নাদিম ইকবাল এর প্রামাণ্যচিত্র ‘মাদার টাং’ অভিবাসী জীবনের বেদনাময় অধ্যায়

জুন ১৪, ২০১৭

মনিস রফিক

খুব ছোট বেলায় শীতের শুরুতে আমরা ছেলেপুলের দল বিকেল হলেই আমাদের বাড়ীর সামনের মাঠে খেলায় মগ্ন থাকার সাথে সাথে মাঝে মাঝেই ঘুরে ঘুরে আকাশের দিকে তাকাতাম। কেউ ‘ঐ যে’ বলে চিৎকার করলেই এক লহমাই খেলা থামিয়ে সবাই মাঠে চিত হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নতুন আবিষ্কারের নেশায়, নতুন পাওয়ার আনন্দে চেঁচামেচি শুরু করে দিতাম। আমরা সবাই ওভাবে চিত হয়ে আকশের দিকে তাকিয়ে এক…পাঁচ…এগারো…বাইশ…বত্রিশ…পয়তাল্লিশ…গুনতে থাকতাম। এই চিত হয়ে শুয়ে থাকা আর গোনায় আমাদের ক্লান্তি আসার পূর্বেই দেখতাম সারি সারি পাখির দল আমাদের মাথার অনেক ওপর দিয়ে চলে যেত দক্ষিণ-পূর্ব কোনে।

একটু বড় হয়ে শুনেছি ওগুলো সাইবেরিয়ার পাখি। সাইবেরিয়ার প্রচন্ড বরফ বাঁধা শীতে নিজেদের একটু বাঁচানোর জন্য হাজার হাজার মাইলের ক্লান্তিকর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা ছুটে চলে পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণতর কোনো স্থানে। সাইবেরিয়ার বাতাসে আবার যখন রোদের আলোয় জমাট বাঁধা বরফ গলতে শুরু করে, তখন উষ্ণতার রোদ গায়ে মেখে জীবন সন্ধানী পাখির দল আবার ফিরে যায় নিজ নিজ গৃহে। শুনেছি পাখিদের অনেকেরই আর ফেরা হয় না নিজেদের বাস্তভূমিতে। নতুন জায়গাই নতুন জীবন শুরু করে তারা। আমার জানা নেই, নতুন ভূমিতে তারা অন্য প্রজাতির পাখিদের সাথে কোন ভাষায় তাদের ভাবের আদান প্রদান করে। আমার এটাও জানা নেই, পাখিদের ভিন্ন ভিন্ন কোনো ভাষা আছে, না পৃথিবীর সব  পাখিই তাদের সার্বজনীন ভাষায় কথা বলে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবাল এর প্রামাণ্যচিত্র ‘মাদার টাং’ দেখতে দেখতে হঠাত আমার স্মৃতির ধূলায় ডুবে থাকা একেবারে ভুলে যাওয়া ছেলেবেলার সেই সময়টার কথা কেনো যেনো মনে পড়ে গেলো। আমার প্রায়ই মনে হয় মানব-জীবন আর পক্ষী-জীবনের মধ্যে এক অদ্ভুত মিল আছে। প্রাণীজগতের এই দুই কুল খুবই বেশী পরিভ্রমণশীল। নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের আনন্দে, নিজেদের বেদনায় আর নতুনত্বের খোঁজে এরা প্রায় নিমিষেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছুটে বেড়ায়।  আমরা যেমন নিজেদের জন্মভূমি ছেড়ে একটু সুন্দর জীবনের খোঁজে আটলান্টিকের পশ্চিম পাড়ে এসে পৌঁছেছি, তেমনি সাইবেরিয়ার সেই দিক দিগন্তে ছুটে চলা পাখিরাও ছুটে যেতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ঝোপ-ঝাড়, খাল-বিল আর তাদের বাসযোগ্য কোনো অভায়ারণ্যে।

