ফেসবুক ফিভার ও একজন প্রয়াত বন্ধু এবং লুপ্তপ্রায় বন্ধুর সন্ধান প্রাপ্তি

জুন ১৪, ২০১৬

মোয়াজ্জেম খান মনসুর

আমাদের পৃথিবীর একবিংশ দশকের এই সময়ের বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্যের গল্পের যেন তারপর নেই। এ গল্প  যেন থামতেই চায় না । প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ধাবমান অগ্রযাত্রায় সৃষ্টি হয়ে চলছে প্রতিদিন নতুন নতুন বিস্ময়কর ইতিহাস। গুহায় বসবাস করা মানব জাতির উত্তর পুরুষ কয়েক হাজার বছরের ব্যবধানে আজ গ্রহ নক্ষত্র চষে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিনকার জীবন যাপনে এসেছে যুগান্তকারি সাফল্যের চমক আর পরিবর্তন । অসম্ভবকে সম্ভব করার এক দৃপ্ত উল্লাসে কাপানো জয়ধনিতে ভরা পৃথিবীর মাঠঘাট প্রান্তর।

এই আবিস্কার মানব জাতির আকাশ সমান আশিবার্দ হলেও আবার কখনো  কখনো  কারো কারো জন্য অভিশাপ। আজকের পৃথিবীতে  প্রযুক্তির ইতিহাসের সোনালী দিনে  হারভার্ডে পড়া যুকারবার্গ নামের এক যুবক ফেইসবুক আবিস্কার করে নিজে যেমন একজন অসম্ভব সফল ব্যবসায়ী ও অতি দ্রুত  বিলিয়নিয়ার ক্লাবের সদস্য হয়ে গেলেন এবং সেই সাথে পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে দিলেন এক সাংঘাতিক ফেইসবুক ফিভার। আর এই ফেসবুক ফিভারে ছেলে বুড়ো যুবক যুবতি কিশোর কিশোরী সবাই সিরিয়াসলি  আক্রান্ত। দিন নেই রাত নেই সকাল সন্ধ্যা বলে কথা নেই ফেইস বুকে মুখ গুজে বসে থাকা। যে যাই বলুক না কেন আসলে আমাদের জন্য দারুন এক বিনোদনের জায়গা এই ফেইসবুক।  দারুন সুপার এক আড্ডার জায়গা এটা। এখানে ঢুকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বন্ধু বান্ধব আত্মিয় স্বজনদের খোজ খবর চটজলদি নেয়া যায় । বিভিন্ন কুশল খবর  সংবাদ জানা যায় তাদের সাথে গল্প করা যায়। তাদের ছবি দ্খো যায় ভিডিও দেখা যায়।। সব মিলিয়ে কেটে যায় বেশ কিছু আনন্দময় সময়। দেশে বিদেশে ছড়িয়ে  ছটিয়ে থাকা কোন কোন আতœীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব যাদের  সাথে কোন কালেই  হয়ত এভাবে  যোগাযোগ হয়ে উঠতনা আমাদের যদি আমরা ফেসবুকে মুখ গুজার  সুখ সুবিধা না পেতাম। ফেইসবুকের এই সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের বিনোদন জগতে এনে দিল এক সীমাহীন আনন্দ উল্লোল । যারপর নেই ভাললাগার মতন একটা ব্যাপার। আমার ছোট মেয়ে সানাইয়া আমাকে বলে ডেডি ইউ আর ফাইসবুক এডিক্ট । গিন্নি তার সাথে উচুতালে সুর মিলিয়ে বলে ঠিকিই বলেছে আমার মেয়ে। খালি ফেইসবুক ফেইসবুক নিয়ে পরে থাকে। ফেইসবকে ঢুকলে নাকি আর কোন হুস থাকেনা।

