অন্টারিওর আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বাংলাদেশীদের অবদান
এপ্রিল 8, 2018
॥ খুরশিদ আলম ॥
কানাডার আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের অবদানের কথা আমরা বরাবরই শুনে আসছি। কিন্তু এবার একজন মন্ত্রীর মুখে কানাডার আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সরাসরি প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের কথা শুনে একটু ভিন্ন রকম অনুভূতির সৃষ্টি হলো মনে। গর্ববোধ তো অবশ্যই হচ্ছে।
কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের Ministry of Economic and Growth মন্ত্রী স্টিভেন ডেল ডুকা গত ১৬ মার্চ টরন্টোর উত্তরে অবস্থিত মার্কহাম সিটির এ্যাডওয়ার্ড হোটেলের বিশাল পার্টিরূমে অনুষ্ঠিত কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এর গালা ডিনার অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই অবদানের কথা উল্ল্লেখ করেন। এই স্বীকৃতির কথা শুনে হল ভর্তি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীগণ তুমুল করতালি দিয়ে মন্ত্রীকে অভিবাদন জানান।
মন্ত্রী ডেল ডুকা একজন চমৎকার বক্তা। অন্ত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বচ্ছন্দগতিতে এবং গুছিয়ে কথা বলার ক্ষমতা রাখেন তিনি। সেন্স অব হিউমারও তার অতি চমৎকার। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সবাইকে চাঙ্গা করে তুলেন একটি কৌতুক শুনিয়ে।
মন্ত্রীর কৌতুক শুনে সবাই যখন চাঙ্গা হয়ে উঠেন এবং তার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকেন তখনই তিনি বলেন, অর্ধশত বছর ধরে অন্টারিওর বাংলাদেশী কমিউনিটি এই প্রভিন্সের উন্নয়নে অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের অন্টারিও আজ একটি ধনী প্রভিন্স। এবং সার্বিক অর্থে এর পিছনে অবদান রয়েছে বাংলাদেশীদেরও। তিনি বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটি পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের ব্যবসায়ীক উদ্যোগ এর মাধ্যমে, তাদের চাকরীর মাধ্যমে এবং তাদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে। বিজ্ঞান, শিল্পকর্ম, খেলাধূলা, সাংবাদিকতা ইত্যাদির মাধ্যমে এখানে বাংলাদেশী কমিউনিটি তাদের অবদান অব্যাহত রেখেছে।
কানাডায় বিশেষ করে অন্টারিওতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কার্যক্রম আজ আর তথাকথিত ‘অড জব’ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অড জব বলতে সাধারণ ভাবে আমরা যা বুঝাতে চাই তা হলো, নিন্ম আয়ের নিন্ম দক্ষতার কাজসমূহ। যেমন হোটেল বা রেস্টুন্টে এর কাজ, পিজ্জা ডেলিভারীর কাজ, ক্যাব ড্রাইভিং, ছোটখাট মিল ফ্যাক্টরীতে অদক্ষ শ্রমিকের কাজ, ক্লিনিং এর কাজ ইত্যাদি। অবশ্য যারা ক্যাব চালান তাদের আয় একেবারে নিন্ম তা বলা যাবে না। আবার হোটেল বা রেস্টুরেন্টে যারা কাজ করেন বিশেষ করে শেফ বা কুক এর কাজ, সেটিও কম মজুরীর কাজ নয়। আর এটি অদক্ষ শ্রমিকের কাজ তাও বলা যাবে না। কিন্তু বাঙ্গালীরা সাধারণভাবে এই কাজগুলোতে অড জব বলতেই পছন্দ করেন। কেউ কেউ আবার এই কাজগুলোকে অমর্যাদাকর বলে মনে করেন। শুধু তাই নয়, যারা এই কাজগুলো করেন তাদের প্রতি একধরণের তাচ্ছিলতাও প্রদর্শন করেন তারা। কিন্তু এই তাচ্ছিলতা প্রদর্শন যে সরাসরি বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক আচরণ এবং চরম অশোভনতা সেটি অনুধাবন করার মতো বোধশক্তি নেই এদের। বাস্তবিক অর্থে এ ধরণের আচরণকে অশোভনতা বা অভদ্রতা বললে বোধ হয় কম করে বলা হয়। বরং বলা ভাল মূর্খতা বা ইতরপনা।
কানাডায় হাই প্রোফাইল অনেক রাজনীতিক ও প্রফেশনাল ব্যক্তি আছেন যারা ছাত্র অবস্থায় পকেট মানির জন্য তথাকথিত ঐ অব জব করেছেন। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রীও আছেন কয়েকজন যারা শৈশবে অড জব করেছেন।
