‘শুকরের খামারে মুসলিমদের কবরস্থান’

আগস্ট ৫, ২০১৭

খুরশিদ আলম ॥

ধরা যাক কানাডায় একটি মুসলিম পরিবারের এক সদস্য কোন এক কারণে মৃত্যুবরণ করলেন। পরিবারটি এমন এক জায়গায় থাকেন যার অন্তত ৫ শ মাইল রেডিয়াসে কোন মুসলিম কবরস্থান নেই। আর কানাডা এমন এক দেশ যেখানে মৃত ব্যক্তিকে যেখানে সেখানে কবর দেয়া যায় না। নিজ বাড়ির আঙ্গিনাতেও না। তাহলে উপায়?

খ্রীষ্টান ধর্মালম্বীরা তাদের কবরস্থানে মুসলিম ধর্মালম্বী কাউকে স্থান দিবেন না। অন্যদিকে মুসলিম ধর্মালম্বীরাও কোন অবস্থাতেই খ্রীষ্টান ধর্মালম্বীদের কবরস্থানে নিজেদের মৃত কোন আত্মীয় বন্ধুকে কবর দিতে যাবেন না।

সাধারণভাবে এটিই নিয়ম। কিন্তু বিরল পরিস্থিতিতে এ ব্যাপারে কি বিধান রয়েছে তা আমার জানা নেই। ধর্ম বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন।

মরার জাত নিয়ে এখানে ছোট একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। “ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের যশোরের কেশবপুরে। ঐ সময় উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের আনন্দ দাস (৫০) নামের এক ঋষি (মুচি) মারা যান। স্বজনেরা তাঁকে সত্কারের জন্য ভালুকঘর শ্মশানে নিয়ে আসেন। শ্মশানের চিতায় কাঠ সাজিয়ে লাশ উঠিয়ে দিয়ে পোড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়ার আগ মুহূর্তে শ্মশান কমিটির সভাপতি অজিত ঘোষ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে এসে চিতায় লাশ তুলতে নিষেধ করেন। মৃত ব্যক্তির ছেলে সুভাষ দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্মশান কমিটির লোকেরা আমাদের অস্পৃশ্য ও ছোট জাত বলে ওই চিতায় পোড়ানো যাবে না বলে বাধা দেন। তাঁরা নদীর ধারে দূরের একটি জায়গায় ঋষিদের জন্য আলাদা চিতা রয়েছে বলে জানান।’

ওই গ্রামের দীপঙ্কর দাস অভিযোগ করেন, ‘আমরা কমিটির কর্মকর্তা অসীম ভট্টাচার্যের পা জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করলেও তিনি আমাদের কথা শোনেননি। তিনি বলেন, লাশ দাহ করলে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সুভাষ দাস অভিযোগ করেন, শ্মশান কমিটির লোকেরা চিতা থেকে কাঠ ফেলে দেয়। নেপাল দাস নামের একজন বলেন, ‘ওই শ্মশানের বিভিন্ন পূজা-পার্বণে আমরা চাঁদা দিই। আমরা ছোট জাত হলেও ওরা ঠিকই চাঁদা নেয়। কিন্তু লাশ দাহ করার সময় নিম্ন বর্ণের কথা বলে আমাদের অপমানিত করেছে।’

গ্রামবাসী জানায়, সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত লাশ পোড়াতে বাধা দেওয়ার পর তারা পাঁচ কিলোমিটার দূরে বায়সা শ্মশানে এসে বেলা তিনটায় লাশ দাহ করে।” (সূত্র : প্রথম আলো)

হুবহু এরকম ঘটনা না হলেও এর প্রায় কাছাকাছি একটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটে গেল কানাডার কুইবেক প্রভিন্সের রাজধানী কুইবেক সিটির নিকটস্থ ‘সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার’ সিটিতে। সিটির অধিবাসীরা এক গণভোটের মাধ্যমে রায় দিয়েছেন তাদের এলাকায় মুসলমানদের জন্য কোন কবরস্থান নির্মাণ করা যাবে না।

উল্ল্লেখ্য যে, কুইবেক সিটিতে মুসলমানদের জন্য কোন কবরস্থান নেই। এখানে কারো মৃত্যু হলে বহু দূরের আরেকটি শহর লাভাল এ লাশ নিয়ে যেতে হয় দাফন করার জন্য। এ কারণে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন তারা যে সিটিতে বাস করেন সেই সিটিতে কবরস্থান নির্মাণের কোন ব্যবস্থা করা যায় কি না। কিন্তু সেটি আপাতত সম্ভব হলো না স্থানীয় কিছু শহরবাসীর আপত্তির মুখে। বিষয়টি স্থানীয় মুসলিমদেরকে দারুনভাবে নিরাশ করে। ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেক এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ লাবিদি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “এটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক একটি সিদ্ধান্ত। এতে আমরা উপেক্ষিত অনুভব করছি। গনভোটের ফলাফল একসঙ্গে বসবাসের বিরুদ্ধে গেল।”