‘মাদার টাং’ প্রামাণ্য চিত্রে নানা-নাতনীঃ কবি আসাদ চৌধুরী ও রাইদা ফাইরোজ মিষ্টি

স্থাঞ্চচ্যুতি আর স্থানান্তরের মধ্যে থাকে এক বিশেষ গ্রহণ ও বর্জন প্রক্রিয়া। বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম প্রধান বহুজাতিক শহর হিসেবে টরন্টোর নাম এসেছে একবারে প্রথম সারিতে। গত মে মাসে এখানকার বহুল পঠিত ‘মেট্রো’ পত্রিকায় উল্লে­খিত হয়েছে, উত্তর আমেরিকার চতুর্থ জনবহুল নগরী টরন্টোতে ২৩২ টি উল্লে­খ করার মতো জাতিগোষ্ঠী বা ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে এই অঞ্চলে যখন ইউরোপীয়রা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ও বসতি স্থাপনের জন্য আনাগোনা শুরু করে, তখন এই অঞ্চলে হাজার হাজার বছর আগ থেকে বাস করা এই অঞ্চলের  বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলতো। ধীরে ধীরে সাদা চামড়ার মানুষদের শুরু হয় ভোগ দখল প্রক্রিয়া। তারপর লেগে থাকে এক দল ধূর্ত মানুষের সাথে প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে উঠা সরল মানুষের যুদ্ধ বিগ্রহ আর জোর করে কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়া। বহিরাগতদের হাত থেকে নিজেদের সংস্কৃতি আর ভূমিকে রক্ষার জন্য সেই সব আদিবাসী প্রাকৃতিক জনগোষ্ঠীর মধ্য কিছুটা এগিয়ে থাকা মোহাক, অনন্দাগা, ওনিউদু, কায়ূগা, তুস্কারোরা ও সেনাকা জাতিগোষ্ঠী গড়ে তুলে আইরোকিউওয়িস কনফেডারেন্সী। মজার ব্যাপার, এই প্ল­াটফর্মের মধ্যে এসে নিজেদের মতের সহজ আদান প্রদানের জন্য তারা একটা কমন ভাষা সৃষ্টি করে যা আইরোকিউওয়িস ভাষা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আর নিজেদের তৈরী এই কমন ভাষা কিন্তু বিভিন্ন আদিবাসীদের নিজেদের দীর্ঘদিনের ভাষা-বিলুপ্তির পথে প্রথম নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। ব্রিটিশ দখলদার-অভিবাসীরা ১৭৮৭ সালে আদিবাসীদের কাছ থেকে ভয়-ভীতি, জবর-দখল আর কিনে নেয়ার মাধ্যমে বর্তমান এই টরন্টোতে গড়ে তুলে  ‘টাউন অব ইয়র্ক’। ১৮৩৪ সালে তারা এর নামকরণ করে ‘টরন্টো’। বলা হয়, ‘টরন্টো’ শব্দটা নেয়া হয় আইরোকিউয়িস শব্দ ‘তক্রন্টো’ থেকে যা এমন এক লেক পাড়ের জায়গাকে বোঝায় যেখানে অনেক বৃক্ষ আছে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই এখানে শুরু হয় ইউরোপ ছাড়া এশিয়া মূলত চীন থেকে ব্যাপক অভিবাসন প্রক্রিয়া। তারপর দেড়শ বছরে চলে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ব্যাপক এক অভিবাসন। এই সময়ে যারাই  এসেছে, তারাই মিশে গেছে ইংরেজী ভাষার আবর্তে। কিছু ভাষাগোষ্ঠী নিজ নিজ ভাষার চর্চা নিজেদের মধ্যে ধরে রাখলেও সিংহ ভাগ হারিয়ে ফেলেছে তাদের পূর্ব পুরুষের ভাষা ও সংস্কৃতি-ঐতিহ্য। সেই কারণে বর্তমান বিশ্বে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ভাষার অস্তিত্ব থাকলেও প্রধানতম কয়েকটি ভাষার দাপটে অধিকাংশ ভাষায় মুমূর্যু হয়ে পড়ছে। অতি নির্মম হলেও এটাই কিন্তু সত্যি, মানুষের প্রবাহমান জীবনে মানুষ এগিয়ে চলে সামনে আর এই এগিয়ে চলায় বড় কোনো আশ্রয়ের কাছে মাথা নত করতে গেলে প্রতিনিয়ত হারিয়ে ফেলে নিজেদের ভাষা, নিজেদের প্রথা আর সংস্কৃতিকে।

