক্তিগত জীবনে প্রধানমন্ত্রী যতবড় জাঁদরেল কুস্তিগিরই হন না কেন, রাজনৈতিক ভাবমূর্তিতে তিনি মাপা শিষ্টাচারের ‘স্কাউট বয়’। এখানে তাঁর কোনো জুড়ি নেই। প্রধানমন্ত্রীর অতিভদ্র ভাবমূর্তি কূটনৈতিক দরকষাকষিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কি-না, সেটি ক্রমাগত একটি প্রশ্ন হয়ে উঠতে লেগেছে।
রাজনীতি বলি আর রাষ্ট্রাচার বলি, পৃথিবীতে এই বিষয়টির উপরে দুটো কুখ্যাত/বিখ্যাত প্রাগমেটিক বই রয়েছে। একটি হলো প্রাচ্যদেশীয় চাণক্ক্য পন্ডিত (‘কৌটিল্য’ নামেই বেশি পরিচিত যিনি সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ) লিখিত ‘অর্থশাস্ত্র’ আর দ্বিতীয়টি হলো ইতালির ম্যাকিয়াভেলি রচিত ‘প্রিন্স’। রাষ্ট্র পরিচালনার সফল কৌশল হিসেবে চাণক্ক্য সরাসরি ‘দণ্ডনীতি’ বা ত্রাস-নীতি সুপারিশ করেছেন। আর ম্যাকিয়াভেলি তো মোটামুটি ‘শয়তান’ বলেই পরিচিত ছিলেন যার বইটিতে একজন সফল শাসককে ‘শৃগালের মতো ধূর্ত’ হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে । সভ্যতার দুই প্রান্তে দুই ভিন্ন ব্যাক্তির লেখা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ বই দুটির বিস্ময়কর মিল নিয়ে গবেষকদের কৌতূহলের অন্ত নেই । ইতিহাস বলে যে রাষ্ট্রনীতি বা কূটনীতিতে সফল রাষ্ট্রনায়করা ক্যারিয়ারে বারংবার চাণক্ক্য-ম্যাকিয়াভেলীর শরণাপন্ন হয়েছেন যেটি তাঁরা স্বীকার করুন বা না করুন।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পশ্চিমি সাংবাদিক এবং কূটনীতিক মহলে এম. বি. এস. নামেই বেশি পরিচিত। বত্রিশ বছরের এই তরুণ যুবরাজ সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা বিষয়ে স্নাতক যিনি সমকালীন বিশ্বরাজনীতির ইতিহাস ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে ভাবেন বলে মিডিয়ায় খবর রয়েছে। নিজ দেশের তেল-বেচা আধা-দেউলে অর্থনীতিকে শিল্পভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে রক্ষণশীল সমাজ-সংস্কৃতির খোল-নলচে বদলে দিয়ে আধুনিকায়নের একরকম জেহাদ ঘোষণা করেছেন এম.বি.এস।
ওয়াকিফহাল মাত্রই জানেন অতি সম্প্রতি ইসলামী বিশ্বের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে সৌদি-ইরান লড়াই মোটামুটি সনাতন ব্যাপার বলেই চলে আসছিলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য বিধায় মধ্যপ্রাচ্যে অনেকটা বহিরাগত অথচ উচ্চাভিলাষী এরদোগান হালে তুরস্কের ঐতিহ্যগত সেক্যুলার ধারা থেকে বেরিয়ে এসে ইসলামী বিশ্বের অতীত গৌরব খেলাফতের পুনরুজ্জীবনের আকাঙ্ক্ষায় এগোতে চাইছেন —এমন ধারণা অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরই। ফলত, ইসলামী নেতৃত্বে এক ত্রিমুখী টেনশন এখন সর্বশেষ আপডেট। এরদোগান ও.আই.সি’র বর্তমান চেয়ারম্যানও বটে। বাস্তবতা বলছে, শীর্ষ নেতৃত্বের দাবিদার ইরান ও তুরস্ক ওয়াশিংটনের ক্রমাগত কোপানলে থাকায় তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারছে না। এদিক থেকে এম. বি. এস এর অবশ্য বৃহস্পতি একেবারেই তুঙ্গে। সুতরাং বিশ্বরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তারকারী মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন এম.বি.এস এর হাতের নাগালে। আর সেই নেতৃত্বে নিজের অবস্থান নিরঙ্কুশ করতে উচ্চাভিলাষী যুবরাজ সবকিছুই করতে রাজি — এমন বার্তা দিয়েই তিনি এগোচ্ছেন।
