প্রবাসে পরহিতকর্ম – ৪২

ডিসেম্বর 1, 2017

রীনা গুলশান

তবুও কম পড়ে যায় –

সব কিছুতেই –

জীবনের প্রতিটি আঙ্গিকে –

কম পড়ে যায় -॥

আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। যতরকম ওষুধ মানুষ বলেছে, আমি নিয়েছি। আপনার ব্যক্তিগত ডাক্তারের দেওয়া রেগুলার যে সব ওষুধ খান, সেগুলো অবশ্যই নিবেন। এছাড়া জ্বর, গায়ের ব্যাথা, সর্দি এসব ওষুধ নিবেন। এবং অবশ্যই ফ্লাজিল নিবেন। এ ছাড়া ডাক্তারকে বলে একটিা এন্টিবায়োটিক লিখিয়ে কিনে নিয়ে যাবেন। এছাড়া মদিনা, মক্কা, মিনা, আরাফায় যেটা শুরু থেকে বেশী প্রয়োজন হবে তা হলো ইলেকট্রোলাইট অথবা স্যালাইন। প্রচুর খেতে হবে। অনেকে দেখেছি ইলেকট্রোলাইট এর আস্ত একটা বড় কৌটা নিয়ে গেছে। আপনার যে ফ্লেভার ভালো লাগবে নিয়ে যাবেন। এটা প্রতিটি মুহুর্তে লাগবে।

ফাইভ স্টার হোটেলে আপনাকে ব্রেকফাস্ট এবং ডিনার দেবে। লাঞ্চ দিবে না। অনেকেই আমাকে যাবার আগে বলেছিল সকালে নাস্তা খাবার পর, হাতে করে একটি কলা বা আপেল উঠিয়ে আনবেন। মূলত এটা যারা বলেছে, সেটা কোন সুবুদ্ধি নয়। যারা সত্যিই এটা করেছে, হোটেলের ম্যানেজার বা সুপারভাইজাররা খুবই বিরক্ত এবং নীচু নজরে তাদেরকে অবলোকন করেছে।

তাই আপনি ১৫, ২১ বা ৩০ দিন, যত দিনের জন্যই যান না কেন, কিছু খাবার এখান থেকেও নিয়ে যেতে পারেন। ওখান থেকেও কিনতে পারেন। এটা আপনার ইচ্ছা। এখান থেকে নিয়ে গেলে সুবিধা হলো; যাবার সময় আপনি ২টা লাগেজ এবং ১টি কেভিন ব্যাগ পাবেন। ২ টা লাগেজে এত কি নিবেন? তাই একটা সুটকেসে ইচ্ছা করলে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। বেশীর ভাগ হজ্জ যাত্রীরাই খাবার নিয়ে গিয়েছিল। গ্র্যানোলা বার, ক্যান্ডি বার, ওট মিল, নানান ধরণের কুকিজ নিতে পারেন। ১ টি মেয়েকে দেখেছিলাম, ওর নাম আনিছা, সে তার ১ সুটকেস ভরে নানান টেস্টের নুডুলস স্যুাপ নিয়ে গিয়েছিল। গরম পানি দিলেইতো খাবার রেডি। দারুন আইডিয়া।  পেটও ভরে যায়। খেতেও ভাল লাগে। আর ঐ প্রখর রোদের মধ্যে আপনাকে বাইরে বের হতে হবে না খাবার কিনতে। আমি ২ দিন নুডুলস স্যুাপ কিনে ছিলাম ৫ রিয়াল এ ২টা। তবে কুকিজের দাম একটু বেশী।

আর একটা জিনিশ দেখলাম- মদিনা, মক্কায় ওষুধের দাম খুব বেশী। তবে সব ধরেণের ওষুধ পাওয়া যায়। ডাক্তারও আছে। তারা সর্বদাই থাকে। ভলন্টারী সার্ভিস দিচ্ছে, ফ্রি রোগী দেখছে। অনেক দেশ (বাংলাদেশ থেকেও দেখলাম গেছে) থেকে ভলন্টারী সার্ভিসের জন্য মেডিকেল টিম পাঠায়। তারা রাত দিন রোগী দেখে। তবে এক দেশ, অন্য দেশের মানুষকে দেখে কিনা আমি সিওর না। তবে মনে হয় দেখে। এবং বাংলাদেশ থেকে আগত একটি মেডিকেল টিমের এক সদস্যার সাথে পরিচয় হলো মসজিদুল মদিনায়। খুবই অমায়িক মহিলা। উনি আমার পায়ের ব্যাথার জন্য বললো, আপনি এখুনি ডাক্তার দেখাতে যেতে পারেন। তখন আমি বললাম যে, আমিতো কানাডা থেকে এসেছি। (আমার বুকের উপর ঝুলছে কানাডিয়ান আইডি) আমাকে দেখবে কি? তো উনি বললেন, অবশ্যই দেখবে। ক্যানো দেখবে না। আর রাত দিন খোলা থাকে। এবং ওরা নাকি ওষুধও ফ্রিতে দেয়।