আসলে ওরা যেভাবে বলে সেটা কিন্তু একটা  খন্ডিত চিত্র আবশ্যই পুরো চিত্রটা নয় । আমি সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে সব মিলিয়ে আধঘন্টা কি এক ঘন্টা ফেইসবুক ক্লাবে সময় কাটাই যার বেশির  ভাগ সময় যায় নিউজ বা আরটিকেল পড়ে। এইটুকু সময়ের জন্যই কিন্তু এত কথা এত বদনাম। তবে ভাগ্যিস সিরিয়াস কোন গেঞ্জাম হয়না ঘরে আমার। তবে কিন্তু ফেসবুক প্রীতি নিয়ে দেশে বিদেশে সংসারে সংসারে  ভালবাসার মানুষের মাঝে কলহ অসন্তোষ  বিবাদ লেগেই আছে। অসংখ্য পরিবারে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের আশান্তির ঝড়। এতে অনেকের  সংসারে তীব্র ভাংগন ধরেছে আবার আবার কেউ কেউ পেয়েছে নতুন ঘর ভালবাসার সন্ধান। ফেসবুক জ্বরে কাপছে পৃথিবী। বহু দেশে ফেসবুকের পেটে জন্ম  নিয়েছে অনেক ধরনের সামাজিক আন্দোলন। দেশ ও সমাজের বিভিন্ন ধরনের  তথ্যবহুল ব্রেকিং নিউজ এবং নারী শিশু নির্যাতন পুলিশ এবং প্রশাসন ও রাজনীতিবিদের অপকর্মের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে  দেবার ফলে দেশ জাতি নানাভাবে উপকৃত হচ্ছ। এই ফেইসবুকের গুনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। এখানে নিজের প্রচার প্রসার গুন কীর্তন যেমন খুশি তেমন করা যায় এবং রাজনীতির জটিল জটিল ব্যাখ্যা মতামত র্দশন বিনে পয়সায় বিলিয়ে দেওয়া যায়। কবি লেখক সাংবাদিক গল্পকার সাহিত্যিক তদের প্রতিভার আভায় লাল নীল সোনালী রংয়ে ঝলমল করে উঠে  ফেসবুকের পাতা। আবার কেউ কেউ নিজের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য হরদম প্রচার চালিয়ে যান। দাওয়াত নিমন্ত্রণ ভ্যাকেসন জন্মদিন বিয়ে সাংস্কতিক ও  কবিতার অনুষ্ঠানের ছবিতে ছবিতে এক অপরূপ রূপ নেয়  ফেইসবুকের পাতা। অথবা এলবামের নতুন পুরানো রকমারি বাহারি ছবির গল্পে গল্পে  ভরে যায় ফেসবুকের পাতা। আর সেই যে সেলফী!! ঘন্টায় ঘন্টায় রাতে দিনে সকাল সন্ধায় তোলা আহারে সেলফীর কথা নাই বললাম।

আমার এক বন্ধু  হাস্যরস করতে করতে একদিন আমাকে জানাল সে ইন্টারন্যশনাল সেলফি প্রতিযোগিতায় একটা স্বর্ন পদক পাবার জন্য হাজার হাজার সেলফি তুলে কঠোর অনুশীলন করে যাচ্ছে দিন রাত। এ ছাড়াও তার বহু বছর আগে ছবি তোলার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়া রয়েছে বলে সে খুব আশাবাদি । আমি আমার প্রিয় বন্ধুর শুভকামনা করছি।

টরন্টোতে আমার একজন অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু ছিল জাকিয়া ভাবী। জাকিয়া আঞ্জুম দীর্ঘ পাচ বছর ক্যান্সারের সথে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়ে  চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সেটাওতো বেশ কয়েক বছর  হয়ে গেল। হামর্বুগ থেকে পরিচয় সেই কত বছরের চেনা । ফোনে এখন আর তার মধুর কন্ঠ শুনতে পাই না -কি মনসুর ফোন টোন নাই কেন ভাবীকে ভুলে গেলা নাকি? সেকি ভালবাসা মায়ামাখা অধিকার নিয়ে কথা বলা তার। জাকিয়া ভাবী ছিল এক অসাধরন সুন্দর মনের মানুষ  যার মানুষকে  মুহুর্তেই আপন করে নেবার ছিল এক অদ্ভুত মায়াময়ী গুন এবং ছিলেন মিষ্টিভাষিনী। সে কারনেই তার বন্ধুর অভাব ছিল না এই শহরে। এ শহরে বলি কেন  বলা যায় দেশে বিদেশে। আঞ্জুম ভাইয়ের চেয়ে ভাবীর সাথেই যোগাযোগ হত আমার বেশি। আমাদের বয়স মন মানষিকতা চিন্তা ভাবনা  এবং সংস্কতির বৃত্ত কাছাকাছি হবার ফলেই তার সাথে ছিল আমার সখ্যতা। তাই ভাবী চলে যাবার পর আঞ্জুম ভাইয়ের সাথে যোগাযোগটা কেমন যেন শীথিল হয়ে গেছে । আর  আঞ্জুম ভাইয়ের ঘরে এখন  নতুন মুখ তার পথচলায় নতুন জীবনসাথী । জীবনের চাকায় চাকায় ঘুরছে ব্যস্ত সময়। আমরা পৃথিবীর ব্যস্ততম  শহর টরন্টোর ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে ছুটতে সামাজিক বন্ধনের সুন্দরতম রূপের ঝলক  থেকে দিন দিন দুরে সরে যাচ্ছি। সময় শাসন করছে জীবন আমাদের সামাজিক বন্ধন প্রীতি সৌহার্দও। ভালবাসার সীমানা ঘিরে উঠিয়ে দিচ্ছে কাটা তারের বেড়া। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত নাগরিক সময় মেপে পথ চলা সময় মেপে কথা বলা।