ক্ষমতা হাতে পেয়েই এম. বি. এস. ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিবেশী ইয়েমেনে ইরানের শিয়া প্রভাব ধ্বংস করতে ওয়াশিংটনের সম্মতিতে ক্রমাগত বিমান হামলা চালাচ্ছেন। কাতার এই হামলার সমালোচনা করলে ছিন্ন করেছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক । লেবাননের ইরানপন্থী শিয়া হিজবোল্লার প্রভাব কমানোর কৌশল হিসেবে সুন্নি প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে রিয়াদে ডেকে এনে জোরকরে পদত্যাগের ঘোষণা করানো, দুর্নীতির অভিযোগ এনে একের পর এক সৌদি যুবরাজ ও ক্ষমতাবান ধনকুবেরদের বিলাসবহুল হোটেলে বন্দি করে রাখা — এ সকলি এম.বি.এস এর ক্ষমতার রাজনীতির ম্যাকিয়াভেলিয়ান উত্থান-বার্তা বটে। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হলো কানাডার বিরুদ্ধে সৌদির মানবাধিকারজনিত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অজুহাতে কথিত প্রতিবাদ হিসেবে রাষ্ট্রদূত বহিস্কার, বিমান যোগাযোগ বন্ধ, ছাত্র ও চিকিৎসাধীন রোগী প্রত্যাহার, কানাডীয় গম ও বার্লি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, কানাডীয় সম্পদ জলের দরে বেচে দিতে সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ এবং নতুন কোনো অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। একজন প্রাক্তন কূটনীতিকের ভাষায় এক্ষেত্রে সৌদিরা কেবলমাত্র যুদ্ধঘোষণা করতেই বাকি রেখেছে। অবশ্য সৌদি একটি অনলাইন গ্রুপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ৯/১১ স্টাইলে কানাডায় হামলার হুমকি দিয়ে ষোলোকলা প্রায় পূর্ণ করে ফেলেছে বলা যায় (যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে )। প্রশ্ন হলো হঠাৎ এম.বি.এস আমাদের স্কাউট বয়ের উপর এমন খাপ্পা হয়ে উঠলেন কেন?
আপাত দৃষ্টিতে এম.বি.এস. তাঁর দাপট দেখাতে আগাগোড়া মানবাধিকারের প্রশ্নে আপোষহীন, বিশ্বে প্রশংসিত, শান্তিপ্রিয় কানাডা এবং তার স্কাউট বয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেকটা সফ্ট টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। রাজনৈতিক আচরণের দুটো দিক থাকে — বাইরের এবং ভেতরের। বাইরেরটা আমজনতা দেখে, সমর্থন দেয়, ভোট বাড়ে । ভেতরেরটা একান্তই রাষ্ট্রিক স্বার্থগত প্রশাসনের অন্তরালের তৎপরতা । এই যেমন আমাদের মন্ত্রি ফ্রিল্যান্ড প্রকাশ্যে টুইট করলেন । সৌদিরা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানালে প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার সামনে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারপ্রশ্নে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানালেন । বিরোধীরাসহ পুরো কানাডা তাঁর পেছনে দাঁড়ানো মনে হল । আর ভেতরে ভেতরে কমন মিত্রদের মধ্যস্থতায় সউদিদের সাথে রফা করার উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু তার উত্তরে এম.বি.এস এবং তার বিদেশ মন্ত্রি যে জবাব দিয়েছেন সেটি স্পষ্টত শিষ্টাচারবর্জিত । এবং আশ্চর্যজনক হল তাতে লক্ষণীয়ভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক লাগামহীন কথাবার্তার ভাষার সাদৃশ্য রয়েছে । এম.বি.এস-রা উপদেশের সুরে বলেছেনঃ মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই, কানাডীয়রা জানে তারা কি ভুল করেছে, তাদের ক্ষমা চাইতে হবে, ইত্যাদি । অনেকটা কূটনীতি-অসুলভ পয়েন্ট অব নো রিটার্ন অবস্থান ।