এই দেশটিতে শ্রমের মর্যাদা দেয়া হয়। দেই না শুধু আমরা ইমিগ্রেন্টরা। বিশেষত সাউথ এশিয়ান ইমিগ্রেন্টরা। একসময় বৃটিশরা আমাদের মধ্যে যে বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিষবৃক্ষ রোপন করে এসেছিল এবং তারো আগ থেকে ভারতবর্ষে জাতপ্রথার যে বিষবৃক্ষ সমাজের আনাচে কানাচে রোপিত ছিল সেই বিষবৃক্ষের গোড়ায় আমরা আজো সার ও পানি ঢেলে চলেছি সমান তালে তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। এমনকি এই কানাডায় এসেও!
হ্যা, অড জবে মেধার অপচয় হচ্ছে সন্দেহ নেই। একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা অন্যকোন পেশাজীবী ইমিগ্রেন্ট যদি কানাডায় এসে সারভাইভালের জন্য পিজ্জা ডেলিভারী দিতে বাধ্য হন তবে নিশ্চিতভাবেই তা মেধার অপচয়। এই পেশাজীবী ইমিগ্রেন্টরা এখানে এসে সিস্টেমের বলি হয়ে নিম্ম আয়ের জব করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ জন্য তো তারা দায়ী নন। দায়ী চাকুরীদাতাদের পলিসি। তারা ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ নামক উদ্ভট ও আজগুবী এক বাধা তৈরী করে রেখেছেন দক্ষ ইমিগ্রেন্টদের সামনে। অন্টারিও হিউম্যানরাইটস কমিশনও এই ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ এর বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক আচরণ বলে আখ্যায়িত করেছে।
তবে আশার কথা এই যে, এই বৈষম্যমূলক ‘কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স’ এর বাধা অতিক্রম করে আজ কিছু সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী সাফল্যের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছেন। সাফল্যের এই ধারায় প্রথমেই যার নাম করা যায় তিনি হলেন ড. অধ্যাপক অমিত চাকমা। তিনি অন্টারিওর একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট এবং একই সাথে ভাইস চেন্সেলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন গত বেশ কয়েক বছর ধরেই। এ বছর মার্চ মাসে প্রকাশিত অন্টারিওর সানসাইন লিষ্টে তার নাম এসেছে। সেই হিসাবে দেখা যায় উনি ২০১৭ সালে বেতন পেয়েছেন ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ডলার। আর বেনিফিট পেয়েছেন ৪৭ হাজার ডলার। কয়েক বছর আগে অবশ্য তার এই বেতন নিয়ে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৪ সালে তিনি বেতন পেয়েছিলেন প্রায় এক মিলিয়ন ডলার। সেটি ছিল ঐ বছর উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ ৪০ জন বেতনপ্রাপ্তদের একজন হওয়ার দুর্লভ গৌরব। কিন্তু ঐ বেতন নিয়ে তখন বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল। কানাডার সিবিসিসহ অন্যান্য মিডিয়া প্রশ্ন তুলেছে ২০১৩ সালে অধ্যাপক অমিত চাকমার বেতন ছিল ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার ডলার। মাত্র এক বছরে সেই বেতন ৯ লক্ষ ২৪ হাজার ডলারে উন্নীত হলো কি করে? ওয়েস্টার্ন ইউনিভারসিটির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, “ইউনিভারসিটির প্রয়োজনেই অধ্যাপক অমিত চাকমা তাঁর পাওয়া ছুটি না নিয়ে কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এ কারণে তিনি ছুটির এক বছরের বেতনের পাশাপাশি কাজের এক বছরের বেতনও পেয়েছেন।”
অবশ্য অধ্যাপক অমিত চাকমা বিতর্ক এড়াতে প্রাপ্ত বেতনের প্রায় অর্ধেক ফেরত দেন তখন। ধারণা করা হয় ঐ সময় একটি বিশেষ মহল কর্তৃক তিনি বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন বলেই এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল ।