আঞ্জুম ভাইয়ের সাথে এখন আগের মতন দেখা হয়না। আর যে খুব কথাও হয় ফোনে সেটাও নয়। সবাই ব্যস্ত। সময় হলেও আবার সময় নেই। সময় যে  একেবারে করে নেওয়া যায় না সেটাও কিন্তু নয়। আসলে সময় পরিস্থিতি ঘটনা আমাদের জীবনের রং ঢং বদলে দেয় আর সেভাবেই আমাদের পথচলা। একদিন ফোনে কথা হচ্ছিল এই কথা ওইকথা এর মাঝে জিজ্ঞাস করল হেলালকে মনে আছে কিনা? আমি জিজ্ঞাস করলাম কেন, কোন হেলালের কথা বলছেন? বললেন কেন তোমাদের ফ্রেন্ড হামবুর্গ এর হেলাল। আমি বললাম হ্যা হ্যা  হেলাল আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। কিন্তু কেন আপনি হটাৎ করে তার কথা আনলেন। আমি বললাম, তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নাই তা বোধহয় পঁচিশ বছর হবে। আঞ্জুম ভাই বললেন আমার তার সাথে ফেস বুকে যোগাযোগ আছে। আমার পেজে মাঝে মাঝে লাইক দেয়। এই খবরে আমি ভীষন প্রীত হলাম। আমি হেলাল ভাইয়ের পেজে গিয়ে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম কিন্তু আনেক দিন হয় খবর নাই কোন হেলাল ভাইয়ের। ভাবলাম ভুলেই গেল নাকি? আবার ভাবি সেটা কেমন করে হয়, আমাদের এত সক্ষ্যতা এত স্মৃতি এত গল্পের কথা সে ভুলে যাবে কি করে। না তা হয় না। এত কালের পুরানো বন্ধুর সাথে কথা বলার জন্য মনটা খুব পরে রইল। তাই কয়েক মাস পর আবার তাকে ধরার চেষ্টা করলাম। এবার তাকে পেয়ে গেলাম মেসেঞ্জারে। আমাদের যোগাযোগ শুরু  হল আবার দুই যুগেরও পর। তাকে জিজ্ঞাস করলাম, কি ব্যপার আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম কয়েক মাস আগে আপনার কোন খবর নাই মিয়া। আমাকে ভুলে গেছিলেন নাকি? আমি হেসে বলি- কি খুব ইনপর্টেন্ট লোক হয়ে গেছেন নাকি? হেলাল সেই তার সহজাত আপন হাস্যউজ্জল  ভংগিতে বলে, আরে আমার বক্সে ১০০ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট জমা পড়ে আছে তাই দেরি হল আর কি। অনেকে খুব বিরক্ত করে ইন বক্সে এসে। আমি হেসে বলি ফেসবুক সেলেব্রিটি হলে যা হয় আর কি। যাক কি আর করবেন, চালিয়ে যান এভাবেই। হেলাল বলল আমাদের পাড়ায় তার বন্ধু ফুয়াদ (আমার পাড়ার বড় ভাই) তাকে দিয়ে আমার নাম্বার ঠিকানা পাবার আনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু ফুয়াদ ভাই আমার মেজ ভাই মিলনের কাছ থেকে আমার নাম্বার যোগাড় করতে পারেনি। হেলাল থাকে প্যারিসে আর আমি টরন্টোতে। আমরা দুজনেই এখন ভীষন সংসারী মানুষ। আমাদের ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে কে কোথায় কি পড়ছে  কি করছে । কোথায়  কোন দেশে বিয়ে  করলাম কার সাথে ঘর বাধলাম সব যেন এক নিঃশ্বাসে কথা বলা। এত কাল পর প্রানপ্রিয়  পুরানো বন্ধুর সাথে কথা বলা যেন সময়ের রথে চড়ে উড়ে যাওয়া সোনালী রোদ মাখা আনন্দউজ্জল এক মায়াবী সময়ের সীমানায়। যেখানে জমা আছে আমাদের সুখ উপচেপরা আনন্দ সন্ধ্যা কোলাহল কল্লোল মাখা দুপুরের সোনালি রোদবসন্ত। সীমাহীন আনন্দ উছছাস উল্লাসে কাটানো যৌবনের প্রভাতফেরী। কথা আমাদের  যেন শেষই  হয় না। একথা ওকথা বন্ধুদের এখন কে কোথায় কি করছে কেমন আছে তারা । কেমন সুখে দুঃখে আছে আজ ওরা পৃথিবীর  কোন কোন প্রান্তে ।

