অন্টারিওর স্কুলগুলোতে যৌন হয়রানী
জুন 3, 2018
॥ খুরশিদ আলম ॥
অন্টারিওতে স্কুল শিক্ষকগণ অটোমেটিকালি তাদের লাইসেন্স হারাবেন যদি তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। নতুন এই আইনে শিক্ষক কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুরা চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং এর জন্য আর্থিক সহযোগিতাও পাবে।
চলতি মে মাসে নতুন এই আইন পাস হয়। সরকার গত জানুয়ারীতেই প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল যারা দুশ্চরিত্রের শিক্ষক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে।
নতুন আইনে বলা হয়, “Under the Protecting Students Act, a 2016 amendment to the Ontario College of Teachers Act and the Early Childhood Educators Act, if a teacher engages in intercourse, masturbation, child pornography or any of the following contacts — genital-to-genital, genital-to-oral, anal-to-genital, and oral-to-anal — their licence must be revoked.
As a result of this amendments, teachers who touch a student’s genitals, anus, breasts or buttocks, or other conduct of a sexual nature, will now be subject to automatic licence revocation as well.” – সূত্র:টরন্টো স্টার।
স্কুলে যৌন হয়রানি নতুন কোন ঘটনা নয়। একটু পিছনে ফিরে তাকালেই দেখা যাবে, গ্রেটার টরন্টো সহ অন্টারিও প্রভিন্সের অন্যান্য অঞ্চলের স্কুলগুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রায়ই ঘটে আসছে। টরন্টোর আইনজীবী জুলিয়ান ফেলকনার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ‘বিপজ্জনক হারে’ এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। ঐ জরিপে অংশগ্রহণকারী টরন্টোর একটি স্কুলের ১৯% ছাত্রী বলেছে তারা বিগত দুই বছরে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।
অন্যদিকে সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ এর নতুন এক গবেষণায় বলা হয়, এখানকার হাই স্কুলের প্রায় অর্ধেক ছাত্রীই অশালীন যৌন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গির শিকার হয়। আর এক তৃতীয়াংশ ছাত্রী শারীরিক স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা বা চিমটি কাটার শিকার হয়।
মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডেভিড ওলফ বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি একটি কমন বা সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাড়িয়েছে স্কুলগুলোতে।
সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ কর্তৃক নবম গ্রেডের আঠার শ ছাত্রীর উপর পরিচালিত জরিপ থেকে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যায় – স্কুলগুলোতে ৪৬% ছাত্রী যৌন মন্তব্য, কৌতুক, অঙ্গভঙ্গি বা দৃষ্টিকটু নজরের শিকার হয়েছে। যৌনতার উদ্দেশ্যে স্পর্শ বা জড়িয়ে ধরার শিকার হয়েছে ৩০% ছাত্রী।
জরিপ কার্যটি শুরু হয় ঐ ছাত্রীরা যখন গ্রেড নাইনে পড়তো। দুই বছর পর যখন তারা গ্রেড এলিভেন শেষ করে তখন জরিপের কাজটি আপডেট বা হলনাগাদ করা হয়। ঐ সময় গ্রেড এলিভেনে উঠা ছাত্রীদের এক তৃতীয়াংশ জানায়, তারা অনাকাঙ্খিত বা অযাচিত যৌন কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য চাপের মোকাবেলা করেছে। এদের মধ্যে ১৫% জানায়, তারা ঐ অনাকাঙ্খিত যৌনতা এড়ানোর জন্য শুধুমাত্র ওরাল সেক্স পর্যন্ত সাড়া দিয়ে প্রতিপক্ষকে ক্ষান্ত করেছে।