নাদিম ইকবালের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘মাদার টাং’ মানুষের জীবনের এই করুণ ব্যাথাতুর বিষয়কেই তুলে ধরেছে দর্শকদের সামনে। সহজ কথায় বলতে গেলে বলতে হয়,  ‘মাদার টাং’ নানা-নাতনীর আখ্যান। ২০০১ সালে ঢাকায় জন্ম নেয়া এবং ২০১২ সালে স্থায়ীভাবে টরন্টোতে বসবাস শুরু করা নাতনী এখন টরন্টোর এক স্কুলের শেষ পর্যায়ের ছাত্রী। নিজ বাসায় বাংলার চর্চা হলেও স্থান ও পরিবেশগত কারণে তার মনের ভাব প্রকাশের প্রধানতম মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজী। তার কথা বলা, চলাফেরা, নাচা এবং গান গাওয়ায় স্পষ্ট বুঝা যায় রাইদা ফাইরোজ মিষ্টি নামের মিষ্টি মেয়েটি ধীরে ধীরে কানাডিয়ান ইংরেজী সংস্কৃতির মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে। কিন্তু এই নিমজ্জন প্রক্রিয়ায় তার মধ্যে কাজ করে এক গভীর অন্তর দ্বন্দ্ব। এর মূল কারণটা হচ্ছে, যে বাংলা সংস্কৃতির মধ্যে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা এবং বর্তমানের যে সংস্কৃতির মধ্যে তার কৈশোরের পথ পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। ফলে বাংলাদেশ থেকে তার নানা তাদের কাছে বেড়াতে আসলে তাকে যে কিছুটা উৎসাহের সাথে নানার কাছে গল্প শুনতে দেখা যায়, তেমনটই দেখা যায় না টরন্টোতে জন্ম নেয়া তার ছোট ভাই ও তার মামাতো ভাইকে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবাল

মিষ্টির নানা বাংলা ভাষার একজন প্রধানতম কবি যার লালিত স্বপ্ন বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতিকে পরম সৌন্দর্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নানা গভীর ভালোবাসায় তাঁর নাতি-নাতনীদের নিয়ে বসেন তাঁর লেখাগুলো শুনানোর জন্য, তিনি জানাতে চান তাদের বাংলা ভাষার ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস। দেখা যায় খুব সহজ বাংলা শব্দ তাদের কাছে অজানা আর ওমন ইতিহাস ও গল্পের প্রতি তাদের গভীরতম মনোযোগের একটা অভাব। প্রামান্যচিত্রে আমরা দেখি বাংলাদেশ থেকে নানার এই দেশে আসা, আত্মজ-আত্মজার সংসারে নাতি-নাতনীদের সাথে সময় কাটানো, সবাই মিলে নায়েগ্রায় যাওয়া আবার নানার বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া। এই সময় ব্যপ্তিতে চাঁদের হাটের অনেক আনন্দের মধ্যে এক বেদনাবোধ কাজ করে নানার মধ্যে, আর তা হচ্ছে, তাঁর নাতি-নাতনীরা বাংলা ভাষা কী ভুলে যাবে বা তিনি যা লেখেন তা কী তারা ভবিষ্যতে পড়তে সক্ষম হবে ? ভাষা-সমস্যার জন্য তারা কী তাঁর লেখার আস্বাদ নেয়া থেকে বঞ্চিত হবে? নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে নিজের উত্তরসুরীদের ধীরে ধীরে সরতে থাকা এক ভাষার প্রধানতম কবির এই  মনোবেদনা সত্যি এক করুণ আবহ তৈরী করেছে এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে।