আমরা  সেই মাতাল করা ইংরেজি গান ডিসকো  কনসার্ট বন্ধু বান্ধবী খেলাধুলা  আড্ডার স্মৃতিচারন করলাম দুজনে ঘন্টার পর ঘন্টা । কোন  কোন শিল্পীর  কোন কোন গানগুলো এখনও শুনি । কোন গান এখনও  মনে শরীরে জাগায় দোল। আমরা এখনও কি সুপার  ট্রাম্প,  বব  মারলি, রড স্টুয়াডর্, বিজিস,  বিটেলস, ঈগেলস, এলভিস, ইউরোপ, ফরেনারস, স্টিং, বিলিজো, মাইকেল জ্যাকসন, এল্টন জন, ফিল কলিন্স,

ক্রিস্টপার ক্রস, ক্রিসদো বোর্গ এদের গান শুনি কিনা। জানা হল এখনও কি শনিবার মধ্য রাতে অথবা রবিবারের কাকভোর সকালে এলো মেলো পথচলা হয় কিনা। এখনো শুনি কিনা ফরেনারস এর  মন মাতানো  ভালবাসার সেই বিখ্যাত গান ‘সো লং আই হেভ বিন ওয়েটিং ফর ইউ” অথবা রেগি কিং বব মারলির ‘নো নো ওমেন নো ক্রাই ’ অথবা রড স্টুআর্ডের ‘ ফার্স্ট কাট ইজ দা ডিপেস্ট” গানগুলো । এইসব বলতে বলতে আমরা দুই বন্ধু হেটে হেটে চলি ফেলে আসা আনন্দময় নগরীর রাজপথ ধরে আবার কখনওবা হামর্বুগ শহরের আলস্টার লেকের  পথ ধরে বসন্তের কোন এক বিকেলে  ।

হেলাল ভাইকে ফেইসবুকে পাওয়াতে হামবুর্গের গোলাম আলী ভাইয়ের (পাড়ার  বড় ভাই) খোজ পেলাম। আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাল। আমরা বন্ধু হলাম। ফোনে কথা হল তার সাথে প্রায় পচিশ বছর পর। গোলাম আলী ভাই বলে ইস! মনসুর তোমাকে কত খুজেছি আমি তোমার কোন নাম্বার পাইনি মিলনকে (আমার মেঝ ভাই তার বন্ধু) কতবার বললাম তোমার নাম্বারটা দিতে সে দিব দিচ্ছি করে আর দিল না। অনেক কথা হল গোলাম আলী ভাইয়ের সাথে অনেক গল্প পুরানো গল্প । আমাকে লন্ডন বেড়াতে যাবার নিমন্ত্রন জানাল গোলাম আলী ভাই। বলল আস একবার বেড়াতে খুব মজা হবে। আমরা সারা ইউরোপ ঘুরবো হামবুর্গ যাব বেড়াতে। দেখা গল্প হবে পুরানো বন্ধু বান্ধবের সাথে। তার পর আর এক সন্ধায় ফোন আলাপনে হেলাল  জানায় আরো কিছু খবর।