অনেকেরই স্মরণে আছে গত জুনে জি সেভেন বৈঠকের পর ট্রাম্প যখন স্টিল ও এলুমিনিয়াম এর ওপর শুল্ক আরপের হুমকি দেন , তখন বিদেশ মন্ত্রি ফ্রীল্যান্ড কংগ্রেসে লবিং করে ট্রাম্পের উদ্যোগে বাধা দিতে ওয়াশিংটনে উড়ে গিয়েছিলেন । ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পিটার নাভারো অনেকটা চাঁচাছোলা ভাষায় বলে দিয়েছিলেনঃ আমেরিকান মিডিয়ায়, ব্যাবসায়ি মহলে এবং ক্যাপিটল হিলে লবিং না করে অটোয়ার উচিৎ হবে আলোচনার টেবিলে বেশি বেশি সময় দেয়া । এই অশিষ্ট প্রবনতা হালে ‘পপুলিস্ট কূটনীতি’ র ধারা হয়ে দাঁড়াল কি-না, ভাববার বিষয় । উল্লেখ্য, এর আগেও সৌদিরা তাঁদের দেশে মানবাধিকারের সমালোচনা করায় সুইডেন এবং জার্মানির বিরুদ্ধেও এরকম হুঙ্কার দিয়েছিলো। লক্ষ্যণীয়, কানাডা এবং অন্য দুটি দেশের কেউই স্বীকৃত পারমাণবিক ক্ষমতাধর নয়। মোদ্দাকথা, মরূদ্যানের নয়া যুবরাজের হুঙ্কারের সাথে হালের রিয়াদ-ওয়াশিংটন বাড়তি দহরম মহরম এর যোগসূত্র এককথায় নাকচ করে দেয়া উচিৎ হবে কি ? ভুলে গেলে চলবে না, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ঢুকেই প্রথম বিদেশ সফরে নজিরবিহিন সমাদরের সাথে রিয়াদে মরুরাজ এম.বি.এস এর মহামান্য মেহমান হয়েছিলেন ।
দ্বিতীয়ত, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ‘ন্যাচারাল এলাই’ হলেও এবং দু দেশের সীমানা ‘পৃথিবীর দীর্ঘতম অরক্ষিত সীমান্ত’ হলেও অতি সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা ইস্যু তে মতবিরোধ এমনকি ব্যবস্থা-পাল্টাব্যবস্থা নিত্যকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কৌশলগত কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটন এখন বেশিকরে সৌদিদের বিশেষকরে এম.বি.এস এর প্রতি বিশেষ নরম ভাবাপন্ন। সুতরাং অনেকটা হাতি কাদায় পড়লে যা হয় আরকি।
তৃতীয়ত, এম.বি. এসদের একটা জোরালো যুক্তি রয়েছে। তাঁদের জোরালো আপত্তি হলো কেন প্রথাগত কূটনৈতিক চ্যানেলে না গিয়ে প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় টুইট করে আটককৃতদের ‘অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার’ দাবি জানানো হলো। এটি অনেকটা সৌদিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল বলে তাঁরা মনে করছে। কানাডায় মতামত কলামে কেউ কেউ এমনও বলছেন যে প্রকাশ্যে টুইট করে আসল কাজের তো কিছুই হয়নি, বরং সৌদিরা খেপে গিয়ে এমন অবস্থা করেছে যে এমনকি এই মানবাধিকার ইস্যুতেই ভবিষ্যতে তাঁদের সাথে যোগাযোগের চ্যানেলগুলোই একরকম বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি সি বি সি নিউজের মার্ক গলম এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণের কথা বলেছেন। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালায়ের প্রোফেসর রেক্স ব্র্যনেনের বরাতে বলা হয়েছে যে সম্প্রতি সৌদিরা যেকোনো সমালোচনার প্রতি অতিমাত্রায় ‘অ্যালারজিক’ হয়ে পড়েছেন । উদাহরণঃ সুইডেন, জারমানি, কাতার এবং এখন কানাডা । এম.বি.এসের সউদি আরবে এখন মহিলারা গাড়ি চালাচ্ছে, ফ্যাশন শো করছে, মাঠে খেলা দেখছে । এসবের প্রশংসা না করে উল্টো সমালোচনা ? দাঁড়াও দেখাচ্ছি ! অটোয়া-রিয়াদ হাল্কা সাঁজোয়া যান সরবরাহ চুক্তিও একটি কারণ বটে । সউদির মত একটি খারাপ মানবাধিকার রেকর্ডধারি অটোক্রাটিক দেশে ১৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি নিয়ে কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিতর্কে এম.বি.