উপরে উল্ল্লেখিত তথ্যগুলো ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয় টরন্টো স্টার পত্রিকায়। সেখানে বলা হয়- বিপজ্জনক হারে এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে।
যৌন হয়রানির এই ঘটনা যদি বিপজ্জনক হারে হয়ে থাকে তবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে অভিভাবকদের। আর আমরা যারা ইমিগ্রেন্ট, যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আবহ থেকে আমরা এই দেশে এসেছি তাদের জন্য এই তথ্য আরো বেশী দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। কারণ, এই স্কুলগুলোতে আমাদের ছেলে-মেয়েরাও লেখাপড়া করছে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৫ সালের সামারে অন্টারিও’র নতুন যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছিল। টরন্টো প্রবাসী সিংহভাগ মুসলমান অভিভাবক অন্টারিও’র ঐ আধুনিক যৌন শিক্ষা কার্যক্রম বা অন্টারিও সেক্স এডুকেশন কারিকুলাম এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে যেতে দেননি। টরন্টোর থর্নক্লিফ পার্ক এলাকাটি মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা। বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানী, বাংলাদেশী ও ভারতীয় মুসলমান বাস করেন ঐ এলাকাতে। সেখানকার থর্নক্লিফ পার্ক এলিমেন্টারী স্কুলে ঐ সময় ১৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত ছিল মাত্র ১৩০ জন। শতকরা হিসেবে প্রায় ১০ জন।
ঐ পাঠ্যসূচী আলোর মুখ দেখার আগেই শুরু হয়েছিল তীব্র বাদপ্রতিবাদ। প্রধানত মুসলিম সম্প্রদায়ই এর তীব্র বিরোধীতা করছেন। বিরোধী গোষ্ঠির মধ্যে আরো ছিলেন গোড়া খ্রীষ্টানপন্থীরাও। ঐ সময় কুইন্স পার্কের সামনে সোসিয়্যালি কনজারভেটিভ ক্যাম্পেইন লাইফ কোয়ালিশন যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করে। ঐ সভায় প্রতিবাদকারীরা বলেন, এই শিক্ষা কার্যক্রম অন্টারিওর হাজার হাজার ছাত্রী-ছাত্রীকে বিপদগ্রস্ত করে তুলবে। তারা যৌন নিপীড়নকারীদের লালসার শিকার হবে।
প্রতিবাদের মুখে তৎতালীন শিক্ষামন্ত্রী লিজ সেন্ডালস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সরকার এবার পিছু হটবে না, যেমনটি হটেছিল গত ২০১০ সালে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রবল বিরোধীতার মুখে। তিনি আরো বলেন, কেউ কেউ এর বিরোধীতা করতে পারেন, কিন্তু নতুন এই পাঠ্যসূচী আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্যই করা হয়েছে।
লক্ষ্যনীয় যে, সেদিন নতুন পাঠ্যসূচীর প্রতিবাদকারীরা বলছিলেন, এই শিক্ষা কার্যক্রম অন্টারিওর হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে বিপদগ্রস্ত করে তুলবে, তারা যৌন নিপীড়কারীদের লালসার শিকার হবে। অন্যদিকে সরকাররের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল সন্তানদের নিরাপত্তার জন্যই এই নতুন পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করা হয়েছে।
কিন্তু আজকে অন্টারিওর স্কুলসমূহে আমরা যে পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি তা কি ঐ নতুন পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করার ফলেই হয়েছে? যেমনটি আগে দাবী করেছিলেন প্রতিবাদকারী অভিভাবকগণ?