হেলাল ভাই জানায় রনি এখন ঢাকায় ব্যবসা করে তবে সে তেমন কিছু করতে পারেনি। ফিরোজ হামর্বুগে এখনও থাকে এক পোলিস বান্ধবীকে নিয়ে। কারিনের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়েছে গেছে অনেক বছর । খলিলও হামর্বুগ ছেড়ে  চলে গেছে ইংল্যান্ডে থাকে এখন ব্রিসটলে। ওরও জার্মান বউ মানোএলার সাথে সংসার বেশিদিন টিকেনি। আর আমার দোস্ত  বাহারও ফ্রান্স ছেড়ে  চলে গেছে ইংল্যান্ডে  বেশ কয়েক বছর আগে। এখন সে লন্ডনে বসতি গড়ে সংসারী হয়েছে। আমাদের সেই বাহার সে এখন ভীষন বউ ভক্ত। গিন্নীর মন রক্ষা করতে করতে যারপর নেই নিরন্তর  চেষ্টা। নিজের মন ভাল কি নেই সেটা দেখার সময় সুযোগ আছে কি নেই বাহার তা এখন ভুলে গেছে। গোলাম আলীও এখন হামর্বুগ ছেড়েছে বহু বছর এখন সে  লন্ডনে বসত গড়েছে। এখন লন্ডনে  চার ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সুখী সংসার।

হেলাল বলে সে এখন দেশে বেড়াতে যায় প্রতি বছর। খুব ভাল লাগে দেশ। আতিক ভাই  আমাদের (রক্ষিবাহিনী) এখনও হামর্বুগে। এখন রক,  পপ, জেজ, রেগে, ফাঙ্ক, ব্লুজ ঠিক সেই আগের মতন করে টানেনা। এখন আর  কোন এক মধ্যরাতে পানশালায় বসে বিলি জো’র ‘পিয়ানো মেন’  আর  স্টিভ ওয়ান্ডারের ‘পার্ট টাইম লাভার’ অথবা মারভিন গে,র ‘সেক্সওয়াল হিলিং’ শুনে শুনে  কোন এক স্বনর্কেশীর হাতে হাত  রাঙা ঠোটে  ঠোট রাখে অন্য কোন এক  স্বপ্নময় জগতে হরিয়ে যাওয়া হয় না । এখন বাংলার লোকগীতি বাউলে লালনে টানে মন। এখন মাটি আর  শিকড়ের গন্ধে  মাতাল প্রান মন হৃদয়। সে বলে এতদিন বিদেশে থাকার পর এই ক’বছর বেশি বেশি দেশের যাবার ফলে বোধ হয় দেশের জন্য অন্যরকম এক ভালবাসা জন্ম নিয়েছে। ইদানিং মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে  আবার দেশে ফিরে  যাই, ফিরে যাই শিকড়ের কাছে  প্রবাস জীবনের  সমস্ত হিসেব দেনা পাওনা লেনদেন মিটিয়ে। জানি এ জীবনে মিটিবে না  আমার মনের বাসনা  মিটিবেনা মনের এই সাধ। কারন জীবনের হাত ধরে চলতে চলতে এসে গেছি প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে বহু দুর  হাজার হাজার মাইল দুরে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে। এই প্রবাসেই কেটে গেল জীবনের রংবেরংয়ের কতগুলো ঋৃতু  আর আমাদের নব প্রজন্মের শিকড় প্রথিত হয়ে গেছে এই নতুন ভীনদেশী (আমাদের) মাটিতে অনেক অনেক গভীরে।

তবু কেন অবুঝ অবাধ্য মন আমার বারবার বলে বেড়ায় সকাল বিকাল যখন তখন  কানে কানে ফিস ফিস করে-

আমি আবার একদিন আসিব ফিরে

বাংলার ধুলোমাখা  সোনালী প্রান্তরে।

মিটায়ে দিতে জনমের ঋণ তোমারে…

মোয়াজ্জেম খান মনসুর

কবি লেখক গল্পকার

২৭ই মে ২০১৬ টরন্টো