কানাডায় ফটোগ্রাফী ও চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষিত নাদিম ইকবালের প্রথম ছবি ‘মাদার টাং’। মাত্র সাড়ে এগার মিনিট দৈর্ঘের এই ছবিতে তিনি ফটোগ্রাফী ও চলচ্চিত্র নির্মাণে বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। ছবির শুরুতেই পর্দায় পাখি উড়ে যেতে দেখা যায়। তারপর উচু ভবনের লৌম্বিক শট, ভবনের শরীর বেয়ে বরফ পড়ার দৃশ্য আর উঁচু ভবনের মাঝখানে কোনো এক রেলিং এ কানাডার জাতীয় পতাকা সেটে থাকা। সহজ হিসেবে, শুরুর দৃশ্যেই তিনি পাখির মাধ্যমে দর্শকদের জানিয়ে দিয়েছেন, এটা একটা মানব-পক্ষী জীবনের ছবি আর পতাকা ও উচু ভবনের মধ্যে দিয়ে জানিয়ে দেন এই কানাডায় একসাথে মিলেমিশে বাস করেন বিভিন্ন ভাষা-ভাষী আর জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।  সেই সাথে বরফ ঝরা দিয়ে ইংগিত দিয়ে দেন এক বেদনাবোধ ছুঁয়ে যাবে আমাদের মনে। একজন দক্ষ চলচ্চিত্র নির্মাতার মতই তিনি শুরুর দৃশ্যের কয়েকটি ইমেজ দিয়ে দর্শকদের সামনে গোটা ছবির যে ম্যাসেজটা দিয়েছেন তা একজন নতুন নির্মাতা হিসেবে বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে। বারে বারে নানা ও নাতনী’র স্বদোক্তি দুই প্রজন্মের দুই চেতনাবোধকে তুলে ধরেছে। বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে জন্ম ও বেড়ে উঠা নাতনী  শেকড়ের টান এখনো ভুলতে পারেনি, সেজন্য কাছ থেকে দেখা নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির অন্তপ্রাণ নানা’কে তার জীবনের ‘নায়ক’ হিসেবে সে মনে করে। যদিও এমন চেতনাবোধ অন্য এক সংস্কৃতির মধ্যে জীবন চালানো জীবনে কতদিন তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে তার ধারণা করা যায় না। তাই নানার যাবার সময়ে বৃষ্টি ভেজা জানালার পাশে মিষ্টির নিজের সাথে নিজের কথা বলার দৃশ্যটি এই প্রামাণ্যচিত্রে এক অপরূপ দৃশ্য হয়ে উঠে এসেছে। বলা হয়, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ বিচারের প্রধান দিক হচ্ছে তাঁর চলচ্চিত্রের শুরু এবং শেষ দৃশ্যের মধ্যে যে পরম গাঁথুনির স্রোত থাকে তার মধ্যে। সেই বিচারেও নাদিম ইকবাল খুব সুন্দরভাবে সফল হয়েছেন। শেষ দৃশ্যে নানা যখন বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন, তখন দেখা যায় আবার সেই বরফ ঝরা সন্ধ্যা। বরফের পথ মাড়িয়ে নানা হেঁটে গিয়ে নিজের আঙ্গুল দিয়ে গাড়ীর জানালার বরফ সরিয়ে হেঁটে যান সামনে। তখন দেখা যায় নানার বুকে সেটে থাকা লাল-সবুজের বাংলাদেশের প্রতীক। শুরুর দৃশ্যের ভবনের গায়ে সেটে থাকা কানাডার পতাকা আর শেষ দৃশ্যে নানার বুকে সেটে থাকা বাংলাদেশের প্রতীক জানিয়ে দুই প্রজন্মের দুই চেতনাবোধকে।

নানা আসলেন, দেখলেন, সন্তান-নাতি-নাতনীদের সাথে আনন্দ করলেন আর নিজ উত্তরসুরীদের কাছ থেকে নিজ সংস্কৃতির ভাষা হারানোর মনোবেদনা নিয়ে ফিরে গেলেন। নানা ফিরে যাওয়ার দৃশ্যে ওভার ভয়েসে নানার মনোবেদনার কথা ও আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারীর গানের মিউজিক দর্শকদের মন ছুঁয়ে দেয়। নিশ্চয় পরিচালক নাদিম ইকবাল এই জায়গাতেই আমাদের নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

নাদিম ইকবাল যে ফটোগ্রাফীতে বিশেষ দক্ষ, তার স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন এই ছবিতে। তার ছবির ফ্রেম ও ইমেজ এ চলচ্চিত্রের ভাষাকে গভীরভাবে দর্শকদের মনোজগতে নিয়ে যায়। নায়েগ্রা থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার দৃশ্য বা নানার ফিরে যাওয়ার দৃশ্যের মধ্যে এক অপরূপ মলিন মাধুর্য্য দেখা যায়।

অভিবাসী জীবনের মোটিফ হিসেবে নাদিম ইকবাল বারবার তার ক্যামেরার সামনে পাখি উড়া দেখিয়েছেন। এই দৃশ্যগুলো অভিবাসী মনকে নিয়ে যায় বারেবারে আমাদের শেকড়ের কাছে, যে শেকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে আমরা প্রতিনিয়ত দূরে সরে আসছি আমাদের সংস্কৃতি আর ভাষা থেকে।

নিজের জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে নাদিম ইকবাল বিষয় নির্বাচন এবং এমন এক বিষয়কে দর্শকদের সামনে ধরতে যে চলচ্চিত্র জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবহার করেছেন তা সত্যিই প্রবল প্রশংসার দাবী রাখে। এই পরিমাপের সহজ একটি হিসেব হচ্ছে, মাত্র সাড়ে এগার মিনিটের এই ছবিটি দেখে দর্শকদের মনে হবে তারা পূর্ণদৈর্ঘ্য কোনো ছবি দেখে শেষ করলেন। সেই সাথে আমাদের মনে সফল ছোট গল্পের মত, শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার আবেদন থেকে যায় প্রগাঢ়ভাবে। আমাদের প্রত্যাশা, নাদিম ইকবালের চলচ্চিত্র-যাত্রায় তিনি আগামীতে আমাদের আরো সুন্দর সুন্দর ছবি উপহার দিবেন ।