‘সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার’ সিটির মেয়র বার্নার্ড আউলেট বলেছেন, “মুসলিমদের জন্য পৃথক একটি কবরস্থান নির্মাণের বিপক্ষে রায় দেখে আমি খুব নিরাশ হয়েছি।”

কুইবেক প্রভিন্সের প্রিমিয়ার ফিলিপ কুইয়ার্ড বলেন, “আমি মনে করি না গণভোটের এই ফলাফল কুইবেকের অনুকূল কোন প্রতিবিম্ব।” তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “এর সমাধান পাওয়া যাবে। মুসলিমরা যাতে নিজেদের জন্য কবরস্থানের জায়গা খুঁজে  পান সে ব্যাপারে প্রভিন্স কাজ করবে।”

মেয়র নিরাশ হয়েছেন আর প্রিমিয়ার বলেছেন অন্যত্র জায়গা খুঁজে বের করা হবে। সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটিতে মুসলিমদের জন্য পৃথক কবরস্থান নির্মানে সহযোগিতা করে আসছিলেন এমন একজন হলেন হারমোনিকা ফিউনারেল হোম এর পরিচালক সিলভিন রয়। তিনি বলেন, “গনভোটের ফলাফল কুইবেকের মুসলিমদের জন্য ভাল বার্তা নয়। আমরা যা চেয়েছিলাম তা হলো, পাশাপাশি দুটি সমাধিস্থল তৈরী করে ঐকতানের একটি প্রতীক উপস্থাপন করা। এটিই কানাডার প্রতীক যা আমরা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। কিন্তু আমরা সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটির বাসিন্দাদের কাছ থেকে যে মতামত পেলাম তা নিশ্চিতভাবেই বিস্ময়কর।”

আপাত দৃষ্টিতে এটি বিস্ময়করই মনে হতে পারে। কারণ, কানাডা একটি মাল্টি কালচারের দেশ। আর তা সরকারীভাবেই স্বীকৃত। এদেশে সকলের অধিকারও সমান। অপরের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শিষ্টাচার প্রদর্শনে কানাডার সুনাম রয়েছে বিশ্বব্যাপী। তাই ভাবতে অবাকই লাগার কথা এরকম একটি দেশে সংখ্যালঘু একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এ জাতীয় সিদ্ধান্ত আসলো কি করে?

এখন প্রশ্ন উঠতে পরে, এই সিদ্ধান্তের পিছনে কি তাহলে কোন প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে? নাকি কোন মহলবিশেষের রহস্যপূর্ণ প্ররোচনা কাজ করেছে?

আমরা দেখেছি কানাডার কুইবেক প্রভিন্স বরাবরই একটু ভিন্ন মেজাজের। বিশেষ করে ইমিগ্রেন্টদের বিষয়ে। তারা কানাডার সঙ্গে থাকতেও চান না। ১৯৯৫ সালের ৩০ অক্টোবর এই প্রভিন্সটি দ্বিতীয়বার গণভোট এর আয়োজন করেছিল কানাডা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্য। সে যাত্রায় তারা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়েই গিয়েছিলেন। রেজার শার্প ব্যবধানে তারা পরাজিত হন। ভোটের ফলাফল ছিল – বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পক্ষে ৪৯.৪২% ভোট আর বিপক্ষে ৫০.৫৮% ভোট।

সেদিন ঐ পরাজয়ের পর তৎকালিন প্রিমিয়ার জ্যাক পারিজাও তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ইমিগ্রেন্টরাই এই পরাজয়ের জন্য দায়ী।

কুইবেকে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব নুতন কিছু নয়। আর বিশেষ করে মুসলিম ইমিগ্রেন্টদের বিরুদ্ধে প্রায়ই সেখানে নানারকম তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেককেই মুসলিম বিরোধী অবস্থান নিতে দেখা গেছে ইতিপূর্বে। এমনকি আদালতেও দেখা গেছে হিজাব পরা মুসলিম মহিলাদের প্রতি অশোভন আচরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে যখন রানিয়া এলাউল নামের এক মুসলিম মহিলা কোর্টে গিয়েছিলেন তার গাড়িটি পুলিশের হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে আনার আবেদন নিয়ে। কিন্তু কুইবেক কোর্টের বিচারক এলিনা মারেঙ্গো তার আবেদন শুনতে রাজী হননি। কারণ, ঐ মহিলার মাথায় হিজাব পরা ছিল। বিচারকের যুক্তি ছিল- কোর্ট রূমে কোন ধর্মীয় পোষাক পরা যাবে না।