অন্টারিওতে বর্তমানে প্রায় সবকটি ইউনিভার্সিটি ও কলেজে চার-পাঁচজন করে বা তারো বেশী সংখ্যক বাংলাদেশী অধ্যাপনার কাজ করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায়ও আছেন অনেকে। টরন্টোতে এই মূহুর্তে প্রায় এক ডজন বাংলাদেশী ডাক্তার আছেন যারা ফুলটাইম প্র্যাকটিস করছেন। অন্যান্য পেশায়ও বাংলাদেশীদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি সরকারী চাকুরীতেও সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশীদের। এই পেশাজীবীরা এবং যারা সাধারণ চাকরী করছেন (তথাকথিত অডজব) তারা সবাই মিলেই অন্টারিও প্রভিন্সের অর্থনীতি উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন।
আর ব্যবসা ক্ষেত্রেও অন্টারিও বিশেষ করে টরন্টোতে বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। টরন্টোর বাংলাদেশী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থে এখন একটি “বাংলাদেশী বাণিজ্যিক এলকা” গড়ে উঠেছে। ড্যানফোর্থ/ফার্মেসী ইন্টারসেকশন থেকে শুরু করে পশ্চিমে ড্যানফোর্থ/মেইনস্ট্রিট পর্যন্ত অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন বাংলাদেশীরা। গোটা জিটিএ-তে এখন প্রায় হাজার খানেক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী আছেন এমনটা অনুমান করা যায়। কারণ কমিউনিটির পত্রিকাগুলোতে এখন দেখা যায় পাতার পর পাতা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞাপনে ঠাসা। হিসাবে দেখা গেছে এই বিজ্ঞাপনদাতাদের সংখ্যা চারশতাধিক। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় না। সেই হিসাবে অনুমান করাই যায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা হাজার খানেক হবে বা তারো বেশী হতে পারে। তবে এই হিসাব প্রধানত আমাদের প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশী ইমিগ্রেন্টদের। দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা কমিউনিটির পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় না। দিয়ে থাকলেও তার সংখ্যা একেবারেই নগন্য। তবে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা যোগ করলে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা আরো অনেক বেশী হবে।
এই পরিস্থিতি অবশ্য দুই/চার বছরে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘ সময় লেগেছে। ড্যানফোর্থে আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে বাংলাদেশী মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল চার/পাঁচটি। সেখান থেকে তা বৃদ্ধি পেতে পেতে আজ সহস্রাধিকে দাড়িয়েছে। আর এই ব্যবসায়ীরা নানাভাবে অবদান রেখে চলেছেন অন্টারিওর অর্থনেতিক সমৃদ্ধিতে। তারা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছেন। সরকারের রাজস্ব ভান্ডার সমৃদ্ধ করছেন। কমিউনিটিতেও রয়েছে এদের যথেষ্ট অবদান। স্থানীয় যত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার প্রায় সবগুলোতেই তারা অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন। কখনো বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে, কখনো কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই। মসজিদ মন্দির নির্মানেও তাদের অবদান রয়েছে। কমিউনিটির পত্রপত্রিকাগুলোও চলছে এই ব্যবসায়ীদের আবদানের কারণেই।
Ministry of Economic and Growth মন্ত্রী স্টিভেন ডেল ডুকা গত মাসে প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অন্টারিও প্রভিন্সের অর্থনীতি উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের উল্ল্লেখযোগ্য অবদান সবসময়ই ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, ইমিগ্রেন্টরা এদেশে সাথে করে নিয়ে আসেন দক্ষতা, জ্ঞান, শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা যা তাদেরকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করে এবং আন্টারিওর অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের এই উদ্যোগ কাজে লাগে।