আমি অবশ্য সময়ের অভাবে যেতে পারিনি। সময়ের অভাব বলছি কেন?  ওখানে কোন জব নেই, তবু সময়ের কেন অভাব? কারণ, ওখানে ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়তে হয়। রাতে যেহেতু তাহাজ্জুত এর ওয়াক্তের ( ৩টার সময়) সময় মসজিদে চলে যেতে হয়, আর ফজর, বা একেবারে এশরাক পড়ে আসতে হয়। তারপর ছুটতে হয় নাস্তার জন্য। কারণ ১০ টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করা বন্ধ করে দেয়। এর পর গোসল করে একটু ঘুমাতে যাবেন। আবার যোহরের আযান দিলেই মসজিদে ছুটতে হবে। একটু দেরী করেছেন কি মরেছেন। মসজিদের ভেতরে জায়গা পাবেন না। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেলে  ভয়াবহ ব্যাপার। যদিও বাইরে বিশাল ছাদের মত ছাতা আছে। সরাসরি রোদ লাগবে না। এই ছাতা খোলার এবং বন্ধ হবার দৃশ্য দেখবার মতো। এশরাকের সময় এই ছাতাটা আস্তে আস্তে খুলতে থাকে। আবার মাগরীবের দিকে বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই এটা অবলোকন করার সময় ভিডিও করে। যদিও আমি ভিডিও করিনি। তবে আপনি করলে কোন অসুবিধা নাই। শুধু মসজিদের ভেতোরে ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিষেধ।  তবু অনেকেই করে। অবশ্য পুলিশ দেখেলে, বকা খেতে হবে। মসজিদের ভেতরে প্রচুর মহিলা পুলিশ থাকে। তারা মুখের আবরণ খোলে না। কারণ অনেকেই আকছার ছবি তুলছে।

তো, এই সময় মতো নামাজ পড়বার জন্য আর মসজিদের ভেতর জায়গা পাবার জন্য এমন দৌড়া-দৌড়ি করতে হয় যে, ঘুমের অবশ্যই ব্যাঘাত ঘটে। তবে যারা বিছানায় পিঠ দিলেই ঘুমোতে পারেন তাদের জন্য অসুবিধা নাই। আমার ঘুমের প্রচুর বায়নাক্কা। ঘুম হয় না। এটাই আমার প্রতি দিন/রাতের সমস্যা। তাই সর্বদা ক্লান্তবোধ লাগে।

তাই বলছিলাম, দুপুর বেলায় বাইরে যেয়ে খাবার খাওয়ার প্রচুর সমস্যা। আপনার পার্টনারও যে খুব সুস্থ থাকবে এমন কোন গ্যারান্টি নাই। তাই কানাডা থেকে মাথা খাটিয়ে যতসব শুকনা খাবার নিয়ে যাবেন। ওখানে থেকে খেজুর কিনেও রাখতে রাখতে পারবেন। হাজারে রকমের খেজুর পাওয়া যায়। শুকনা ফলও বেশ সস্তা। কোল্ড ড্রিংকস, চা এবং কফি হোটেলের ভিতরই পাবেন। এমনিতে ফাইভ স্টার হোটেলের নীচেও প্রচুর খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। আবার এক্সট্রা টাকা দিলে হোটেল থেকেও ওরা খাবার দিয়ে যাবে লাঞ্চে। এটা আপনার ব্যাপার আর আপনার শরীর এবং পকেটের ব্যাপার, আপনি কোনটা গ্রহণ করবেন।

প্রথম কিস্তি টাকা (ডলার) দেবার পর ওরা একটা সেমিনার কল করে। সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। খুউব ভালো লেগেছে ঐ দিন। ঐ দিন মোটামুটি আপনার সবার সাথে সাক্ষাৎ হবে। পরিচয় হবে। সকালে ব্রেকফাস্ট দিবে। দুপুরে খুব সুন্দর লাঞ্চ দিল। আবার বিকালেও বেশ কিছু ডেজার্ট, খাবার দিল। চা, কফি এবং কোল্ড ড্রিংসের সাথে।

সকাল থেকেই সাব্বির ভাই এবং বিভিন্ন হজ্জ বিশেষজ্ঞরা বক্তৃতা করেন। এমনকি ভিডিও সহকারে হজ্জ এর সময় আপনাকে কি কি করতে হবে সেটা দেখানো হবে। এটা খুবই জরুরী। আপনার অর্ধেক ভীতি কেটে যাবে। প্রচুর টিপস পাবেন। সাথে একটা নোট বুক, কলম অবশ্যই নিয়ে যাবেন। বক্তব্যের মধ্যে অনেক জরুরী বিষয় থাকবে যেটা লিখে নিলে পরবর্তীতে আপনার অনেক কাজে লাগবে।

রীনা গুলশান, টরন্টো

gulshanararina@gmail.com