কুইবেকে কিছু রক্ষণশীল রেডিও স্টেশন আছে যারা মুসলিম বিরোধী প্রচার চালায়। এরকম রেডিও স্টেশনকে Radio poubelle বা ট্রাস (ডাস্টবিন) রেডিও বলা হয় কখানো কখনো। এরা প্রায়ই মুসলিম বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালায়। স্থানীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, এই রেডিও স্টেশনগুলোতে যখন মুসলিম বিরোধী প্রচারণা চলে তখন সিটির বাস ড্রাইভাদের কেউ কেউ হাই ভ্যলিউমে রেডিও বাজিয়ে অন্যদের তা শুনাতে থাকেন।

ইতিপূর্বে মন্ট্রিয়লে এক মুখোশধারী যুবক কানাডায় প্রতি সপ্তাহে একজন করে মুসলমান বা আরবীয় ইমিগ্রেন্টকে হত্যা করবে এই মর্মে ইউটিউবে এক ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। যুবকটি দাবী করেন তিনি একা নয়, তাকে সহায়তা করার জন্য আরো লোক আছে।

আর কানাডার ইতিহাসে মুসলিমদের উপর সবচেয়ে বড় হামলাটি  হয়েছে এই কুইবেক প্রভিন্সের রাজধানী কুইবেক সিটিতেই যার খুব কাছাকাছি একটি এলাকায় মুসলিমদের জন্য পৃথক একটি কবরস্থান নির্মাণ করার বিপক্ষে মতামত দেয়া হলো গণভোটে। গত ২৯ জানুয়ারী কুইবেক সিটির ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিব নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ১৯ জন।

ঐ ঘটনার পর এনডিপি নেতা টম মূলকেয়ার বলেছিলেন, “গুলিবর্ষনের এই ঘটনা কানাডার একেবারে মর্মস্থলে আঘাত হেনেছে।” তিনি বিদ্বেষ, ধর্মান্ধতা এবং ইলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর জন্য সকল কানাডিয়ান নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান। হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমরা এই ধরণের কানাডায় বিশ্বাসী নই, আমরা এ ধরণের সমাজে বাস করতে চাই না। কানাডা একটি বৈচিত্রের দেশ। আমরা এই দেশে বিদ্বেষ ও হিংস্রতাকে বরদাস্ত করি না করবোও না।”

কিন্তু রাজনৈতি নেতৃবৃন্দের এই আশ্বাস আর আহ্বান কোন কাজে এসেছে বলে মনে হয় না। যারা রক্ষণশীল, ইমিগ্রেন্টরা যাদের চক্ষুশূল তাদের কাছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কোন বার্তা পৌঁছায়নি। কবরস্থান নির্মাণের বিপক্ষে রায় প্রদানই তার অকাট্য প্রমাণ।

জীবিত মানুষের মৌলিক অধিকার থাকে বেশ কয়েকটি। কিন্তু মৃত মানুষের মৌলিক অধিকার থাকে একটি। সেটি হলো সম্মানের সঙ্গে তার দাফন অথবা সৎকার। এই অধিকারটুকু থেকে কোন মৃত ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা কোন সভ্য দেশের সভ্য নাগরিকদের কর্ম নয়। আর যদি কেউ তা করেই থাকেন তবে তিনি বা তারা সভ্য নাগরিকের দাবীদার হতে পারেন না।

আজকে কুইবেকের সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটিতে মুসলিমদের কবরস্থান নির্মাণে যারা বাধা সৃষ্টি করলেন তারাও তো প্রকৃতির নিয়মে একসময় সমাধিতে যাবেন। তাদের পূর্বপুরুষেরাও গিয়েছেন। তাদের সমাধিস্থল নির্মানের সময় কেউ কি বাধা দিয়েছিল? নিশ্চই দেয়নি।

সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটির মুসলিম সম্প্রদায়তো স্থানীয়দের কাছে শত্র“ সৈন্য নয়। সাধারণভাবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরাজিত পক্ষের নিহত শত্র“ সৈন্যদেরও দাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা করা হয় নিহত সৈন্যে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী। আর এর ব্যবস্থাটি করে দেয় বিজয়ী দল। তাহলে সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটিতে বসবাসকারী মুসলিমদের কি অপরাধ? দেশ ও সামাজের প্রতি কি তাদের কোন অবদান নেই?

