দ্বিতীয় প্রজন্মের কানাডিয়ান : কোথায় আমরা মানানসই?

আগস্ট ১০, ২০১৬

স্যাম মিনাসি

কানাডিয়ানরা যা করে আমারাও তাই করি। আমরা কানাডিয়ানদের কর্মপরিকল্পনা অনুসরণ করি, অনুসরণ করি তাদের ছুটির দিনগুলো, তাদের মতো আমরাও ওসাপ ঋণ গ্রহন করি লেখাপড়া করতে গিয়ে, তাদের মতো আমারাও কানাডিয়ান স্কুল কলেজ বা ইউনিভারসিটি থেকে পাশ করে বের হই, সরকারকে টেক্স প্রদান করি। আমরা জানি না এর পর আমাদের কোন জিনিষটা বাকি থাকে কানাডার সমাজে মানানসই হতে? আমাদের গায়ের রঙ? কথাগুলো বলেন দ্বিতীয় প্রজন্মের এক কানাডিয়ান সামি খালিফা।

কানাডার প্রকৃত কালচার বা সংস্কৃতি কি? প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে কানাডা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্রময় জাতি বা ডাইভার্স নেশন। কিন্তু এই মাল্টিকালচারালইজম এসেছে স্বতন্ত্র সব জাতীয় পরিচিতির মূল্যের বিনিময়ে।

প্রতিবছর কানাডায় অনুমানিক প্রায় আড়াই লক্ষ ইমিগ্রেন্ট আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কানাডিয়ান সোসাইটিতে তাদের আত্মীকরণের বিষয়টি সর্বদাই উচ্চ অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। কিন্তু যৌক্তিকভাবেই বলা যায় যে, ইমিগ্রেন্টদের দ্বিতীয় প্রজন্ম যারা একদিন এই কানাডার মুখচ্ছবি হয়ে উঠবে তাদের বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। দ্বিতীয় প্রজন্মের বেশ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাপ করার পর একটি বিষয় পরিস্কার হয়ে উঠেছে যে, কানাডিয়ান হওয়ার অর্থ কি তা তারা সঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারছে না। কানাডায় দ্বিতীয় প্রজন্মের এক প্রতিনিধি সলমান ওলডিমিকেল বলেন, আমি নিজেকে কানাডিয়ান কালচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ভাবতে পারি না। কারণ, এই কালচারের কোন অস্তিত্ব আমি দেখিনা। আমি কানাডিয়ান হিসাবে শনাক্ত হই এই কারণে যে আমি দীর্ঘ সময় ধরে এখানে বাস করছি।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা কানাডার সঙ্গে একাত্মতার অভাব বোধ করতে পারে যেটা প্রত্যাশিত। সেই সাথে আরো যা যোগ হয় তা হলো, প্রথম অবস্থায় ভাষা সমস্যা, পরবর্তীতে চাকরীর সমস্যা এবং সর্বপোরি কালচারাল শক বা সাংস্কৃতিক অভিঘাত। দ্বিতীয় প্রজন্মের এই ছেলে-মেয়েদের বিষয়ে অনেকেই যে জিনিষটি অবহেলা করেন তারা হলো, কানাডায় তারা কিভাবে তাদের দ্বৈত পরিচয়কে মোকাবেলা করবে। কানাডায় দ্বিতীয় প্রজন্মের এই দ্বৈতপরিচয়ধারীদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার হিসাব অনুযায়ী ২০১১ সালে এদের সংখ্যা ছিল কানাডার মোট জনংখ্যার ১৭.৪%।

সামি এনবারাকের বাবা-মা আফ্রিকার তানজানিয়া থেকে কানাডা এসেছে গত শতকের আশির দশকে। এই সামি জানান, আমরা কানাডায় জন্ম নিলেও আমাদের বাবা-মা’রা যে দেশ থেকে এসেছেন তারা সে দেশের আচার ব্যবহারই সাথে করে নিয়ে আসেন এবং সেগুলো তারা আমাদের মত দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কানাডায় আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের জীবনধারা অন্যরকম।

তবে সে যাই হোক, এই দ্বৈত সাংস্কৃতিক সমস্যা ছাড়াও আরো কিছু বাহ্যিক সমস্যা রয়েছে যা দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা মোকাবেলা করছে।

‘পুরোপুরি’ ভাবে কানাডিয়ান নয়

কানাডা সরকার কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে বর্তমান ও ভবিষতের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা এমন এক নেইবারহুডে বাস করবে যেখানে একটা মিশ্র এথনিক পরিবেশ বিরাজ করার সম্ভাবনাই বেশী। এই জন্য বিষয়টির উপর বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। গবেষনাটি ইঙ্গিত করছে যে দ্বিতীয় প্রজন্মের এই ছেলে-মেয়েরা তাদের পিতা-মাতাদের তুলনায় বর্তমানে ও আগামীতে অনেক ভিন্নমাত্রর অভিজ্ঞতার সন্মুখীন হবে কানাডিয়ান সোসাইটির সঙ্গে একীভূত হতে গিয়ে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের এক যুবক সামি খালিফা। তার বাবা সুদানী এবং তার মা মিশরীয়। সে জানায়, যখন তুমি অল্প বয়সী তখন তুমি তোমার চারপাশে তোমার সমগ্রোত্রীয় লোকদেরই দেখবে। কমিউনিটি সেন্টারে যাও, কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাও বা মসজিদে যাও সবখানেই নিজের চেহারা ও সংস্কৃতির লোকদেরই দেখতে পাবে। কিন্তু বয়স যত বাড়বে পরিস্থিতি তত পাল্টে যাবে। তখন তুমি অন্য কমিউনিটির লোকদের সঙ্গেও মিশতে আরম্ভ করবে।

গবেষক মেহেরুন্নেসা আলী তার গবেষণা পত্র ‘সেকেন্ড জেনারেশন ইয়থ ইন টরন্টো : আর উই অল মাল্টিকালচারাল?’ এ লিখেন, কানাডায় দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা হয়তো নিজেদেরকে ‘পরিপূর্ণভাবে’ কানাডিয়ান নাও ভাবতে পারে এবং একই ভাবে অন্যেরাও তাদেরকে ‘পরিপূর্ণভাবে’ কানাডিয়ান নাও ভাবতে পারে। কানাডায় মাল্টিকালচারালইজমকে (যেখানে সব মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করার কথা বলা আছে) সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেওয়া সত্বেও হয়তো এরকমই হতে পারে ভবিষ্যত পরিস্থিতি।

সামি খালিফার কথাই ভাবা যাক। তার মতে ‘কানাডীয় পরিচয়টা মূলত প্রতিটি বর্ণ বা ধর্মের একাধিক পরিচয়।’ সে বলে, ‘আমি এখনো বেলা শেষে কানাডিয়ানই। আমি অধিক মাত্রায় কানাডিয়ান কারণ, আমি এখানেই বড় হয়েছি। আমি প্রকৃতিগতভাবে সুদানী কিন্তু এদেশে শিক্ষা-দীক্ষায় খাদ্য ও পুষ্টিতে এবং সযতেœ লালিত হয়ে একজন কানাডিয়ান।’

সৌজন্যে : নিউ কানাডিয়ান মিডিয়া