স্পষ্টতই না। আগেই বলেছি, এই পরিস্থিতি আজ নতুন নয়। আর স্কুলে যৌন হয়রানী বা নির্যাতন কেবল যে সহপাঠীদের কেউ কেউ করে থাকে তাও নয়। শিক্ষক বা স্কুল স্টাফদের মধ্যেও কেউ কেউ এই কর্মটি করে থাকেন। আর শুধু মেয়ে শিশুদের কেউ কেউ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে তা নয়, ছেলে শিশুদের মধ্যেও কেউ কেউ শিকার হচ্ছে যৌন হয়রানির। এ কারণে অন্টারিও সরকার ও বিভিন্ন স্কুল বোর্ড বিষয়টি নিয়ে দুর্ভাবনায় ছিল। যারা যৌন হয়রানি বা নির্যাতন চলান তাদেরকে কিভাবে প্রতিরোধ ও শায়েস্তা করা যায় তা নিয়ে আরো কঠোর আইন প্রণয়নের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল অনেকদিন ধরেই।
উল্ল্লেখ্য যে, অন্টারিও’র নতুন যৌন শিক্ষা পাঠ্যসূচি যখন প্রবর্তন করা হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল যৌন স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য নিজেদের জ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে সেগুলো শিক্ষাদানের পাশাপাশি কনসেপ্ট অব কনসেন্ট বিষয়েও শিক্ষাদান করা হবে। কনসেপ্ট অব কনসেন্ট হলো যৌন মিলনে সম্মতি প্রদান। কেউ যদি (বিশেষত মেয়ে বা মহিলা) যৌন মিলনের ব্যাপারে মুখে ‘না’ বলে তবে তা না হিসেবেই ধরে নিতে হবে। আবার মুখে না বলেনি কিন্তু তার শরীর সায় দিচ্ছে না, সেক্ষেত্রেও ধরে নিতে হবে যৌন মিলনের ব্যাপারে তার সম্মতি নেই। এটিকে না হিসেই ধরে নিতে হবে। মাদকাগ্রস্থ বা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ যৌনমিলনে সম্মতি দিতে পারে না। অর্থাৎ তারা মুখে হা বললেও তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর গ্রেড টুয়েলভ এ যৌন নির্যাতন, হয়রানী বা জুলুম বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ কি কি হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হবে। হেলদি রিলেশনশীপ বা সুস্থ সম্পর্ক কিভাবে গড়ে তোলা যায় বা বিকশিত করা যায় সে সম্পর্কেও জ্ঞানদান করা হবে। কিন্তু নতুন এই পাঠ্যসূচী অন্টারিওর স্কুলসমূহে যৌন হয়রানির বন্দে বা হ্রাস করার ব্যাপারে কতটুকু কাজ করেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে কোন জরীপ বা নীরিক্ষা চালানো হয়নি। উল্ল্লেখ্য যে, কানাডায় সরকারী উদ্যোগে ইতিপূর্বে আদিবাসী শিশুদের জন্য ‘এ্যাবরিজিনাল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’ নামে এক সিস্টেম চালু করা হয়েছিল। ঐসব স্কুলে আদীবাসী জনগোষ্ঠির ছেলে-মেয়েদেরকে জোর করে ধরে আনা হতো। উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসী ছেলে-মেয়েরা যাতে তাদের নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে যায় এবং কানাডিয়ান তথা ইংরেজ বা ফরাসী ভাষা ও সংস্কৃতি শিখে। স্কুলগুলো বাস্তব অর্থে ছিলো বন্দিশালা যেখানে শিশুদের উপর চরম নির্যাতন চালানো হতো। এই স্কুলগুলোতে যাদের ধরে আনা হতো তাদের তথাকথিত ‘শিক্ষাজীবন’ শেষ না করা পর্যন্ত এখানেই বন্দি থাকতো। প্রায় এক শত বছরেরও বেশী সময় ধরে চলে এই ভয়াবহ সিস্টেম। ভয়াবহ বলছি এ কারণে যে, এই শিশুদেরকে দেখতে যাতে ইউরোপিয়ানদের মত লাগে তার জন্য তাদেরকে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত পানিতে গোসল করানো হতো। শিশুদেরকে জোর করে খ্রীষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হতো। অপুষ্টি, চিকিৎসাহীনতা, শীতে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র্রের অভাব ছিল এই শিশুদের নিত্যদিনের সাথী। স্কুলে বেশীর ভাগ সময়ই তাদের ব্যয় করতে হতো কায়িক পরিশ্রম করে। শিশুরা যদি ইংরেজী বা ফরাসী ভাষা ছাড়া নিজেদের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করতো তবে তাদের জিব্বা সুই দিয়ে ছিদ্র করে দেয়া হতো। আর এই শিশুদের উপর সবচেয়ে বড় যে নির্যাতনটি করা হতো তা ছিল যৌন নির্যাতন। শুধু মেয়ে শিশুরাই নয়, ছেলে শিশুরাও স্কুলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হতো। নির্যাতনকারী বা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তির বিধান ছিল না। বড়জোর কৃতকর্মের জন্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হতো। স্কুলগুলো পরিচালিত হতো খ্রীষ্টান চার্চ কর্তৃক। এই রেসিডেন্সিয়াল স্কুলগুলোতে প্রায় ৬ হাজার শিশুর অকাল মৃত্যু ঘটে নির্যাতন ও অযতœ-অবহেলার কারণে। সর্বশেষ স্কুলটি বন্ধ করা হয় ১৯৯৬ সালে। (তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া)