মন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করার পরও একটি বিষয় এখানে উল্ল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। আর সেই বিষয়টি হলো, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দক্ষ পেশাজীবীদেরকে যদি কানাডার জব মার্কেটে প্রবেশ করার সমান সুযোগ দেয়া হতো, তথাকথিত কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স এর নাম করে তাদেরকে যদি দূরে সরিয়ে না রাখা হতো তবে অন্টারিওর অর্থনীতিতে ইমিগ্রেন্টদের অবদান আরো অনেক বেশী হতে পারতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে কাজটি করা হচ্ছে না। আর এই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুই পক্ষই। অর্থাৎ একদিকে কানাডার অর্থনীতি অন্যদিকে দক্ষ ইমিগ্রেন্টরা।
কিন্তু এই ক্ষতির বোঝা মাথায় নিয়েও ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি থেমে থাকেনি। তারা নিজেরা স্বল্প বেতন বা ন্যূনতম মজুরীতে কাজ করে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কিংবা লাইন অব ক্রেডিট ব্যবহার করে সংসারের চাকা সচল রাখছেন। শত কষ্টের মাঝেও ছেলে-মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন। আর এর ফলে দেখা গেছে, কানাডা বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম শিক্ষিত দেশ এবং এর কৃতিত্ব প্রধানত ইমিগ্রেন্টদের প্রাপ্য।
নতুন আসা ইমিগ্রেন্টরা শুধু যে নিজেরাই উচ্চ শিক্ষিত তাই নয়, তারা এ দেশে আসার পর তাদের ছেলে-মেয়েদেরকেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন। আর এ কারণেই ইমিগ্রেন্টদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার হার মূলধারার কানাডিয়ানদের তুলনায় বেশী। সম্প্রতি সরকারের এক অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। টরস্টার নিউজের এক খবরে বলা হয়, ঐ অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ৩৬% ছেলে-মেয়ের (যাদের বয়স ২৫-৩৫ এর মধ্যে) ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে। আর এই একই বয়সের মূলধারার কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে ২৪% জনের।
ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর স্যোসলজি বিভাগের অধ্যাপক মনিকা বয়েড টরস্টার নিউজকে বলেন, ইমিগ্রেন্ট পিতা-মাতার আকাংখা অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে তাদের সন্তানদের সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতে যদি ঐ পিতা-মাতারা নিজেরাও উচ্চ শিক্ষিত হন এবং কানাডায় এসে নিজ প্রফেশনে প্রবেশ করে ভাল আয় রোজগার করেন।
ইমিগ্রেশন কানাডার মুখপাত্র গার্নেট পিকট বলেন সামগ্রিকভাবে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েরা কর্মক্ষেত্রেও ভাল করছে বা অধিক ভাল করছে তাদের সমবয়সী কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের তুলনায়। কারণ, তাদের রয়েছে অধিকতর উচ্চ শিক্ষার সনদ যা তাদেরকে সাধারণ চাকরীর পরিবর্তে প্রফেশনাল জব পেতে সাহায্য করে।
সবশেষে বলা যায়, জব মার্কেটের প্রতিকূল ও বৈরী পরিবেশ সত্বেও প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্টরা স্থানীয় অর্থনীতিতে তাদের সাধ্যমত অবদান রেখে চলেছেন। অন্যদিকে যারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারাও তাদের সাধ্যমত অবদান রেখে চলেছেন। আর এই ইমিগ্রেন্টদের সবচেয়ে বড় অবদান – তারা তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে কানাডার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের জন্য যোগ্য মানুষ হিসাবে গড়ে তুলছেন। এই দ্বিতীয় প্রজন্মের অবদান হবে প্রথম প্রজন্মের চেয়ে বহুগুণ বেশী। যে স্বপ্নের বাস্তবায়ন প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্টরা করতে পারেনি, সেটা এখন করে দেখাচ্ছে দ্বিতীয় প্রজন্মের ইমিগ্রেন্টরা। প্রথম প্রজন্মের প্রশান্তি ও সুখানুভব এখানেই।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