স্মরণ করা যেতে পারে যে, গত জানুয়ারীতে কুইবেকে মুসলিম হত্যাযজ্ঞের পর প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো  কানাডায় বসবাসরত ১০ লাখ  মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। কানাডার ৩৬ মিলিয়ন হৃদয় আপনাদের সঙ্গে সহমর্মী। আপনারা জেনে রাখুন আমরা আপনাদেরকে মূল্যায়ন করি। আপনারা কানাডার সমৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন অপরিমেয় ভাবে। আপনারা এ দেশেরই অংশ।”

যদি তাই হয়ে তবে সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটিতে বসবাসরত মুসলিমদের প্রতি কেন এই অবজ্ঞা? কেন সেখানে মৃত ব্যক্তিদের অসম্মান করার দাম্ভিকতা দেখানো হলো? কে বা কারা তাদেরকে এ কাজে উৎসাহ জোগাল, আর এই অনুপ্রেরণা দানকারীদের উদ্দেশ্যই বা কি?

আমরা লক্ষ্য করেছি সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটিতে কবরস্থান নির্মাণে আনুষ্ঠানিক বাধা সৃষ্টির দুই দিন আগে কুইবেক সিটিতে অবস্থিত মসজিদে কে বা কারা একটি প্যাকেট পাঠান যেখানে একটি চিরকুট ছিল। ঐ চিরকুটে মুসলিম সম্প্রদায়কে পরামর্শ দেয়া হয় কোন শুকরের খামারে যেন তারা তাদের কবরস্থান তৈরী করেন। উল্ল্লেখ্য যে, এই মসজিদেই গত জানুয়ারীতে হামলা চালিয়ে ৬ জন মুসল্লিকে হত্যা করা হয়েছিল। গত বছর জুন মাসে রমজান চলা কালে  এই মসজিদের প্রধান দরজার সামনে কে বা করা শুকরের একটি কাটা মাথা র‌্যাপিং পেপার দিয়ে মুড়িয়ে রেখে যান। তাতে একটি স্টিকারও সংযুক্ত ছিল যাতে লেখা ছিল, Bon appétit যার ইংরেজী অর্থ হলো Enjoy your meal.

কুইবেকে মুসলিম সাম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এভাবে যারা ঘৃণা ও বিদ্বেষ তৈরী করছেন তারা নেপথ্যে থাকলেও একেবারে গোপন নয় তাদের পরিচয়।

আমরা লক্ষ্য করছি কানাডায় রক্ষণশীলদের কয়েকটি গ্রুপ সাম্প্রতিক সময়ে অধিকমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী একটি অনুভূতি বা চেতনা জাগ্রত করতে। এরা কানাডার মাল্টিকালচারালইম নীতিতে তারা বিশ্বাসী নন।

এরকম একটি গোষ্ঠির নাম La Meute ইংরেজীতে যেটাকে The Wolf Pack বলা হয়। এর বাংলা অর্থ দাড়ায় নেকড়ের দল। এই La Meute গ্রুপের সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় প্রধানত ফেসবুকে।

ফেসবুকে তাদের সদস্যের সংখ্যা এখন ৪৩ হাজারেরও বেশী। কুইবেকে তাদের উপস্থিতি ও তাদের রক্ষণশীল অভিব্যক্তি এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। কুইবেকে আরো প্রায় ডজনখানেক এন্টি ইসলামী গ্রুপ বা ব্লগের মতো La Meute সাম্প্রতিক সময়ে তৎপর হয়ে উঠেছে অনলাইনে। La Meute এর প্রতিষ্ঠাতাগণ মনে করেন “কুইবেক হলো উত্তর আমেরিকায় ইউরোপীয় সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রস্থল। কিন্তু সেই কুইবেক এখন ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে সংযোগহীন হয়ে গেছে। ”

সিবিসি নিউজের এক রিপোর্টে বলা হয়, সেইন্ট এ্যাপলেনিয়ার সিটিতে কবরস্থান যাতে নির্মিত না হয় সে জন্য La Meute সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। কুইবেক সিটির মেয়র রিজিস লেবুমি অবশ্য এই La Meute কে কঠোর তিরস্কার করে ইতিমধ্যে হুশিয়ার করে দিয়েছেন এই বলে যে তারা যাতে মুসলিমদের জন্য পৃথক কবরস্থান নির্মাণের বিষয়ে অনধিকারচর্চা না করেন।

মেয়র রিজিস লেবুমির সঙ্গে আমরাও একমত। La Meute কর্তৃক এটি অনধিকারচর্চা অবশ্যই। আমরা আরো মনে করি বাসস্থানের অধিকার যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার, তেমনি মৃত মানুষের মৌলিক অধিকার কবরস্থান। এ নিয়ে রাজনীতি করা কোন বিচারেই শোভন নয়, মানবিক আচরণ তো নয়ই।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রবাসী কণ্ঠ