গত শতকের পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তর দশকে অটোয়া আর মন্ট্রিয়লের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত আলফ্রেড সিটি’র সেইন্ট জোসেফ ট্রেনিং স্কুলের ছাত্রদের কেউ কেউ খ্রীষ্টান ব্রাদারদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার ঐ ছাত্রদেরকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।
এরকম আরো অনেক ঘটনার কথাই উল্ল্লেখ করা যায়। আর এর মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয় যে, অন্টারিওর স্কুলগুলোতে যৌন হয়রানী বা নির্যাতন নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরেই চলে আসছে এই পরিস্থিতি। তবে সরাসরি যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা এখন আর আগের মত ঘটে না। স্কুলগুলোতে এখন যা ঘটে তা হলো প্রধানত সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্ট বা যৌন হয়রানি। অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী যৌন হয়রানি হলো :
– কোন সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে, পক্ষপাত বা অনুকূল্য প্রদর্শন এর বিনিময়ে যৌন সম্ভোগের প্রস্তাব।
– বারংবার ডেটিং এর জন্য প্রস্তাব বা চাপ দেয়া। অসম্মতি প্রকাশের পরও সেটিকে গুরুত্ব না দেয়া।
– জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করা বা দাবী করা।
– অনাবশ্যকভাবে শরীর স্পর্শ করা বা অবাঞ্ছিত স্পর্শ।
– মেয়ে বা মহিলাদের প্রতি অভদ্র বা অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করা (বালক বা পুরুষদের প্রতিও- যা নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর)।
– মানুষের যৌন-নির্দিষ্ট বিষয়ে মর্যাদাহানিকর কথা বলা।
– কারো শারীরিক বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব বিষয়ে যৌনতাপূর্ণ কোন মন্তব্য করা।
– পর্নোগ্রাফী, যৌনতার ছবি, কার্টুন ইত্যাদি পোস্ট করা বা শেয়ার করা।
– যৌনতাপূর্ণ কৌতুক করা।
– যৌনশক্তি বিষয়ে আস্ফালন করা।
– কারো জেন্ডারের উপর ভিত্তি করে তাকে হুমকী প্রদান বা তাকে উৎপীড়ন করা।
– যৌনতা বিষয়ক গুজব ছড়ানো (অনলাইন সহ)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি কর্মস্থলেও এই জাতীয় যৌন হয়রানি উপেক্ষা করার মত নয়। কারণ এগুলোর যারা শিকার হন তারা নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আর শিশুদের বেলায় এর প্রভাব হতে পারে সুদূর প্রসারী। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া বিশেষভাবে জরুরী। আমরা যারা ইমিগ্রেন্ট, তাদের পরিবারের সন্তানেরা স্কুলে তুলনামূলকভাবে কিছুটা জড়তাগ্রস্ত অবস্থায় থাকে বা তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে ততটা জোড়ালো হয় না। বিশেষ করে যারা কানাডায় নতুন আসে।
অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশনের মতে, শিশুরা যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয় তবে তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে উঠতে পারে। ব্যক্তিগত মর্যাদা বা সম্ভ্রম নিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে উঠতে পারে। তাদের শিক্ষা গ্রহণ ব্যহত হতে পারে যা তাদের ভবিষ্যতের সাফল্যকেও নষ্ট করে দিতে পারে। আর সময়মত যদি এই যৌন হয়রানি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়া হয় তবে ভুক্তভোগী একসময় উগ্র ও হিংসাত্মক আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে।
তাই শিশুদের আচরণে হঠাৎ কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করা জরুরী। দেখতে হবে তারা কি নিয়মিত স্কুলে যেতে অনিহা প্রকাশ করছে কি না, পড়ার টেবিলে মন খারাপ করে বসে থেকে কোন কিছু চিন্তা করছে কি না বা ডিপ্রেশনের অন্যকোন লক্ষণ তার মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে কি না।
যদি এরকম কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় হবে বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরী এবং একই সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। শুরুতেই এগুলোর সুরাহা করা না হলে ভবিষ্যতে এর ফলাফল মারাত্মক হতে পারে।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