এস রা রীতিমতো হতাশ এবং নাখোশ । কনজারভেটিভদের শুরু করা চুক্তিটা লিবারেলরা শেষ পর্যন্ত বাতিল না করলেও এটির উপর বিতর্ক এবং কালক্ষেপণ সউদিরা মর্যাদাহানিকর ভেবেছে । বিশেষত মানবাধিকার সমর্থক কানাডার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে প্রথম একটি বড়সড় অর্থনৈতিক সম্পর্কের মুখে এই কেলেঙ্কারি সউদিরা ভালভাবে নিতে পারেনি । অটোয়া বিশ্ববিদ্যালায়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রোফেসর টমাস জুনেও এমনটাই মনে করছেন । ভেতরে ভেতরে তারা অনেকটা তেঁতেই ছিল । ওয়াটারলুর রাজনিতির প্রোফেসর বেসমা মমানি অবশ্য মনে করছেন যে কানাডার বিরুদ্ধে এই কঠোর প্রতিক্রিয়া আসলে এম.বি.এসের একটি ঘর সামলানো পদক্ষেপ । মার্কিন সাময়িকী ‘ফরেন এফেয়ারস’ এর এক সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রতিবেদক এফ. গ্রেগরি গস যদিও বলেছেন যে এম.বি.এস. বেশ হিসাব কষেই ঘরে-বাইরের সম্ভাব্য সকল নিরাপত্তা হুমকি সামাল দেবার মত ধরে-বেঁধে প্রলভনে বশ করে যাকে যেখানে প্রয়োজন, দাবার ঘুটির মত তাকে সেখানে সেট করেছেন । তিনি এখন অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী । কিন্তু এক যায়গায় কিছুটা দুর্বলতা থেকে গেছে । এম.বি.এসের পিতা কিং সালমান গত হলে তিনি রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ প্রতিরধের মুখে পড়তে পারেন । হিসাব করে চতুর্থ প্রজন্মের বয়সে ছোট এবং বশংবদ প্রিঞ্চদের সাব-ক্যাবিনেটে এবং লোকাল গভর্নরের বিভিন্ন পদে বসিয়ে দিয়েছেন, যারা প্রয়জনে তার পাশে থাকবে । এখন আধুনিকায়নের/সংস্কারের এজেনডা ধরে এগিয়ে যাবার জন্যে এম.বি.এস এর প্রয়োজন একটি শক্ত জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি । পররাষ্ট্র নীতিতে ‘দণ্ডনীতি‘ অনুসরণ করে তিনি জাতির সামনে সেই প্রয়োজনীয় ভাবমূর্তিটি জাহির করতে চাইছেন ।
প্রশ্ন হল আমাদের স্কউট বয় কী ব্যবস্থা নেবেন ? মানবাধিকারের ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রি ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন । দুয়েরতের সাথে ৫২ মিলিয়ন ডলারের সামরিক হেলিকপটর সরবরাহ চুক্তি বাতিল করেছেন । এখন কি তিনি পারবেন সউদিদের সাথে সামরিক যান চুক্তি বাতিল করে তাদের সাজা দিতে ? চাণক্য ও মাকিয়াভেলি কী বলে? প্রথমত, চুক্তিটা মিলিয়ন নয়, ১৫ বিলিয়ন ডলারের । কনজারভেটিভ দের শুরু করা চুক্তি প্রধানমন্ত্রি দাবির মুখেও বাতিল করেন নি আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকার যুক্তিতে, যদিয়ও গ্লোব এন্ড মেল-এ স্তিভেন চেজ রিপোর্ট করেছেন যে কানাডীয় অস্ত্র –সরঞ্জাম ইয়েমেনের বিরুদ্ধে এবং শিয়া সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে । ভোটের রাজনীতিও কিছু কম যায় না । বড় তিন দলের জন্যই ইস্যুটা স্পর্শকাতর । যে কারখানাগুলতে সামরিক যানগুলো তৈরি হয়, সেগুলো অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন- ফ্যানশ্য রাইডিং-এ যা ২০০৬ সাল থেকে এন ডি পি এর দখলে । কনজারভেটিভ যখন চুক্তি টা করে তখন লন্ডন এলাকার চারটির মধ্যে লন্ডন- ফ্যানশ্য বাদে বাকি তিনটি সিট তাদের দখলে ছিল । ২০১৫’র নির্বাচনে লিবারেলরা সেখান থেকে দুটো ছিনিয়ে নিয়ে মেজরিটি সরকার গঠন করে । ১৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল হলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য । গত মন্দ্যার করুণ অবস্থ্যা কাটিয়ে ওঠার মধ্যে আবার ট্রাম্পের শুল্ক আক্রমনের মুখে পড়েছে ইস্পাত শিল্প এলাকা। এখন আবার চার-পাঁচ হাজার কর্মী বেকার হয়ে যাওয়া কি লিবারাল প্রধানমন্ত্রি চাইবেন ? মানবাধিকার না রাজনীতির স্বার্থ —কোনটা আগে, সময় তার উত্তর দেবে ।
-সুরজিৎ রায় মজুমদার, টরন্টো
[লেখক প্রাবন্ধিক, গবেষক ও প্রাক্তন সাংবাদিক দি ডেইলি মর্নিং সান, ঢাকা।]